ধ্যান
ধ্যানের ভেতর কিছু পাই নাই।
অন্তত তোমার মুখ খুঁজে পাবার চেষ্টা করা
বোধহয় দরকার ছিলো বড়ো,
নিশ্ছিদ্র বাসরে কালনাগ ঢুকে বসে কেন অকারণেই—
বহুবার বেহুলাকে প্রশ্ন করেও উত্তর পাইনি।
অর্বাচীনের মুখে তর্ক কি শোভা পায়, হে মানব
অশ্বত্থের ছায়ায় যে সন্ধ্যারা
নিরবে হেঁটেছে আঁধারের দিকে মুখ করে
তারা চুপেচুপে বলেছিল পাতার কানে—
স্তুতিগানে মুগ্ধ হবার আগে
বেহুলা নারী ছিল।
সেই একই মুখ বারবার আমি খুঁজতে চেয়েছি
মাটির যন্ত্রণায়, জলের তৃষ্ণায়, বাতাসের নিরর্থকচুপে;
অনন্তকাল একই সূর্যের উত্তাপ সয়েও
বুদ্ধ, আমি তোমাকে ধ্যানের ভেতর
আনতে ব্যর্থ হয়েছি।
চুমুতে ঘ্রাণ নেই
আমাদের দিগন্ত ছুঁয়ে আছে অশীল জোছনা
শূন্যতা জুড়ে পিঁপড়ের বসতি শুধু—
জানালায় দাঁড়িয়ে প্রাগৈতিহাসিক ল্যাম্পপোস্ট
তার ছায়ায় মাতৃ-উপাসনা হয়,
ধুলোয় উড়ে যাচ্ছে উষ্ণ আলিঙ্গন
নিরাপদ দূরত্বে ম্রিয়মাণ চুমু
নতুন পৃথিবী এখন অস্তগামী সূর্য দেখছে—
ফুরিয়ে আসছে যে জনপদ
তাদের শরীরের ঘামে ক্লেদাক্ত যৌবন;
অস্তিত্বের আড়ালে জন্মে দ্বিতীয় বিশ্বাস
তারা বলতে শুরু করলেই
ক্ষুণ্ণ হন মানুষের ইশ্বরেরা।
তারা জানে, বিস্মৃতির আড়ালে মানুষ
তাদের অতীত গোপন করে নেয়।
বালিময় সৌররসে চর্বির সৌন্দর্য গুজে
প্রেমের উপাখ্যান হয়, স্পর্শেরও ওঠানামা হয়—
হয়তো কিনারায় ঢেউ এসে জমে,
মানুষের মানুষ হতে এখনো অনেক পথ
এখনো মুখ ও মুখোশের মধ্যে
মাত্র বালিপরিমাণ দূরত্ব।
প্রেমের দাবীতে মানুষ ফুরিয়ে আসে
পড়ন্ত লালিমায় ভাসছে প্লাস্টিক ঘ্রাণ।
ক্ষুধা
এক প্লেট ধোঁয়া উঠা ভাত—
ধবধবে শাদা- সকালবেলার রোদ!
মিঠে আলো- আলোর ভেতর, শাদার ভেতর
কুয়াশা কিছু, ধীর লয়ে ধোঁয়ার নাচন।
এক পশলা গন্ধের ছাঁট
এইখানে থামো কিছুক্ষণ—
দম নাও- বুকভরে
ঘ্রাণগ্রন্থি খুঁজে পাক আগে
তার স্বাদ, আহা- দাঁড়াও!
এখুনি স্পর্শ নয়—
আঙুলের ডগায় তারে আদর কর,
এলোমেলো হাওয়ার মতো নাড়িয়ে
জিভের স্পর্শ নেবার আগে—
লালায় কিংবা দাঁতের তলায়
নখ অথবা আঙুলের কঠিন মুঠোয়
যাবার আগে—
শুরু থেকে আরো একবার
শুধু দেখার সুখ নাও
ভালোবেসে—
এক প্লেট ধোঁয়া ওঠা ভাত
অথবা রমনী
মৃত মথের ডানায়
আমি নিশ্চিত
তোমাদের পৃথিবীতে হারানোর কোন নাম হয় না
বিদিত ল্যাম্পপোস্টের আকর্ষণ উপেক্ষা সহজ নয়,
তাই, অজস্র মথের পাখায় ঝরে পড়ে সন্ধ্যার হাওয়া
তুমি, তোমরা এসেছিলে;
তোমাদের বর্ণিত শহুরে চর্চা নিয়ে।
আড়ালে অন্ধকারের ছায়ায়
তোমাদের মৃতদেহগুলো
ধুলোর কুয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছিল।
তোমরা দেখোনি,
তোমাদের মৃতদেহের আকৃতি
ক্রমেই গণশৌচাগারে রূপান্তর ঘটেছে!
তোমরা হাসছিলে।
তোমাদের অট্টহাসিতে আমিও মুচকি হেসেছি—
আমি ইকারুস
পতনের আগে আমি
চেয়েছিলাম স্নান হোক
এখানে সোনালি আভার রোদ ঘাম হয়—
নোনা বালিয়াড়ি পেরিয়ে যে বাতাস
হতে পারতো খসে পড়া ডানা,
তার কাছে ফেলে এসেছি
সর্পিল পৃথিবী এক—
স্বপ্নহীনের চোখে
ইকারুস ব্যথায় কীভাবে কেঁদেছে—
কেউ কি জানতো, গলে যেতে যেতে
সে চেয়েছিলো আরেকবার—
অন্ধকার গিলে নেবে অস্বচ্ছ গুঞ্জন যতো।
কিংবা শেষ বারের মতো
বৃষ্টির স্ত্রোতধারায় ভিজে যাবে
অজস্র বিকেলের ঘুড়ি
সমুদ্রে যেতে হয় নীল শাড়ি পরে
সূর্য ঘুমে ডুবে যাবার আগে,
তুমিও জেগে উঠো
অই চিবুকের তিলে।
সুপ্তা সাবিত্রী (কর্ডেলিয়া বিশ্বাস)
জন্মস্থান: নোয়াখালী
জন্ম তারিখ: ২৪ নভেম্বর
পেশা: শিক্ষকতা
এখন পর্যন্ত কোন বই প্রকাশ হয়নি।