তোমার উঠান
বাতাসের পর্দা সরালেই নিঝুম উঠান।
আলোর স্বচ্ছতায়
দূরত্বের ব্যাখ্যা কেবল একটিই পথরেখা।
এ প্রান্তে ঘন নিঃশ্বাস
ও প্রান্তে মৌন নির্যাস
এপারে সঘন সলাজ
ওপারে মৌন চিৎকার।
উঁচু উঁচু ছায়াপথ মাড়িয়ে বেঘোর হেঁটে চলি।
কেননা আলোর পর্দা সরালেই তোমার উঠান।
অন্ধকার ভালবাসে যে পাখি,
ভোরের মুখ খুলে গেলে সেও চায় আলো।
মগ্নতা পেলে যেমন তোমার আঙুল খোঁজে
অগঠিত কবিতার দেহ।
আমিও ঠিক ততটুকু। একজোড়া কৃষ্ণমনির
জমজ তৃষ্ণায়—
নিয়মিত অশ্বথের পাতা হয়ে আছড়ে পড়ি।
পরজীবী লাবণ্য
এইসব অনিবার্য দিনে
তোমার আয়ুর নির্যাস ও বিচ্ছিন্ন
সবুজ খেয়ে বেঁচে আছি।
বাকল চুয়ে শরীরে ফুটে উঠছে
পরজীবী ত্বকের লাবণ্য।
দ্যাখো,
আমি অহেতু সবুজ দ্যোতনা
ত্বকের মুখরতা
তোমাকে রক্ত নীল করা
প্রপাত দিয়ে
পৌঁছে যাচ্ছি
অনিবার্য দিক ও পতনের দেশে।
গাছপাথর
ভেবেছি পাবো
ভেবেছি আমি বৃক্ষের নিচে
বিস্তৃত ছায়ারা কখনো কার্পণ্য জানে না।
গাঢ় কালোর আগে সন্ধ্যা, তারও আগের সাদা আলোয়
তোমাকে পাওয়া যায় ভালো।
চোখের কথারা আর মৌন হবে না
এই ভেবে আঙুলের ডগা বেয়ে সমস্ত দিন
ক্লান্তিরা রঙ পায়, রাঙা হয় ধীরে।
সময় দীর্ঘ হয়, আরো দীর্ঘ হলে
যাবতীয় বিভোরতা শেষে যখন আমি ও বৃক্ষ মুখোমুখি
তখন সে কেবলই একটি পাথরগাছ অথবা গাছপাথর।
মুহূর্ত ভাঙলো
কেন বাজালে ডাক ও ডমরু?
সারাদিন শিমুল ফুটলো আর ঝরে পড়লো। রক্তরঙ শুকালো।
ক্ষুদ্র মুহূর্তের কাছে আরেকটি ক্ষুদ্র মুহূর্ত ঝরে পড়লো।
যেতে যেতে তোমার দিকে, পথের দিকে একা যাই।
হয়ত এ পথে লুকানো আছে মহিমা, মুহূর্ত শেষের।
পাখিটা কুহুস্বরে গাইছিল। তোমার দিকে আমার পথ থামলো।
ভাবতে চাইনি কোনো বিষাদভাবনা। তবু মুহূর্ত ভাঙলো।
শূন্য মাঠ
ফাঁকা মাঠে অমন সুর উঠেছে কেন?
শুধু শুধু শূন্য মাঠ। নাড়া পড়ে আছে।
সোনালি সম্ভাবনা নিয়ে কেউ বাড়ি ফিরে গেছে।
রাঘব ফড়িং একটা পা হারানো ফড়িংকে বলছে,
তুমি পশ্চাৎ, ময়দানে বেমানান। তুমি শষ্যের বিড়ম্বনা।
শুধু শুধু শূন্য মাঠ। নাড়া পড়ে আছে।
সকল সম্ভাবনা কেউ বাড়ি নিয়ে গেছে।
নুসরাত নুসিন
জন্ম: পার্বতীপুর, দিনাজপুর।
এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
কবিতার বই
দীর্ঘ স্বরের অনুপ্রাস (২০১৮), কাগজ প্রকাশন
কামনাফলের দিকে (২০২১), বৈভব
পুরস্কার
জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কার (২০১৭)
আদম সম্মাননা (২০২২), ভারত