পাণ্ডুলিপি থেকে : দ্য লৌন এক্সপ্রেস | শান্তা এফ আরা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৫ এ প্রকাশিত হয়েছে শান্তা এফ আরা’র প্রথম কবিতাগ্রন্থ দ্য লৌন এক্সপ্রেস। প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। প্রচ্ছদ করেছেন নাওয়াজ মারজান। বইটি পাওয়া যাচ্ছে ঢাকা বইমেলায়, ঐতিহ্য, প্যাভিলিয়ন ২৮ এবং চট্টগ্রাম বইমেলায়, ঐতিহ্য, স্টল ৩৮-৩৯ এ।

 

মাছ

ঝড় থেমে যাওয়ার পর
তবু থাকে হৃদয়

হৃদয় এক আশ্চর্য মাছের চোখ
তাহাতে কী সুনিপুণ
বিদ্ধ করিছো তীরের ফলা

অর্জুন
আমি তড়পানো অন্ধ মাছ

জানো তো
মাছের মৃত্যুতে মানুষ শোক করে না
মানুষের শোক থাকে না

শান্ত স্থির শীতল মৃত দু’চোখ খোলা রাখি
দেখে যাই তোমাদের চোখে জাজ্বল্যমান উল্লাস!

 

বাজারের ফর্দ উল্টায়ে

প্রেম দিয়া বাজার হিসাবের আঁশটে গন্ধ বের হওয়ার আগে
যেটুকু মহুয়া ঘ্রাণে মাতাল
ছায়া ছায়া গ্রে সন্ধ্যা করতেছো যাপন,
লাল চায়ের উষ্ণতা আর সিগ্রেটের ধোঁয়ায়

সেসব সন্ধ্যার বিনিময়ে
কিনে নিতে পারো ভরা সংসার
একটা, দুইটা আণ্ডাবাচ্চা
বেশি হইলে তিন

নাহ! তিন না হয় বাদ দাও
তিন একটু বেশিই শোনায়

বাজারের ফর্দ উল্টায়ে
কবিতা লেখার কথা তখনো ভাবলেও ভাবতে পারো

উড়ে যাওয়া বসন্ত দিনের কথা ভাইবা
আসন্ন শীতের জন্য মাফলার বুনতে বইসো

আজ দুপুরে রান্নাবান্নার কথা ভাবতেছো কী ?
কি রানবা?বেগুন দিয়া ইলিশ মাছের তরকারি?
নাকি লাউচিংড়ি?
সাথে দুই পদের ভর্তা,পাতলা ডাল মাস্ট
আর পেঁয়াজ মরিচ কাইটা দিও না
বাটনাটা বাইটা দিলে তরকারি অতীব সুস্বাদু

লাল চা ছাইড়া তুমি এখন কফি পারসন হয়ে গেলা
ব্ল্যাক কফি উইথ নো সুগার।

সেই লাল চায়ের গরম ধোঁয়ায় আঁকা
কবিতা মেশানো সংসার; মনে পড়ে?

এখন তোমার সং টুকু সার হইছে

কবিতার বুদবুদ উবে গেলে পরে
মুছে যায় প্রেম

রাত হইছে ; সুদীর্ঘ ,গভীর
ঘুমায়ে যাইতেছো তুমি
উল্টা স্বপ্নে

রাতের স্বপ্নের ইরেজারে
পুরোনো স্বপ্ন মুছে যায়
ঘুম থেকে জেগে আর
নিজেরে চিনতেছো না আয়নায়

তুমি আয়নায় দেখতেছো কী ?

.

ঘুমায়ে যাওয়ার আগে

সে কোন ফুলের গন্ধে
গাছে গাছে নীল পক্ষী ফুটিলো
পাখি সব করিলো রব
রাতি পোহাইলো না

আমাদের হৃদয়ে প্রন্থিত হইতে থাকে ঘাসেরা
যেন বা বটবৃক্ষ তাহারা
আপন সুউচ্চ মহিমায় দানিতেছে ছায়া
আপনারে

এইক্ষণে
পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে কী থাকে
সেই প্রশ্নের কোয়েশ্চেন মার্ক তুইলা
তুমি ভিজতেছো পোয়েটিক ঝর্ণায়

হেমন্তের শীত গায়ে মাইখা
ঘুমাইবা ঘুম বইলা
জাইগা থাকতেছো এক শীত,বর্ষা,বসন্ত

তুমি মানুষ এক বিষণ্ণতার
তুমি ঘুমাইতে পারতেছো না ঘুম

তোমার হেমন্ত নাম কাটায়ে যায়
ক্যালেন্ডার থেইকা

রবি বাঁশরীয় সুরে
তোমার শনি বাজতেছে বেহাগ এক

সুর-সুধা-বিষ
তবু যে মরতেছো না তায়
কেবলই শ্বাস-প্রশ্বাস বাঁইচা থাকায়

স্ন্যাপশট

আমাদের মেটাফোর দৃষ্টি
কার্যত খুঁজে চলেছে ভিজ্যুয়াল সম্ভাবনা

ওদিকে ওয়াইন রেড
লাগায়ে কাজল চোখে

অদ্ভুত সাইকেডেলিয়ায়
দেখতেছো লিউসিড ড্রীম

বানানো স্বপ্নে দেখতেছো যারে

ঘনাইতে ঘনঘোরে
মেঘে মেঘে ফিসফাসে
লেবুবনে ঘুরে ফেরে সে
সাইট্রাসি গন্ধ গায়ে মেখে
কমলা বিকেলে

জানিবে কী সে?
বেডসাইড টেবিলে, ফ্লাওয়ার ভাসে
রাইখা দিছো ক্রিসেন্থিমাম
ভোর ভোর ফর্সা চাদর মুড়ায়ে

লেবু লেবু গন্ধের ওগো কমলা রোদের কারবারি
একটা পুরো বসন্ত কিনে নিলা
হলুদেরে করিতে আপন
আঁকিতে স্বপ্ন, লেমন ইয়োলোয়

এখন এই তীব্র কবিতার কালে
জমে জমে যাইতেছো বরফ
আঁকতেছো শীতলতায় যা কিছু ধূসর
আত্মহত্যার মতো তীব্রতায় জড়ায়ে যাইতেছো

ডাহুক সন্ধ্যা হারায়ে যাইতেছে তোমার
চিত্রার ঘোলা পানিতে
পাঁকে
স্ন্যাপশটে ধরা পড়া
এই সব টুকরো টুকরো বেদনারা
আটকায়তে সুতায়

কাটা পড়ে ঘুড়ি
ভোকাট্টা
হৃদয়

দ্যাখো
ময়ূর মেলতেছে পাখনা
কী অদ্ভুত শনশনানিতে
পৃথিবী পশ্চিমে ঢলিয়া পড়ে

দৃশ্যায়ন এটুকুর

এরপর নাহয় তুমি ডুবিলে সমুদ্রে
করিতে আপনার;
আপনারে।

 

বিষণ্ণ নাইটিঙ্গেল এক

জংলা শামুকের খোলে
আটকায়ে থাকা অতীত,
হাতড়াইতে ভবিষ্যতের ঝিনুকে
খুঁজতেছো কোন সে মুক্তো?

জবাকুসুম কানে গুঁজি
অচিন গাঙে সাঁতরানির খোয়াবে
ডুইবা যাইতেছো, আহা!
পচা পুকুরের পাঁকে

অতলান্তের হাবিয়ার হাহাকারে
উদ্বেলিত তোমার ইনার এসেন্স
তোমারে বানাইতেছে সলিটারী রীপার

অথবা, দ্যাখো!
ফুলেফেঁপে উঠা রাত্তির
পেটের ভিতরে তার
ক্যামনে ঢুকায়ে রাখে
ইনসমনিয়াক কন্যাটিরে;
এই তোমারে!

যেন বা ক্যাঙ্গারু শিশু
বয়স্ক পৃথিবীর বহিতে ভার
একাকী মগজে আপনার
অবিরাম আত্মার ক্যাওসে
বুকের ভিতরের বিষণ্ণ বৃক্ষ
আছড়ায়ে পড়িতেছে কী? ঝড়ে?
ইরাবতী? অথবা কোন সে ফোরাতে?

তুফান থামিয়া আসে ক্রমে
অদ্ভুত হিকিকোমোরিতে
নিদারুণ আচ্ছন্নতায়
রাতের কম্বল উলটাইতে তোমার
আবারো কেবলই রাত থামিয়া যায়

এখন ভালহাল্লার এই অন্ধ অন্ধকারে
বিষণ্ণ নাইটিঙ্গেল এক
ডুবিলে ঘনঘোর মেলানকোলিয়ায়

 

অপেক্ষা

সারা ঘরে আলো নাই
যেহেতু জানালা বন্ধ রাখি।দরজাও।

অন্ধকারে ঘরের ভিতর নদী চইলা আসে,
(যেহেতু কল্পনার চোখ অন্ধ)

তাই নর্দমার মতো ফটকি আইসা তাকায়ে থাকে
আমার চোখের অন্ধকারে,
মরা মাছের চোখ যেন; স্থির।

সাদা কচুরিপানার দিকে তাকাইতে
তোমার কথা মনে হয়।

যা হইতেছে, যা ঘটতেছে তা কী বলব তোমারে?

আত্মাহীন খোলসে অভ্যস্ত হইয়া যাইতেছি।অফিস করি।
ছাইরঙা মেঘ আকাশে ছড়াইলে কফিশপে যাই।কফি খাই।

নদী মরে গেছে।
নদীর মরা লাশের পাশে গিয়া খানিক বইসা থাকি।
আকাশ রক্তাভ লাল হইয়া উঠছে ততোক্ষণে।
কার আত্মার ক্ষরণে?

উঠি উঠি করি
তোমার কথা মনে পড়ে না।
খালি মনে পড়ে,এক জীবনে পাহাড় দেখা হইলো না।
আমি পাহাড় হইয়া গেলাম।হইলাম গাছ।
অথচ মানুষের মুখোশ পইরা
লক্ষ কোটি মানুষের ভীড়ে নিঃশেষ হওয়ার অপেক্ষা করা ছাড়া
আর কোন কাজ নেই আমার।

 

সুইসাইড সাইলেন্স

মাঝরাত্তিরে নিজেরে দেখবা বইলা
তাকাইলা ফুল লেন্থ মিররে

মুখ কই? ভাঙা টুকরো টুকরো কাঁচে
টুকরো টুকরো খসে পড়ে- আত্মাহীন মুখোশ তোমার, মানুষের।

আত্মারে ক্রুশবিদ্ধ কইরা কোন সে দুনিয়াবী শিকলে
বাঁধলা পদযুগল বা মন তোমার?

তোমার অস্তিত্বে স্ফুলিঙ্গ হাবিয়ার
লোনলি সিমেট্রিতে যাইয়া খুঁজতেছো সুইসাইড সাইলেন্স-
ওইখানে হাড় গোড় মাটিচাপা, কবর,ঘাসেদের কলরব,
নীরবতার চাইতে আর কী বেশি বাঙময় ?

ফেরো ঘরে। তোমার একান্ত চার দেয়াল

দ্যাখো, কবিতার মতো বিকেল আইসা
জানলার শার্সিতে আলপনা আইকা যায়
গ্রিমের আলখেল্লায়

নাহয় বসো ফটকি তীরে
দ্যাখো, কচুরিপানা রোদে ফুটতেছে মরণ তোমার

 

শান্তা এফ আরা

গল্প ও কবিতা লেখেন। ‘দ্য লৌন এক্সপ্রেস’ তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।

শেয়ার