ইতি ভ্যালেন্তিনা
তোমার প্রত্যেকটা তিল চুমুপ্রার্থী—
প্রত্যেকটা রোমকূপ, পায়ের আঙুল, চপ্পলের তলা আমার চুমুর জন্য হা হয়ে আছে;
এই অদ্ভুত টিনের সবুজ চালে অবিরাম বৃষ্টির দাগ তোমার শরীর বেয়ে নেমে গেছে বলিভিয়ার বদ্ধ ড্রেনে;
সেইসব দাগ, কপালের জ্বরতপ্ত তিল চুমুর জন্য কেমন উদগ্রীব হয়ে আছে, দেখো!
তোমার প্রত্যেকটা তিল চুমুপ্রার্থী
শ্লোগানে বেঁকে ওঠা আলজিভ, মাম্বার মতো ফুঁসে ওঠা চুল, নিরস্ত্র দুটি হাত
চুমুর জন্য কেমন উদ্বেল হয়ে আছে!
আর্নেস্তো, আজ আমার একটি চুমুও মিথ্যে ছিল না,
মনে হচ্ছিল ভ্যালেগ্রান্দের গণকবরে তুমি উপুড় হয়ে আছ—
আর চুমোয় চুমোয় আমি টেনে তুলছি নয় নয়টি নরম বুলেট!
একুশতম আঙুল
ওরা গিয়েছিল ট্রান্সিলভ্যানিয়ান পর্বতে
সমগ্র বল্কান চষে পায়নি তোমার ধাতব হাত
অথচ, আলপাইনে খনির ভেতর
তোমার একুশতম আঙুল আমার শরীরে
গেঁথে ছিল—
ধাতব ছুরির মতো।
ওরা দেখেছিল—
ভেড়ার দাঁতের ভেতর ঘাসের মিহি হাড়
আর আমার সোনালি চুলের শরীরে
তোমার পৌরব রোদ, সভ্যতার কালো ভ্রূণ;
পুরনো হাড়গোড় আর দিনলিপি দেখে জেনেছিল—
দানিয়ুব আর কাস্পিয়ানের জলে-জঙ্গলে আমরা দুজন লবণ ধুয়েছি, মিলিত হয়েছি অধীর সঙ্গমে,
ওরা তখনও সমগ্র ভূমধ্যসাগর চষে পায়নি তোমার
দুইশত সাততম হাড়,
অথচ, সে অদৃশ্য হাড় আমার শরীরে গেঁথে ছিল
ধাতব ছুরির মতো!
স্বপ্নাদ্য
১.
প্রবল ঝড়ে নৌকোয় তুমি আমি
বুকের ওপর জোনাকের আশ্রয়,
হাতের মুঠোয় একটিকে রেখেছিলে
আরেকটিতে আঁধার ঝুলছিল;
জোছনায় সবকিছু দুলছিল
দুলছিল নাভির মতো ফুল,
তুমি এসে আমাকেই ঢেকে দিতে
খুলে নিলে নিজস্ব নির্মোক।
২.
শীতেরা চাদর পরে থাকে
খুলে দাও নাভির বহ্নিকোণ;
তাকে তাকে জলপাই-এর আচার
ক্যাবিনেটে হরিণরঙা মদ,
হাত রাখো এইখানে তুমি স্যাম
এইখানে বরফ-ঢাকা রাত;
আতার মতো একটি নরম ফল
হাতের মুঠোয় আলতো চাপে চাপে
আঙুলেতে দু-ভাগ হয়ে এলে
ভগ্নাংশ অসীমে পুরে নিয়ো।
স্যাম কিংবা শ্যাম
১.
হেই স্যাম, চুরুট হাতে তুমি ঢলে পড়ে গেলে
খুলে যায় ফায়ারপ্লেস, দুলে ওঠে স্কার্ট
ঠোঁটে নরম আগুন আর
আঙুল ডুবায়ে শিশিরে
তুমি প্যাপিরাসে জলছাপ দিয়ো
দেয়ালে ঠেস দিয়ে ত্রিভঙ্গীয় বাঁকে
পা তুলে থাকে রাশান ছোড়ি,
ওহ স্যাম ওহ!
লিপলক্! লিপলক্!
ভয়াবহ শীৎকারে জমে যায় নদী
২.
টিলার ঢালে শোয়ায়ে নরম নদী
নীলের ভেতর দেখো পয়োধরা মেঘ,
আঙুলে হাজার রঙের ফুল…
তবু আঙুল তোমার অনাঘ্রাত কলি;
সে আঙুলের শিশিরে এঁকে দিও পদ্মদ্রুম
বুক থেকে চিবুক সর্পিল রাত,
আমার আঁধারে লুকায়ে তোমার আঁধার
চুম্বনে চুম্বনে শ্যাম, ঠোঁটের পীযূষ নিয়ো!
খিস্তি-কাব্য
রণসঙ্গমে বর্ম খুলে রেখে তুমি হাতে তুলে নাও আল মাহমুদ ও আরো কিছু কবি,
শীৎকার নয় বরং প্রলাপের মতো চলতে থাকে সোনালী কাবিন-জলবেশ্যা,
কবি! তুমি কাব্যের মতো…দেহের বদলে শুধু দেহই দিতে চাও, আর আমি চাই এর চেয়ে অধিক কিছু;
সুললিত পদ্য ছেড়ে চলে আসো এইখানে
এক হাঁড়ি মহুয়াজল গিলে বের করে আনো
থলের বিড়াল, এবার একরাশ খিস্তি-কাব্য হোক
কবি আমার! সংকোচের আধখানা হৃদয়
ভিজায়ে রাখো চুম্বনরসে,
মারিয়াম ফুল প্রসারিত হোক অলিন্দ-নিলয়
ক্রীতদাস কিংবা প্রেমিক কেন?
তুমি…বিদ্রোহানলে এসো, যাতে একটি শারারায়
জ্বলে ওঠে নাভি-নিতম্ব-পদ্মদাম।
কবি! অনেক ডেকেছ “প্রিয়তমা” বলে
এবার মহুয়ার রস গিলে খিস্তি-কাব্য ছাড়ো—
ডেকে যাও “মাগী” মধু-নামে!
পাপিয়া জেরীন
জন্ম : ১৯ জুলাই, ১৯৮২, মুন্সীগঞ্জ। পড়াশোনা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকাশিত বই :
ঊনসপ্ততি (কবিতা, ২০১৯)
দ্বৈপ (কবিতা, ২০২০)
দ্বিতয় (ফিকশন ও নন-ফিকশন ২০২১)