পাণ্ডুলিপি থেকে : যথানির্দেশ উপুড় হয়ে আছি | জিললুর রহমান

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫-এ প্রকাশিত হয়েছে কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক জিললুর রহমান-এর নতুন কবিতাগ্রন্থ যথানির্দেশ উপুড় হয়ে আছি। প্রকাশ করেছে দ্বিমত পাবলিশার্স। প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। মূল‍্য ২৫০৳। ঢাকা বইমেলাতে পাওয়া যাবে দ্বিমত-এর পরিবেশক শব্দকথা প্রকাশনী-তে, স্টল ১৭১

 

ভোরবেলা

ভোরবেলা হাঁটার অভ্যাস যতো বুড়ো
সূর্যকে জলের মত্ত জোয়ার থেকেই উঠে আসতে দেখে।
কেউ কেউ বলে ওরা সূর্যটাকে
টানতে টানতে তুলে আনে ভোরে।
তারপর, তারপর তারা খুব ক্লান্ত হয়,
হাঁপাত হাঁপাতে ওরা ডাব খেতে যায়।
ডাবের জলের পরে ওদের লেয়াই খাওয়ার খুব সখ,
কেউ কেউ অনেক অনেক গল্প করে হাসি ও হল্লার।

তাদের মধ্যের কেউ একদিন আর সূর্য তুলতে যায় না
তখন দুঃখের গল্প কিছু হয়, তবে
বয়স বাড়লে সব লোক ভুলোমনা হয়ে পড়ে।
আবার নতুন সূর্য তারা টেনে তোলে পরের প্রভাতে
আর ডাবজল পান করতে করতে
দূরে থাকা কিংবা না থাকা বাচ্চাদের নিয়ে
অনেক অনেক গল্প সত্যি করে বলে যায়

 

প্যান্ডোরার বাক্স

প্যান্ডোরা এসেছে বুঝি! পুনর্বার প্রেম দেবে বলে
পৃথিবীর ঘৃণামত্ত মানুষের তৃষিত হৃদয়ে!

প্যান্ডোরাকে কখনো দেখিনি তবু পেয়েছি খবর তার
প্যান্ডোরার বাক্স থেকে জরা মৃত্যু দুঃখ রোগ বন্যা জলোচ্ছ্বাস
একে একে বের হয়ে ভেসে গেল হাওয়ায় হাওয়ায়
ধুলার মানুষ যত বারংবার লুটায় ধুলাতে

আতঙ্কে প্যান্ডোরা তার বাক্সে ফের ঝাঁপি দিয়েছিল তাও জানি
প্যান্ডোরা মায়াবী বড়——বড় রূপবতী বড় আবেদনময়ী
চিরল চোখের দিকে চেয়ে দেখলে শুনেছি ফেরে না দৃষ্টি
স্বয়ং প্রেমের দেবী সাজিয়েছে প্যান্ডোরার দেহের ভঙ্গিমা

আমি তাকে দেখিনি কখনো —— সে ছিল আদিম যুগে
যখন জিউস ছিল তেজোদ্দীপ্ত নিষ্ঠুর ক্ষমতাবান
প্যান্ডোরাকে আরো কিছু আয়ু দিলে ক্ষতিটা কী হতো?
এই যুগে ডোরা আর ডোরাকাটাদের ভীড়ে
প্যান্ডোরা দেখিনি একটিও —— সে বড় মায়াবী ছিলো শুনি

প্যান্ডোরা মরে গেছে নিজ বাক্স থেকে ছুটে আসা রোগের সন্ত্রাসে
তবু সে বাক্সের মুখ বন্ধ করতে পেরেছিলো জানি
কে আজ নতুন করে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলো!
বাক্সের তলায় আজ বহুকাল জমে জমে ছিল ঘুমে ছিল
কীটানু-জীবাণুগুলো —— কে খোলে বাক্সের মুখ!

 

রুমির সঙ্গে ঘুরতে যাই না কতোকাল

চারদিকে গনগনে সূর্য চারদিক ঝকঝকে শুনশান
রুমির সঙ্গে ঘুরতে যাই না কতোকাল

বাচ্চারা ছটফট করছে ঘরে
মাঠগুলো খালি পড়ে আছে
কেবল দুটো কুকুরছানা আর একটি পরিচ্ছন্ন কাক
বাচ্চাদের খেলতে দিই না কতোকাল

বাইরে বাতাসে প্রেম
রিকশার ঝুনঝুনি ডাকে
আমার পা’ দু’টো চেরাগী ছুটতে চায়
আমার এ চোখ দু’টো সাগরের ঢেউ গুনতে চায়

রুমিকে পাহাড় দেখাবো বলে
ব্যাকপ্যাক বেঁধেও রেখেছি বহুদিন
কোথাও বৃষ্টির নেই ছিটেফোঁটা
কোথাও মেঘের নেই আনাগোনা

রুমিকে দু’চোখ দিয়ে ডাকি
রুমিকে ধরতে পারি না কতোকাল

 

রেলপথ 

রেলপথ ধরে সহস্র বছর
হেঁটে যাচ্ছে পিপীলিকাদের স্রোত;
ঘর্মাক্ত ক্ষুধার্ত ক্লান্ত
ঠিকা মজুরের দল।
হাঁটছে ঘরের দিকে—
ঘর ছোটে অনন্তের পথে।

ক্ষুধাকে জাপটে ধরে পেটে
পোনামাছেদের ঝাঁক
ছুটেছে সমান্তরাল;
কেউ পিষ্ট রেলতলে, যাঁতাকলে…

হা রেলপথ!
দিল্লী কতো দূর?

 

রামু যেতে যেতে

রামু যেতে পথ আগলে ধরেছে তাড়িগাছেদের ঝোপ
রামু যেতে হলে উপলকে চাই, হাড়ি ভরা কিছু তাড়ি

ছোট টিলা গুলো কথা বলে ওঠে ছোট ছোট ঝোপ ঝাড়
তবে তোমাদের সাথে থাকা চাই উপলের হাসিমুখ

শত বছরের পুরা-মন্দির অথবা সোনার বড় গৌতম রূপ
কাঠফাটা রোদ ঘামে নেয়ে ওঠা অনেক ওপরে সিঁড়ি

রামু গেলে খুব ডাব খেতে হয়, আর মন নিষ্পাপ
যতো আবদার আর আহ্লাদে উপলের কথা এক

সমস্যা নাই সমস্যা নাই সমস্যা নাই কোনো
এসো বৃক্ষের মহা বুদ্ধের ছায়া কিছু নিয়ে যাই


জিললুর রহমান
কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক

জন্ম চট্টগ্রামে, ১৬ নভেম্বর ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে। আশির দশকে লেখালেখির সূচনা। লিরিক, নিসর্গ, জীবনানন্দ, সমুজ্জ্বল সুবাতাস, পুষ্পকরথ, শতক্রতু, সবুজ আড্ডা, বিন্দু, চারবাক, কঙ্কাল, খড়িমাটি, একবিংশ, মেঘচিল, চিন্তাসূত্র, ইরাবতী, আরম্ভ, তর্ক বাংলা, মন-মানচিত্র, আপনপাঠ-সহ বিভিন্ন ছোটোকাগজে নিয়মিত লেখেন/লিখেছেন। পেশায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষক। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ : নির্বাচিত কবিতা; অন্য মন্ত্র; শাদা অন্ধকার; ডায়োজিনিসের হারিকেন; আত্মজার প্রতি ও অন্যান্য কবিতা; হঠাৎ রাজেন্দ্রপুর; পপলার বন মরে পড়ে আছে; এক সে মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি ইত্যাদি। প্রবন্ধ/নিবন্ধ : উত্তর আধুনিকতা : এ সবুজ করুণ ডাঙা; অমৃত কথা; কবিতা : পাঠে পাঠান্তরে, উত্তরচেতনার ভূমিকা। অনুবাদ : আধুনিকোত্তরবাদের নন্দনতত্ত্ব : কয়েকটি অনুবাদ; নাজিম হিকমতের রুবাইয়াৎ; এমিলি ডিকিনসনের কবিতা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রকাশনা : Pathology Tutorial (vol—1&2), Original Research articles—67, Scientific Editorial—3।

শেয়ার