নির্বাচিত ২৫ কবিতা ও প্রতিকবিতা ।। ইমতিয়াজ মাহমুদ

কালো কৌতুক (২০১৬)

ঈদ

আমার কোন ঈদ নাই। এগার বছর আগে নামাজ পড়তে
যাবার সময় আমার ঈদ চুরি হয়ে গেছে। আমি ঐদিন
সবার মতো পাঞ্জাবি পরে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম।
বাড়তি বলতে হাতে একটা তসবিহ ছিলো। ঐ তসবিহ’র
দিকে মন দিতে গিয়ে কোন ফাঁকে ঈদ হারিয়ে ফেলেছি টের
পাই নাই। থানা পুলিশ করার মতো সঙ্গতি বাবার ছিলো না।
তিনি বলেছিলেন মন খারাপ করিস না। সবার ঈদ থাকে না।
এর চেয়ে আমার ঈদটা তুই নিয়ে নে। আমি বললাম আপনি
ঈদ কোথায় পাবেন? আমি তো শুনেছি দাদা বেঁচে থাকতেই
আপনার ঈদ হারিয়ে গেছে। বাবা অপরাধীর মতো বললেন
তা ঠিক আছে, তবে তোর মায়ের ঈদটা আমি চুরি করে রেখেছি!

 

উন্মাদ

উন্মাদ হবার মুহূর্তটা অনেক ক্রিটিকাল
ঐ মুহূর্তটিতে মানুষ দুটি ভিন্ন ভিন্ন
জগতের নো ম্যানস ল্যান্ডে
চলে যায়
তখন তাকে ঠিক এই জগতের
বা

জগতের
মানুষ বলে চিহ্নিত করা যায় না
এই জগতহীনতার সময়টা অনেক ক্রিটিকাল
আপনি যদি
কখনো
এমন নো ম্যানস ল্যান্ডে পড়ে যান
তবে উচিত হবে দ্রুত
যেকোন একটি জগতকে বেছে নেয়া
একটু দেরি হলে আপনি আটকা
পড়ে যাবেন
আর বের হতে পারবেন না
আপনি
বের
হতে
পারবেন
না
নিঃসঙ্গ আর অভিশপ্ত
পৃথিবী থেকে
আপনি সাহায্যের জন্য চিৎকার করবেন
কিন্তু কেউ তার অর্থ উদ্ধার
করতে পারবে না
কেননা আপনার চিৎকারটা
দুই ভাগ হয়ে যাবে
যার
অর্ধেক পৌঁছবে এই জগতে
বাকি
অর্ধেক
ঐ জগতে!

 

হারুন

বারান্দায় অনেক রোদ
হারুন আপনার গা পুড়ে যায়, তাও বসে থাকেন
সাত তলায়
রেলিং
নাই
আপনার বউ রোদে চাদর শুকাতে আসে
আপনি বসে থাকেন, আপনার গা পুড়ে যায়
আপনার বউ চাদর ওল্টাতে যায়
হারুন আপনার তখন মনে হয়
সে বারান্দা থেকে পড়ে যাবে
রেলিং নাই
আপনার গা পুড়ে যায়
আর আপনার বউ চাদর উল্টে
পড়ে
যায়
সাত তলা থেকে
‘হারুন, আপনার বউকে ধরুন!’
আপনি ধরতে যান। চাদর ধরেন; সে রাস্তায়।

 


আপনার বউয়ের জ্ঞান ফেরে হাসপাতালে
আবার চলে যায়
তাও
হাসপাতালে
চিরতরে
হারুন কিছু বোঝার আগেই পুলিশ
আপনাকে ধরে নিয়ে যায়
থানায়
আপনার বউ বলে গেছে
আপনি তাকে ধাক্কা মেরেছেন।

 


মানুষ কতটা হারামি হতে পারে বারান্দা
থেকে বউ না পড়লে তা বোঝাই যায় না
এক কাগজে লিখেছে টাকার জন্য খুন
এক কাগজে লিখেছে যৌনবিকৃতি
এক কাগজে লিখেছে আপনার
এক কাগজে লিখেছে দুজনারই
আপনার ছবিতে ছবিতে ছেয়ে গেছে মহল্লার দেয়াল
হারুন, পাড়ার ছেলেরা উৎসবটা হাতছাড়া করতে চায় না।

 

আপনি দেখতে পান
কেউ আপনার সত্য কথাটা বিশ্বাস করে না
পুলিশ অথবা আপনার মা
আর তখন আপনার মনে হতে থাকে
হয়ত আপনিই ভুল বলছেন
হয়ত আপনিই ধাক্কা দিয়েছেন
রিমান্ডের তৃতীয় দিন আপনি স্বীকার করেন
অভিযোগ সত্য
আপনি দোষী
হারুন, খুনের বিচার ফাঁসি!

 

৫ 
মরে যাবার সময় আপনি মুহূর্তের মধ্যে গোটা জীবন
স্থিরচিত্রের মতো দেখতে পান। আর তখন খুব পরিস্কার দেখতে
পান আপনি বারান্দায় বসা আর চাদর উল্টে আপনার বউ
সাত তলা থেকে পড়ে যাচ্ছে,

আপনি বুঝতে পারেন
কী অন্যায় আপনার সাথে করা হয়েছে
কিন্তু ন্যায়বিচার কোথায় পাবেন?
হারুন, এখন খোদার কথা ভাবেন।

 

পুলিশের কাছে মিথ্যা বলার
অপরাধে
খোদা
আপনাকে দোজখে পাঠাল।
যে দোজখ আপনার অনেক পরিচিত
দোজখে অনেক আগুন
তাতে
আপনার
গা পুড়ে যায়
যেন সাত তলার বারান্দায় বসে আছেন
আপনার বউ বারান্দায় আসে
আপনার মনে হয় সে
বারান্দা
থেকে পড়ে যাবে
রেলিং নাই
হারুন, পড়ে যাবার আগে ধরুন!

 

 শূন্যস্থান

কবিতার দুটি লাইনের মধ্যে এতটুকু শূন্যস্থান রাখতে
হয় যেন তার মধ্যে একটা সূর্য উঠতে পারে আর
সূর্যের আলোয় একটা লোক হকার্স মার্কেটে কমলা
রঙের একটা মশারির দরদাম করতে পারে। দরদাম
শেষ হবার আগেই
এই
কবিতা
পরের
লাইনে
চলে যাবে যেখানে দেখা যাবে লোকটা তারও পরের
লাইনের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানে ছুটছে। কেননা একটু
আগে তার পকেটকাটা গেছে। সে পকেটমারের পেছনে
দৌড়াচ্ছে। আর তার পেছনে দৌড়াচ্ছে আরও দশজন।
(ঐ দশজন অবশ্য তাকেই পকেটমার সন্দেহ করছে!)
দৌড়াতে
দৌড়াতে
লোকটা
একটা ঠেলাগাড়ি, দুইটা ভ্যান আর তিনটা রিক্সা পেছনে
ফেলে এখন একটা বাসের পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে আর
অবাক ব্যাপার যে বাসটাও তার সামনে সামনে দৌড়াচ্ছে

লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাস দৌড়াচ্ছে

এভাবে কবিতা পরের লাইনে গেলে দেখা যায়
ঐ লোকটার চেয়ে
পেছনের দশজন ভালো দৌড়েছিল
আর
পকেট কাটার
অপরাধে লোকটার লাশ ফুটপাতে পড়ে আছে;
তবু তার
দৌড় থামানো যায় না, কেননা
মানুষ জীবনভর নিজের লাশের পেছনে দৌড়ায়,
সে লাশের যত কাছে যায়
লাশ তত দূরে সরে যায়
লোকটা
তাও
দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে সে লোকালয়
আর পাহাড় অতিক্রম করে এখন একটা
জঙ্গলের মধ্যে দৌড়াচ্ছে
আর তার সামনে
দৌড়াচ্ছে একটা বাঘ

লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/বাঘ দৌড়াচ্ছে

কবিতার
পরের
শূন্যস্থানে বাঘ থেমে যায়, আর তার পেছনে
থেমে যায় লাশ। ফলে লোকটা তার লাশটাকে ধরে
ফেলে। আর এখন সে বাঘটাকে অনুরোধ করছে
যেন দয়া করে তার লাশটা খেয়ে ফেলে।
বাঘ বলল ‘কী নাম?’
লোক বলল ‘জামান’
বাঘ বলল ‘জামান, নিজের টাকা চুরি করে
যে লাশ হয় তাকে আমার খাবার রুচি হয় না’
এই বলে বাঘ কবিতায়
মিলিয়ে যায় আর
লোকটা তার লাশ নিয়ে ফের দৌড়ানো শুরু করে,
তার
মাথার উপর দৌড়ায়
শূন্য থেকে বের হয়ে আসা
চাঁদ

লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে
লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে/লোক দৌড়াচ্ছে/চাঁদ দৌড়াচ্ছে

এরপর চাঁদ ডুবে গেলে

কবিতার দুই লাইনের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানে সূর্য ওঠে
যার আলোয় লোকটা হকার্স মার্কেটে মশারি কিনতে যায়
আর লাশ হয়ে পুনরায়
এতদূর আসে
(অথচ কবিতার শেষেও থাকে এক দীর্ঘ শূন্যস্থান
যেখানে অনায়াসে একটি কবর রচনা করে
চক্র ভাঙা যায়)
‘জামান?’
‘জ্বি’
আপনার লাশটা ঐ শূন্যস্থানে নামান!’

 

পেন্টাকল (২০১৫)

 

যদি

যদি চুরির অভিযোগে এক দুপুরে তোমার চাকরি চলে যায় আর তার পরদিন
হাতে পাও তোমার বউয়ের ডিভোর্স লেটার। পত্রটা পুরো পড়ার আগেই
শোন মাদক হাতে ধরা পড়েছে তোমার ছেলে। আর তোমার মেয়ের গোপন
ভিডিও ছড়ায়ে পড়েছে পৃথিবীর অন্তর্জালে। যদি তুমি রেললাইনে মরতে
যাও। আর রেলগাড়ি তোমার মাথা কাটার বদলে পা দুটো কেটে ফেলে।
যদি লোকজন তোমাকে ধরে শোয়ায়ে রাখে পঙ্গু হাসপাতালে। যদি তুমি
চোখ খুলে দেখতে পাও তোমাকে দেখতে এসেছে তোমার
বউ/ছেলে/মেয়ে। যদি তারা পেয়ারা নিয়ে আসে। যদি সবুজ সে পেয়ারা
পড়ে থাকে টেবিলের উপরে। তখন তুমি ভাবতে পারো, কী সুন্দর সবুজ
পেয়ারা! এমন জীবন কয়টা মানুষইবা পায়? যদি না পেয়ারার অর্ধেকটা
তোমার আগেই ক্ষুধার্ত কোন ইঁদুর খেয়ে যায়!

 

অমরতা

মরতে আমার খালি দেরি হয়ে যায়!

আকাশের কিমাকার মেঘদল দেখে
আমি একা মরে মরে বেঁচে থাকি রোজ
আর বেঁচে যেতে গিয়ে পুনরায় ভাবি,
পরদিন পেতে পারি মরণের খোঁজ।

পৃথিবীতে আমি মরে যেতে পারতাম
কোন সাপের কামড়ে, হঠাৎ বিমারে,
পথে হেঁটে যেতে যেতে বাসের তলায়!

আমার কাফন তবু চুরি হয়ে যায়
আমার গায়ের জামা ছোট হয়ে যায়।

পৃথিবীতে আমি মরে যেতে পারতাম
হাসতে হাসতে একা মাথা ঘুরে পড়ে,
ধারালো ছুরিতে আর কফির চুমুকে!

কফির বদলে লোকে বিষ খেতে দেয়
আমি এক চুমুকে তা খেয়ে উঠে ভাবি,
এবার আমারে আর যাবে না বাঁচানো

আকাশের মেঘদল উড়ে গেলে দেখি
বিষের গেলাসে আবে হায়াত মেশানো!

 

মিত্ব

দরজায় আমি অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর ভেতর
থেকে যে লোকটা দরজা খুলে দিলো সেও আমি।
তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখি সে তাকিয়ে
আছে ঐভাবে। ভাবি এই যন্ত্রণা নিয়ে পরে মাথা
ঘামালেও চলবে। আমি ভেতরে ঢুকে গোসল করি।
টিভি ছেড়ে দেই। পর্দায় দেখি আমি খবর পড়ছি।
খবরে বলা হলো প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন। যার
ছবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখানো হলো সেও আমি।
আমি মাথা খারাপ টিভিটা বন্ধ করি দেই আর
তখন কিচেনে বউয়ের টুং টাং শব্দ শুনতে পাই।
আমার বউও কি আমি? এমন তো হতেই পারে
যে, আমি আমার স্ত্রী আবার আমিই আমার স্বামী!

 

সাপ

রাত ঘন হলে জগলুকে আজ সাপে কাটবে
ভোরে জগলু একটা সাপের লেজে পাড়া দিয়েছিলো
পরে সাপটা তার দিকে তেড়ে এলে
সে লাঠি দিয়ে সাপটার মাথা থেঁতলে ফেলে
জগলু বলে ঐটা ছিলো পুরুষ সাপ।

ফলে জগলুর বাপ আর তার বউ আর বোনেরা
সন্ধ্যা ঘনাবার আগে নিশ্চিত হয়ে যায়
জগলুকে রাতে সাপে কাটবে।
যেহেতু আমরা ধারণা করি
স্ত্রী সাপটা এখনো বেঁচে আছে
আর স্ত্রী সাপগুলো খুব প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়।

আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন সাপের উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন মাথার উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন লেজের উপর

সন্ধ্যা ঘনাবার আগে ওঝা এসে জগলুদের বাড়িতে বাণ মারে
ওঝার কাছ থেকে আমরা শুনতে পাই নাগিনী এখন অনেক
পাতালে আছে। ওঝা জানায় পাতালের বিষ আর আগের মতো নাই
ওঝা ভরসা দেয় তার বাণের পরে সাপের তেমন করার কিছু নাই।

আমরা তবু সাপের ভয়ে আগুন ধরাই
আমরা তবু সাপের ভয়ে মরিচ পোড়াই
আমরা তবু সাপের ভয়ে তাবিজ করাই

যেহেতু জগলুর বাবা বলে তার বাপও সাপের কামড়ে মরেছিলো
আর সেই সাপটাও ছিলো স্ত্রী সাপ। আর সেদিনও ওঝা বলেছিলো
তার বাণের পরে সাপের তেমন করার কিছু নাই। ফলে আমরা এখানে
ওখানে আগুন ধরিয়ে বসে থাকি আর রাতকে আরো ঘন হতে দেই।

আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন সাপের উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন মাথার উপর
আমরা ভেবে পাই না জগলু কেন লেজের উপর

রাত ঘন হতে হতে আকাশ ফরসা হয়ে যায়। জগলু খাটের উপর শুয়ে
থাকে। তার বউ ধূপের পাশে। আমরা রাতকে আরো ফরসা হতে দেই।
যেহেতু জ্বালানোর মতো অনেক ধূপ আমাদের কাছে থাকে।
তারপর ধূপ জ্বালাতে জ্বালাতে আকাশ আরো ফরসা হলে ভোর
হলে আমরা নিশ্চিত হই নাগিনীদের ভালোবাসা আর আগের মতো নাই।
তখন কেউ একজন
সাপ সাপ বলে চেঁচিয়ে উঠবে
আর আমরা দেখতে পাব
জগলু খাটের উপর সোজা হয়ে শুয়ে আছে আর
তার বুকের উপর কুন্ডলী পাকিয়ে আছে একটা সাপ

আমরা ভেবে পাই না সাপটা এই পৃথিবীর কি না
আমরা ভেবে পাই না সাপটা খুব পাতালের কি না
আমরা ভেবে পাই না সাপটা আদৌ সাপ ছিলো কি না!

 

আপন মাহমুদের মৃত্যু

আপন মাহমুদ ঐ অর্থে আমার আপন কেউ ছিলো না।
তার সাথে আমার ৪/৫ বার দেখা হয়েছে।
তারপর সে মারা গেছে।
আপন ভালো কবিতা লিখতো।
তার মৃত্যুর পর কবিমহলে খুব শোরগোল হয়।
আমার প্রথম মন খারাপ হয়েছিলো। পরে সব ঠিক হয়ে গেছে।
আমি ঐদিন খুব ভালোভাবে অফিস করেছি। টেলিভিশনে ফুটবল খেলা দেখেছি।

রাতের সংবাদের সময় এক মন্ত্রীকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করছিলাম।
তখন আপন মাহমুদ বললো, ইমতিয়াজ, আমি মারা গেছি আর আপনি হাসতেছেন!
আমি হাসি বন্ধ করলাম। আমি হাসি বন্ধ করে ঘুমাতে গেলাম।
আপন বললো, কবরের ভেতর খুব গরম।
ইমতিয়াজ এখানে কোন বাতাস নাই। ঘুম আসে না।
আমি বুঝতে পারলাম এক বন্ধুর মৃত্যুতে আমি সামান্য ঘোরগ্রস্থ হয়েছি।
আপন বললো, পরশু আপনার একটা কবিতা
আমার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে এসেছিলাম। দেখেছেন?
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন ভোরে তাকে নিয়ে একটা গদ্য লিখতে বসলাম।
‘আমি মারা গেছি আর আপনি আমার মৃত্যু নিয়াও ব্যবসা শুরু করছেন!’
আমি আপন মাহমুদকে সাথে নিয়ে অফিস করলাম।
আপন বললো, কবরে এত নিঃসঙ্গ লাগে। এমন নিঃসঙ্গ!
সন্ধ্যায় তরুণ কবিকে নিয়ে একটা স্মরণ সভা ছিলো।
আমি যাবার জন্য রওয়ানা হয়েছিলাম।
আমাকে আটকে দিলো!

সবাই যখন শোক করছে। স্মৃতিচারণ করছে। অনেক অনেক সভা করছে।
আমি তখন আপন মাহমুদের কবরটা কাঁধে নিয়ে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছি।

 

নদীর চোখে পানি ও অন্যান্য কোয়াটরেন (২০১৩)

কয়েকটি কোয়াটরেন

পুতুল

রাত আমারে দিনের দিকে টানে
দিন আবারো রাতের কাছে আনে
এ চুল টানে তো ও এসে আঁচড়ায়
আমার জীবন কাটে টানা হেঁচড়ায়!

 

পিঁপড়া

একটা কাপ দশটা মুখ
লাল পিঁপড়া কাঁপছে বুক
চিনির দানা ভেঙ্গে আনা
দশটা মুখে একটা সুখ!

 

নদী

নদীটা গভীর কি না
দেখতে ইচ্ছে হয়
আমি সাহস পাই না
আমার ডুবে যাবার ভয়!

 

তোমার দিকে যাই

চোখের সামনে পুড়ছে আমার ডানা
তীরন্দাজের তীরগুলো তাক করা
তবুও তোমাকে বলছি দূরের পাখি
আমার এখনো উড়তে অনেক বাকি

 

দুঃখ

তাহার হাতে নাটাই ছিলো
আমি একা ভাসছি সুতায়
অনেক নিচে গহীন সাগর
আহা গৌতম দুঃখ কোথায়?

 

অবুঝ

খুন বন্দুক বোঝে না
বন্দুক খুন বোঝে না
মানুষ দুটোই বোঝে
ফলে বন্দুক খোঁজে!

 

শয়তান

নির্দেশ করলা সেজদা করতে শয়তান গেলো সেরা হতে
কী এক মোহের ভুলে দিলো পাল্লা
তোমার তৈয়ার শয়তান কী আর
তোমার সাথে পারে মাবুদ আল্লাহ!

 

মানুষ দেখতে কেমন (২০১০)

 

যাত্রা

পর্তুগালের কোন বন্দর থেকে জাহাজটা ছেড়েছিলো। ষোল শতকের
এক দুপুরে। জাহাজে কয়জন নাবিক ছিলো তা জানা যায়নি। তবে
সেখানে একুশটা চোর, সাতটা দস্যু, তেরটা ভবঘুরে আর একজন
কবি ছিলো। তাদের কারো গন্তব্য ম্যানিলা। কারো মাদাগাস্কার।
সবশেষে জাহাজটা সন্দ্বীপ বা মংলা পৌঁছবে এমন কথা ছিলো।
কোথাও পৌঁছানোর আগে জাহাজটা আমার মগজের মধ্যে ডুবে গেছে।

 

বই

খোদা আমাকে মানুষ বানালো।
আমি হতে চেয়েছিলাম বই।
বাংলা বই। লাল মলাট।
মোমের আলোয় বালকেরা
আমাকে গলা ছেড়ে পাঠ করতো।
বাংলা বই। মোমের আলোয়।
খোদা আমাকে মানুষ বানালো।
কেউ পড়তে পারে না!

 

সময়

দশ হাজার বছর আগে। আমাজান বনে। একটা ডাইনোসর
ক্ষুদে একটা বনমানুষকে তাড়া করে। ডাইনোসরটা দেখতে
কেমন বোঝা যায় না। তবে বনমানুষটা দেখতে আমার মতন।
তার চোখে ভয়। ডাইনোসরের ক্ষুধা। এমন ক্ষুধার্ত কয়েকটা
পুলিশ আজ তেজগাঁ স্টেশনে আমাকে তাড়া করে। আমি
দৌড়াতে শুরু করি। দৌড়াতে দৌড়াতে বনমানুষটা দশ
হাজার বছর পরের তেজগাঁ স্টেশনে। আর আমি আমাজান বনে।
আমার পেছনে ডাইনোসর, মধ্যে দশ হাজার বছর, সামনে পুলিশ।

 

কুকুর

পাড়ার কালো কুকুরের নাম অ্যামব্রোস। এই নামে ডাকলে
সে খুব উৎসাহ পায়। লেজ নাড়ে। দৌড়ায়। পাউরুটি
খাবার নানান বাহানা করে। পাউরুটি খায়। নতুন মানুষ
দেখলে ঘেউ ঘেউ করে। অচেনা কুকুর দেখলে হামলে পড়ে।
পাউরুটি খায়। দৌড়ায়। পূর্ণিমার রাতে তার খুব মন খারাপ
হয়। চাঁদের কালো দাগ দেখলে সে বুঝতে পারে, খুব বুঝতে
পারে—চাঁদের ভেতর একটা কালো কুকুর আটকা পড়েছে।

 

বাগান

বাগানে অনেক গাছ আছে। একটা তরুণ গাছে ফুল
ফুটেছে। সে খুব খুশি। এবারই তার ডালে প্রথম
ফুল ফুটলো। ফুল ফোটার আনন্দে সে লাল হয়ে
উঠছে। আর একটু পর পর বাতাসে ফুল দোলাচ্ছে।
পাশে কয়েকটা গাছ যারা ফুল ফোটাতে ফোটাতে
প্রবীণ হয়ে গেছে—তরুণ গাছটার বেহায়াপনা দেখে
তো অবাক। তারা বলছে, ‘ডালে এখনো ২/৪টা ভালো
পাখি বসলো না এরই মধ্যে এতো!’ —বাগানের শেষ
প্রান্তে একটা চারা নীরবে গাছ হবার সাধনা করছে।

 

সার্কাসের সঙ(২০০৮)

রাষ্ট্র

আদর্শ রাষ্ট্র থেকে কবিদের ঘাড় ধরে বের করে দেয়ার কথা যে, ব্যর্থ কবি প্লেটো
বলেছিলেন তাতে আমি খুশি। পৃথিবীতে ১টা আদর্শ রাষ্ট্র থাকা খুব দরকার। তবে
এথেন্সের ওই লোকটা জানতো না যে আদর্শ রাষ্ট্র তৈরি করার আগে দরকার ১টা
অনাদর্শ রাষ্ট্র। যেমন আলোর আগে তৈরি হয়েছিলো অন্ধকার। জন্মের আগে খোদা
তৈরি করে রেখেছেন মৃত্যু। নতুন এই রাষ্ট্রের কথা শুনে কবিদের খুশি হবার কিছু
নেই। কেননা মন্দ ওই জীবগুলোকে আমরা এমনকি অনাদর্শ রাষ্ট্রেও ঠাঁই দেবো না!

 

অনার্দশ রাষ্ট্রে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য মাথাপিছু সাতশ তেইশটি আইন থাকবে। আর
এর দেখভাল করার জন্য এমন কয়েকজন বিচারক থাকবেন- ন্যায়বিচারের স্বার্থে
যারা যুগপৎ অন্ধ ও বধির হিসেবে নির্মাণ হবেন। এই রাষ্ট্রে প্রত্যেকের নির্বাচনের
সুযোগ থাকবে। কোন জলদস্যু ছদ্মবেশ ধরে যদি- চোর সমিতির নির্বাচন করতে
চায় জনগন তাকে স্বাগত জানাবে। কোন ব্যবসায়ী মরা ইঁদুরকে গরুর দুধ বলে
বিক্রি করলে রাষ্ট্র প্রতিভার মর্যাদা দেবে, যেহেতু তার থাকবে সেবা দেয়ার মতো
এলিট একটি বার্বর সার্ভিস; তারা মানুষকে বিনামূল্যে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। মানুষ
ঘুমাবে আর পাখির ডাকে জেগে উঠবে। অনাদর্শ রাষ্ট্রের জাতীয় পাখি হবে পুলিশ।

 

পাখিদের গান শুনে শুনে প্রতিটি মানুষ হয়ে উঠবেন হাসপাতাল, হাসপাতাল হবে
বাজার, আর বাজার হবে যুদ্ধক্ষেত্র; ওইখানে কসাইদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী
আপনি যথাযথভাবে মরতে পারবেন। তবে অনার্দশ রাষ্ট্রে মরতে একটু দেরি হলে
দেখবেন;- আপনার জন্য নির্ধারিত কবরে আগে থেকে ৭২টা লোক ঘুমিয়ে আছে!

 

ফুটনোট

অনেক পিপাসা আছে বোধের অতীত
বরফের গায়ে তবু লেখা থাকে শীত

শীতকাল এলে দেখি ঝরে পড়ে পাতা
এঘরে বালিশ পোড়ে ঐঘরে কাঁথা

যার কিছু পোড়ে নারে তারও পোড়ে মন
বাসে বসে ভুলে গেছি কে যে কার বোন

কে কাহার বোন হয় কে যে কার ভাই
এই শীতে দল বেঁধে এসো ভুলে যাই

ভুলে যেতে যেতে গিয়ে ভুল করে দেখি
পিপাসা মেটাতে আসে ভিনদেশী পাখি

পাখি এসে ফল খায় পোকা খায় ফুল
কে আর শোধাতে পারে কবেকার ভুল

ভুল তার কবেকার অন্ধকার নেশা
মরণের গান গাওয়া শিশুটির পেশা

শিশু একা গান গায় বাবা গেছে চাঁদে
শান্তি ইয়াহওয়েহ কত শান্তি কাঁদে

যে কাঁদে কাঁদুক তবু লিখি ফুটনোট
ফুল তুই তেলাবিবে বোমা হয়ে ফোট!

 

চিঠি

প্রিয়, আমি এখানে খুব শোচনীয়
হয়ে আছি। তারা আমার
হাড়গুলো খুলে নিয়ে
গেছে। আর বলেছে
জীবন এভাবে ভালো।
আমি মাটিতে দেহ ঘষে ঘষে
এখন সে হাড়ের কথা ভাবি।
যারা আমার সাথে ছিলো কালও।
প্রিয়,
তুমি আমার
নিখোঁজ হাড়গুলির খবর নিও
নদীতে, ফুলের পাশে
থানায় না হলে মর্গে
হাড় ছাড়া
আমার
আর কিছু ভালো লাগছে না
এখানে
এই স্বর্গে!

 

আত্মহত্যা

আমি একটি পাথরের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বহুকাল আমার ঘুম হয়নি।
আমি তাই একটি পাথরের উপর ঘুমিয়ে পড়লাম। আর ঘুমানোর আগে আমি
পাথরটাকে একটা জলপাইর মতো করে… জলপাইর মতো করে আমি
পাথরটাকে খেয়ে ফেললাম। পাথরের খোসাগুলো নদীতে ভেসে যাচ্ছিলো।
নদীতে ভীষণ স্রোত । নদীতে তুমুল ঢেউ। আমি স্রোত ও ঢেউসহ নদীটি খেয়ে
ফেললাম। নদীর দুই তীরে কুচকাওয়াজে দাঁড়ানো বালকদের মতন সারি বেঁধে
দাঁড়িয়ে ছিলো কতগুলো গাছ। গাছগুলোর সব পাতা সবুজ। আর তার ডালে
ডালে হলুদ রঙের পাখি। আমি হলুদ পাখিসহ গাছগুলো সবুজ পাতাসহ
গাছগুলো খেয়ে ফেললাম।

আমি ভেসে উঠলাম নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে তৈরি হওয়া এক নগরীতে।
সেখানকার সবচেয়ে জমকালো স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছিলো। মাঠে ১১ দু’গুণে
২২ জন খেলোয়াড়, গ্যালারি ভর্তি দর্শক। আমি খেলোয়াড় ও দর্শকসহ
স্টেডিয়ামটি খেয়ে ফেললাম। নগরের এক প্রান্তে প্রাচীন ঋষিদের মতন ঠায়
দাঁড়িয়ে ছিলো একটি গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের তাকে তাকে সাজানো রবীন্দ্রনাথ,
আইনস্টাইন, মার্কস, ডারউইন…।  আমি রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনসহ
আমি মার্কস ও ডারউইনসহ গ্রন্থাগারটি খেয়ে ফেললাম।

এরপর আমি খেয়ে ফেললাম বিমানবন্দরের সবগুলো বিমান, সংসদ ভবন আর
জাতিসংঘ কার্যালয়। অরণ্য ও পর্বতমালা। মহাদেশ ও সাগরসমূহ। অর্থাৎ আমি
খেয়ে ফেললাম গোটা পৃথিবী। আর খেয়ে ফেললাম গ্রহ নক্ষত্র উল্কা আর
ধুমকেতুসহ সাত সাতটা আকাশ। হাত পা চোখ মাথাসহ গোটা শূন্য আর
মহাশূন্য।এরপর ধীরে ধীরে আমি ধীরে ধীরে পৌঁছে গেলাম ঈশ্বরের দরবারে।
বহুকাল আমার ঘুম হয়নি। ঘুমে তাই আমার দু’চোখ কাতর হয়ে পড়েছিলো।
আমি কিছু বলার আগেই ঈশ্বর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি অনুতপ্ত?
ক্লান্তিতে আমার শরীর ভেঙে পড়ছিলো। আমার কাছে মনে হলো তিনি যেন
আমাকে প্রশ্ন করেছেন পৃথিবী কি অনুতপ্ত? আমি ঘুমানোর জন্য একটি পাথর
খুঁজছিলাম। ঈশ্বর আমাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন তুমি কি অনুতপ্ত? আমি
আবার শুনতে পেলাম ঈশ্বর আমার কাছে জানতে চেয়েছেন পৃথিবী কি অনুতপ্ত?
বহুকাল আমি ঘুমাতে পারিনি। আমার সব ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে আমার ঘুমহীনতার
সব ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে পরম করুণাময় ঈশ্বরের সামনে আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,
পৃথিবী একটা শুয়োরের বাচ্চা!

 

মৃত্যুর জন্মদাতা (২০০২)

উৎসর্গ

কড়াইয়ে তপ্ত আমার মগজ
দেয়া হবে আজ কার পেয়ালায়
চোখ রাখো মন কারা আসে যায়
উনুনে পোড়াও ধূসর কাগজ।

গাড়ুগুলো ভরো রক্ত ঢেলেই
উদাম সাজাও গেলাস রুপার
গুনে দেখো মোট কতগুলো হাড়
পোড়ানো হয়েছে আমার হেঁসেলে।

জীবগুলো সব হয়েছে অধীর
হৈ চৈ নয় একদম চুপ
টেবিলে এবার জ্বেলে দাও ধূপ
শেয়ালেই খাক আমার শরীর।

মনে রেখো চোখ নেয় যেন খোঁজ
পৃথিবীর পথে কবির এ ভোজ।

 

কাগজের প্রেম

চোখ থেকে জল পড়ে জল থেকে যদি
ভেসে ভেসে চলে যাই মাছরাঙা নদী
সেখানে কি পাবো আমি কোন খড়কুটো
পেলে ঠিক ধরে নেবো হাতে একমুঠো।

তাকে ধরে চলে যাবো রোদে পোড়া দ্বীপ
হাতে ধরা কুটো আর হাতে ধরা ছিপ
হোক না প্রবাল তলে তরুণীর বাসা
ছিপ গেঁথে তুলে নেবো তার ভালোবাসা।

তার আসা তার বসা তার চলাচল
চলে গেলে ভেসে যাবো ভেসে ভেসে জল
জেনে নেবো কে আপন কে আসলে পর
ডুবে  যদি যাবো তবু হাতে থাক খড়।

কে কোথায় ডুবে যায় কোথায় যে তীর
মাছরাঙা নদীতে সে তরুণী কুমির!

 

আবর্তন

সময় শূন্য খায়
সেকেন্ড সময় খায়
মিনিটি সেকেন্ড খায়
ঘন্টা মিনিট খায়
দিন ঘন্টা খায়
মাস দিন খায়
বছর মাস খায়
যুগ বছর খায়
কাল যুগ খায়
মহাকাল কাল খায়
শূন্য মহাকাল খায়
সময় শূন্য খায়!

 

গোলাপ বিষয়ক কবিতা

একটি গোলাপ চারা/ না লেখা কাগজ
পানি ঢালো পানি ঢালো/ কালি ঢালো আরও
হয়ত মুকুল ধরে/ ছাপ ফেলো তারও
দেখো
গোলাপ ফোটার পর
কবিতাও ঘটে
কাগজে কলমে তার রূপ/টুপ রটে।
এ-ও বুঝি হয়—কী আশ্চর্য!
পানি ঢালো পানি ঢালো/ কালি ঢালো আরও
গোলাপের ঘ্রাণ
কাগজে; — পেলেও পেতে পারো।
পাপড়ি ছড়ানো শেষ হলে
তবু
যতি পড়ে।
তখন কে যেন বললো,
‘কবিতাটা হয়েছিলো তবে গোলাপের মতো?’
‘কী জানি কেমন—
গোলাপ-ও কবিতা পড়ে দেখেনি তো!’

 

অন্ধকারের রোদ্দুরে (২০০০)

একদিন

একদিন সব অবহেলা দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেব। সব দাঁড়িয়ে থাকা।
চেয়ার থাকতেও বসতে না বলা- ফিরিয়ে দেব। ঐদিন আমিও খুব
ভ্রু কুঁচকে তাকাব। এমন ভাব দেখাব যে কোন কথাই শুনছি
না। যেন আমার সময় নাই। আমি এসকল ব্যস্ততা ফিরিয়ে দেব।
সব অবহেলা দ্বিগুণ করে। একদিন আর কোথাও যাব না। আমার
কবরের পাশ দিয়ে তুমি হেঁটে যাবে ঠিকই। আমি ফিরেও তাকাবনা।

 

নিঃসঙ্গতা

আন্দামান সাগরের এক একলা দ্বীপে এক সাধু যখন একটা পাখির কিচির
মিচিরে অতিষ্ঠ হয়ে ভাবছিলো কিভাবে আরো একা হওয়া যায় তখন
জাকার্তার জনাকীর্ণ সড়কে হাজার হাজার মানুষের ভিড় ঠেলে
একটা লোক একা একা হেঁটে যাচ্ছিলো

 

কবি পরিচিতি:

ইমতিয়াজ মাহমুদ। জন্ম: ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০, ঝালকাঠি।

প্রকাশিত বই:
ম্যাক্সিম (২০১৬), কালো কৌতুক (২০১৬), পেন্টাকল (২০১৫), নদীর চোখে পানি ও অন্যান্য কোয়াটরেন (২০১৩), মানুষ দেখতে কেমন (২০১০), সার্কাসের সঙ (২০০৮), মৃত্যুর জন্মদাতা (২০০২), অন্ধকারের রোদ্দুরে (২০০০)।
পেন্টাকল গ্রন্থের জন্য কলকাতা থেকে পেয়েছেন কৃত্তিবাস পুরস্কার।
প্রথম কবিতা দীর্ঘশ্বাসে প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালে পাক্ষিক শৈলী পত্রিকায় । 
শেয়ার