পাঁচটি কবিতা | ফরহাদ নাইয়া


বাতাসের সওদাগর


ফকু’র বেচতে ভাল্লাগে। প্রতিদিনই সে কিছু না কিছু বিক্রি করে। চাঁদের আলো বেচতে গিয়া সে সূর্যের কাছে ধরা খাইছিল। নদী বেচতে গিয়া মাছের কবলে পড়ছিল একবার। জনশ্রুতি আছে সে হাওয়া বেচে চলে। এ হাটের বাতাস ও হাটে বিক্রি করে। তথাকথিত দোকানিরা তাকে এড়িয়ে চলে, বদ হাওয়ার ভয়ে থাকে, বাতাসে তার বিস্তর বিস্তার। একদিন বিপত্তির চূড়ান্ত মুহূর্ত আসে— বাতাস সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায়। দশদিক থেকে হাওয়ার গোডাউন শূন্য হয়ে গেলে সে অমাবস্যা ব্যবসার কথা ভাবে। কিন্তু সে বছর— বছর জুড়ে পূর্ণিমা। দিনরাত সমান সমান। ফলে নিজের শরীর না বেচে আর উপায় থাকে না। দেহকে ইনভেস্ট করে এবার সে নরক ব্যবসায় নামে। খোদার কাছ থেকে বাতাসের সওদাগর নরক কিনে শয়তানের কাছে চড়া দামে বেচে দিয়ে স্বর্গে পর্গে চিশটা পায়খানা সমেত একটা পাঁচতলা বাড়ি করে। সেখানকার এক একটা ফ্লাট পৃথিবীর সমান। এক একটা পায়খানা প্রশান্ত মহাসাগরের মতো। অনন্তকাল হাগলেও সেটা ভরবে না। বেহশতবাসীর কাছে এই বাড়ি বিক্রি ক’রে সে শয়তানের কাছ থেকে আবার নরক ক্রয় করে। প্রচুর লভ্যাংশ সমেত খোদার কাছে গিয়ে বিক্রি করে দেয় নরক। আগুনের অপব্যবহারে একদিন নরকে বিশাল দুর্ঘটনা ঘটে সমস্ত নরক পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফকু এবার তিনশ আশি রকমের আজাবসহ একটা বিশাল নরক তৈরি ক’রে ইন্দ্র ও ইবলিশের মধ্যে নিলামে ওঠাতে ওঠাতে ইবলিশকে ইন্দ্রের কাছে আর ইন্দ্রকে ইবলিশের কাছে বিক্রি করে নরককে সে দুনিয়াতে উন্মুক্ত করে দেয়।


ধর্ম


ঘুমের ভেতর মরে গেছি। জেগে উঠে দেখি লোকজন আমাকে কাফনের কাপড়ের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। কাফনের কাপড়ের কাছে হস্তান্তরের আগেই আমি দৌড় দিলাম। পালাতে চাইলাম। লোকজন আমাকে ধরে ফেলল। এবার তারা আমাকে আগুনের কাছে বিক্রি করে দিল। এবারও পালাতে সক্ষম হলাম। এরপর ক্রমান্বয়ে আমাকে পাহাড়, নদী আর মাটির কাছে বেচে দেওয়া হলো। ভাগ্যক্রমে আমি প্রতিবার পালাতে সক্ষম হয়েছিলাম। কোনোভাবে পেরে না উঠে ওরা আমাকে আগুন বানিয়ে বাতাসের কাছে বিক্রি করে দিল। আর আমি চিরদিনের জন্য ধরা খেয়ে গেলাম।


ধার্মিক


ধর্ম আর বিজ্ঞান বইয়ের দেখা হল বইমেলায়। মাসব্যাপী পাশাপাশি থাকায় ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠল তাদের। একদিন চুক্তি করল যে তারা, নিজেদের খোলস বদলাবে। বিজ্ঞান যাবে বিশ্বাসের মলাটে আর বিশ্বাস আসবে বিজ্ঞানের মলাটে। তো এই চুক্তি মতো তারা মলাট বদল করে ফেলল, আর তাদের কিনে নিয়ে গেল দুই রুচির দুই মহান পাঠক। ধর্মীয় বইয়ের খদ্দেরটি ছিল মসজিদের ইমাম। সে এহেন বই পড়ে বিজ্ঞানবক্তা হয়ে গেল। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের লগে সুরা হাসরের তিন আয়াত তেলায়ত করে নামাজ শেষ করে। বিজ্ঞান বইয়ের খদ্দের ছিল একজন রসায়নবিদ সে তিন চিল্লার ল্যাবে গিয়া আল্লাহর সাথে শয়তান মিক্স করিয়া নবী মোহাম্মদ(সঃ)এর নামে পঞ্চম প্রজন্মের এক বিস্ফোরক বানাইয়া ফেলল।


 সুখ


সুখ নিয়া রোদে দাঁড়াইতে নাই— শুকাইয়া যায়। সুখকে সবসময় গরম কইরা রাখতে হয় নয়ত বাসি হইয়া যাইতে পারে। সুখ লইয়া পুকুরে নামলেও বিপদ— ঠান্ডা লাগে, খোলা জায়গায় রাখলে চুরি হইয়া যায়। ঘরের মধ্যে রাখলে সুখের দম বন্ধ হইয়া যায়। বন্ধুর কাছে সুখ নিয়া গেলে সেও ভাগ চায়। ফলে সুখ লইয়া পড়ছি বিপদে। কোনোভাবে আমার কাছে সুখ আইসা পড়লে তারে মেইনটেন করতে করতে আমি হাঁপাইয়া উঠি। দুখি হইয়া যাই। এইবার ঠিক করছি সুখ আসলে আমি তারে লইয়া নদীতে এমন ডুব মারমু আর উঠুম না।


মাটি


আমি বিশতলা থেকে পড়ে গেছি। আমার মাথা উড়ে গেছে, এক পা সংসদে অন্য পা সচিবালয়ে ছিটকে পড়েছে। একটি হাত প্রেমিকার হাতের পাশে মরামাছের মতো পড়ে ছিল। হৃদপিণ্ড আগেই ছিল না, কলিজা দিয়ে চলতাম। কলিজাটা কার কাছে গেছে আমার মা বলতে পারবে। পাকস্থলি নিশ্চয় বাপের কবরের পাশে পড়ে আছে। আমি কোথায়? সবাই আমাকে খুঁজল। বিশতলার নিচে আমার থ্যাঁতলানো পাছা নিয়ে কাঁদল সবাই। জানাজা দিল এক পাথরের— যে মানুষের তলদেশে চুপে ছিল।


ফরহাদ নাইয়া

ফাল্গুনের ৩ তারিখে জন্মাইছি,

বাড়ি- নদীর পাড়

বাঘা আইড় দম্পতির তিনমাত্র সন্তান ।

এখন ঢাকায় থাকি, মানুষের বাজারে ঘুরে বেড়াই । যেহেতু মাছ, বুড়িরগঙ্গাজলে পরিচয় ঘোলা হয়ে গেছে। ২টি বই বের হয়েছে মেঘ আর চন্দ্রবিন্দু থেকে। আমার লেখাপত্র পাঠ করতে মেঘ আর চন্দ্রবিন্দুতে জাল ফেলতে পারেন। প্রথম বই –‘মাছেরা শহরে আসায় মানুষেরা নদীর ভাব ধরল’। আমি কোন ভাব ধরি নাই। অভাবে থাকি, খাই দাই , ঘুমাই। ২য় বই ‘হৃদমাতা’ এখানে মায়ের চেয়ে বেশি প্রেমিকাকে পাবেন। যদিও সে প্রেম নাই । না থাকা প্রেমের অনুভব আরো তীব্র । সেই তীব্রতা নিয়ে পাড় হতে চাই জীবন নামের মরা গাঙ। দুইটা ছোট কাগজের সম্পাদনা করি হারপুন ও রাষ্ট্র নামে । আগ্রহ থাকলে সেসব আপনার খুঁজে নিয়েন।

শেয়ার