পাঁচটি কবিতা | জহির হাসান


ভালা কবিতা


ভালা কবিতা কাউরে লিখতে দেখলে
আমার চক্ষেতে পানি আসে কোন বা মায়ায়!
তারা জোট বান্ধি ফোঁটা হয়।
কে আগে ঝরিবে
কে আগে নামিবে এ ধরায়
দেবদারু ফুলের মতো নিরিবিলি প্রতিযোগিতা লাগায়!

‘তোরা থামবি।’ আমি কই।
ধমকাই ওদেরে
কেউ ভালা কবিতা লিখে কহন জানস তোরা?

কেউ ভালা কবিতা লিখলে
তার কয়দিন পর সে মারা যায়!
তাই বুঝি শেষমেষ সে টিয়া পাখিরে হুদাই
আদর করে অবিরল পাখি ভাবি
লাল মরিচ খাবায় একা একা বিকাল বেলায়!
আকন্দপাতা নিরিবিলি তাকাই রয়
বাতাসের ঘাড়ের উপর দিয়া
কেহ নাই যন ঐদিকে!

একাকী
একটা অদৃশ্য
ব্রিজের উপর নিজেরে ফালাই আসে!


আমার বাগান ও জানালা


বাগানের মধ্যে রঙ নিজে নিজে বাতাসে যেন ব্যাপন হয়।

হয়ত একটা স্থিরতা বাগানের ভিতর রয়।
একটা স্তব্ধ হাওয়া বিড়াল পাতার আড়ালে
ভাল করি তাকানের আগেই মোছা পড়ে,
হারানো এসব বেড়াল!

একটা দিন আসে সকালে বেড়াইতে বাগানে আর বিকালে
চলিয়া যায়!
নিঃশব্দ সমঝোতায় আসে গতকাল আজকার লগে
কে কতটা অষ্পষ্ট হবে!
জানালার কাছে দাড়ায় বাগানের সুন্দর কিছু দেখার
উদাসীনতা ছাড়া বাগানের নিত্য বস্তু ধরা দেয় না!

আমার উপচায় পড়া মন
কারে যেন ডাকে
কারা কারা নিরুত্তর বুঝা কঠিন!

প্রতিধ্বনি ফেরেশতাদের মতো দলে আসে
শূন্য বাগান পাওয়া কঠিন!
আমি ছড়ায়ে ছিটায়ে রব কভু
অলসপাখির ডাকনাম মনে আসুক!

আঘাতপ্রাপ্তদের মতো
গান গাইতে মন চায়
বরং কোনো ক্ষণস্থায়ী দৃশ্য হই না কিছুক্ষণ
ঐ দিকটায়!


প্রেমের কবিতা বিষয়ে‍


আমি তোমার শরীরে ঢুকি পড়ি।
তারপর প্রায় তিন তিন দিন মাস সেইখানে থাকি।

এটুকু জানাই শুধু
তোমার শরীরের মধ্যে
একটা দেয়াল ঘড়ি পাই
সেইটা থাকি আমি মোর বার হওয়ার সময় বিষয়ে
অবগত হইতে থাকি।

তোমার শরীরের মাইল মাইল গভীরে ঢুকি
যা যা পাই
তা তা কবিতায় লিখি না তো আমি!

কারণ তা জানানোর কথার ভিতর নষ্ট হয় কিছু যদি।
তাই আমি তোমারেও কিছু
বলি নাই আমি কি কি নিয়া বার হই আসি
তোমার শরীর থাকি। বলা ভালো,
“তোরা সিনান করিবি নীর না ছুঁইবি”
এই কথারে পুছি নাই কভু।

আমি এইসব কাউরেই বলি না ।
বললে, তুমি শোনা মাত্রই মরি যাবা।

অথচ সে সব গোপন খবর
না লিখিলে প্রেমের কবিতা,
কবিতা হয় না!


ডেফোডিল


আব্বার মৃত্যুর পর আমার সাথে এই প্রথম দেখা হইল।

একটা রেলস্টেশনে। কোনো কথা হইলো না।
শুধু আমার দিকে একবার তাকাইলেন। আমিও।
অন্য একটা ট্রেনে উঠি পড়লেন, মনে হইল
ততটা ব্যস্ততা নাই তার, তবু ট্রেন ফেল করতে চাইলেন না!
ট্রেন ফেল করলে কী ফের দুনিয়ার জীবনের
ভেতর গোত্তা খাইয়ে চলি আসতেন!
আমার সাথে কোনো অভিমান ছিল কী তার!
পিতা-পুত্র কোনো ভুল বুঝাবুঝি!

স্বপ্নের ভিতর সবাই অমর
জীবন ও স্বপ্নের ভিতর যে পাতলা অচ্ছ দেয়াল
তার এপারে একটাই তো গণার মতো দৃশ্য:
সবাই
সন্ধ্যার ডেফোডিল ফুলের বাগানে তর্কাতর্কি
করতেছে আর করতেছে!


আমি মেয়েদেরতে দূরে দূরে থাকি


কেউ ভালবাসি কয়ে যদি স্পর্শ করি বসে ফের!
ফলে আমি যদি ফের হলুদ কুটুম পাখি হই যাই!

আমি যদি ফের মানুষ
হওয়ার কথা পুরাই ভুলি যাই !

আমারে যদি ফের বহুকাল জংলায়
গাছে গাছে
কাটাইতে হয়!
অসহ্য আকাশের ভাওতা বিস্তার
আমারে ফের ফাঁস করতেই হয় যদি!

আমি মেয়েদেরতে দূরে দূরে থাকি!


জহির হাসান

কবি ও চিত্রশিল্পী

জন্ম ২১ নভেম্বর ১৯৬৯, যশোর জেলার পাইকদিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে যশোর ও ঝিনাইদহের গ্রামে। লেখালেখির শুরু ৬ষ্ঠ শ্রেণি। প্রথম কবিতা প্রকাশ ১৯৮৪ সালে যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্ফুলিঙ্গ  পত্রিকায়। আগ্রহ ধর্ম, ভাষা, দর্শন ও চিত্রকলায়। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে।

প্রকাশিত কবিতার বই

  • পাখিগুলো মারো নিজ হৃদয়ের টানে (২০০৩)
  • গোস্তের দোকানে (২০০৭)
  • ওশে ভেজা পেঁচা (২০১০)
  • পাতাবাহারের বৃষ্টিদিন (২০১২)
  • খড়কুটো পাশে (২০১৪)
  • আয়না বিষয়ে মুখবন্ধ (২০১৬)
  • আম্মার হাঁসগুলি (২০১৭)
  • বউ কয় দেখি দেখি (২০১৮)
  • বকুলগাছের নিচে তুমি হাসছিলা (২০১৯)
  • আম্মার আরও হাঁস (২০২০)
  • আমি ও জহির (২০২১)
  • রইদের ডাইরি (২০২৩)

অনুবাদ :

  • এমে সেজেরের সাক্ষাৎকার ও আধিপত্যবাদ বিরোধী রচনাসংগ্রহ (২০১১)
  • গাজার কবিতা (২০২৪)

সাক্ষাৎকার পুস্তিকা

  • (কবি উৎপলকুমার বসুর সাক্ষাৎকার) : কথাবার্তা (সপ্তর্ষি প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৬)

গদ্যগ্রন্থ:

  • জলপাই গাছের রব  (২০২১)
  • বিম্ব যেটুকু দেখায় (২০২২)
শেয়ার