অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৫ এ প্রকাশিত হচ্ছে হাসিন এহ্সাস লগ্ন’র ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ প্রাপ্ত কবিতাগ্রন্থ ‘সঙস্ অব দ্য মিউজেস’। প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। প্রচ্ছদ করেছেন নাওয়াজ মারজান। বইটি পাওয়া যাবে ঐতিহ্য, প্যাভিলিয়ন ২৮-এ।
ব্রেঁতো কোথায়
উত্তরে যাই, দক্ষিণে যাই।
সবুজ মারমেইডের আঁশ ছাড়াই।
গ্লুমি বিকেলে এ-ই আমার কাজ।
রাতে ধরি কবিতা।
তারপর খাই।
ফ্রিজে আছে ঘাসের পেস্ট। চাঁদের ঘাস।
প্যানকেক বানিয়ে নেবো।
এসবের বাইরে বেরোতে চাইলে—
ঘোরা শিখতে হবে।
অ্যান্টিক্লকওয়াইজ।
১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে মারলিন
শীতের সন্ধ্যায় আমার শার্সিতে মেশে-গলে
কণ্টকী শীষফুল।
মৃত মাছের সান্ধ্যোৎসবে ভায়োলিন বাজায় পুওর সান্তিয়াগো।
কেবল তোমার স্যালাইভারি গ্লান্ড থেকে একে একে তুলে আনি সুতো, বুনি মনস্তাপের জাল।
নরম-মার্শমেলো চোখ তোমার
তিষ্যরক্ষা করতে চায় আমাকে বারবার।
আমি এক প্রকাণ্ড মারলিন।
তুমি বোধহয় গেঁথে ফেলেছো।
হাঙর-ভরা সমুদ্রে কোথায় হাঙর?
কখন করবে বিশাল হাঁ? কুটকুট করবে, ছিঁড়বে…
কখন পাড়ে পৌঁছাবে আমার কঙ্কাল?
সান্তিয়াগো!
ইলিয়াসীয় বৃষ্টিদিন
কাঁটার মতো বিঁধে বিঁধে শীত ফুটে যায়
আর ওই যেমন আসে, হুটহাট জ্বর।
নরম থানের নিচে কোনোক্রমে মাথা গুঁজে
শুধু রশিদ খাঁ রশিদ খাঁ রশিদ খাঁ।
‘ছায়ে বাদরা কারে কারে…’
ঝাপটা আসে একেকটা
নীল-সবুজ-সাদা।
বাটিতে বাতাবিলেবু
গায়ে সরিষাদানার প্রলেপ।
আরো বিভিন্ন মশলা, আর হার্ব যা থাকে।
বেশি বায়োফ্যাভোনয়েড।
তাই এলো ইলিশ।
সে প্লেট ঠেলে ইলিয়াস।
‘এই মনোরম মনোটোনাস শহরে অনেকদিন পর আজ সুন্দর বৃষ্টি হ’লো…’
আরো হোক। ভিজে যাক চরাচর।
শ্যাওলা জমে থাক, পিছলে পড়ুক সবাই।
সব জুতোর তলা কাদায় পূর্ণ হোক।
বাতাস উঠুক। যেমন দমকা বাতাসে সিগারেট ধরানো খুব কঠিন।
রাস্তাজুড়ে পড়ুক ইলেক্ট্রিসিটির তার।
তার শুধু, ইলেক্ট্রিসিটির তার।
রিকশায় ভেজা নীল পলিথিন,
তার ছড়িয়ে যাওয়া, মুচড়ে যাওয়া,
বেশ লাগে কিন্তু!
হলুদ ট্রাকে ত্রিপল, তার ওপর বসে থাকা ছাগল।
সবই সমান সুন্দর।
তুমিও কেমন ভিজে যাও, মফস্বল বাড়ির টবে। মরিচফুলের সাথে।
আমার ইচ্ছে করে একতাড়া পুদিনাসমেত মিন্ট লেমোনেড গিলতে।
তার আগে একা টুলে বসে সেটার অপেক্ষা করতে।
আর সেটা করতে করতে মনে মনে পোস্টারের বানান শুদ্ধ করতে।
‘আমারই জন্যে তৈরি এরকম লোনলি-লগ্ন আমি কতোদিন পাইনি, কতোকাল, কোনোদিন নয়।’
আমি কি জরাথ্রুস্ত্রের শ্বাস?
সহস্রাব্দ ধরে ই-চিংয়ের পাতায় আটকে থাকা পোকা?
সদ্য ঋতুবতী কিশোরীর ক্যালেন্ডারের পাতায় রাখা চোখ?
‘বৃষ্টি-বুনোট এইসব রাতে আমার ঘুম আসে না, বৃষ্টিকে ভারি অন্যরকম মনে হয়, বৃষ্টি একজন অচিন দীর্ঘশ্বাস…’
শূন্য ছয়-এগারো-চব্বিশ
আমাদের শহরে অন্ধকার নাই।
মেহগনি কাঠের আলমারি কিংবা
সেই ভেন্টিলেটর, যার বাইরে ‘পেস্ট কালারের’ প্রলেপ,
সেখানে কিছু অন্ধকার হয়তো
খুঁজলে পাওয়া যাবে।
আমরা সেদিন ছিলাম সেখানে, ঋত্বিকের বসতভিটা।
গালভরা মা মাটি, টুকরো ইট, হলুদ হলুদ চুন— কিছু সেখানে আছে।
আর মোমপোড়া ঘ্রাণ।
একটা মোম পুরোপুরি পুড়তে কত মুহূর্ত যায়,
কেউ যদি কখনও জিজ্ঞেস করে,
একজ্যাক্ট উত্তর না জানলেও কিছুটা বলতে পারবো।
আমরা আবারও জেনেছি, ‘লিভিং ইজ অ্যান আর্ট!’
আর কীটসের কথা— ‘দ্য পোয়েট্রি অব আর্ট ইজ নেভার ডেড!’
এই যে হালকা বাতাস, শীত আসছে, বোঝা যায়।
এরা কাপ না ধুয়ে কয়েকবার ক’রে চা দিয়ে যাচ্ছে।
ধোঁয়ায় ভেজা চশমা-কাঁচের ভেতর দিয়ে আমরা দেখি ‘দ্য ক্লাউড-ক্যাপ্ড স্টার’।
কেমন সুররিয়েল না?
তুমি জানো জাঁক প্রেভের প্রেমিকার সিগারেট বাট জমিয়ে রাখতো?
যেভাবে এই কাপ জমা হ’তে যাচ্ছে আমার প্রেমার্কাইভে।
আমাদের উঠতে হবে।
প্রজেক্টরকে বলতে হবে বাই।
সাউন্ড সিস্টেম, বাই!
বাই ঋত্বিক!
আবার আসবো, দেখা হবে।
আমাদের শহরে রিকশাদের খুব তাড়া।
কত দ্রুত যায়…
রাস্তাও খুব অল্প, আর আলোকিত যথারীতি।
বাতাস কি বাড়ছে?
এই বাতাসটা অন্যরকম শব্দ তুলে যায়, শুনশান দীঘির ওপর দিয়ে যাওয়া বাতাসের মতো— হু হু হু হু…
‘এমন নিজস্ব দিন দীর্ঘ হোক— আহা!’
থামালে যে? কোনো দরকার?
সিগারেট নিচ্ছো? আচ্ছা ধরাও।
কেমন তাকাচ্ছো, আইসক্রিম বক্সের দিকে।
‘তুমি কিছু খেতে চাও?’
না না! দ্যাখো আমার কাজল কীভাবে লেপ্টে গেছে।
এটা অন্ধকার।
পাশের গ্রেভইয়ার্ডে তোমার জন্মনাড়ি পোঁতা।
সেখানেও বেশ খানিকটা অন্ধকার আমরা পাবো।
টুপটাপ পতনের শব্দ পাচ্ছো তুমি?
প্রকৃতিবিরুদ্ধভাবে চুপচাপ থাকি।
চাঁদটা রূপচাঁদার বারবিকিউ।
এবার যেতে হবে, যাও।
রঙবেরঙ জেল্লার ভীড়ে
তুমি এক অন্ধ-আধার।
বোধহয় জানো না।
বিকিয়ে দাও না কেন? ভালো কিছুই হবে।
কেবল সবুজ অনুপ্রাস
এই যে এখন।
প্রতিপ্রভ জ্যোৎস্নায় দূরবর্তী নারকেল গাছ।
আঠালো বাতাসের ভারে পরাঙ্মুখ।
মেঘ হয়েছে, বোধহয় মেঘ হয়েছে।
এখানেই কাল চড়ুইভাতি করার কথা।
তোমাদের ছাদে তুলসীগাছ আছে।
তোমার ঘরে তুলসীকাঠের বিডস্ দেখেছি।
তুলসীকে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে বলে সীতাস্বরূপা, তুমি বলেছো।
সেই তুলসীর কিছু সবুজ, তোমার শার্টে আছে।
সবুজ কিছু তোমারও আছে।
টু এইট এইট বাই ফিফটিনের নিচের
নীল পলিথিনে মুখ গোঁজা বেড়ালের যখন খারাপ লাগে, তখন তোমারও মন খারাপ করে।
আমার গলায় কাঁটা বাঁধলে প্রিটি শিওর, তোমার খারাপ লাগবে।
ভাবছিলাম তুলসীর প্রশংসা ক’রে তোমার জন্য একটা সবুজ কবিতা লিখবো।
শঙ্খের সাদা রঙ, কোত্থেকে পেলে, তা নিয়েও কথা বলবো।
এসব বলবার প্রয়োজন আছে।
এত সবুজ, এত সাদা… কোত্থেকে পেলে!
ঝিঁঝিঁর আলোয় যখন তুমি পড়ো, শাক্ত পদাবলি পড়ো,
আর যখন তুমি যাও, বটের ঝুরি ভেঙে ভেঙে তুমি যখন যাও,
এমন নির্জন মেঘতামস পুনরায় জাগ্রত হয়।
কেবল কিছু শব্দ আর সুর ফেলে রাখো,
‘সুকুমার সেনের বইতেই মোস্ট প্রবাবলি রয়েছে,
একচালার প্রতিমা মানে যৌথ পরিবার!