পাঁচটি কবিতা । ফাতেমা মুন্নী


জননী


গোরের ধারে মেহগনির বাগান পেরিয়ে
জানালার গ্রিল ঘেঁষে ঘরে ঢুকেছে জোনাকিপোকা, কোনো বার্তা আসেনি তো! 

বাতাসে নারিকেল গাছের পাতার দোলাচল অব্যাহত,
খোয়াড়ে গবাদিদের প্রবল ডাকাডাকি,
বাড়ির এখানে ওখানে লাগানো সুপারি গাছ থেকে সুপারি ঝরে টুপটাপ।
বাতাবিলেবুর ফুলে কী সুন্দর সুবাস! 

সব রয়ে যায়, সবই থাকে।
কাঠের আলমারির শীতল তাকে তাকে
শাড়ির ভাঁজে, নকশিকাঁথার নকশিতে,
মায়ের মমতার ঘ্রাণ, স্পর্শ। 


প্রত্যাবৃত্ত হাওয়া


ইজেলে রাখা পুরোটা জীবন
কত রঙে এঁকেছি সময়!
উত্তরী নকশা, আঁধিয়ারার গান,
জলের অনল, শুকনো পাতার মর্মর
গোধূলির কারফিউ, মিয়ানো কণ্ঠস্বর
অখল নদীময় চোখ, মোহনার ডাক।
এঁকেছি অনর্গল কথার পালক,
সৌররশ্মিরেখায় পাখির চুম্বন।
দূর্বাঘাসের ইতিহাসে শামুকের শোক।
এঁকেছি চাঁদের সাথে বলা
কায়মনোবাক্যের একচ্ছত্র প্রলাপ।
এঁকেছি নিজস্ব ইতস্ততে চর্যাচর্যবিনিশ্চয়ের প্রতাপ।
সব ছাপিয়ে কোথাও থেকে গেছ তুমি!


বিরোধাভাস


কার শরীরে মাখাও শরীর?
কার ঠোঁটে রাখো ঠোঁট!
কার বোতামে কাটাও বেলা?
কার তরে সীমানা কোট? 

যবে জেনে যাই তোমার প্রকার
জেনে যাই তোমার গণ্ডি,
তোমারে আমার পাপী মনে হয়
তবে শরীর কি পাপকুণ্ডি?

কার মনে মন মিশাও তুমি
কার মনে নাও দখল?
কার জন্য বাসর সাজাও?
মনেই বানাও তাজমহল! 

মনে তোমার অন্য কেউ চলে
মন বদলাও তুমি স্বভাবে,
কেন তোমারে পাপী লাগে না
অদৃশ্য বিধির অভাবে?

তবে কি পাপ শরীর-সর্বস্ব মানি?
পাপে কেন মনকে না টানি?


না ফেরা


একদা তুমি ছিলে
ছিলাম আমিও,
ছিলো কুয়াশাচ্ছন্ন গুল্মঘেরা পথ। 

ওই যে সে-বার,
একটা স্পষ্ট ধাক্কায়
করোটির ছালের ভিতরে
খুনের সিঁড়ি ভেঙে
আমি নেমে গিয়েছি,
সেই থেকেই আমি নিখোঁজ। 

আর ফেরা হয় নি সে-পথে!


মোহপ্রবণ


বিলীন হবার আয়োজনে ফিরছি বারংবার
প্রতিবার শেষবারের মতোই যাই।
কিন্তু দ্বন্দ্ব এসে কপাট খুলে দেয় আকাশের
একাকীত্ব কাঁধে রাখে হাত পরম নির্ভরতায়।
ভাতের বলকের মতো হৃদয়ে উথলে ওঠে
ব্যথার থকথকে জানা-অজানা ওজন।

আঁকা-বাঁকা নিকষ কালোয় কান পেতে রই
আলোর সহজ শব্দ প্রাপ্তির আশায়।
জানি ওয়াদার সকল বাক্যবাণই দারুণ দুঃখবাহী।

নিজেই নিজের ভিতর সাজাই পৌনঃপুনিক
ক্ষমা আর ভালোবাসার সহাবস্থান।
যেখানে ক্ষমায় দাঁড়ায়নি আর্দ্রতা
সেখানেই আটঘাট বেঁধে বসে আছি।
জিজ্ঞাসা তো থেকেই যাবে এমন—
মাটি যখন আপন করবে শবদেহের পাণ্ডুলিপি
কার অধরে থেকে যাব মৃত্যুর চেয়ে ঢের!


 ফাতেমা মুন্নী

পিতা : মোঃ আবু তাহের, মাতা : নূর জাহান বেগম। চার ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। জন্ম ১৯৮০ সালের ১লা ডিসেম্বর, রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে। পৈত্রিক নিবাস চাঁদপুর হলেও পিতার কর্মক্ষেত্রের কারণে বেড়ে ওঠা চন্দ্রঘোনাতেই। বিয়ের পর স্বামী, দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায়। লেখালেখি শুরুটা হয় ৭ম শ্রেণিতে স্কুল দেয়ালিকায় কবিতার মাধ্যমে। পড়াশোনা বিজ্ঞান বিভাগ দিয়ে হলেও স্নাতকোত্তর সমাজবিজ্ঞান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। 

শেয়ার