আযাজিল
নিচু দেশে এসে গেছি ফের
তুমি তুলে নিয়ে চলে গেছ হীরে
নোয়াইনি মাথা তাই আমাকে কাফের
রটনাময় করে রেখেছ পৃথিবীরে।
আমারই হাতে এই প্রজ্ঞার ফল
উঁচু থেকে নিয়ে আসা উষ্ণ পানীয়
ঘোষণা করে তুমি রেখেছ কতল
অথচ তোমার মুখ শান্ত কমনীয়।
পতনে আহত আজ দুহাত বিকল
কি করে তুলে ধরি ওষ্ঠে মদিরা?
আমার তো ভাষা নেই জানাবো আশুরা
ধুলোর ফুলেতে কাঁটা পায়েতে শিকল।
আমারই মোহন ফলে স্বর্গ পুতুল
নেমে এসে কর্ষণে বানালো জমিন?
আমার পাপের খাতে কত হলো ঋণ —
শুধুই ইশারা ছিলাম তোমার আঙুল।
আমিই তো আদি নাম ভূমিতে বীজের
আমি তো বণিক শুধু জ্ঞান ও মধুর
যত শাপ তুমি দাও কাফের! কাফের!
ফিরে আসে গান হয়ে তোমার সঁতুর
তুমি তো ভরেছ ভূমি কোলাহল দিয়ে
এক কোণে পড়ে আছি না-মানুষ হয়ে।
সপ্তম শতক
গজিয়ে উঠছে বুলেট গাছের চারা
মন্দাকিনীর মন্দ জলে হাঁস
সিপাহী রাজার ছিল যে আজ তাড়া
বারোমাসের দেনার বাকী ঘাস।
আমিও চলি স্রোতের সাথে স্রোতে
বললে কেন উলটো পালে যেও?
ন্যায়ের মৎস্য ধরেছে আচম্বিতে
মাৎস্যন্যায় মুণ্ডু পেতে নিও।
বাকীর ঘরেই দেনার মহারাজা
বাড়ন্ত চাল বিলিয়ে চলেন খুদ
ভাত ফুটলে যাবজ্জীবন সাজা
উঠোন রোদে শুধতে হবে সুদ।
রাজার হস্তী সকল হস্ত জুড়ে
বাজাবে যখন সাজানো দুন্দভি
আমার মুণ্ডু ছিটকে রইবে দূরে
গাইতে যেন ভুলোনা মসনভি!
মাধুকরী
ভিক্ষাপাত্র হাতে বের হই—
অথচ, ঝুলিতে আমার ছিল বাজারের বাসনা।
যা কিছু মেলে গান, ধান-দুর্বা-খড়
বাসীভাত, সাদা নুন, আশ্বিনে ঝড়
কুড়িয়ে বাড়িয়ে দেখি মুঠোতে ধরে না,
ছাই হয়ে ঝরে পড়ে গুঁড়ো গুঁড়ো সোনা।
ভিক্ষাপাত্র হাতে বের হই—
অথচ, ঝুলিতে আমার ছিল বাজারের বাসনা…
মায়াহরিণ
কবে তুমি গাছে দুলিয়েছিলে পাতা?
পড়ে না আর মনে অন্য কোনো রথ ,
আজও তুমি খুলে দেখেছ সেই খাতা?
দূরে বিকেল দোলে, উঠছে দুলে নথ।
কি ভেবে আমিও আজ বসতি শহরে,
দূরে চাঁদ বোনে উল ছায়া পড়ে জলে।
একা বাঘ বেদনায় ঘুরে ঘুরে ঘুরে
ছড়ায় সোনার সুতো, প্রতিমা মহলে।
আমাকে সমনে রাখে রাজার সিপাহী
ভিনদেশে আমি কেন কেটেছি ফসল?
দূরের কবরে বসে কাঁদে পিতামহী
“যাসনে যাসনে ভাই! অনেক জঙ্গল!”
তুমিও গিয়েছ ভুলে কবে কোন শীতে,
উঠানে ছড়ালে তিসি বিবাহ গীতিতে।
মাছের সন্ধান পেয়ে কি জাল তুলেছ?
কেন মিছে গ্রামদেশে হরিণই পুষেছ?
আমি তো চিঠি লিখি সিপাহীরা মাপে
হরিণ হরিণ বলে জেগে উঠে রাতে
মনে হয় মৃদুপায়ে শিয়রে এসেছ!
কেন মিছে গ্রামদেশে হরিণই পুষেছ?
কেন তুমি গ্রামদেশে হরিণই পুষেছ…
নিরুত্তর
কি হয় কবিতা লিখে?
হাওয়াকে শ্রান্ত করা ছাড়া?
কি হয় কবিতা লিখে?
হাওয়াকে শান্ত করা ছাড়া?
খান রুহুল রুবেল
কবি ও গদ্যকার। জন্মঃ ১৯৮৭। জন্ম ও বেড়ে ওঠা গোপালগঞ্জে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। প্রায় এক যুগ ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্য, বিজ্ঞান, সভ্যতার ইতিহাস এবং অর্থনীতি তাঁর পাঠ ও চর্চার বিষয়।
আসক্তি : ভাষাচর্চা, সঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত শোনা, নানা রকম বইয়ের অনুসন্ধান ও সংগ্রহ।
প্রকাশিত বই : ‘ডুবোপাহাড়’ (২০১৭, কবিতা), ‘প্রাচীন বিজ্ঞান’ (২০১৭, বিজ্ঞান/ ইতিহাস)।