পাঁচটি কবিতা | কাউকাব সাদী


মাধ্যাকর্ষণের সহজ ভূমিকায়


যদি আলকুশির মতো ফুটে থাকি বনে
লাশ হয়ে
কম ঝক্কির হবে তাও
সিলিঙে , জনপদে, পরিবারে অলক্ষ্যে
কিন্তু বদ্ধরুমে একান্তে ফুটে থাকার চেয়ে।

ভাঙা দরজারও প্রাসঙ্গিক হয় হুড়হুড়
আকস্মিক আমার ঠিকরানো চোখে চোখ রেখে
কার্ডিওমেগালি আক্রান্ত মায়ের প্রাণের দফা হতে পারে;
বদমেজাজি বাপেরও।হতে পারে তা আমার কোমল প্রাণ তরুণ ভাইয়ের ।
যেনোবা হরেদরে ফিরে আসা
লাশোত্তর জীবনে
এড়াতে না পারা জ্যামিং
ঘিরে ধরা ঔৎসুক্যের ঠেলায়
পুনর্বার স্বস্তি খোয়াবো ।
থানা-পুলিশ
রিগর মর্টিজের আগে বাঁচোয়াহীন জেরা
উদ্দিষ্ট সরলতাকেই
সন্ধানী সামাজিক চোখের তাকিয়ে থাকা
কাটাতে পারবো না—
উৎকণ্ঠা চাপ আত্মীয় ভরপুর
ঢলে পড়লো কি না পড়লো আঁশটে দুপুর
তারও আগে কার্য ও কারণের নানান রসদ
হাতির পদক্ষেপের মতো দপদপ
আমার থেমে থাকা বুকে থামবে না।

বহুধা আইনি জটিলতা গলে
পেরিয়ে প্রশ্নকাতরতা যদি
কিছুটা উপর থেকে
(পুলিশি তদন্ত শুরু হলো সবে)
দেখি বনে ঝুলে থাকা একই আমাকে
পাতার মধ্যবর্তী ফাঁকে
অন্ধকারের আগে চতুষ্পদী
টেনে হিঁচড়ে কি খাবে আমাকে?
দাঁতের গরলে সপেও নিজেকে, প্রশ্ন মনে
ভালুক চিতা না হয়ে তারা যদি হয় শিয়াল কুকুর
ততোটাও কি সহ্য হবে?


চেটিয়া হইচই উষর গ্রীষ্ম 


তুমি আমাকে শ্যামলীমার কথা অনেক বলেছো
আমার মাটির উর্বরতা
বলেছো কতো সহজে দানামুক্তি পায় চারা
জানি আমি এই পলির স্নিগ্ধতা
ধূলিধূসরিত পাতার ক্লান্তি
চেটিয়া হইচই উষর গ্রীষ্ম
আরো সব ঘাম কাম ক্লিষ্ট খোঁয়াড়ের মহাবার্তা

কিন্তু আমি আর না
বন্ধু আমি চলে যাবো
তোমার দেহাভিযোজিত সেই মাঠে
মেরু অঞ্চলের নিকটবর্তী ফ্লেভারে
রেড ম্যাপল আর ওকের জঙ্গলে
তোমার বিষণ্ণতা আর স্মৃতিকাতরতার
ভূমিতে ক্লান্তি বিছিয়ে পড়ে থাকবো হাজারো দিন
হাত-পা— সমস্ত বুক ছুড়ে
তিনশত মাইলের ত্রিসীমানাতেও
আমাকে কেউ ডিস্টার্ব করবে না…


দাঁত


সবান্ধবে প্রেম হারাই
সকলের মেলামেশা আলগা করে
সকলের মধ্যে থেকেই, পারি তো নানা অনুষঙ্গকে ইরেজার করে
নিজেকে মুছে ফেলাই।
সামান্য কাতরতা না থাকলে
অস্থির কী মূল্য! তুল্য যা অবশিষ্ট রাখি
লোকে ধরতে না পারে মতো তা দেখুক
বলাবলি করুক সহ্যের ক্রমে
মুছেই গেলো তো কই পাবো আবার
তারে ধরতে গেলে অন্তত
আঙুলে ছাই উঠুক

ঢেকে রেখে ত্বকে, ক্ষারের ক্রিয়াকে
মৃদু গতিশীল রেখে গোপনে,
বিরোধী নাম আমি না, লোকেই দিয়েছে। অনেক আগে
থেকে থেকে উড়েছে আকাশ ও ভূমির
প্রাসে-আভাসে। চলমানের এই এক স্থিরতা
পারে না ভেদ করে যেতে অন্যলোকে—
যেখানেই চামড়া কাটি তার
দাঁত বেরিয়ে আসে


দয়িতা


এক সুসংগঠিত দলের যদি একশো’ সদস্য
তাতে দল ছেড়ে পালাতে চান দু’জন
এবং আরো একজন একই দলের ও দয়িতার
দায় কামড়ে আমরণ পড়ে থাকলেও
বাকি সাতানব্বইয়ের চক্ষুর রক্ত উপেক্ষা করেনঃ
উপরে লিখিত দুজনকে পালাতে বাতলে দেন পথ
আমি সে আমরণ সেই একজনের ভক্ত


লুপ


মজানো ডোবা। লগ্ন-পাড় বেয়ে ঠাঁই কংক্রিট; দীর্ণ করে মৃদু প্রবাহ এক চিত্র-বেলুন-ব্যাঙের স্বরপ্রদাহ আরোহণ করে হাওয়ায়। ছেদ করে নমিত থুথু, শিশুর জিভ হতে উদগীর্ণ — মাধ্যাকর্ষণের সহজ ভূমিকায় টলছিলো। ফোর্থ ফ্লোরের বারান্দায় চকিতে মুখ ফেরালো যে মাকে সাড়া দিতে, বেখেয়ালে তাকেও ছাড়িয়ে সে স্বরপ্রদাহ কাঁপছিলো বায়ুতে। তখন, টপ-রুফে গোপন রোমান্সে হাজির প্রেমিকের সহ-এপার্টমেন্টে থাকা প্রেমিকা…শিশু থেকে ঝুলন দূরত্বের খানিক ‘পরে ছাদ। আকাশমণ্ডলীর সুরাসুর ছাপিয়ে সেখানে উদ্ভাসিত চাঁদ


কাউকাব সাদী

কবি ও অনুবাদক

বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মন্দাকিনি গ্রামে। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

প্রকাশিত বই

রন্ধ্রে রন্ধ্রে করি সঞ্চালন (কবিতা), প্লে লিস্ট থেকে (অনুবাদ), মাধ্যাকর্ষণের সহজ ভূমিকায় (কবিতা)

শেয়ার