পাখসাট । রাশিদা সুলতানা


বাইরে দাঁড়িয়ে বিপুলা রাত্রিকে আমি উপভোগ করি। এই নিস্তব্ধতা ভেঙে এক অদ্ভুত স্বরে কেউ একজন বলে ওঠে, ‘আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই।’ তাকিয়ে দেখি আমার আশেপাশে কোনো মনুষ্যচিহ্ন নাই।

 

সিগারেট খেতে বারান্দার বাইরে আমগাছসংলগ্ন উন্মুক্ত স্থানটিতে দাঁড়াই। বাইরের বাল্বটির চারপাশে ক্ষুদে কিছু পোকা উড়ছে। তুলনামূলক বড় একটা মথ বাল্বটিকে ঘিরে ওড়ে। সিগারেট খেতে খেতে খোলা হাওয়ায় এদিক-ওদিক পায়চারি করি, এলোমেলো ঘাসের সমুদ্রে হাঁটি।

বাইরে দাঁড়িয়ে বিপুলা রাত্রিকে আমি উপভোগ করি। এই নিস্তব্ধতা ভেঙে এক অদ্ভুত স্বরে কেউ একজন বলে ওঠে, ‘আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই।’ তাকিয়ে দেখি আমার আশেপাশে কোনো মনুষ্যচিহ্ন নাই। একই কণ্ঠস্বর পুনরায় বলে, ‘আমি তোমাদের ময়না পাখি, আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই।’

বারান্দায় খাঁচায় ঝোলানো ময়না পাখি কথা বলছে।

এক সপ্তাহ আগে ছোটভাই রিমন পাখিটা কিনে এনে হৈচৈ শুরু করে, এই পাখি কথা বলে, তার বন্ধু তাকে বলেছে, এক-দুইটা ছোট বাক্য নয়, বিস্ময়করভাবে প্রচুর কথা বলে। পাখিটি রিমনের বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘কেমন আছ?’ রিমন, তার স্ত্রী, আমার স্ত্রী, আমার বড় ছেলে, সবাইকে ডেকে জড়ো করে পাখিটাকে বলে, ‘এই পাখি, কথা বলো। কথা বলো। বলো, “কেমন আছ?”।’ পাখি আপন মনে খাঁচায় রাখা ছোট পাত্রে খাবার খুটে খায়, ডানা ঝাপটায়, রিমনের অনুরোধের কোনো তোয়াক্কা না করেই।

পাখিটা আবারও সেই অদ্ভুত অন্যরকম স্বরে অবিকল মানুষের মতো করে বলে, ‘আমার সাথে কথা বলবে না?’

বিহ্বল আমি কোনো কথা বলি না। দ্রুত ঘরে চলে যাই।

আমার স্ত্রীকে এ বিষয়ে কিছুই বলি না, কিন্তু আমার ভাই রিমনকে বলি, ‘দ্যাখ, তোর ময়নাপাখি আমার সাথে কিন্তু কথা বলছে।’ এই সংবাদে রিমন পুরো বাড়ি মাথায় তোলে। বাড়ির সবাইকে ময়নার সামনে জড়ো করে। খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে ময়নাকে কথা বলাতে যারপরনাই চেষ্টা করে।

পরের দিন রাতেও আবার বারান্দার লনে সিগারেট খেতে যাই। বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে আমের মুকুলের গন্ধে, ঝিঁঝিঁপোকার শব্দে রাত্রি মুখর। ময়নাপাখি আবার কথা বলতে শুরু করে। ‘এই যে শুনছ, আমি তো তোমার সাথে কথা বলতে চাই।’

আমি বলি, ‘এইভাবে মানুষের মতো এত কথা বলা কোথা থেকে শিখেছ?’

– সেটা আমি পরে তোমাকে বলব। আগে বলো, আমার সাথে কথা বলতে তুমি আগ্রহী কি না।

– হ্যাঁ, আমি আগ্রহী।

আমার এ কথা শুনে সে ডানা ঝাপটে একঝলক ঝিকমিকিয়ে ওঠে।

– আমার ছোটভাইয়ের পাখি তুমি। সে এত চাইল তোমার সাথে কথা বলতে, তুমি বলো নাই কেন?

 


হঠাৎ কালো মেঘ ভেদ করে চাঁদ বের হয়ে আসে। পাখির খাঁচাটির অবয়ব তখন প্রকাশ্য হয়। আমি পাখিকে জিজ্ঞাসা করি, ‘কী খবর তোমার?’ আমার আওয়াজ পেয়ে পাখির গল্প শুরু হয়।

 

– সবার সাথে কথা বলতে মন চায় না। জীবনে অল্প কিছু মানুষের সাথে কথা বলছি। যে বা যারা আমাকে কথা বলা শিখাইছে, যাদের সাথে এ পর্যন্ত কথা বলছি, তাদের সবাইকে আমি পছন্দ করতাম বা এখনো হয়ত করি। তাদের সবাইকে আমি ভালোবাসি। মেইনলি লুজার, ব্যর্থ, সর্বহারা টাইপের মানুষের সাথে এ যাবৎ কথা বলছি। খুব মন না চাইলে আমি কারো সাথে কথা বলি না।

– আমি কিন্তু ঠিক লুজার বা ব্যর্থ টাইপের মানুষ না। সিভিল সার্ভিসে সফল অফিসার হিসাবে আমার সুনাম আছে।

– আসলে কেন যে তোমার সাথে কথা বলতে আমার মন চাইছে, আমি ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারব না।

তারপর থেকে প্রতি রাতেই আমি সিগারেট খেতে বের হলে ময়নার সাথে আলাপচারিতা জমে ওঠে। আমার অন্তরঙ্গ প্রশ্রয়ে তার মুখে কথার খই ফোটে।

এক রাতে, পাছে আমাদের কথা-বলা কেউ দেখে বা শুনে ফেলে, এজন্য বারান্দার বাতি নিভিয়ে আমি লনে দাঁড়াই। ক্বচিৎ জ্বলে ওঠা লাইটারের আগুন অন্ধকারকে প্রগাঢ় করে তোলে। হঠাৎ কালো মেঘ ভেদ করে চাঁদ বের হয়ে আসে। পাখির খাঁচাটির অবয়ব তখন প্রকাশ্য হয়। আমি পাখিকে জিজ্ঞাসা করি, ‘কী খবর তোমার?’ আমার আওয়াজ পেয়ে পাখির গল্প শুরু হয়।

আমার ছোটভাইয়ের স্ত্রী আমার ভাইয়ের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেছে। সে এই কলহ পুরোটা শুনেছে, চরম কুৎসিত ভাষায় ভ্রাতৃবধূ আমার ভাইকে গালি দিয়েছে, আমার স্ত্রীকে তার খুব অহঙ্কারী মনে হয়, সারাদিনের বাসার সব ফিরিস্তি সে আমাকে শোনায়। আবার যদি দ্যাখে ব্যালকনিতে কেউ এসে পড়েছে, তখন সে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। একদিন আমাকে বলে,

‘দ্যাখো, তোমার হেয়ার স্টাইল পছন্দ হইতেছে না। এটা বদলে ফেলো। তোমাকে আরো স্মার্ট লাগবে।’

আমি বলি, ‘তুমি এত বাচাল পাখি, তোমার তো উচিত সবার সাথে কথা বলা। সবাই মুগ্ধ হবে আর তুমিও কথা বলে শান্তি পাবা।’

সে হাঃ হাঃ করে সশব্দে হেসে ওঠে।

আমি বলি, ‘মানুষের মতো করে হাসাও শিখছ!’

‘শোনো, আমি মানুষের মতো প্রথম কথা বলা শিখি অন্ধ এক তরুণের কাছ থেকে। প্রথম দিনে খাঁচাসমেত আমাকে তার মা তার সামনে নিয়ে বলে, ‘পাখি, কথা বলো, আমার বাবাকে বলো, “বাবু, কেমন আছ?” বলো, “বাবু, কেমন আছ?”। কয়েকবার তার মা উচ্চারণ করার পর আমি বলি, “বাবু, কেমন আছ?”, পরপর চার-পাঁচবার বলি। অন্ধ তরুণ বাবু এবং তার মা দু’জনেই এরপর আমাকে মহা-উৎসাহে কথা বলা শেখায়, তবে কিছুদিনের মধ্যেই আবার দু’জনেরই উৎসাহে ভাটা পড়ে যায়। কিন্তু আমি ততদিনে কথা বলায় মজা পেয়ে যাই। আমার চারপাশে যে যা বলে দ্রুত আমি তা আত্মস্থ করে ফেলি।

‘আমার খাঁচার অদূরেই বারান্দায় সারাদিন বাবু প্রায় নীরবে বসে থাকে। কোনোদিন আমাকে হয়ত জিজ্ঞাসা করে, “আজকের আকাশ কি মেঘলা?”। কোনোদিন হয়ত হাসতে হাসতে কৈশোরের কোনো দুরন্তপনার গল্প করে। তার বছর দু’য়েক আগে সে সড়ক দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ পেলে জিজ্ঞাসা করে, “বাইরে কি টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে?” ঝড়ো বাতাসসহ শিলাবৃষ্টি হলে কিংবা বজ্রের শব্দে জানতে চায়, “বাইরে কি শিলাবৃষ্টি হচ্ছে? শিল কি ছোট না বড়?”, কখনো শিশুর মতো অস্থিরভাবে জিজ্ঞাসা করে, “মা কোথায়? দেখো তো, মাকে কোথাও দেখা যায় কি না?”

‘মা-ছেলের এই সংসারে মা প্রায় সারাদিন ব্যস্ত থাকে বাজার-সদাই ও রান্না নিয়ে। বাবুর দুই ভাই আমেরিকায় থাকে। মা যেদিন ব্যস্ত থাকেন, সেদিন সারাদিনই বারান্দায় আমার খাঁচার অদূরে চেয়ারে একঠায় বসে থাকে। আমার সাথে কখনো কথা বলে তার শৈশব, কৈশোর আর ভাইদের নিয়ে। কোনোদিন অস্থির কিশোরের মতো খানিক পরপর মা মা বলে ডাকে। রান্নাঘর বারান্দা থেকে দূরে হওয়ায় তার শব্দ মায়ের কান অব্দি পৌঁছায় না। তখন আমাকে অনুরোধ করে তার মা, আমার নজরে এলেই আমি যেন তাকে জানাই। কখনো সে অতি উচ্চস্বরে মাকে ডাকে, আবার কখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। একটু আগে যে মানুষটি ‘মা কোথায়?’ বলে অস্থির ছিল, যেন সে ছিল অন্য কেউ। মা অবসর পেলে তাকে ঘরে নিতে চায়। কোনোদিন বাধ্য ছেলের মতো তার ঘরে ঢুকে যায়। আবার কোনোদিন গোঁ ধরে বারান্দায় বসে থাকবে, মা-ও যেন পাশে বসে থাকে। মাকে বলে, বাইরে গাছগাছালির সৌরভ, পত্রপল্লবের সরসর শব্দ অথবা পাখির কাকলি তার ভালো লাগে। মাকে একদিন বলে, “এই পাখিটা এত মজার!”

‘প্রতিদিনই মা ঘরের পর্দা সরিয়ে দিয়ে সকাল আসতে দেয়। প্রতিদিনই বাবুকে হাত-মুখ ধুইয়ে তার বিছানা পাল্টে নাশতা নিয়ে বারান্দায় এসে মা-ছেলেতে মিলে প্রাতঃরাশ করে।

‘এক সকালে মা গেরস্থালির কাজ দ্রুত সেরে বাইরে যায়। সেদিন ঘরেই নাশতা সেরে মা আমার সামনেই ছেলেকে বলে, “বাবু, আজকে ফিরতে একটু দেরি হবে। তুমি দুশ্চিন্তা কোরো না। পাশে ছোট টি-টেবিলে কিছু শুকনো খাবার রেখে যায়। সকাল থেকেই আমি লক্ষ করি বাবু একঠায় বসে আছে, বিমর্ষ, সাড়াশব্দহীন। সারাদিন আমার সাথে একটা কথাও বলে না। অভিব্যক্তিহীন চেহারা। তার চোখের ভুরু, চোখের শূন্য কোটর অচঞ্চল। তার এমন নিস্তব্ধতায় অস্বস্তি হয়। আমি বাবুকে বলি, “বাবু, কেমন আছ?”

‘সে একবার বাম কানটা সামান্য উঁচু করে। কোনো উত্তর নেই। খানিক বাদে আবার বলি, “বাবু, কেমন আছ?” সে তখনো জবাব দেয় না। আমার কেমন রোখ চেপে যায়। বাবু, কেমন আছ? কেমন আছ? এই কথাটা আমি অন্তত টানা পঞ্চাশবার বলি। তারপরও বাবু নীরব।

‘বাবুর নীরবতা আমার অসহ্য লাগে, আমি ক্রমাগত বলে চলি, কেমন আছ, বাবু? কেমন আছ? হয়ত পঞ্চাশবার, একশ’বার অথবা দুইশ’বার বলি। ঠিক কতবার আমি জানি না, বাবুকে এমন থমথমে কোনোদিন দেখি নাই। চেয়ার থেকে উঠে হাতড়ে হাতড়ে আমার খাঁচার সামনে আসে সে। আমার শরীরে, ডানায়, মাথায়, মুখে, ঠোঁটে হাত রাখে। তার আঙুলগুলো আমার সারা শরীরে ওঠানামা করে। একসময় তার আঙুলের ওঠানামা শ্লথ হয়ে আসে। হঠাৎ তার আঙুলগুলো শক্ত হয়ে আমার গলায়, ঘাড়ে চেপে বসে। আমার কণ্ঠরোধ হয়ে আসে। আমার সর্বশক্তিতে ডানা ঝাপটাই আর তীব্র তপ্ত ধাতুর অণুর মতো কাঁপতে কাঁপতে আমি চিৎকার করি। বাবু আমাকে ছেড়ে দিয়ে আবার বারান্দার সোফায় গিয়ে বসে। ঘণ্টাখানেক পর তার মা ফিরে এলে বলে, “পাখিটাকে এক্ষুনি কোথাও ফেলে দিয়ে আসো। প্লিজ মা, আজকের মধ্যেই।” সেই রাতেই বাবুর মা আমাকে তার বোনের বাড়ি পৌঁছে দেয়। তারপর আমি বহুদিন কোনো মানুষের সাথে কথা বলি নাই। কেউ জানেই না যে আমি কথা বলা কোনো পাখি।

‘বহুদিন পর একজনের সাথে আবার কথা বলা শুরু করি। সে এক সরলপ্রাণ প্রৌঢ়া। পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান। আট ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ জোগাতে আইবুড়ো জীবনযাপন করে গেছে। যে সময় তার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে, পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে অথবা হয়ত পাত্র পছন্দ না হওয়াতে বিয়েতে রাজি হয় নাই। তারপর আস্তে আস্তে প্রস্তাব আসাও এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। তবে এই অবিবাহিত এবং প্রেমিক কিংবা পুরুষবন্ধুহীন জীবন নিয়ে কোনো অনুযোগ, অভিযোগও তার ছিল না। এই ধর্মভীরু রোখসানা অফিসের পর আগের ভ্রাতৃবধূদের সাহায্য-সহযোগিতা করে অথবা ভাই-বোনের সন্তানদের পড়াশোনার খোঁজ নিয়ে দিব্যি এক ভরভরন্ত সুখের জীবন কাটায়। ছুটির দিনে বাড়িতে অতিথি এলে রান্নাঘরের দায়িত্ব সে নিয়ে নেয়। ভাই-বোন, পরিবার আর অফিসের সহকর্মীদের স্নেহে, ভালোবাসায় রোখসানার চোখেমুখে সংবৎসর আনন্দ ঝিকমিক করে। তবে সে কখনোই বিমর্ষ থাকে, তা নয়। সেরকম দিনগুলোতে সে রাতদিন নামাজ বা কোরান তেলাওয়াতে ব্যস্ত রাখে নিজেকে। বিমর্ষ অবস্থায় কখনো আমার সাথে কথা বলত না সে।

 


কিছুদিনের মধ্যে নানা বিরক্তির উপলক্ষ হয়ে ওঠে পাখিটি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জাজমেন্ট দেওয়া শুরু করে। প্রায়ই বলে, ‘তুমি ভীষণ চতুর লোক, একজন সফল মানুষ। সফল মানুষেরা প্রায় সবাই চতুর।’ আমার কাছে রীতিমতো বিরক্তিকর ঠেকে। আমি সিগারেট খেতে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেই।

 

‘একদিন তার ভাইয়ের বন্ধুদের সপরিবারে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করা হয়। রান্নার দায়িত্ব যথারীতি সে সানন্দে বুঝে নেয়। অতিথিরা সবাই বিদায় নিলে ডিঙ্গি মেরে লাফাতে লাফাতে সে আমাকে খাঁচাসহ বারান্দা থেকে তার ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই নারী শাড়ির অনাবদ্ধ আঁচল কোমরে গুঁজে ঘুরে ঘুরে নাচে। বলে, “শোনো, আজকে যারা দাওয়াতি আসছিল তারা সবাই বলছে, রান্না এত ভালো হইছে! আপা, আপনার হাত দুইটা স্বর্ণ দিয়া বাঁধাই কইরা দেয়া উচিত।”

‘সবার জন্যই গাধার মতো খাঁটুনির পর যখনই কেউ তাকে মন খুলে প্রশংসা করে, সে তার ঘরে ঢুকে আমাকে এই কথা বলতে বলতে আনন্দে কেঁদে ফেলে অথবা কিশোরীর মতো ঘুরে ঘুরে ঘরজুড়ে নাচে।’

সিগারেট টানার অছিলায় প্রতিরাতেই ময়নার সাথে আমার এই আড্ডাবাজি, এই বন্ধুত্ব চলতে থাকে। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আমি তিনদিনের জন্য বিছানায় লেপ্টে থাকি। প্রায় চার-পাঁচদিন ঘর থেকে বের হই নাই। একবারের জন্যও না। কিছুদিন পর আবার যখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাই, ময়নাকে খাঁচায় দেখে জিজ্ঞাসা করি, ‘কী খবর, পাখি? কেমন ছিলে এই কয়দিন?’ ময়নার স্বরে অসহিষ্ণুতা, ‘আমার সাথে কোনো কথা তুমি বলবে না। আমি আর কথা বলব না, তোমার সাথে।’

আমি বলি, ‘কেন কী হইল?’

‘না কিছু না। তুমি জানো না, আমি তুমি ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলি না। তোমার একবারও মনে হয় নাই, আমার কষ্ট হচ্ছে এতদিন কথা না বলে থাকতে?’

আমি বলি, ‘কী অদ্ভুত ব্যাপার। তোমার সাথে আমার সুন্দর একটা বন্ধুত্ব। আমাদের দুইদিন, চারদিন, দশদিন, একমাস কথা না-ও হতে পারে। আমি ঢাকার বাইরে যেতে পারি। তাই বলে কষ্ট পাওয়া-পাওয়ি তো ঠিক না। ঠিক আছে, চেষ্টা করব এরপর নিয়মিত কথা বলতে।’

শুনে পাখিটি লাফিয়ে লাফিয়ে শিস বাজায়। তারপর আহ্লাদি সুরে বলে, ‘আমি সবই বুঝি। কিন্তু হঠাৎ তুমি নাই হয়ে গেলে আমার মধ্যে শূন্যতা তৈরি হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

আরেক রাতে পাখিটা আমাকে শোনায় তার এক বিপত্নীক বন্ধু জাহিদের কথা। পঁয়তাল্লিশোর্ধ্ব এই মানুষটির তরুণ বয়সে স্ত্রীবিয়োগ ঘটে। তারপর আর বিয়ে করে নাই সে। জীবন তার দিব্যি চলে যাচ্ছিল, ঘুরে ফিরে আর সিনেমা দেখে। কোথায় সূর্য-উৎসব, কোথায় চন্দ্র-উৎসব, পাহাড়ি কোনো সম্প্রদায়ের কোথায়, কখন, কোন পার্বণ চলছে, এসবের খোঁজে। দু’-তিনজন বন্ধু নিয়ে প্রতি পূর্ণিমায় সে কক্সবাজার চলে যায় সমুদ্রে।

‘বয়স পঞ্চাশে পৌঁছানোর অল্প কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে বন্ধুর অনুরোধে এক নিউ ইয়ার পার্টিতে যায়, যেখানে এক মাতাল তরুণী তার সাথে নাচতে আগ্রহী হয়। মাতাল এই তরুণীকে পার্টি শেষে বাড়ি পৌঁছে দেবার সময় গাড়ি থেকে নামার আগে সে জাহিদকে একটা চুমু খেতে চায়। জাহিদ অনুমতি দিলে একটা প্রগাঢ় ফরাসি চুমু খেয়ে জাহিদকে “গুড নাইট, বেবি” বলে ঘরে ঢুকে যায়। সেই রাতে জাহিদের আর ঘুম হয় না। তারপর বহুরাত জাহিদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। একসময় নিউ ইয়ার পার্টির মাতাল সেই চব্বিশ বছর বয়সী তরুণী তিলোত্তমার সাথে তার যোগাযোগ এবং বন্ধুত্ব হয়। তিলোত্তমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে, রেস্টুরেন্টে যায়। বাড়ি ফিরে আমাকে বর্ণনা করে তিলোত্তমার সৌন্দর্য। বলে, “তিলোত্তমা রেস্টুরেন্টে বা গাড়িতে আমার পাশে বসে পুরো সময় তার প্রেমিক ফাহাদের গল্প করে।” বলে, “তিলোত্তমা আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে নিউ ইয়ার পার্টিতে তার মাতলামির জন্য। ফাহাদ আমেরিকায় থাকে। বছরে একবার তিলোত্তমার সাথে দেখা হয়। আমার কাছে মেয়েটা সর্বক্ষণ তার প্রেমের গল্প, প্রেমিকের রূপ, সৌন্দর্য, মহত্ত্ব বর্ণনা করে।”

‘জাহিদ বাড়ি ফিরে সুনসান রাতের বাতাসে তার বাড়ির উঠানে অতিকায় নিমগাছের নিচে আমার খাঁচা কোলে নিয়ে বসে। বলে, “শোনো পাখি, নিউ ইয়ারের সেই রাতের পর আমরা কেউ কাউকে স্পর্শ করি নাই। কিন্তু তিলোত্তমা যে আমার সাথে পৃথিবীর কোনো একটা কিছু নিয়ে গল্প করে, আমার সাথে এত কথা বলে, সে যে গাড়িতে আমার পাশে বসে থাকে, এতেই আমার নিজেকে সুখী বা ভাগ্যবান মানুষ মনে হয়।”

 


আমি পাখিটার খাঁচার সামনে যাই। আমাকে দেখামাত্র তার প্রলাপ শুরু হয়ে যায়। ‘আমি তোমার চেহারা দেখতে চাই না। কেন আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছ? আমি তোমাকে ঘৃণা করি।’ আমি খাঁচার দরজা খুলতেই চিৎকার, ‘আমাকে কি খাঁচার বাইরে ছুড়ে ফেলছ? আমি অন্য কোথাও যাব না তো। তোমাদের আমগাছে বসে থাকব।’

 

‘জাহিদ কোনোদিনও তিলোত্তমাকে মুখ ফুটে বলতে পারে নাই যে সে তার সমস্ত অবসর কাটায় তিলোত্তমার ভাবনায়, দু’চোখ বন্ধ করলেই সে তিলোত্তমার চোখ দু’টি দেখতে পায়। জাহিদ তার অব্যক্ত সব গোপন কথা জমিয়ে রাখত আমাকে বলার জন্য। আমার খাঁচাটা হাতে নিয়ে কখনো দোলনার মতো দোলাত আর গল্প করত। তার দু’চোখ তখন তারার মতো ঝিকমিক করত।

‘বিষণ্ন, স্বল্পভাষী জাহিদ প্রায় ভুলতে বসেছিল এই জীবনে তার প্রেমে পড়ার স্মৃতি। মাতাল তিলোত্তমার এক রাতের প্রমত্ত চুমু তাকে উন্মূল প্রেমিকে রূপান্তরিত করে। জাহিদের অকারণেই সবকিছু ভালো লাগে, বিশেষ করে তিলোত্তমাকে পাশে বসিয়ে ড্রাইভ করার সময়, সে তার দিকে তাকিয়ে হাসলে এত ভালো লাগে… পৃথিবীটা এত মধুর হয়ে যায় তখন!’

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে নানা বিরক্তির উপলক্ষ হয়ে ওঠে পাখিটি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জাজমেন্ট দেওয়া শুরু করে। প্রায়ই বলে, ‘তুমি ভীষণ চতুর লোক, একজন সফল মানুষ। সফল মানুষেরা প্রায় সবাই চতুর।’ আমার কাছে রীতিমতো বিরক্তিকর ঠেকে। আমি সিগারেট খেতে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেই। একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে তীক্ষ্ণস্বরে চিৎকার করে মানুষ এবং পাখির মিশ্রণে এক অদ্ভুত কণ্ঠস্বর আমাকে বলে, ‘তুমি এত হিসাব করে কথা বলো, আমার রীতিমতো অসহ্য লাগে।’ বলে, ‘আমি সারাজীবন যাদের সাথে কথা বলেছি তারা সকলেই বড় সাধারণ, সাদামাটা মানুষজন। তোমার মতো সফল সরকারি আমলা না। এক্কেবারে লুজার টাইপের ব্যর্থ মানুষজন। আমি গড়গড়িয়ে সব কথা বলে যাই, আর তুমি শুনে যাও চতুর লোকের মতো। বড় চালাক তুমি। তোমার ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, তোমার বউ, তুমি, সবাইকে বড় বেশি ন্যাকা মনে হয়। বড় চতুর লাগে। তোমরা সবাই সবার সাথে দিনরাত ভান করো। চালাকি করো। সবাই সবাইকে ঠকাও, প্রতারণা করো। নিজের ওপর রাগ হয়, কেন তোমার সাথে কথা বলতে শুরু করেছিলাম তাই ভেবে।’

এসব শুনতে শুনতে বারান্দায় পাখির সামনে যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দেই।

আরেকদিন আমাদের বাড়ির খোলা লনে এক পার্টির আয়োজন করি, সস্ত্রীক আমার অফিসের সহকর্মী, ভার্সিটির পুরানো বন্ধু সবাই মিলে জমজমাট পার্টি চলে অনেক রাত পর্যন্ত। রাতে ঘরে ঢোকার সময় ময়না তীক্ষ্ণস্বরে বলে, ‘তোমার সাথে কথা আছে। তোমার কি সময় হবে পাঁচ মিনিট আমার সাথে কথা বলার?’

আমি কাছে যেতেই সে তার অনুযোগ অভিযোগ করে যেতে থাকে। ‘তুমি জানো, তুমি যে একটা সীমাহীন প্রতারক, ভণ্ড? রাতে সিগারেট খেতে খেতে আমাকে বহুবার বলছ তোমার বউ একটা অসভ্য মহিলা, তার অত্যাচারে তুমি জর্জরিত। অথচ পার্টিতে তুমি সবার সামনে ঘোষণা করলা, “আমার সব সাফল্যের পিছনে আমার স্ত্রীর অবদান অসামান্য। আমার স্ত্রী কাশফিয়া ছাড়া আমি এতদূর আসতে পারতাম না।” বিশ্বাস করো, তোমার এসব নাটক দেখে আমার নিজের ওপর রাগ হয়। জীবনে কখনো ভণ্ড, প্রতারক, চতুর মানুষের সাথে কথা বলি নাই। অথচ ঠিক আধঘণ্টা পরই সবার দৃষ্টির অগোচরে তোমার এক কলিগের স্ত্রীর কোমরে হাত দাও, আর সেও প্রতি উত্তরে তোমাকে চিমটি কাটে। মাশরুক, তুমি কতটা ভণ্ড, বলো তো? পুরো অনুষ্ঠানে আমি তোমার দিকে চোখ রাখি। আমি তোমাকে ঘৃণা করি। নিজেকেও ঘৃণা করি তোমার মতো চতুর মানুষের সাথে কথা বলার জন্য।’

আমি ভুলে যাই আমি ছাড়া পাখির কথা বলা আর কেউ শুনতে পারে না। আমি চারপাশে তাকিয়ে বলি, ‘প্লিজ, আস্তে কথা বলো, থামো।’ তারপর দ্রুত ঘরে যাই। আমার বেডরুম পর্যন্ত তার তীক্ষ্ণ কণ্ঠ ভেসে আসে, ‘আমি তোমাকে ঘৃণা করি, ভণ্ড।’

আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করি, ‘তুমি কি শুনতে পাইতেছ পাখিটা যে চিৎকার করতেছে?’ কাশফিয়া বলে, ‘না, কোনোকিছু শুনি নাই তো।’ তীক্ষ্ণকণ্ঠে পাখি চিৎকার করে যায়। ‘আমি তোমাকে ঘৃণা করি, চতুর লোক।’ আমার ভাইয়ের ঘরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি, ‘পাখিটা কেমন চিৎকার করতেছে। শুনতে পাইতেছ?’ আমি ভাবি রিমনকে বলি পাখিটাকে বিক্রি করে দিতে, কারণ এর মুখোমুখি হয়ে আমি একে কারো হাতে তুলে দিতে পারব না। বলি, ‘মানুষের মতো কথা বলে শুনতেছ না?’

সে হেসে বলে, ‘তুমি ছাড়া আর আমরা কেউ তো পাখির ভাষা বুঝি না।’

আমি বলি, ‘রিমন, পাখিটাকে ফেলে দিয়ে আসো অথবা কোনো বন্ধুর বাসায় দিয়ে আসো প্লিজ। যতদিন এই পাখি বাসায় থাকবে, তোমরা বলবে আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।’ খানিক পরেই সতর্ক হয়ে যাই। পাখিটা যদি পরিচিত বন্ধু বা আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে কারো সাথে কথা বলতে শুরু করে। আমার এবং আমার পরিবারের সব গোপন যদি আবার প্রকাশ করে দেয়। রিমনকে বলি, ‘থাক, পাখিটা তোমার আর কাউকে গিফট দেয়ার দরকার নাই।’

রাতে সিগারেট খেতে বারান্দায় গেলে আমাকে দেখে পাখিটা আবারও চিৎকার করে, ‘ভণ্ড, প্লিজ আমার সামনে আর আসবা না। আমি সারাজীবন সরল, নিষ্পাপ মানুষের সাথে কথা বলেছি। কেমন করে যে তোমার মতো একটা মিথ্যাবাদীর সাথে কথা বলতে শুরু করি। আমি নিজেকে ঘৃণা করি।’ পাখির কথার কোনো জবাব না দিয়ে আমি দ্রুত ঘরে ঢুকে যাই। প্রায় সারারাত পাখিটা ‘আমি তোমাকে ঘৃণা করি’ বলে চিৎকার করে যায়। আমার স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি, সে কিছু আঁচ করতে পারছে কি না।

শরীর খারাপের অজুহাতে সকালে অফিসে যাই না। স্ত্রীকে বলি, ‘এই যে ময়নাপাখিটা মানুষের মতো করে কথা বলে, আমার মনে হচ্ছে আমার জন্য এটা অস্বাভাবিকতা। পাখিটাকে তুমি মেরে ফ্যালো, কাশফিয়া। অথবা এটাকে আগুনে পুড়ায়ে ফ্যালো।’ কাশফিয়া বলে, ‘একটা পাখিকে মেরে ফেলতে হবে কেন? তুমি কাউকে গিফট করে দাও।’

আমি বলি, ‘যাকে দিব তার ফ্যামিলির কারো মধ্যেও হয়ত এই পাখির জন্য অস্বাভাবিকতা আসতে পারে।’

দুপুরের খাবারের পর কাশফিয়া হিন্দি সিরিয়ালে ব্যস্ত হয়ে গেলে আমি পাখিটার খাঁচার সামনে যাই। আমাকে দেখামাত্র তার প্রলাপ শুরু হয়ে যায়। ‘আমি তোমার চেহারা দেখতে চাই না। কেন আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছ? আমি তোমাকে ঘৃণা করি।’ আমি খাঁচার দরজা খুলতেই চিৎকার, ‘আমাকে কি খাঁচার বাইরে ছুড়ে ফেলছ? আমি অন্য কোথাও যাব না তো। তোমাদের আমগাছে বসে থাকব।’ তারপর সানুনয় বলে, ‘প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিও না বা অন্য কোথাও ফেলে এসো না, প্লিজ। আমি তোমাকে আর ফালতু কোনো কথাই বলব না। আর কোনো কথাই আমি বলব না। তোমার বাড়িটা দেখতেই আমার ভালো লাগে। তোমার স্ত্রীকে, তোমার ভাই, সবাইকে শেষমেষ আমি পছন্দ করি। অভিমানে উল্টাপাল্টা বকেছি। আমি কোনোভাবেই তোমার এখান থেকে অন্য কোথাও যাব না।’

আমি যখন তার পা দুটি বেঁধে ফেলি, প্রথমে সে সুতীক্ষ্ণ কণ্ঠে পাখির মতোই চিৎকার করে, পরক্ষণেই আবার মানুষের মতো করে কথা বলে, আমাকে অভিসম্পাত দেয়। ‘আমি তোমাকে ভয়ঙ্করভাবে ঘৃণা করি।’ আমি যখন রান্নাঘরে চুলা জ্বালি, পা-বাঁধা অবস্থায় আগুনের দিকে তাকিয়ে স্থির, নিষ্কম্প কণ্ঠে আমাকে বলে, ‘আমাকে খুন করবা?’

পাখিটাকে যখন জ্বলন্ত আগুনে ছেড়ে দেই, ও শুধু ডানা ঝাপটায় আর তীক্ষ্ণ ধারালো চিৎকার বের হয় ওর কণ্ঠ থেকে। হয়ত মানুষের মতো কথা বলা ভুলে গেছে তখন। আমি তড়িঘড়ি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যাই। বেডরুমে ঢুকে আমার স্ত্রীকে বলি, ‘পাখিটারে চুলায় পুড়িয়ে মেরে ফেলছি। তুমি চুলাটা নিভায়া দিয়া আসো।’

ডিসেম্বর ২০১১, পূর্ব তিমুর


রাশিদা সুলতানা

রাশিদা সুলতানার জন্ম ১৯৭৩ সালে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাবার কর্মসূত্রে আশৈশব তিনি বড় হন ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স করেন। পরে ‘জাপান ডেভলপমেন্ট স্কলারশিপে’ জাপানের রিৎসুমেইকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় মাস্টার্স করেন। তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ চারটি : ‘অপনা মাঁসেঁ হরিণা বৈরী’ (২০০৪), ‘আঁধি’ (২০০৭), ‘পরালালনীল’ (২০০৯), এবং ‘পাখসাট’ (২০১২)। কাব্যগ্রন্থ একটি : ‘জীবনযাপন দখিন হাওয়া’ (২০০৮)। উপন্যাস দু’টি : ‘সাদা বিড়ালেরা’ (২০১৩) এবং ‘শূন্যমার্গে’(২০২২)। তাঁর নির্বাচিত গল্প সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে ২০১৭ সালে। রাশিদা ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করে সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার হিসাবে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশে কাজ করেছেন। রাশিদা ২০১০ থেকে জাতিসংঘে চাকরি করছেন। বর্তমানে তিনি কেনিয়াতে জাতিসংঘে কাজ করছেন।

শেয়ার