হাওয়া
*
চাওয়া ছিল হাওয়া বদল করি
হাওয়ার সাথে খেলতে যেতাম
হাওয়ার সাথে সারাজীবন আড়ি
শরীর যখন ভাঙত জ¦রে
কাঁপত নিরবধি
টলমল পারব না তো পেরিয়ে যেতে নদী
শুকিয়ে যেত চোখের তারা
বেড়ে যেত পিলে
মশক হয়তো কামড়ে দিছে তেতো ওষুধ গিলে
শয়ন নিয়ে ভালোই ছিলাম মায়ের পীড়াপীড়ি
হাওয়া বদল করি আমি হাওয়া বদল করি
হাওয়া ছেড়ে যায় যে আমি আবার হাওয়ার বাড়ি
আমি নাকি মানুষ ছিলাম মায়ের হাতের পরে
মা যে আমার আগেই গেছে হাওয়ার বাপের ঘরে
যারা আমায় দুগ্ধ দিছে
কিংবা ওষ্ঠখানি
হাওয়া আমায় ছিনিয়ে নেবে দস্যি ছিনালিনি
একটি হাওয়া দুটি হাওয়া হাওয়ার বাড়াবাড়ি
ভাবখানা তার একটি আদম পুরোটা চায় তারই
বায়ুর সাথে বশত করি পানির সাথে ঘর
যারা আমায় মাংস দিছে তারা তো নয় পর
আমি কোথাও যাচ্ছি কিনা
কোথা থেকে ফিরি
সূর্য বসে পাহাড় থেকে পথ করে দেয় তারি
কিসের উপর হাঁটি আমি কার শরীরে মাখি
হাওয়া আমায় পুষতে দিছে
অধরা এক পাখি
পিতার নামে চলি হয়তো মায়ের নামও জানি
হাওয়া আমায় নিচ্ছে ঘরে দিন দুপুরে টানি
হাওয়া বদল মানেই কিন্তু হাওয়া বদল নয়
হাওয়া যতই অগ্নিপবন-
এ তল্লাটে আছি আমি হাওয়ার পরিচয়।
বিভ্রান্ত রেখা
*
পরিপূর্ণ সুখ আমি কোনোদিন পাইনি
যদিও আমি একটি মানব জীবনই পার করেছি
তবু আমার অনুভূতিগুলো কখনো স্বাধীন ছিল না
যেমন আমার চোখ দৃশ্যের বাহন হলেও
বস্তুত পুরোটা দেখতে দেয়নি
আমার পরম-সুন্দরের বদলে- চোখ নিজেই দিয়েছে
বিভ্রান্ত সৌন্দর্যের ধারণা
তাই আমি যখন ভালোবাসতে গেছি
তখন আমার প্রিয়তমা নানা সপেক্ষে বিভাজিত হয়েছে
আমার বিশ্বাস- এক জন্মান্ধ ছাড়া প্রত্যেকে বহুগামী
যে সঙ্গীতে জগৎ সৃষ্টি
তার কতটুকুই বা আমি শুনতে পেরেছি
যখনই আমি তোমার সুর ভেবে উৎকর্ণ হয়েছি
ঠিক তখন আমার কান শুনেছে অন্য কারো কোরাস
একজন জন্মবধির ছাড়া কে শুনেছে তোমার ঐকান্তিক সঙ্গীত
আমি অনেকবার বলতে চেয়েছি- আমাদের দু’জনার কথা
আর তুমি ততবারই ভুল বুঝে চলে গেছ দূরে
আজ বুঝি, ভাষা রুদ্ধ করেছে আমাদের মিলনের পথ
তোমার উদ্দেশে কতবার ঘর থেকে হয়েছি বাহির
পথ শেষে আবিষ্কার করেছি মসজিদে মন্দিরে
কখনো সিনাগগ হয়ে চলে গেছি অগস্ত্যয়
হরেক পোশাকে শোকগাঁথা ছাড়া তোমায় দেখিনি
আজ ভাবি, পা না থাকলে হতো না- এতটা ভুল
এইসব অঙ্গ কেবল তোমার কাছে যাবার বিভ্রান্ত-রেখা।
একাকীত্ব
*
এমন দিন তো আসতেই পারে- যখন লোকজন আমারই মতো একা হয়ে যাবে
আমারই মতো তাদের আনন্দ বেদনাগুলো তাদের সাথে খেলতে থাকবে
নদীতে জল উঠাবে, গরুগুলো সূর্যাস্তের আগে ফিরে যাবে নিজস্ব আলয়ে
আমারই মতো ধূম্রজলে শব-শৎকার করে বসে থাকবে লাল চুল্লির পাশে
আমাকেই ডাকতে থাকবে তাদের নিজ নিজ নামে- বলবে হে মানুষ, ঈশ^রশর্মা
আমাদের অলীক কষ্টগুলো, মায়া ও প্রপঞ্চগুলো মূলত তোমার রহস্যের ছায়া
তুমি মরে যাবার পরেও আমরা অনেক অনেক দিন মরে গেছি, কদাচিৎ জেগেছি
আমাদের ভাষা নির্মাণ বাঁশিতে সুর সংযোগ আমাদের একাকীত্বের দীর্ঘশ্বাস
কে তুমি প্রাচিন প্রপিতামহী এখনো আছ জেগে, এখনো ভাবছ হয়তো কেউ
পর্বত থেকে নেমে আসবে জলে- বলবে এখনে বাজবে না একাকীত্বের সঙ্গীত
সকল শিশু পানিতে ভাসতে ভাসতে কিনারায় উঠবে লম্ফে, কেউ তাদের
পারবে না ধরতে, কোল থেকে কোলে ছড়িয়ে পড়বে- আনন্দের টানে
যারা বলে একাকীত্ব তাদের উপভোগ্য- তারা ঈশ্বরের মতো ভয়ঙ্কর একা
আমারই মতো তোমরাও একদিন একা হতে হতে পেয়ে যাবে তার দেখা।
নদী
*
সুউচ্চ পর্বতের শিখর থেকে গড়িয়ে পড়ার আগে
তুমি পাদদেশে নদী বিছিয়ে দিয়েছিলে মাহফুজা
আজ সবাই শুনছে সেই জলপ্রপাতের শব্দ
নদীর তীর ঘেঁষে জেগে উঠছে অসংখ্য বসতি
ডিমের ভেতর থেকে চঞ্চুতে কষ্ট নিয়ে পাখি উড়ে যাচ্ছে
কিন্তু কেউ দেখছে না পানির নিচে বিছিয়ে দেয়া
তোমার কোমল করতল আমাকে মাছের মতো
ভাসিয়ে রেখেছে
বল উপাখ্যান
*
প্রথমে একটি গোল অথচ নিরাকার বলের মধ্য দিয়ে
গড়াতে গড়াতে আমি তোমার শরীর থেকে পৃথক হয়ে গেলাম
আর সেই থেকে তুমি―
মরণকে একটি পিচ্ছিল জিহ্বার মতো বিছিয়ে রেখে
আমাকে ধরার জন্য ছুটে চলেছ, আর আমি
প্রাণ-ভোমরা একটি সিন্দুরের কৌটার মধ্যে লুকিয়ে রেখে
তোমার নাগাল থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি
এই পলায়ন একটি খেলা
যেহেতু সমুদ্রসঙ্গমের আগেই তোমার বিছানো
পিচ্ছিল জালের সূক্ষ্ম সুতায় গেঁথে নেবে আমাকে
যেহেতু আমার তর্জনিতে জড়ানো সৌর-মণ্ডল
ঘুরতে ঘুরতে একদিন তোমার চারপাশে গড়ে তুলবে দুর্গ-পরিখা
তুমি ধরে ফেলবার আগেই
আমি সাড়ে সাতশ’ কোটি নিরাকার বল
তোমার চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিয়েছি
অসহায় বাঘিনীর মতো তুমি থাবা বিস্তার করে আছ―
হায়রে আমার দুরন্ত সন্তান
একদিন ভালোবেসে তোদের করেছি সৃজন
অথচ আজ আমি পিং পং বল
আমার হাতে আছে বজ্র তুফান ভূমিকম্প
’বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি সে কি সহজ গান’
তোমার বাতাসকে বাহন করে বজ্রের মধ্যে
আমরা তোমার গানকে ছড়িয়ে দিচ্ছি
আমরা বাতাসকে বললাম আমাদের শরীরের মধ্যে
গমন নির্গমন ছাড়াও তোমার কিছু
কাজ করা উচিত
আমরা বজ্রকে বললাম আমাদের ঘরের মধ্যে
আলো জ্বেলে দাও
গরুর পরিবর্তে আমাদের লাঙ্গলগুলি কাঁধে নিয়ে টানতে থাকো
শূন্যতা আমাদের বায়ুযান ভাসিয়ে নিয়ে
বোরাকের মতো ছুটে চলেছে…
এই যাত্রা একদিন শেষ এবং নিঃশেষ হয়ে
তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে
তুমি একমাত্র সন্তানের জননীর মতো
হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়বে আমার অপুষ্ট তনুর উপর
আমি বলবো, মাগো তোমার বাবা কে
তুমি বলবে, ‘তুই,
আমি তোর জননেন্দ্রিয়ের মধ্য দিয়ে গড়াতে গড়াতে
বেরিয়ে এসে তোকেই করেছি ধারণ’
আমরা যখন বাতাসের কণা ছিলাম
দুই অণু হাইড্রোজেন এবং এক অণু অম্লজান ছিলাম
তখন ব্রহ্মার নাকের মধ্যে ছিল আমাদের অবাধ যাতায়াত
ব্রহ্মা তখন আমাদের মতো ছিলেন
আমরা তখন ব্রহ্মার মতো ছিলাম
ব্রহ্মা কিছুকাল মাটি ছিলেন
আমরা কিছুদিন আকাশ ছিলাম
তারপর একটি মোরগের মতো কুরুক্কু করে
আমরা মানুষের ঘুম ভাঙাতে থাকি এবং
একটি জবে করা শুকুরের মাংস এবং রক্তের সঙ্গে
মানুষের রক্ত এবং মাংস মেশানোর কাজ বহুকাল ধরে
করে চলেছি
অথচ এই গোনাহ থেকে নাজাতের কোন পথ খোলা নেই
কেবল একটি নিরাকার বল তোমার শরীর থেকে
পৃথক হয়ে অনবরত ছুটে চলেছে…
প্রমিথিউস
*
আমরা ছিলাম কবিতাতান্ত্রিক পরিবারের সন্তান
জলের যোনি থেকে উৎপন্ন হলেও
ক্যাসিওপিয়া আমার মা
ভূমিতে বিচরণশীল প্রাণীদের মধ্যে মানুষকেই
প্রথম বেছে নিয়েছিলাম
তখন হিমযুগ
পৃথিবীতে দারুণ শীত
মানুষ মাংসের ব্যবহার শেখেনি
সোনা মাছ তেরচা মাছ আর কাঁচা মাছ মাংস দিয়ে
উদোর আর নাভিমূল পুরিয়েছে
মানুষ আজ যাকে সভ্যতা জানে
তার নাম আগুন
আমরা বাহাত্তর হাজার কোটি আলোকবর্ষ পেরিয়ে
যে অগ্নিতে সংস্থাপিত ঈশ্বর
যে আগুনে পুড়েছিল তুর
আমরা আমাদের সন্তানকে সেই আগুন চুরির
কৌশল শিখিয়েছিলাম
তিমির তেল থেকে নারী এস্কিমো এখনও যেভাবে
ধরে রাখে পিলসুজ
শরীরে শরীর ঘষে যে আগুন
সেসব তো অনেক পরের ঘটনা
আমরা মানুষের মধ্যে ঈশ্বর
ঈশ্বরের মধ্যে শয়তান
এবং শয়তানের মধ্যে যুক্তির
অবতারণা করেছি
হে বিশ্বকর্মা সয়ম্ভূ সেদিনের কথা স্মরণ কর
অলিম্পাস থেকে নেমে আসছেন জিউস
হংসির উপর দেবতার আপতনকেও
আমরা লিপিবদ্ধ করেছি
তারপর একটি আণ্ডাকে দু’ভাগ করে নিয়ে এসেছি
যুদ্ধের মোহন শরীর
মাংসের জন্য মানুষের যুদ্ধ
মাছের জন্য মানুষের যুদ্ধ
তার শরীরে আঁশ গন্ধ ছিল
আমরা শব্দকে কালো সুতা দিয়ে
তসবির দানার মতো গেঁথে তুলেছি
শব্দ মানে শব্দ-ব্রহ্ম সৃজন এবং ছেদন
যার একটি বৃহৎ রশি মানুষকে বাঁধতে বাঁধতে
গুহাঙ্কিত চিত্রলিপির মধ্যে পতিত হয়েছে
যখন বৃষ্টি ছিল
রামগিরি পর্বত ছিল
নির্বাসন দণ্ড ছিল
কেবল ছিল না যক্ষের সর্বভুক বেদনার রূপ
আমরা জানতাম পাখির বিষ্ঠাপতনের শব্দ
মানুষকে আহ্লাদিত করে না
মাংস এবং গুহ্যের অধিক কিছু আবিষ্কার
করেছেন কবি।
সাপ
*
আমি যখন বুকে ভর দিয়ে প্রাণভয়ে দৌড়াচ্ছিলাম
তুমি তখন সরীসৃপ ছাড়া কিছু বলো নি
বুকের পাঁজর সংকোচন করে হাঁটতে বেশ কষ্ট হয়
সেই সাপ-জীবনের যন্ত্রণা এখনও আমি ভুলতে পারি নি
অথচ ঈশ্বরের সবুজ বাগানে তুমি দু’পায়ে কি চমৎকার
হাঁটছিলে; পল্লবের আড়াল থেকে আমার ঈর্ষা কেবল
তোমাকে দগ্ধ করছিল; সেই থেকে আমার মনে জেগেছিল
তোমার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ার সাধ
পা না থাকার লজ্জা তুমি বুঝতে পারবে না; তবু
কেবল কৌতূহলবশত হাত দিয়ে বুকের কাছটা ছুঁয়ে দিলে
জন্ম থেকেই আমার ছিল শরম লুকানো স্বভাব; কেননা
মাথা আর বুক পেটের দিকে কি শ্রীহীন একই রকম
বড় জোর গর্তে ঢোকার সময়ে শরীরের নির্মোকগুলো
কিছুটা পাল্টে যেতে পারে
তখন পিছনের লেজ টেনে কেউ ফেরাতে পারে না
কারণ বুকে হাঁটার যন্ত্রণায় আমার মস্তিষ্কে
কষ্টের বিষকণা জমা হতে থাকে
সেই গরল দাঁতের ছিদ্র-পথে নির্গমন না হলে
মৃত্যুর চেয়ে ভয়ঙ্কর মরণ আমাকে গ্রাস করতে থাকে
ঈশ্বর দেখে ফেলার আগেই এমন একটি লম্বমান প্রাণী
তুমি কোথায় লুকাবে
তোমাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাবার জন্য আমি
পূর্ব-নির্ধারিত গুহার মধ্যে পালিয়ে গিয়েছিলাম
অথচ তুমি তো জানো সাপ নিজে কোন গর্ত খুঁড়তে পারে না
তবু তোমার সঙ্গে আমার এই লুকানো ক্রীড়া
ঈশ্বর পছন্দ করতে পারলেন না
তাড়িয়ে দিলেন অভিশপ্ত আমাদের তার সবুজ উদ্যান থেকে
দিলেন বিচ্ছিন্নতার শাস্তি; অথচ এই বিজন
বিরান মরুমৃত্তিকায় তোমাকে ছাড়া আমি কি কাউকে চিনি?
কিন্তু আমি কিভাবে তোমার কাছে যাবো
আমি তো পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারি না; তাই
দিনের আলোতে ঘাসের নিচে লুকিয়ে রাখি পথ চলার লজ্জা
রাত এলে তোমার খোঁজে এঁকে-বেঁকে
বেরিয়ে পড়ি রাস্তায়
হাত
*
‘হাত’ হলো মানুষের শুকিয়ে যাওয়া পায়ের নাম
শিশুকে মজা দেখাবার জন্য প্রথমে সে পিছনের
পায়ে দাঁড়িয়েছিল একদিন
শিশুর ফিকফিক হাসি আর বারংবার বায়নার কাছে
দু’পায়েই টলেমলে লাফিয়ে চলতে হলো কিছুক্ষণ, যেমন
মানুষের বাচ্চারা আজ বাবাকে চারপেয়ে ঘোড়া বানিয়ে
পিঠের উপর চড়ে বসে, কান ধরে চিঁহি ডেকে ওঠে
ব্যাপারটা ঠিক তেমনই ছিল; ফাজিল শিশু বলেছিল
‘বাপ তুই দুই পায়ে হাঁট’
একবার ভাবো দেখি দু’পায়ে হাঁটতে গেলে
সামনের পা দু’টি কি বিচ্ছিরি কাঁধের উপরে ঝুলে থাকে
তবু সন্তানের আবদার কোন জন্তু উপেক্ষা করতে পারে?
মানুষ বহুদিন জানত না শুকিয়ে যাওয়া সামনের পা দু’টির
আসলে কোন কাজ আছে কিনা; অপ্রয়োজনীয় শব্দটি
তখন থেকেই মানুষ বুঝতে শিখল; ঝুলে থাকা হাতে
তুলে নিল পাথর, এদিক ওদিক ছুঁড়ে মারল
রক্তাক্ত হলো নিরীহ মহিষের শিরোদেশ
শান্ত গোবৎস বনান্তরে ছুটে পালাল; তারপর
একটি শিম্পাঞ্জিও মানুষকে বিশ্বাস করতে পারল না
সেই থেকে মানুষের জাত প্রাণিকুল থেকে আলাদা হয়ে গেল
কারণ মানুষ প্রকৃতিবিরোধী
এভাবে পাথর আর বল্লমের কাল কবেই ফুরিয়েছে
নিহত শূকরের রক্তে মানুষের আর কোন আনন্দ নেই
হাত এখন হাতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি জেগে আছে
মানুষের বুদ্ধিশুদ্ধি ওসব কিছু নয়
মানুষের ইতিহাস হলো হাতের ইতিহাস
পরিপ্রেক্ষিত
*
কোথাও কি ঈশ্বরের রাজ্য কিংবা একখণ্ড জমি আছে
সেখানে আমাকে একটু দাঁড়াতে দাও
সেই জমিতে একটি ফলবান বৃক্ষের ছায়া কিংবা স্রোতস্বিনী
যা ঈশ্বরের রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত
সেই পূর্ণতোয়ার শীতল জলে আমাকে একটু
অবগাহন করতে দাও
যে লোকটি গতকাল দাঁড়িয়েছিল তোমার সানশেডের নিচে
তার কিছুক্ষণ আগেই যে লোকটি সমুদ্রের লবণ থেকে
পানি আলাদা করে করুণাধারার মতো
তোমাদের ওপর ছড়িয়ে দিচ্ছিল
তোমরা তখন বৃষ্টির আদরে যুগলবন্দি হয়ে
রবীন্দ্রনাথের ‘ঝুলন’ কবিতাটি পড়ছিলে
আর তোমাদের শরীরের মাংসের স্ফীতি
একটি গোলাপকলির সৌন্দর্য বিকশিত করছিল
অথচ আগন্তুককে তোমরা হঠাৎ চোর বলে
সাব্যস্ত করলে
তোমাদের দৌবারিক চেলাকাঠের আঘাতে
আবার তাকে রাস্তায় বের করে দিল
অথচ তখনও তোমরা তার করুণাধারার মধ্যে এবং সে
তোমাদের শরীরের মধ্যে আগুনের চুল্লি প্রজ্বলিত রাখছিল
প্রকৃতপক্ষে কী আছে তোমার যা থেকে সে চুরি করতে পারে
যাকে তোমরা স¤পদ এবং শরীর বল, যেমন
একখণ্ড- জমি পাথরের দালান ইলেক্ট্রনিক্স কাগজের নোট এবং
তোমার উরু নিতম্ব বক্ষদেশ ও মুখমণ্ডল; আর
এসব কেন যে সুন্দর
তুমি ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারো না
তখন বলো, এসব ঈশ্বরের কৃপা, কিন্তু
নগ্নপদ ঈশ্বরকে তোমরা চিনতে পারো না, যখন সে
বালির সঙ্গে সুরকি মেশাতে থাকে এবং
নিপুণ দক্ষতায় ইটগুলো একের পর এক সাজিয়ে তোলে
এবং তোমাদের মূর্খতা দেখে হাসি গোপন করতে থাকে
কেননা সে জানে, কয়েক দিনের ব্যবধানে
অন্য কোন প্রেক্ষিতে তোমাদের সরিয়ে নেয়া হবে
অথচ প্রকৃত মালিককে তোমরা একটু বসতে দিতে পার না
ধাত্রী-ক্লিনিকের জন্ম
*
পৃথিবীতে আসার রাস্তা পিচ্ছিল
নদীর পাড় থেকে শিশুরা যেভাবে পানিতে গড়িয়ে পড়ে
মাঝে মাঝে শামুকের আচড় লেগে পাছার নিচটা কেটে যায়
কিছুটা রক্তপাত হলেও শিশুদের কেউ থামাতে পারে না
শিশুদের দুর্দান্ত কৌতূহল—
দাইমার হাতের স্পর্শেও তারা বিরক্ত হয়
তাদের পতন অনিবার্য
তবু নদীতে গড়িয়ে পড়া সন্তানদের
নিরাপত্তার কথা ভেবে মায়েরা কিছুটা উদ্বিগ্ন
এসব ভয় ও উদ্বেগ থেকে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্লিনিক—
মাতৃসদন
গাইনি ও নার্সদের কাজ
মা ও হবু বাবাদের ভয় আরো উসকে দেয়া
শিশুদের নদীতে গড়িয়ে পড়ার পথ
পানিবিহীন শুকিয়ে দেয়া
চিরাচরিত জলের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে
মরুভূমির মধ্য দিয়ে গঙ্গার ধারা প্রবাহিত করা
গঙ্গা কি তোমাদের মা নয়?
গাইনি ও নার্সদের জন্মের আগে মা কি তার সন্তানদের
একা ছেড়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছিল
একটু ভেবো দেখ, শিশুদের আসার চেয়ে
বৃদ্ধদের যাওয়া কি আরো অনিবার্য নয়
তাদের মা নেই
গড়িয়ে পড়ার মতো পিচ্ছিল কোনো পথ নেই
এমনকি সবাই ধরাধরি করে শুইয়ে না দিলে
শেষ পর্যন্ত কবরেও নামতে পারে না
তখন ভাবি কোথায় নার্স, কোথায় গাইনি
কবরের পাশে তো একটিও ক্লিনিক নেই!
অথচ সংখ্যা ও অনিবার্যতা শিশুদের চেয়ে ঢের
প্রয়োজন ছিল
ডাক্তার
*
আমি সারাজীবন যেসব স্বপ্ন দেখেছি তার প্রায় সবগুলো যৌনাঙ্গ বিষয়ক
দু একটা অবশ্য— ছুরি-কাঁচি নিয়ে পিছন থেকে তাড়া করছে কেউ
দৌড়াতে পারছি না; কিংবা খুব উঁচু থেকে পড়ে যাচ্ছি
দমবন্ধ হয়ে মরার উপক্রম
এর মধ্যে দু একবার আকাশে উড়া, দরবেশের আস্তানা
সম্মুখে সাপ ফণা তুলে আছে— সাপও নাকি সেক্সের সিম্বল
ফুল, গম, পশু, পাখি— নিষিদ্ধ সম্পর্কের কি সব অজাচার
ঘুমাতে ভয় হয়, ঘুমকে পাপাগার ভাবি
বিছানায় যাওয়ার আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে ফুঁ দিই
তবু আমাকে ঘুমিয়ে রেখে পাপের দেবতারা সক্রিয় হয়ে ওঠে
ফ্রয়েড বলেছেন, এসব অবদমিত কামনার ফল
ভাবতে ভয় হয়, আমার চেতনায় কি কেবল যৌনাঙ্গ
মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাই, তিনি বলেন, এসব কোনো অসুখ নয়
তিনি নিজেও নাকি এমনই স্বপ্ন দেখেন, আমি ভরসা পাই
তবু ভাবি এ কেমন যুক্তি হলো, ডাক্তার কি রুগী হতে পারে না?
অর্জুন
*
অর্জুন গাছ জড়িয়ে ধরলে ব্লাড-পেশার কমে
অর্জুনের ছাল হৃদরোগের মাহৌষধ
এমন একটা গাছকে আমি বিয়ে করতে চাই
বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেলে
রক্তের চঞ্চলতা বেড়ে গেলে
যে আমাকে আলিঙ্গন করবে
বল্কলের পোশাক খুলে বলবে
আমার রস শুষে নাও
তোমার হৃদপিণ্ড সচল করো
আমি সপ্রাণ-গাছ তবু ব্যথা নেই
অভিযোগ নেই
আমি সারাদিন সূর্যের আগুনে রান্না করি
রাত এলে অন্ধকারে একা দাঁড়িয়ে থাকি
হৃদয়
*
তুমি না থাকলে হৃদয় থাকার কি মানে
কেনই বা হৃদয় থাকতে হবে
তোমায় অনুভব করা ছাড়া
হৃদয় আর কোন কাজে লাগে
অদৃশ্য বাতাস সমুদ্রের কাছে এসে ঝড়ের সৃষ্টি করে
জলের অনুগুলোর সাথে সে পুনরায় মিলিত হতে চায়
ধরো সবকিছু আছে- তুমি নেই
তাহলে হৃদয় দিয়ে আমি কি করব
আমার যে-সব অঙ্গ লেহন করে
তার জন্য বস্তুর উপস্থিতি যথেষ্ট
কিন্তু তুমি তো বস্তুর অতীত
তোমাকে স্পর্শ করার জন্য আমার এই হৃদয়
আমি যখন একা হই- কাঁদতে থাকি
স্বজনরা আমায় সান্ত্বনা দেয়
কিন্তু আমার এই অদৃশ্য মিলন কেউ
দেখতে পায় না
অনেকেই বলে হৃদয় বলে কিছু নেই
এসব দেহের কামনার সমষ্টি
তার মানে ওরা বলতে চায়- তুমি নেই
তুমি না থাকলে আমার থাকারই বা কি মানে
তুমি নেই তো আমিও নেই
এসব মাংসপিণ্ড দিয়ে আমি কি করব
রিপুর দাস হয়ে থাকা
পেটের জন্য খাদ্য সংগ্রহ
মিলনের জন্য বিপরীত লিঙ্গের অনুসন্ধান
পায়ের ওপর ভর দিয়ে চলা- কার ভালো লাগে
আমি তো বেঁচেই আছি আমার হৃদয়ের জন্য
হতে পারে তুমিই আমার হৃদয়
তুমিই আমার ভালোবাসা
তোমার বহিরাঙ্গ
লতাপাতা প্রজাপতি
রঙধনুর রঙ দেখে
আমার হৃদয় যখন নেচে ওঠে
তখনই বুঝতে পারি তুমি আছ
তুমি হাসছ আমার ব্যাকুলতা দেখে
যেন বলছ- আমি তো তোমার জন্য
আমার কোটিদেশ ও বিম্বাধর
স্তনযুগল- প্রকৃতির মত পরিশুদ্ধ
আমার হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষায় তুমি মুক্ত
এই কামনা ও বিচ্ছেদে আমাদের মিলন
দেহের মিলন ফুরিয়ে গেলেও
তোমার হৃদয়ে আমার বাস
হৃদয় প্রেমিকের আবাস
যখন হবে দেহের অবসান
তখন তুমি আমার করবে পুনর্নিমাণ
কারণ তোমার হৃদয়ে আমার বাসস্থান।
এক গৌণ কবির বয়ান
*
আমি প্রকৃতই একজন গৌণ কবি
তুচ্ছ কবি
আমিও জানি
বন্ধুরাও জানে
শত্রুরা তো আগেই পেয়েছে টের
অহেতুক বড় হওয়ার জন্য করেছি লড়াই
এ একান্ত অস্তিত্বের সংকট
তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই-
আমি একজন বড় কবি
তবু তো কথা থেকে যায়
কার চেয়ে বড়, কার চেয়ে ছোট
যারা কবিতা লিখে মরে গেছে
তারা আগেই হয়ে গেছে মহাকালের অংশ
তাদের কবিতার মমার্থগুলো
অক্ষর ও শব্দগুলো
দেবতারা ভাগাভাগি করে আজ করে পাঠ
আর যে সব মহান কবি এখনো জন্মাননি
তারা ঈশ্বরের পায়ের কাছে বসে
ফেরেশতাদের কাছে শোনে
মানব জন্মের কাহিনি
কারো মাতৃগর্ভে প্রবেশের সময় হলে
বলে, চলো এক দান খেলা হয়ে যাক
অনেকটা প্যারাসুট থেকে নামতে গেলে
শিশুরা যেভাবে গুটিয়ে থাকে মর্মে
আর এই সব দেখে অনাগত কবিরা
ফিক করে ওঠে হেসে
পৃথিবীর কবিদের মূর্খতার গল্প শুনতে শুনতে
আমারই মতো তারাও মূর্খ হয়ে ওঠে
যদিও সকলেই জানে
কবিতা খুবই সাময়িক
তবু জীবন নয় কালোত্তীর্ণ অধিক!
স্নানঘর
*
তোমার স্নানঘরে আমি কখনো ঢুকিনি
স্নানঘর তোমার পবিত্র উপাসনালয়
যেখানে তুমি নিজের শরীরে বোলাও হাত
ময়লা ধুয়ে ফেল
জঙ্ঘার গভীরে দাও পানির স্পর্শ
প্রাত্যহিক ক্লান্তির পরে তুমি যখন অবসন্ন হও
যখন তোমার মন বিতৃষ্ণায় হয়ে ওঠে কাতর
তুমি তখন স্নানঘরে যাও
তোমার শাড়ি ও সেমিজ বক্ষবন্ধনী
তখন কেউ আর তোমার নয়
সারাদিন বুকের সাথে আগলে রাখলেও
স্নানঘরে তুমি তাদের ছুঁড়ে ফেল
কখনো পদদলিত করো-
ময়লাগুলো ঝেড়ে ফেল জলজ ফোয়ারায়
অথচ তারাই তোমাকে করেছিল রৌদ্রে রক্ষা
বিছানায় যাওয়ার আগে ছিল প্রিয়তম সঙ্গী
মানুষ আদতে স্বমেহনপ্রবণ
জলের যোনি থেকে তোমার যাত্রার শুরু
স্নানঘর হয়তো সেই স্মৃতির পুনরাবৃত্তি
স্নানঘর আদি-মাতা, জলের কাছে সমর্পন
যারা একদিন রাজাদের হাম্মাম খানায় সখিদের সাথে
তারাও তোমার সাঙ্গে স্নানঘরে নৃত্য ও সঙ্গীতে মাতে!
পাখিটি
*
আমিও চাইতাম পাখিটি উড়ে যাক
আমার ঘরের পাশে সারাদিন যেন না শুনি তার সুমধুর ডাক
তাই ঘরের দরোজায় দাঁড়িয়ে তাকে দিয়েছি হাততালি
সত্যিই কি আমি চেয়েছিলাম— তাকে হারিয়ে ফেলি
অবাক বিষ্ময়ে দেখি তার দ্বিধাহীন উড়াল
এখন পাখিটি নেই; পড়ে আছে শূন্য ডাল
আমারও হয়তো ছিল কিছুটা ভুল
তাই দোষারোপ করি না তাকে— গুনে দিই মাসুল
তবে কিছুটা ভুলের আছে প্রয়োজন
যদি পেতে চাই গানের ভেতর নিরবতার আস্বাদন।
কবিতা
*
কবিতাকে কবিতা হতে দেখলেই আমি বিরক্ত হই
কবিতা কবিতার মতো হলে আর পড়তে ইচ্ছে করে না
মনে হয় সাজানো গোছানো
মনে হয় কেউ লিখতে চেয়েছিল
মনে হয় বিয়ের আগে পার্লারে গিয়ে সেজেছে অনেক
এসব সাজাটাজা তো একদিনের ব্যাপার
সবাইকে দেখানোর জন্য, চোখ ধাঁধিয়ে দেয়ার জন্য
গায়ের রঙ চড়ানোর পরে
দামি অলঙ্কার ও শাড়ির আড়ালে
পরচুলা ও ভ্রু প্লাক করার পরে
আসল কনে যেমন হারিয়ে যায়
এমনকি ঘরে ফিরে আসার পরেও তো
ফটোশেসনের অলঙ্কার খুলে আলিঙ্গন করতে হয়
কবিতা তো আলিঙ্গন করার জন্য
কবিতা তো খালিপায়ে ফুটপাতে হাঁটার জন্য
কবিতা তো সারিবদ্ধভাবে গার্মেন্টস কারখানায় যাওয়ার জন্য
পার্কে নেতিয়ে পড়া শিশুর সাথে ঘুমিয়ে থাকার জন্য
অবশ্য মাঝে মাঝে জিন্স পরলেও খারাপ লাগে না
বুকের ক্লিভস কিংবা মাথার স্কার্ফ সবই থাকতে পারে
কবিতাকে যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যেতে চাই
ঘরের লক্ষ্মীরা ঘরে থাক
যারা বেরিয়ে আসতে পারবে রাস্তায়
মাঠে ঘাটে মিছিলে সংগ্রামে
যারা লিঙ্গহীন বন্ধুর মতো চারপাশে
যারা মিলনে পারঙ্গম শয্যায়
যারা সহমরণে অগ্নিশিখার মতো জ্বলে উঠবে
তারাই আমার কবিতা
তাদের জাতপাত ধর্মাধর্ম বর্ণগোত্র
দেশকাল আমার বিবেচ্য নয়।
দুঃখ
*
সব ভালো কবিতা দুখীদের অধিকারে
কবিতা লিখতে গেলে যেমন কিছুটা দুঃখ লাগে
পড়তে গেলেও কিছুটা দুঃখের প্রয়োজন
প্রাপ্তি যার কানায় কানায় সে যাবে সমুদ্র বিলাসে
রাজ্য শাসনে তুমি তুষ্ট
স্ত্রীর পঞ্চ ব্যঞ্জনে তুলছ ঢেঁকুর
সন্তানের সাফল্যে প্রতিবেশি ঈর্ষান্বিত
মদ ও মাংসের যাচঞা হয়েছে পুরণ
তোমার জন্য তো কবিতা নয়
দু’একটা পদ্য হয়তো রয়েছে কোথাও
পৃথিবীর সকল সুখী মানুষের কবিতা একটাই
তাই তুমি বলতে পার-কবিতা কেমন হবে
কিন্তু প্রতিটি দুঃখের রয়েছে আলাদা রঙ
এমনকি গতকালের দুঃখগুলোর সঙ্গে
আজকের দুঃখের নেই মিল
বোনের দুঃখ ভাইয়ের দুঃখ
বাবা ও মায়ের দুঃখ একই পরিবারভুক্ত নয়
দুঃখের বাস মানুষের সৃষ্টি চেতনায়
দুঃখের কোনো বাবা নাই
এমনকি যে তোমাকে দুঃখ দিয়েছে
তারও রয়েছে নিজস্ব দুঃখ
প্লাথ ও উলফের দুঃখ কি অগ্নিজলে নির্বাপিত হয়েছিল
পো ও হেমিংওয়ের দুঃখও তো হয়নি জানা
ট্রামেকাটা দুঃখ, নীরবতার দুঃখও সয়েছেন কবিরা
দুঃখই তো কবির বাড়ি ফেরার পথ
দশম দশা
*
প্রেমের সূচনাতে হারিয়ে ফেলেছি সকল মুদ্রা
তার অনির্দেশ্য ইঙ্গিতে করেছি গৃহত্যাগ
আমাকে ছেড়ে গেছে গোত্রের স্বজনেরা
জানি না ভগ্নস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের আছে কি উপায়
আর কেনই বা তার দরকার
পাড়ার শিশুরাও আমাকে করে না গ্রাহ্য
দু’একটি ঢিলও ছুড়েছে আমার দিকে
পাগলের সাথে সবারই সম্পর্ক মজার—
মানুষের পৃথিবীতে— সে থাকে অন্য দুনিয়ায়
অবশ্য যার জন্য আমার এই দশা
তাকেও দিই না দোষ
ভালোবাসা তো একান্ত নিজেরই জন্য
যদি আমার আহ্বানে সে দিত সাড়া
যদি পূর্ণ হতো মিলনের সাধ
তাহলে তো এখানেই শেষ প্রেমানন্দের
মল্লিনাথ বলেছেন— প্রেমের দশটি সোপান
দৃশ্যের সুখ— প্রেমের প্রথম ধাপ
দ্বিতীয়তে রয়েছে— মিলবার সাধ
ক্ষুধামন্দা, স্বাস্থ্যহানি এসবও প্রেমের পর্যায়
আমার অবস্থান এখন অষ্টম ধাপে
সংসারীরা যাকে প্রেমোন্মাদ বা মজনু বলে ডাকে
আমি নিজেও ভুলে গেছি এ দশার কারণ
শরীর দিয়ে শরীর ছোঁয়ার ক্ষমতা হারিয়েছি
এখন শুধু পৌঁছে যেতে চাই চরম প্রান্তে
বারংবার মুর্চ্ছা যাচ্ছি, বেঘোরে দেখছি—
যুদ্ধে কর্তিত সৈনিকের শিরস্ত্রাণ তুলে নিচ্ছে
এক রোরুদ্যমান রমনী
হয়তো আমি চলে এসেছি প্রেমের চূড়ান্ত পর্বে
যদিও মানুষ তাকে মৃত্যু বলে জানে
তবু পেয়ালা ভরার এই তো সময়
আমি এখন উঠে যাচ্ছি দশম ধাপে…
নিষ্কামী
*
তুমি ঠিকই জানো, তোমার তো জানারই কথা
আজ অনেক লিঙ্গের মাঝে বিপন্ন আমি
অথচ এই লৈঙ্গিক পরিচয় ছিল আমাদের খেলা
আমরা যখন পানির পিচ্ছিল ঘাটলায় জেগে উঠছিলাম
যখন আমাদের ছিল প্রোটোজোয়া কাল
তখনো হয়নি শুরু আমাদের হ্যাপ্লয়েড বিভাজন
শরীরের মেয়োসিসগুলো তখনো ছিল মাইটোসিসের সাথে
আপন কোষের আড়ালে আমরা তখন স্বমেহনরত
সেই তো ছিল আমাদের সম্পূর্ণ আনন্দের কাল
তুমি বা আমি; আমি বা তুমি— এর কোনো লিঙ্গান্তর ছিল না
তখন আমরা ছিলাম, সম-বিষম-উভকামী
আমাদের শয়ন, উপবেশন কিংবা পদব্রজ
হিমালয়শৃঙ্গের গলিত তুষার-তরঙ্গের সাথে
পতিত হয়ে তোমাকে তুলে নিচ্ছিলাম কোলে
কখনো তুমি নিচে, কখনো আমি
শরীরের ভারে নুব্জ, আবার জরায়ুতে গেছি মিশে
হয়তো এসব তুমুল উত্তুঙ্গু মিলনের কালে
আমার সুপ্ত অহংকার তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিল
যদিও চন্দ্রিমা রাতে আমরা কাছে এসেছিলাম
যদিও আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম অন্ধকার গুহায়
তবু দিনের আলো আমাদের মিলতে দেয়নি
অথচ এখনো যারা তাদের লিঙ্গকে পারে চিনতে
তারা হয়তো সমকামী, তারা হয়তো এখনো আছে
ঈশ্বরের উদ্যানে
তাদের অযৌনজনন, পক্ষপাতহীন মিলন
কেবল মিলনের আনন্দের তরে
কিন্তু যে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম
হয়তো শরীরের চিহ্নরেখায় ছিল দৃশ্যত অমিল
সেই তুমি যখন আমার সঙ্গে মিলিত হও
তখনই তো আমি হয়ে উঠি অভিন্ন পূর্ণ মানুষ
তখন আমরা পরিণত হই নিষ্কাম কর্মে
তখন দৃশ্যত কামের আড়ালে পারে না দেখতে
আমাদের বিভাজন রেখা
আলিঙ্গন
*
অনেকদিন আমরা আলিঙ্গন করি না
আমাদের বিছানাও আলাদা হয়ে গেছে
শরীরের চামড়াগুলো কিছুটা ঢিলঢাল
দেখা দিয়েছে প্রস্টেটের অসুখ
মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে প্রায়ই টের পাই
বিছানা ভিজে গেছে
এ আর নতুন কি! আগেও বহুবার হয়েছে
মা তখন বেঁচে ছিলেন
ফকিরের পানিপড়া, তাবিজ-কবজ
বাহুতে শিকড় ধারণ
আর কৈশোর পেরুলে শুরু হয়
নতুন যন্ত্রণা
বিছানার বদলে তখন ভিজেছে পাতলুন
মা’র দুঃশ্চিন্তা তখনো কমেনি
সন্তানের স্বাস্থ্যরক্ষা মায়ের নিয়তি
কিন্তু এখন! কে নেবে এই অসুখের ভার
মা নেই; যার কাছে রেখে গেছে, সেও
হারিয়েছে ধারণের ক্ষমতা
আমরা যাদের ডায়াপার দিয়েছি পাল্টে
কিভাবে করি মাঝরাতে তাদের স্মরণ
তারাও তো এখন ব্যস্ত
এই রাত ঐন্দ্রজালিক চেতনায় ভরপুর
এই রাত আমাদের করেছে দ্বিখণ্ডিত
এই রাত আমাদের অপারগতা
সারাদিন ব্যস্ত থেকেছি কয়লা সংগ্রহে
রাত্রে প্রভুর দাসত্ব করা
তার চরাচর, তার কর্মী সংগ্রহ
উৎপাদন ঘাটতি হলে সোজা কেটে পড়া
তবু উর্বর দিনের স্মৃতি রয়েছে শিরায়
পুনরায় চাষাবাদের আকাঙ্ক্ষা আছে জেগে
যদিও গরুটানা লাঙলের হয়েছে অবসান
নতুন নিয়ম শেখা অতটা নয় সহজ
তবু মনে হয় জেগে উঠি রাত থাকতে
গরুগুলি জোয়ালে বেঁধে দিই টান
ফালের ভ্রমর ধরে গাই মুর্শিদি গান
এখন কলের লাঙলের যুগ শুরু
মানব-শ্রমের দিন হয়েছে অবসান
আলিঙ্গনে রয়েছে লিঙ্গ- বলেছেন কলিম খান
গান্ধীর ব্রহ্মচর্য সেও তো লৈঙ্গিক চেতনার ফল
আমাদের মিলন, নিষ্কাম জড়িয়ে ধরা
দু’একটা দিন নিজেদের জন্য বাঁচা
নয় শ্রম, নয় উৎপাদন
নয় কর্মের বিভাজন
এখন বাতাসের ভেলায় চড়ে
সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের রঙ্গে
মিলিত হবার ঢঙে
একটা শরীরের ওপর
আমরা আরেকটা শরীর যাচ্ছি পড়ে…
শোকগাথা
*
সূর্যটাকে নিজস্ব আয়নার সাথে যুক্ত করার আগেই
আমাদের রাতগুলো বেরিয়ে আসে দিনের আলোয়
বলি, পাখি ডাকার একটু ফুরসত দাও ভাই
দাও মোরগের গলা ফুলাবার কারুকাজ
সারাদিন সঙ্গীনির কাছে যেন কিছুটা গাঁক অবশিষ্ট থাকে
পুরুষ প্রজাতির আজ পৃথিবীতে বড়ই হ্যাপা
নিষিক্ত ডিম্বকগুলো ল্যাবরেটরিতে দিচ্ছে জানান
জনকের প্রয়োজনীয়তা যদি ফুরিয়ে গেল
তাহলে নেমে আসতে কতক্ষণ প্রকৃতির প্রতিশোধ
ডিম ফোটাতে আজ মোরগের অবদান নেই
মিলন ছাড়াই গাভিগুলো বাচ্চা দিচ্ছে
আর বকনাগুলো হাসছে বলদগুলোর বেহাল অবস্থা দেখে
এমন ত্যাগ আর খাদ্যগ্রহণ- এমন কি মহৎ কাজ
তোমার এই বেঁচে থাকা- বড়জোর মসজিদের
সারিগুলো কিছুটা লম্বমান করা
রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও আজ তোমার প্রাধান্য গৌণ
রাজার জন্য যেহেতু হচ্ছে না লাইনে দাঁড়াতে
তাহলে ট্রিগারের মতো অস্ত্রের বাড়তি অংশ অহেতুক বহন
যারা আজ তোমাকে শেখাচ্ছে বাঙ্কার আর বেয়োনেট এক
তুমি কি এখনো পড়ে আছ তাদের সঙ্গ লিপ্সায়
নাকি ভার্চুয়াল মধ্যমার সাথে করছ খুনসুটি
সকাল হলেই বাতাসে ভেসে আসা একটি মার্জারের মতো
রাবারের মুষিকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছ ব্যর্থ আক্রোশে
যারা তোমায় দেহহীন ভুলিয়ে রেখেছে
তুমি সারাদিন ব্যস্ত তাদের অন্বেষণে
হে আমার সন্তান হে আমার বিভাজিত রেখা
তোমার ক্রুশ তোমাকেই করতে হবে বহন
কবর খোড়ায় উৎসবে যারা গাইছে সঙ্গীত
এমনকি মন্দিরের ঘন্টাগুলো তুমিই বাজিয়ে দিচ্ছ শূন্যে
আর দাঁড়িয়ে থেকো না- রাস্তার পাশে যে মা অপেক্ষায় ছিল
তাকে বলো তোমার অক্ষমতার কথা
যে জন্মের জন্য তোমার ছিল না মূল্য পরিশোধোর দায়
কেন করছ তার অহেতুক খোয়াবার ভয়!
নির্জন বিটপীর তলে
*
আবার কি আমাদের দেখা হতে পারে
আমরা কি অনেকটা দূর চলে গেছি
সায়াহ্ন কি হয়েছি পার
ফিরতে গেলে বেলাবেলি বড় কি দেরি হয়ে যাবে
বৃক্ষের নিচে কি নেমেছে ছায়া
পাতার আড়াল থেকে পারব কি চিনতে অবয়ব
আলো থেকে দূরে গেলে তুমি কি তেমনই থাক
পুনরপি ভাবতে গেলে নিশ্চিত সায়ংকাল
নদীও হয়েছে উত্তাল ভরপুর
অবিরাম ধরছে বৃষ্টির ধারা
মাঝি চলে গেছে পারে
অথৈ তটিনী আমি পাব কি সন্তরণে
এই ভর সন্ধ্যায় ফিরে গেলে তুমিও
নাকি আমারই মতো দ্বিধায়
নাকি বিপদ ঘনিয়েছে ঘনিষ্ঠতার দায়ে
এখনো প্রান্তরে বুড়ো বিটপীর নিচে
সাঁঝের অন্ধকারে খুঁজছ কোনো মুখ
প্রেতমূর্তি হয়তো একা একা কইছে কথা
এখানে এসেছে নেমে বিচ্ছেদের শূন্যতা
অন্ধকার রাতে বৃষ্টির বারতা।
সাপেক্ষ
*
অনেকেই জানতে চান- জন্ম সম্বন্ধে কি আমার মত
ঈশ্বর আছে কিংবা নাই
মানুষ কি বানর জাতীয় প্রাণি থেকে এসেছে
পৃথিবী কি সূর্যের চারিদিকে ঘোরে
মানুষের দুরাচারে ওজোনস্তর যাচ্ছে হয়ে ফুটো
একদিন এ গ্রহ ছেড়ে মঙ্গলে মানুষ বাঁধবে ঘর
বরফ-গলনে উঁচু হচ্ছে সমুদ্রের তল
আর কতটা দেরি মসিহ ঈসার কাল
গণতন্ত্র ভালো না উন্নয়ন
আমি শুধু দেখি রুয়ান্ডা থেকে বুরুন্ডি
দারফুর থেকে রাখাইন
নগ্ন পায়ে হেঁটে যাচ্ছে ঈশ্বর- জঙ্গলে সমুদ্রে
পানিতে ভেসে উঠছে লাশ
পালিয়ে যাচ্ছে অন্য কোনো গ্রহের সন্ধানে
সূর্য ঘুরছে পৃথিবীর চারিদিকে
মসিহ পথ দেখায়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের
পোড়া মাংসের পাশে নৃত্যরত দাজ্জালের ঘোড়া
অথচ এখনো যারা উত্তরের অপেক্ষায় আছেন
তাদের শুধু বলি- এবার সাপেক্ষ বলে দিতে হবে
লেখা
*
আমি তো লিখতেই চেয়েছিলাম
আমি তো লিখেই বুড়ো হয়ে গেলাম
লিখতে লিখতেই তোমায় কুড়িয়ে পেলাম
লিখতে লিখতেই তোমায় হারিয়ে ফেললাম
লিখতে লিখতেই পিতার হাত ফসকে
মায়ের আঁচল ধরলাম
আবিষ্কার করলাম মায়ের অন্ত্রের অসুখ
পানির সাথে খেলতে থাকলাম
লিখলাম তার মুখ
লিখতে লিখতে জানলাম তার বুকের অসুখ
পিস্টিল থেকে জুড়ে দিলাম কান্না
মা আমায় ছেড়ে কোথাও তো যাবে না
আমি নেব তোমার বক্ষের কর্কট রোগ
আমি নেব তোমার জীবনের ভোগ
আমিও যে মা তোমার মত ধরি
তোমার পথে তোমার নামে লড়ি
লড়তে লড়তে লিখি
লিখতে লিখতে লড়ি
লেখার সাথে জেগে উঠি লেখার সাথে মরি
একটি মেয়ে বলল আমায় লেখ
বলল লিখলি বটে এবার পড়ে দেখ
পড়তে গিয়ে দেখি
ওমা এ সব আমি লিখি
নদী লিখি পাখি লিখি টিলা লিখেছিলাম
মেঘের সাথে উড়ে এসে বৃষ্টি ঢেলে দিলাম
পড়তে পড়তে খেই হারিয়ে ফেলি
বলি মেয়ে লেখা তো নয় চল একটুখানি খেলি
খেলতে গিয়ে পাড়ার ছেলে মেয়ে
কেউবা এসে বাবা বলে কেউবা দুলা ভাই
এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে লেখার কলমটাই
এখন তোমার নাম দিয়েছি লেখা
এখন আমার পাঠের সময় গ্রন্থ খুলে দেখা
এক লিখেছি দুই লিখেছি অনন্ত অম্বর
তোমায় ছাড়া সকল বর্ণ আঁধার ঘনঘোর
মজিদ মাহমুদ-এর লেখালেখির পরিচয়
মজিদ মাহমুদ কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। তিনি বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি ও চিন্তাশীল প্রাবন্ধিক হিসাবে বিবেচিত। ‘মাহফুজামঙ্গল’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা। তিনি নজরুল ইনসটিটিউটের গবেষণা বৃত্তির অধীনে ‘নজরুল তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র’ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের গবেষণা বৃত্তির অধীনে ‘রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ সাহিত্য’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করেন।
তার রচনা কমনওয়েলথ ফাউন্ডেশন, ইন্ডিয়ান রিভিউ, সিঙ্গাপুর আনবাউন্ড-সহ দেশি-বিদেশি স্বনামখ্যাত জার্নাল ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে থাকে। ইংরেজি ছাড়াও ফরাসি, চায়না ও হিন্দি ভাষায় তার বই অনূদিত হয়েছে। ইতোমধ্যে তার ২০টি কাব্যগ্রন্থ ২০টি প্রবন্ধ গ্রন্থসহ ৫৬টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে।
তিনি ২০২১ খ্রিস্টাব্দে তার উপন্যাস ‘মেমোরিয়াল ক্লাব’ এর জন্য বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কারে ভূষিত হন, এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব, জীবনানন্দ দাশ, সমধারা, পদক্ষেপ ও বিনয় মজুমদারসহ বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তিনি দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, অর্থনীতি প্রতিদিনসহ বেশ কিছু পত্রিকায় কাজ করেছেন। এছাড়া মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ ও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি বর্তমানে ওসাকা নামের এক বেসরকারি সংস্থার প্রধান নির্বাহী।
মজিদ মাহমুদ ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৬৬ সালের ১৬ এপ্রিল পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার চর গড়গড়ি গ্রামে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কেরামত আলী বিশ্বাস, মা সানোয়ারা বেগম।
তার উল্লেখযোগ্য বই:
কবিতা : মাহফুজামঙ্গল (১৯৮৯), গোষ্ঠের দিকে (১৯৯৫), বল উপাখ্যান (১৯৯৮), আপেল কাহিনি (২০০১), ধাত্রী-ক্লিনিকের জন্ম (২০০৬), অনুবিশ্বের কবিতা (২০০৭), দেওয়ান-ই-মজিদ (২০১০), সিংহ ও গর্দভের কবিতা (২০১৩), সন্ত কবীরের ১০০ দোঁহা (২০১৪), গ্রামকুট (২০১৬), কাটাপড়া মানুষ (২০১৬), শুঁড়িখানার গান (২০১৬), লঙ্কাবিযাত্রা (২০১৬), ষটকগুচ্ছ (২০২১), শ্রী শ্রী সন্ন্যাসীতলা (২০২২), খুঁত (২০২১), আনন্দিনী ভৈরবী (২০২২), কাব্যসংকলন- নির্বাচিত কবিতা (২০০৪), কাঁটাচামচ নির্বাচিত কবিতা (২০০৬), কবিতামালা (২০১৬), কাব্যসমুচ্চয় (২০২০), কবিতা শতক (কোলকাতা, ২০২২)।
কথাসাহিত্য: মাকড়সা ও রজনীগন্ধা (১৯৮৬), সম্পর্ক (২০১৮), মেমোরিয়াল ক্লাব (২০২০), তুমি শুনিতে চেয়ো না, (২০২০) ক্যালকাটা গোয়িং (২০২১)।
প্রবন্ধ ও গবেষণা: নজরুল তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র (১৯৯৬), কেন কবি কেন কবি নয় (২০০৩), নজরুলের মানুষ ধর্ম (২০০৪), ভাষার আধিপত্য ও বিবিধ প্রবন্ধ (২০০৫), উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্য ও অন্যান্য (২০০৭), সাহিত্যচিন্তা ও বিকল্পভাবনা (২০১০), রবীন্দ্রনাথ ও ভারতবর্ষ (২০১২), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০১৪), ক্ষণচিন্তা (২০১৬), নতুন সাহিত্য চেতনা (২০১৮), সাহিত্যে মহামারী (২০২১), মহাজীবনের মহাকাব্য (২০২১), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: পরিপ্রেক্ষিত সাহিত্য সাংস্কৃতিক আন্দোলন ( কোলকাতা, ২০২২)।
অনুবাদ: যাযাব প্রেম (উপন্যাস) ২০১৭, মূল মরোক্কান লেখক ইউসুফ আমিনি ইলালামি, ঈশ্বর ছুটিতে (২০১৭) মূল অজিত কৌর, পরদেশি কবিতা (২০২১), পরদেশি গল্প (২০২২)।
শিশুসাহিত্য: বৌটুবানী ফুলের দেশে (১৯৮৫), বাংলাদেশের মুখ (২০১৬), বর্ণমালায় বাংলা ভাষা (২০১৯)।
সম্পাদনা: রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ সাহিত্য (২০০৭), মধুসূদন দত্তের শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০০৯), বৃক্ষ ভালোবাসার কবিতা (২০০০), জামরুল হাসান বেগ স্মারক গ্রন্থ (২০০৩), হাবীবুল্লাহ সিরাজীর শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০২২), মুখোমুখি: কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সাক্ষাৎকার (২০২২)।
পেশা: উন্নয়ন-কর্মী, শিক্ষকতা ও লেখালেখি ।