ফিলিস্তিন
আবির আবরাজ
~
মানবজন্ম পেয়েছি এক, তবুও
মনে হয় বাঁচি নাই কভু
জন্মের পরপরই
মরে মরে গেছি চিরদিন
যেনো আমার পরিচয় মুসলিম আর
দুনিয়া তামাম ফিলিস্তিন
~
২.
একই সময় দুনিয়ার দুইদিকে দুইটা শিশু নামাজে দাঁড়াইলো তাদের আব্বার পেছনে—
একজন ঈদের, আরেকজ জানাজার।
ফিলিস্তিন কতদূর
আবু তাহের তারেক
~
ফিলিস্তিন কতদূর
কতদূর বাংলাদেশ
এই লন্ডন শহরে
অভিবাসী অধ্যুষিত মানর পার্কে
যতদূর তুমার কাছ থেকে
আমার রিদয়
তবু আমরা জেগে থাকব
আলতাফ শাহনেওয়াজ
~
তবু আমরা জেগে থাকব ভায়েরা আমার!
তোমরা আমাদের মারো
মাথা ও মুণ্ডুর মধ্যে ঢুকিয়ে দাও একশ বিমানের
শোঁ শোঁ আজাজিল,
আমরা নাড়ির ভেতর পুঁতে রেখেছি অনাবিল
রক্তের ফোরাত;
যেহেতু আমাকে তোমার অনুমতি নিয়ে কথা বলতে হয়
চলতে-ফিরতে তোমার চোখ দুটো যেহেতু আমার পিছে পিছে ঘোরে—
চোখের মণির সেই কালো নমরুদের দিকে তাকিয়ে কে কে হারিয়ে যায় ভায়েরা আমার!
যেহেতু আমার কথার মধ্যে
টু জি ইন্টারনেটের আলোকশয্যা ওঠে-নামে
আর যেকোনো সময় এই মুখে তুমি বসিয়ে দিতে পারো রক্তাক্ত ফুলস্টপ,
আমরা তাই কথা না বলে এখন ইশারা করি আবাবিল-বোন, বছর বছর হবিল-কাবিলের বেশ ধরে
ঘোরে কারা বাজারে বাজারে? মুখচোরা আনাজ স্পর্শ করতেই
কে দিয়েছে ইলেকট্রিক শক?
চূড়া থেকে টু জি ইন্টারনেটে, রক্ত কেটে কেটে
ভিটেমাটি সব হলো ফিকে,
তোমরা আমাদের মারো, তবু আমরা জেগে থাকব;
ভাই, আমার আম্মা আড়াই বছর ঘুমায়নি
ঠান্ডা কবরের অন্ধকারে তার ছোট মেয়েটা
কীভাবে ঘুমিয়ে আছে
এই কথা ভেবে;
আমরা তবু মরে গিয়েও
বারুদমাখা আকাশে তারাদের দিকে চেয়ে চেয়ে
বলব, সাতভাই চম্পা…ওই বোনটি আমার!
থামিও না ধ্বংসযজ্ঞ
আল ইমরান সিদ্দিকী
~
তোমাদের কাছে আমার অন্য কিছু বলার ছিল।
কিন্তু আমি আর বলবো না।
বোমাবর্ষণ থামিও না।
উত্তেজনা, উদ্বেগটুকু ধরে রেখে মরে যেতে দাও।
থামিও না ধ্বংসযজ্ঞ
ভয় হয়
যদি এই ভাঙা ঘরদোর, এই ভাঙা খেলনা ঘোড়ার ওপর
রাত্রি লাশের মতো ঝুলে থাকে
যদি ভয়াবহ নীরবতা নেমে আসে ধ্বংসের চরাচরজুড়ে
ভয় হয়, যদি নীরবতা চায়
তাকে ছত্রখান করে দিয়ে বলে বসি ‘শিশুরা, তোরা ফিরে আয়!’
ফিলিস্তিন
উপল বড়ুয়া
~
খুব দূরে নয়, বিদুৎ চমকের মতো হঠাৎ একদিন
আকাশ কাঁপিয়ে স্বাধীন হবে লড়াকু ফিলিস্তিন।
বোমারুর প্রতি পারাবত
খান রুহুল রুবেল
~
উড়ছে বোমারু, যেন দেশহীন লোহুজলে ভাসছি আমিও
ফিলিস্তিন, আমার পায়রাদের তবে তুমিই উড়িও।
ফিলিস্তিনি শিশু
চিনু কবির
~
ড্রয়িং খাতা ভরে যাচ্ছে
বিয়োগ চিহ্ন
বিয়োগ চিহ্ন মানে ফিলিস্তিনি শিশু
ভাঙ্গা পেন্সিলের মাথায় পড়ে আছে
থেতলে যাওয়া গ্রাম।
~
২.
মুহাম্মদের সাইকেল
কালো ধোঁয়ার মধ্যে
অবিরাম ছুটে চলেছে
সাদা সাদা ফেরেশতা…
ছুটন্ত সাইকেল থেকে
ফিলিস্তিনি শিশুরা
বিগত পাগুলো
ছুঁড়ে মারছে পৃথিবীর দিকে।
প্যালেস্টাইন
জুয়েল মোস্তাফিজ
~
আদর—
ছোট কবরটি বড় কবরের আঙুল ধরে হাঁটছে …
গাজার শিশুরা এভাবেই বাবার আঙুল ধরে হাটে।
কবর—
মৃত্যুর বাঁশিতে মোচড় দিয়ে উঠেছে কুমারীর বেণী…
তার ভারী বুকের নাম অন্ধকার। তার জীবন একটা গুজব মাত্র।
জীবন—
বুলেটের মতো সুগন্ধি শস্যদানা আর নাই।
লড়াইয়ের মতো নাই কোনো জোয়ান কবর…
মরাগুলো তাই হেঁটে হেঁটে যায়… হেঁটে হেঁটে যায় পৃথিবীর গায়….
আনা আসিফা
নীলা হারুন
~
আমাকে ক্ষমা করে দাও,
ও ভাই আমার!
যখন তুমি মৃত তখন আমি শ্বাস নিচ্ছি।
ও আমার বোন,
তোমার শহীদি মরণের সাথে এসো কাফন পাল্টাপাল্টি করি৷
চূড়ান্ত নগ্নতার দিনে সলাজ তুমি মাখা থাকবে মেশকের আব্রু।
ও আম্মা আমার, আমাদের তো খেজুর ভাগ করে খাবার কথা ছিল, শোক নয়।
ও পিতা আমার, লাশ বইতে বইতে তোমার ঘাড় হয়েছে ভারী।
আমাকে ক্ষমা করে দাও বাচ্চারা , যখন তোমরা রক্তিম ক্ষুধার্ত তখন আমি পেট ভরে খাচ্ছি।
ও গর্ভস্থ সন্তানেরা, পৃথিবীর নির্দয় শব্দে তোমরা যখন রক্তের সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছ তখন আমি নিরিবিলিতে উষ্ণ বালিশে ঘুমাচ্ছি।
আমাকে ক্ষমা করে দিও স্বার্থপরতার জন্য।
বেঁচে থাকার জন্য।
পেট ভরে খাবার আর ঝর্নাপানিতে স্নানের জন্য।
যথেচ্ছ মিঠাপানি পানের জন্য।
ও আমার ফিলিস্তিন,
এই অধমকে ক্ষমা করে দিও এখনো হাসতে পারার জন্য।
পরিস্থিতি
পিয়াস মজিদ
~
তুলার বালিশে শুয়ে
ঘুমাতে ঘুমাতে
স্বপ্নের হামলা
আমার বিছানা
এটা কি ঢাকা?
নাকি এই দুনিয়া
রক্তের বালিশে
শুয়ে থাকা গাজা!
জেনো, ফিলিস্তিন
বায়েজিদ বোস্তামী
~
সকাল নাই
দুপুর নাই
সন্ধ্যা নাই
রাত্রি নাই
মাড়াইতেছে জালেমের উদ্ধত বুট পবিত্রভূমি
ফাটতেছে বোমা জলপাই ও ডুমুরের বনে
চরতেছে শিশুদের শবভূক শৃগালের দল
পঁচাত্তর বছর দীর্ঘ সময়
কিন্তু মুক্তি সুনিশ্চিত
জেনো, ফিলিস্তিন
তোমার তরে কাঁদে অনুক্ষণ
বাঙলার ঘুঘুপ্রাণ
ভোর
মোস্তফা হামেদী
~
আমি এখন ঘুমাবো। মাথার উপরে আকাশ সুখে স্থির হয়ে আছে। দুয়েক প্রস্থ মেঘ পাখার ঝাপটার মতো উড়ে যায়। গ্রামজঙ্গলের পোকার শব্দে অস্থির আমার ভিতরে সুরের গুঞ্জরণ।
আমি দেখতে পাই না। এই আকাশেরই দূর এক কোণে রণসাইরেন। সমরাস্ত্রের ধোঁয়া হয়তো ছাই করে দিচ্ছে মানুষের ঘুম, ঘুমের ভিতরের স্বপ্ন।
আমার শিশুটি কি স্নিগ্ধ ঘুমাচ্ছে-পাশে! ঘৃণার আসমানের তলে ওদের রাত বড় দীর্ঘ!—নির্ঘুম।আরেকটা ভোর কি যোগ হবে জীবনে আর?
ফিলিস্তিন
রায়হান কবীর
~
আমরা চাইলে এই ভূমি ছেড়ে
চলে যেতে পারি
চলে গেলে আমি আমার মাকে হারিয়ে ফেলি
চলে গেলেই আমার বাবাকে হারিয়ে ফেলি
যারা একদিন এখানেই মরে গিয়েছিল
হায়নার হাতে
চলে যাওয়া মানে তাদেরকে মেরে ফেলা
লেপ্টে থাকা অন্ধকার শুষে নেওয়া
নিজেকে হারাতে
অতএব যুদ্ধ ছাড়া কোন পথ নেই
আজ এবং আগামীতে
আমার পা এখানে অনড় হিমালয়
তুষারের মত গলতে গলতে রক্ত কথা কয়
আমার স্মৃতি আর মুহূর্তগুলো সব রক্তে লেখা
শেখ সাদ্দাম হোসেন
(মোহাম্মদ দেইফকে)
~
জন্ম হলো আমার এক শরণার্থী শিবিরে
হতে পারতো ভিয়েনায়, সবুজে ঘেরা একটা শান্ত পাহাড়ে
না, যেখানে গাছ জন্মানোর আগেই তাকে উপড়ে ফেলা হয়
সেখানে আমার জন্ম হলো
ওরা আমার স্ত্রীকে মারলো, ৭ মাসের পুত্র সন্তানটিকে মারলো
আর মারলো কেবল মুখ ফুটে বাবা বলতে শেখা মেয়েটিকে
ওরা আমার একটি চোখ কেড়ে নিলো, ক্ষত-বিক্ষত করলো আমার শরীর
চোখের সামনে ওরা আমার উপাসনালয়ে হামলা করলো
আমার বাবা, ভাই ও বন্ধুদের একে একে মেরে ফেললো।
আমার তো হতে পারতো একটা ফ্যামিলি, একটা ঘর
পেতে তো পারতাম আমিও মায়ের আদর, স্ত্রীর ভালোবাসা
আমি এক প্রাণ, লক্ষ্য কোটি প্রাণের মতো এসেছি
এই পৃথিবীতে
আমার স্মৃতি আর মুহূর্তগুলো সব রক্তে লেখা
আমার মস্তিস্কে কেবল লাশের ছবি
আমার শরীর নেই আর, ছায়া হয়ে গেছি
তবু আমি বলবো আমার আগামীর শরণার্থী শিবিরে
জন্ম নেয়া প্রতিটি ভাই ও বোনেদের
ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মরতে থাকতে হবে
যতক্ষণ না আমাদের সন্তানদের জন্য একটি সুন্দর ঘর আর পরিবার নিশ্চিত হয়।
প্যালেস্টাইন, প্যালেস্টাইন
হাসান রোবায়েত
~
অলিভের ফুলে উড়তেছে ঘ্রাণ
নিক্রপলিস ধুধু বেশুমার
প্যালেস্টাইন প্যালেস্টাইন
পুরানা কেবলা হে আমার—
তোমার পাথরে বাতাসের ছায়া
জলপাইবনে নামে আবাবিল
এম্পোরিয়ামে কারা গান গায়
ওড়ে সমুদ্রে মৃত গাঙচিল—
যেন সে তিলের মাঠ ভরা ফুল
হাওয়ায় হাওয়ায় কাঁপে পাপড়িরা
তোমার নারীরা জন্ম দিয়েছে
আপেলের বনে শিশিরের হীরা—
যারা নিয়ে গেছে রুটির গন্ধ
লেমন গাছের মায়া বহুবার
প্যালেস্টাইন প্যালেস্টাইন
পুরানা কেবলা হে আমার—
প্যালেস্টাইন প্যালেস্টাইন
মাজলে বোনের মতো মায়াময়
তোমার কান্না আমাদের চোখে
খালি হোসেনের কারবালা হয়—
চারদিকে শুধু ডিমেনশিয়ায়
হিজলের ফুল ঝরে বারবার
প্যালেস্টাইন প্যালেস্টাইন
পুরানা কেবলা হে আমার—