নিষিদ্ধ ফল
নদীতে ভেসে আসা ফল খাওয়া ঠিক না
একটা খেলে হাশরের দিন ফলের মালিকরে
দিতে হবে এক কোটি ফলের দাম
তখন টাকা পাব কোথায়?
টাকার বদলে দিতে হবে পূণ্য
পূণ্যের বিনিময়ে মোচন করতে হবে পাপ
পূণ্য কমে গিয়ে যদি পাপের পাল্লা ভারী হয়ে যায়
তবে নিশ্চিত দোজখ
তাই ছুঁয়েও দেখি না
নদীতে ভেসে আসা ফল
কিন্তু তবু
গাছটি নদীর উপরে কেন
নদীটি গাছের নিচে কেন
এইসব প্রশ্ন আসে মনে
আর দেখি দোজখের ভয়
ভুলে কেউ কেউ খায়
নিজে খায়, সন্তানরে খাওয়ায়
নদীতে ভেসে আসা নিষিদ্ধ ফল
খায় আর বলে, বাতাস দায়ী
বাতাসই ফেলেছে ফল নদীর পানিতে
বাতাস কি পাপ করে
পাপী বাতাস কী বেহেশতে যাবে?
শয়তান
শয়তানগিরি করা শয়তানের কাজ
মানুষগিরি করা মানুষের
ফুলগিরি করো ফুলগাছের কাজ
উড়ালগিরি করা পাখির
মানুষ তবু ছুরিগিরি করে
যুদ্ধগিরি করে
সমরযন্ত্র তৈরির বিজ্ঞানীগিরি করে
কেন
এই প্রশ্নের পাশে একটা পাগল
আরো একটু পাগল হয়
মা তারে পৃথিবীর দিকে টান দিলে
সে মাতৃ-বেদনা ছিঁড়ে
হারিয়ে যায়…
দায়
মানুষকে খুন করা হয় যেখানে
সেখানটাও কি কিছুটা খুনী?
মানুষকে কবর দেয়া হয় যেখানে
সেই কবরও কি কিছুটা লাশ?
যেখানে পাপীর শাস্তির জন্য দোজখ নির্মাণ করা হয়
সেই দোজখও কি কিছুটা পাপী?
যেখানে পুণ্যবানদের জন্য নির্মাণ করা বেহেশত
সেই বেহেশত কি কিছুটা পুণ্যবান?
—এই জিজ্ঞাসাগুলো ঠোঁটে নিয়ে একটা
পাখি উড়ে যায় মানুষের কাছাকাছি
সাথে সাথে মানুষ তার ভিতরের শিকারিকে জাগায়
আর পাখিহত্যার গান হিসেবে গাইতে থাকে—
পাখির মৃত্যুর জন্য মানুষ নির্দোষ
দোষী ঐ শিকারশাস্ত্র
শিকারশাস্ত্র বলে ওঠে—আমি না, বন্দুক!
বন্দুক বলে—আমি না, গুলি!
গুলি বলে—আমি না, শক্তি! যা আমারে পাঠায়
ছিঁড়ে ফেলতে পাখির আত্মা!
শক্তি বলে—আমি না, আঙুল, যে ঘুমন্ত শক্তিরে জাগায়!
পাখি বলে—কেউ না, পাখির সৃষ্টিকর্তা দায়ী!
মানুষও কি সব পাপের ভার খোদার উপর ফেলে
উড়ে যাবে বেহেশতে, পুরস্কারের দিকে??
কবর
অসুখের দিনে
বনে যাওয়ার স্মৃতি মনে পড়ে
বনে ওষুধ থাকে
কিন্তু সেদিন ওষুধ নয়
গাছটির ফুলই ভালোবেসেছিলো সবাই!
কিন্তু আমার মনে হলো
পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী ফুলগুলি এই গাছে ফুটে আছে
এক-একটা ফুলকে মনে হলো
মানুষের এক-একটা বিহ্বল বোন
এখন আমার জীবন
একটা আকন্দ-বাগান। আকন্দ-ফুলের পাশে
ফুটে আছে একটা পর একটা গোরস্তান
স্কুলের মেয়েরা
৩১ বছর দূর থেকে স্কুলের মেয়েরা আসছে
অসুখ ও সন্তান নিয়ে আমাকে বলতে আসছে
তাদের মৃত গোলাপ গাছের কথা
স্কুলের কাজুবাদামের গাছের নিচে দাঁড়িয়ে
আমরা স্বপ্নের কথা বলতাম
আমাদের পাশে থাকতো ঘাসের ওপর রোদ
আসন্ন যৌবনের গন্ধে মাতাল হয়ে
আমরা একজন আরেকজনকে ভাবতাম ফুল
এখন আমরা একজন আরেকজনের অশ্রুর নদী
এখন আমরা একজন আরেকজনের গোপন কুঠুরি
কাঁদবার।
এখন দুঃস্বপ্নের বনের ভিতরে বসে
আমরা স্কুলের মাঠের রোদের কথা ভাবছি
ভাবছি আমাদের স্বপ্নের কবরটি কোথায়
আমরাই আমাদের স্বপ্নের গোরস্তান—
সমস্বরে এই বাক্য বলে আমরা যার যার নিজের রাস্তায়
হাঁটবো বলে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠি
চিৎকায়গুলো ছুটে যায় আমাদের জন্মের জানাজায়!
মুহম্মদ ইমদাদ
জন্ম ৬ জানুয়ারি ১৯৭৮; মৌলভীবাজার। স্নাতকোত্তর, রাজনীতি ও লোক প্রশাসন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। পেশায় শিক্ষক।
প্রকাশিত বই :
কবিতা— অন্ধ পৃথিবীর জানলাগুলি; নদীমাতৃক পৃথিবী মেঘমাতৃক আকাশ; প্রেগন্যান্ট পাগলি ও অন্যান্য কবিতা; পাখির জুতা নাই।
অনুবাদ— দূরাগত স্বর; চূর্ণচিন্তন; আর্থার শোপেনহাওয়ারের কথাগুলি।
প্রবন্ধ— আধুনিক কবিতা বিষাদবৃক্ষের ফুল ও অন্যান্য প্রবন্ধ।
উপন্যাস : এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে।
ই-মেইল : imdadmra@gmail.com