আকাশের পায়রা অবধি উড়ি
ঐ পাখি কাবেরী-জলের পাশে ভেঙে যায় তীর—
অস্থির এক নোনা প্রাণ
দেখি হেলে যায় সুরে
চাকা ঘোরে পরিত্যক্ত বনের ভেতর
মাটির অনাস্থা পড়ে থাকে উঠোনের পাশে—
তবু বাঁশি নীরিক্ত গরাদের দিকে
সাজায় অজ্ঞাত কাঠ!
কেন যে সোনার বিভ্রম, বাতাসের সলিচুড ঘিরে
ক্রমাগত আছড়ে পড়েছে ক্ষার!
সুর, তুমি শূন্যের সারাৎসার
আজানু গন্ধক ঠেলে উঠে যাও তরঙ্গছায়ায়
যা বলি—
অপার এক পাখি এসে খুঁটে নেয় মর্ম-সমেত!
ও আরুদ্ধ মেঘ, তারাদের ঘ্রাণসমবায়
তারও ঊর্দ্ধে যে ফাঁকা, অনন্তের তটরেখা জুড়ে
সেও কি হন্তারক নাকি দুঃখ ও লুব্ধকের টানে ছড়িয়ে রয়েছে পথ!
মৃত্যুর গভীর বোধে যে শ্বাস উড়ে যায় ডুমুরের পাতায়
তারই ফাঁকে বিস্রস্ত ডাহুক ডাকে—
একাকী, বিমূঢ় জোছনায়—
ব্যালেঢেউ, বিস্মৃত পশুদের ডাক
পড়ো—
সন্ধ্যার বাতাস ঘিরে এই অস্ফুট কঙ্কণ—
প্রসববেদনা শুধু রমনীর নয়—
পুরুষের মহীরুহশ্বাস কতদিন দিগন্তে হয়েছে লাল—
আত্মার আকরে নীল হাওয়াই ময়ূর!
বাতাসের সোনামুখতলে কী যে শিস!
ধাতুর রক্তপাত—
ধানের শিরায় শিরায় শব্দ ও বাতাসের ধ্বনি
এতো ভয়!
এতোটা মাবুদ ডাক আমাদের চামড়ার তলে
যেন চারণভূমিতে বসে প্রকাণ্ড আউল
আয়াত পড়ছে একাই—
‘তা’মুরুনা বিল মা’রুফি ওয়া তানহাওনা আনিল মুনকার’
যদি দেখা হয়!
অশ্রুত এই বৃষজন্মের পারে
যেখানে সোনার ছায়া নির্জন কাঠের গায়ে
ফেলে যায় আরূঢ় বীণা!
জাহাজ থেমেছে কবে মনোলীন বসন্তের ধারে!
প্রকৃত সুরের পাখি কোথাও কি উড়ে যায় শীতে!
ক্রাচের উপর দিয়ে একটি মানুষ দেখে—
ঐ যে মহিষের ধ্বনি যেন গিরিখাত বেয়ে পলাতক কোনো গান
নেমে আসছে হাওয়ায়!
অশ্রুর আজন্ম ভার কে আর বহন করে একা!
ক্রমশ জীবন আমি ফেলে যাই সমাধি-পাশায়!
পাতা ওড়ে—
পাতা নিভে যায়—
কেউ এসে ঝাড়ু দেয় একান্ত সে পাতার ধূলা!
সেলাইকল কবেই থেমে গেছে
বাদুরের শ্বাস কিছু কি প্রতিধ্বনি দেয় আলেয়ায়!
এবার মধ্যাহ্নে আরও বেশি সনাক্ত হবে কম্পাসের ঘূর্ণন
অদূরে বসন্ত—গূঢ় কোনো ভাঙা রেলপথ
অশ্বধৌত এই মাঠ দেখেছিল সোনার জাহাজ থেকে
আপামর নেমে আসা আলো,
যন্ত্রের নিশান
ছাতিম ফুলের পিঠে ফুটে থাকা ‘দা গামার’ চোখ—
প্রতিবেশীদের বাজ খেয়ে যায় আমার নীলিমা!
এখানে হরিণ নেই, তবু
মাটিতে একটি বাঘ ক্রমাগত চাটছে ছায়া—
হে আশ্চর্য গৃহ, গোপনে পাহাড়ে উঠি
দেখি বাতাসের-কোলাহল সারি সারি ভেঁড়াদের ফাঁকে
মিশে যায়!
টিনের বাতাস ভেবে হাত রাখে সেচকল ’পরে—
হাওয়ার গ্র্যাভিটি ছেড়ে
ধীরে ধীরে নেমে আসে ফ্যালকন
ঐ তীর্থভূমির থেকে
দেখি আমারই প্রাণ, জীবানু- নিষিক্ত হয়ে
পার হয় ট্রাপিজের পথ—
নিস্তব্ধ সুরের মাঝে আজও কে ডাক দেয়!
‘হাইয়া আলাল ফালাহ’
— এসো, কল্যাণের দিকে। কল্যাণের দিকে এসো—
ঢোকাও সিম্ফনি, বিষ—
নৃত্যের অধিক কোনো কাঞ্চন ঝরেনি হিংসায়—
নিখিল তোমাকে ভাবি—বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাষা!