পরিচয় ও অন্যান্য কবিতা | হাসান রোবায়েত

পরিচয়

 

দূরের কাছে টানলে পরে দোষ
শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে খরগোশ
বললে দানা পানীয় দিও তবে
ভেজা শরীর রাত যখন হবে
উদল দুটি কালো পাখির ছানা
ঘুমায় বুকে আঙুর বনে হাওয়া
আলতো করে খুললে ফিতা, ইশ! 
বেরিয়ে পড়ে পাহাড়ি কিশমিশ
লজ্জারত, তুমি দু চোখ বোঁজা
ভাঙবো যেন সারা দিনের রোজা
সেহেরি সেই করেছি কোন রাতে 
ননীর মাঝে আদর পরিখাতে 
আজান দিল জুমার ঘরে দ্রুত
যেন তোমার কেন্দ্রে বশীভূত
পানিকাউর উড়াল দিল ঝাঁকে
নাভির তিলে ঝড় উঠলো বাঁকে
ঘোড়ার পিঠে তাতার মনে হয়
‘দস্যু তুমি’ বললে পরিচয়—

 

 

 

যাওয়া

 

যেখানে হাত রাখলে পরে সোনা
ফলতে পারে বিপুল সৌরভে
শ্যামলা মেয়ে ধরে না আর গোণা
পথ দেখিয়ে বলো কে আর কবে

ভোলার পরে ফিরেছে সে আবার—

মিঠা সুরের এমন দেহ-ফাঁকে 
পাহাড়ি কোনো আনারসের ঘ্রাণ
বুকের ঘুঘু কালো দু ঠোঁট ডাকে
ভর দুপুরে উতলা মেজবান

এমন করে তাড়া কেন যাবার—!

একটু সোনা, ইফতারিতে বসি
খোলো কোমর শরম ঘেরা বাঁক
যেন কুয়ায় ফেলে দিলাম রশি
গভীর জলে ডুবছে পাতি কাক

ছড়িয়ে পড়ে খোঁপা খুলে রাবার—

শাড়ির যত ভাঁজ খুলতে দেরি
সায়ার কারুকাজের এত গিঁট 
ভাব নিয়েছে মনে হয় মা মেরি 
প্রত্যেকে কি করতে পারে চিট—!

তাওয়াফ আমি করেছি সে কাবার—

চোখের নত ছলকে ওঠা নদী
ডাকছে দূরে অপয়া এক ফেউ
বললে সোনা, আমায় ভোলো যদি
যাওয়ার পরে ফিরেছে কি কেউ—?

সবাই ভাবে, থালে এঁটো খাবার—

 

 

 

দেমাগিনী

 

এখন যদি ডাকি আবার কাছে
বলবে তুমি, ‘সস্তা নাকি এত—!’
দেমাগিনীর শরীরে আন্দাজে
চরের জমি ভাঙছে সমবেত 
হাতের ছোঁয়ায় উঠলো পাহাড় ফুঁসে
বোঁটার ঘামে কালো চারিধার 
কামড় দিলে অশান্ত প্রত্যুষে
ভিজবে ত্রিভুজ, কলাবতীর ঝাড়
ছদ্মবেশী চাঁদের নিচে ফেউ
ছড়িয়ে ঘ্রাণ ডাকছে দারুচিনি 
গোখরা সাপের ফনার মতো ঢেউ 
নিতম্ব সে তোমার শরীরিনি 
লুটতে দিও ভরা বানের নুন
দ্বিচির ঘিরে আরামে সেই রাতে 
আমি কি আর তাতার-শক-হুন
ছাই ঢালবো তোমার ভরা পাতে—?

 

 

 

অন্ধ রজঃস্বলা

 

কোমরে রোদ উঠলো বেঁকে হাওয়া
তোমার বাড়ি হলো না আর যাওয়া
সাঁকোর কথা কাঁপতো চিরদিন 
পারাপারের ধুধুল মিরুজিন
থাকলো পড়ে নদীর দূরে সেও
না ভালো সেই বাসায় ছিল হেয় 
করার মতো সকল অবিচার 
পেছন থেকে ডাকো নি একবার 
অথচ তুমি লজ্জা পেলে ফল 
উঠতো পেকে রজত বিহ্বল
ভাবতো বুকে তোমার বসে আছে
আঁতার ঘ্রাণ কালো বোঁটার ছাঁচে
ভরা ব্লাউজ উপচে পরে রাত 
যেন মাছের খলুইয়ে দিই হাত 
খলবলিয়ে ওঠে কালো বাউশ 
পুরুষ জেলে থাকে কি আর হুশ—! 
ঝড়ের পরে ভুলিয়ে ছলাকলা
কোথায় তুমি, অন্ধ রজঃস্বলা—?

 

 

 

মোনাজাত

 

দূরের হাওয়া টলছে যেন ব্রিজে 
রেখেছি হাত পাহাড়ে-আন্দিজে 
উঠলো কেঁপে দুইটা হাঁসের আয়ু
কালো বোঁটায় গড়িয়ে পড়ে স্নায়ু 
বনের ঝাড়ে চেরা সে নাশপাতি
‘আঙুল রাখো ধীরে আত্মঘাতী—‘
যেন শরীর উতলে ওঠে মাড়ে
টান পড়েছে ভাটিয়ালির ধারে—
শরমে তুমি রাখলে ঢেকে ভাঁজ
নাভির পাশে তিলের কারুকাজ
নেমো না আর গভীর ডুবে, যাহ্! 
হুড়কো খোলা সেঁধিয়ে দিও ‘আহ্!’ 
খোঁপার চুল খুলছে মেঘে কাঁটা
থাকলে ঘামে শীলের নিচে সাঁটা
বন্ধ চোখে জড়িয়ে ধরি তুর
খালাস কি কেউ পেয়েছে বেকসুর—!
দু ফাঁক করে অঙ্গে অকস্মাৎ
কবুল করো আমার মোনাজাত

 

 

 

জাবুর, তাওরাত

 

নোনা দ্বিচির ফাঁক হয়েছে ভূমি

কী টসটসে বৃন্ত মিশকালো

পাকা লেবুর গন্ধে মৌসুমী

বাতাস এসে দরজা আটকালো

 

ব্লাউজ ফেটে উপচে পড়ে ওরা

ধরতে বলো আরাম করে চেপে

পানিকাউর মেদের এক জোড়া

উশুম পেলো হাতের তালুব্যেপে

 

যেন দুধ আর মধুর তৃণখাত

ইহুদিদের জমজ দুটা খাঁড়ি

তোমার বুকে জাবুর-তাওরাত

বেরিয়ে পড়ে খুললে এঁটো শাড়ি

 

তোমার বোঁটা মাধুডাঙার বিল

ঢেউয়ের টোলে দুলছে মৈথুন

পালায় যেন বনি ইজরাইল

নিলের নদে শান্ত ফেরাউন 

 

 

 

মহাকাল

 

ছোট সে খাঁড়ি টমেটোখেত মিলে 
সেখানে তুমি গোছল করো রোজ 
কে আর পাবে উরুতে সেই খোঁজ
পানিকাউর ডুবেছে যেই তিলে—

সাবান ঘষো যেভাবে পানে চুন 
লাগায় কেউ নিরলে বসে একা
পষ্ট হলো দুধের খাঁজে রেখা 
তোমাকে ভেবে হস্তমৈথুন

করছে হাওয়া তরমুজের খেতে—
বুকেতে হাঁস কালো সে দুই ঠোঁট 
কচলে দিলে ঢেউয়েরা এক জোট 
কাঁপায় মেদ কোথাও যেতে যেতে

নাভির নিচে গোঁজা কলমি ফুল 
দ্বিচিরে যেন নামছে সাপ, ইশ! 
একদা ইভ, তরুণ ইবলিশ 
যোনিতে রাখে উষ্ণ জামরুল—

ঢেউয়ের দূরে যেন ডুবো শাল 
পড়ছে হাওয়া-হরফ খুঁটে খুঁটে 
গোছল করো নদীর পাতা বুঁটে 
তোমার দেহ আরেক মহাকাল—

শেয়ার