একটা আস্ত জীবন
ওটা কী ছিল, পরাবাস্তবতা?
যেন অনতিদীর্ঘ দুঃস্বপ্ন তাড়া করেছে
ঘুম ভেঙে প্রজাপতির মতো মানুষটা
আবিষ্কার করেছে হিমায়িত লাশঘরে
মূক হয়ে পড়ে আছে স্থির সরীসৃপ
একে একে সব আলো নিভে যাচ্ছে
আর কোনো বন্ধু বা স্বজনের
পায়ের আওয়াজ নেই
ওটা একটা আস্ত জীবন
স্বপ্নহীন, জড় ও ঠাণ্ডা।
কোথাও
যেভাবে শেষ হবার কথা
সেভাবেই শেষ হয়ে গেছে
পচনের কাছে ফিরে গেছে
শঙ্খচিল
অলি-গলিতে ডুবছে সন্ধ্যা
সন্দেহের মতো তেজে
গোলাপি আভায় ঢাকছে বিষণ্ণতা
রোগ হয়েছে মাথার ভিতর
মানছে না কেউ শহরের
খোয়া যাচ্ছে চাকা
খোয়া যাচ্ছে ভূমি
খোয়া যাচ্ছে বুকের ছায়ায়
জমছিল যে নীরব পটভূমি
একটা মাতাল খুন হয়েছে
দায় নেই তার, ঋণ নেই কোনো
মানুষ একজন
দম হারিয়েছে
শবের দিকে তাকিয়ে দেখছে
মাছি উড়ছে
কোথাও কিছুই বদলায়নি
নদীর ধারায়, স্রোতে।
দশরথী
প্রথম প্রেমে পড়লাম, মাথায় ঝিম ধরে হিম হয়ে গেলো হাত পা। মুখ দেখে মনে হলো, এরকম দেখি নাই আর! দ্বিতীয় দফায় দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না যেন। দৌড়ে পালিয়ে রাস্তার শেষ মাথায় গাছের আড়ালে। সেখান থেকে দ্বিতীয় প্রেমের মুখ দেখা যায় না। তৃতীয়, চতুর্থ প্রেম এলো-গেলো। বুঝলামই না আলাদা করে তার অবস্থান। পঞ্চম্বারে ভোঁতা কথামালা ছাড়া কিছু মনে নাই। ষষ্ঠ প্রেমে মনে হলো, না প্রেম, না এই পৃথিবীর কেউ। নামের প্রেম নয়, তবু প্রেমে পড়ে যা কিছু অপার্থিব ঘটে, গেলো ঘটে কিছু কিছু প্রকৃতিবিধান! সপ্তমে মনে হলো, এই শুরু প্রেম। সব এলোমেলো, সব টিপটাপ। বাকি ছিলো অষ্টমী। ভাগ্যের জোর, হেলায় ফেলার নয়। তারপর মনে হলো, মানুষের হাতে নাই প্রেমে পড়া বা উত্থান। তাই নবমী, দশমীও এলো! এবার বিদায়ের পালা! এরই মাঝে কত ঘোর, কত মোহ, কত বেদনা! একে বলে দশ খুন মাফ।
পাখি রে তুই
আমার শব্দে বেঁচে থাকো তুমি
জীবন ভোগ আর সম্ভোগে
পড়ে থাকে সুদগ্র রাত আর কান্নালেপা গাল
নদী শুকিয়েছে সাদা বরফের দিন
জঞ্জাল মনে হয় সাধের আমাকে
ফিরে আসো আবার পুড়িয়ে রসদ নেবে বলে
ওদিকে আমার অস্থিমজ্জা শুকিয়ে গেছে
ঠোঁটে ছুঁয়ে দিলে বরফের কুচি
অপার্থিব আলো হেলায় এসে পড়ে জানালায়
মরণসুধা ঠোঁটে বয়ে উড়ে আসে পাখি
পাখি রে তুই
কঙ্কাল, পাঁজরের হাঁড়, উদ্বাস্তু জীবনের খেদ
চারদিকে নানা বর্ণের রশ্মি
পাখি রে তুই
হাঁটতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় হোঁচট
হিমমগ্ন হাত, মগজে মননে শব্দ-ঘূর্ণন
পাখি রে তুই
মরণসুধা ঠোঁটে বয়ে উড়ে যায় পাখি
পাখি রে তুই
পাখি রে তুই…
গোপন
ওক গাছ বাইরে, শীর্ণ ডাল কাঁপছে বাতাসে। আকাশে এখনও মেঘ সাদা, উড়ে যায়, নীল-ও অন্ধকার। দুপুরের রোদে ভালো লাগা ছিল— বেশ। কাউকে যে নাম বলিনি, সেই নাম ধরে বহুদিন পর ডাকতে ইচ্ছা করছে, সেই তাকে। বহুবারের চেষ্টায়ও প্রবল তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতো যার নামে, তবু জানানো যায়নি, “খুব ভালো লাগে!”
“ওহে, খুব ভালো লাগা! এক কাপ চা বানিয়ে দেবে?”
তানজিনা নূর-ই সিদ্দিকী
সংবাদ উপস্থাপক, বাচিক শিল্পী, হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল। সংবাদ কর্মী হিসেবে যুক্ত ছিলেন এনটিভি ও দেশ টেলিভিশনে। বর্তমানে ব্রিটিশ বাংলাদেশী টেলিভিশন চ্যানেল এস-এর সংবাদ বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি ইংল্যান্ডে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে কর্মরত।
শিল্পের নানা শাখায় বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পেয়েছেন স্বীকৃতি।
পারিবারিক আবহে সংগীত, আবৃত্তি ও লেখার চর্চার শুরু শৈশব থেকে. বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোয় লিখতে শুরু করেন স্কুলে পড়াকালীন।
বাংলাদেশের বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ইস্তেকবাল হোসেন নওরোজ তার দীক্ষাগুরু। যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, শিল্পকলা একাডেমি, রাগ রং একাডেমি এবং আবৃত্তি সংগঠন “শাব্দিক”- এর সঙ্গে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত আবৃত্তিশিল্পী। বিলেতে আবৃত্তি সংগঠন “বর্ণন” এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। রবীন্দ্রসংগীতে তালিম নিয়েছেন ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তনে।
২০২০-এ চৈতন্য প্রকাশনী থেকে তার প্রথম ও একমাত্র কবিতার বই ‘ঈশ্বরের মতো নতজানু’ প্রকাশিত হয়। সময়, সুযোগ পেলে অনুবাদ নিয়ে কাজের পাশাপাশি লিখছেন কলাম ও ছোট গল্প।