ফিতা_____________________
মাদারিপুরের স্তনের দিকে ধাবমান সিদ্ধিরগঞ্জ…
বাতাসে ব্লেড উড়ছে
বাতাসে ব্লেড উড়ছে…
কেওড়ার ডালে
মৃত ময়ূরীর চুল দেখা যায়…
… এ ছায়া কর্দমাক্ত
ঠিক মানুষ নয়, মানুষের মতো অবয়ব।
শূন্য পাকস্থলী ফুঁড়ে জন্ম নিচ্ছে অজগর
দিদিরা যমুনামুখী অভ্যন্তর ফেলে দিতে
জরায়ন পরিত্যাগ করি…
আমি আর কেউটে সাপ অভিযাত্রী পরস্পর।
সু-প্রভাত নামে গ্রামের জঠরে…
রেলের বগিতে চড়ে চড়ুই পাখিটি যাচ্ছে
দাউ দাউ মহানগরের দিকে
আমাদের বেড়িবাঁধের ওপর
রাত্রিময় পড়ে রয়েছিলো দুধশাদা বিবমিষা না কি পূর্ণিমা!
চক্ষুদ্বয়ে আসমান গলে যেতে থাকে
চক্ষুদ্বয়ে আসমান গলে যেতে থাকে…
আমি আর রেলগাড়ি
নদী পাড়ি দেই অস্তিত্বের ডিঙিতে চড়ে
জলে কর্ণ-গেঁথে শোনা যায়
আধখানা বাঘ, মহিষের হৃৎপিণ্ডের আওয়াজ…
আর বেশি দূরে নয়
ঘূর্ণাবর্তে পিষে যাচ্ছি আলো
ল্যাম্পপোস্টে দণ্ডিত হবে আলো, শিশুর ক্রন্দন…
স্বর্গের সরুপথ দিয়ে
আমরাও পৌঁছে যাবো আপন জংশনে
দূর বন্দরে রূপসীদের দেখা যায় মাংস-বোঝাই জাহাজের মাথায়
আমি দেখবো না
ঢালাইয়ের নিচে চাপা-পড়ে-থাকা সন্তান-পাথর
অহ শিশু, পাথর শাবক!
এ যজ্ঞে শুয়ে থাকি মর্গের ভেতর…
গন্ধ ফেটে পড়ে যোনি ও নেপথেলিনের
ইঁদুরের দেহে দুর্ভিক্ষের মতো কাম আসে
ইঁদুরের তিনটি পা উরু বেয়ে উঠে আসে
নাসারন্ধ্রের জমাট রক্তে, অবশিষ্ট ছায়ায়…
ক্রমে কালো হচ্ছে শাদা শাদা শবের বরফ।
আমার প্রেয়সী হায়!
মরু জ্যোৎস্নায় সে তো এক মেঘের জিরাফ
কেউ আমায় নিতে আসে না
কেউ আমায় নিতে আসে না…
মর্গে একা শুয়ে থাকি
জল ও অগ্নি বহুটা আংরা হলে ঘুম আসে, ঘুম আসে…
দূর গাঁয়ে তোমার লণ্ঠনের আলো নিভে যাচ্ছে মা
দূর গাঁয়ে তোমার লণ্ঠনের আলো নিভে যাচ্ছে মা…
লাশ_______________
চারটি চাকায় করে নিয়ে যাচ্ছি কুমড়োর বাগান
অস্তিত্বের লাশ ঠেলে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছি দূরে
ঠেলাগাড়িতে করে বাংলাদেশ নিয়ে যাচ্ছি
ফেটে-পড়া সবুজ ক্ষেতে
লাল লাল ফড়িংয়ের নদী দেখা যায়…
পুরুষ ঢেলে দিচ্ছে নিরন্তর ঘাম ও বীর্য
তেলসিটকে রোদের লালায়
গোপনে পোক্ত হয় দুধের বিচি
জননী আমার
রোজ হাশরে রান্না করবেন ধানের গুদা
অতঃপর বখরা-ঈদ উদযাপনে যাই
গরু ও মানুষ কুরবানী দেই মাঠে মাঠে
মানুষ ও কুকুর কুরবানী দেই মাঠে মাঠে
দ্রাঘিমাংশে _________________
দুধের বন্ধু দ্রাঘিমাংশে…
প্রাচীন জরায়ূ-অন্ধকারে
কোটি কোটি কীট মৃত্যুন্মুখ
জ্ঞানহারা আলোকপিণ্ডে
ভ্রমণে ভ্রমণে আমিও আত্নাহুতি দেই নির্মল নৌকায় চড়ে
মহাসমুদ্রে
ডেউয়ের মস্তকে ছিলো না তো জল
জলহস্তি ছিলো অগনিত
ফণাধর ___________________________
মানুষের কাছে পরাজিত সেইসব পশুদের মলীন চেহারা
পুত্র কি দেখেছো কোনোদিন
জন্মদুখী জন্তুর সাথে আমিও তো ছিলাম
মন্দারমণি নদীতীরে
পৃথিবীর প্রাচীন গুহায়
কুরবানী গরুর হাটে হাটে
থামিয়ে দিয়েছো উড়াল ধনেশের ডানায়
পুত্র হে
বারবার কেন জল জলেশ্বরী চিড়ে দিতে আসো
মানুষ তো
শুনবে না কোনোদিন মাথাহীন মাছের বিলাপ
পুষ্পজীব _________________________
চঞ্চল হরিণীর পায়ে
শিলাখন্ডে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে মানুষের হাড় ও খঞ্জরের গতি
আর তো উড়াল শিখি না শূন্যস্থানে
ঐ উচ্চতায় সারিবদ্ধ উড়ে যায় নয়শত ঘোড়ার পরিধি
যাত্রা…_____________________
মাথার উপরে টিউমারের মতো চাঁদ আর
এই ফোসকা-পড়া জ্যোৎস্নায় হাঁটছি তো হাঁটছি আমার সঙ্গে আমি
একা
এইসব কাচের গর্ত, গীর্জার ভেতরের ভগ্নাংশ বাতাস
মাঝে মাঝে কয়েকটা আপেল এবং সবুজ মোমবাতি
এ-সব কিছুই দেখছি না আর
তোমাকে তো বলেছি- অন্ধ হয়ে যাওয়ার আনন্দই আলাদা…
ঠিক কুয়াশা নয়, হৃৎপিন্ডের ধূয়ায় হেঁটে হেঁটে বিষাক্ত বৃষ্টিতে ভিজি, টাটকা লাশের সঙ্গে
এই তো আমার অনাদি কালের স্নানপর্ব …
আমাদের ছেড়া নাভী, ছেড়া হাত পাসহ ভাঙ্গা দাঁত, ভাঙ্গা পেট. সূর্যঘড়ির চারপাশ ঘিরে ভাঙ্গা কবুতরের ওড়াওড়ি
বাঘের হাড় বেয়ে রোদের সর্বশেষ ঝর্ণা শুকিয়ে গেছে বহুদিন আগে… তোমার ডিশ-এ্যান্টিনায় এখনো কি একটা দোয়েল দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে, বসে থাকে…
এইসব রক্তের বেড়ি, কুয়াশাবিচ্ছেদ, এতোসব প্রভায় দু-চোখ শক্ত হয়ে এলে আমাদের ট্রেন চলে যায় দূরে ঘোড়ায় চড়ে…
ট্রেন চলে যায় দূরে ঘোড়ায় চড়ে…
আর জানোই তো, বসন্তে পোড়া মানুষ
ঘুমন্ত গুলি হতে ছেড়ে দিয়েছিলো গতিবিদ্যার গজল, জীবনের এইসব কুকড়ে-যাওয়া গান…
আর কারখানার মাছগুলো ইস্পাতের জানালা বেয়ে সমুদ্র বক্ষে ঝাপিয়ে পড়েছিলো
আমায় ক্ষমা করো
চিরদিনই যাই জল হতে জলের ভেতরে
দুধ হতে গলে পচে কৃষ্ণকায় দুধের মাংস…
প্রেমিক, প্রজাতন্ত্রী_____________
শীতার্ত দিনে
হেসে ওঠো কুকুর ও হাস্নাহেনা
বিষুব অঞ্চলে
মোম-বৃক্ষের ছায়া পড়ে আছে।
পীথ-বর্ণ পথে
গৃহে ফিরবো না আর
প্রেমিক, প্রজাতন্ত্রী চিরকাল
দাঁড়িয়েছি সমুদ্রতীরে
লোমশূন্য গাছের স্মৃতি।
খণ্ডিত আপেল____________________
ঘুমের কাফন ফুঁড়ে তুমি আসো
লাশবাহী অ্যাম্বলেন্সে করে আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাও
নিরানব্বই স্তনের আড়ালে
ঐ যে কুয়াশার গ্রাম বহুদিনের পরিচিত মনে হয়।
কতোবার তোমায় বলেছি- আমরাও বীরভূমে যাবো
অসহ্য উঁচু হতে লাফ দিয়ে
দু’চোখ বন্ধ করে দেবো
…আর আমার কাম ঢুকরে উঠবে কান্নার মতো।
নড়ে উঠি, নড়ে উঠি ঘুমের ভেতরে
অতর্কিতে লাথি পড়ে যায়
অস্তিত্বের মাথায়; ভেসে ওঠে যমুনা নদী…
নিম্নভূমে তাকিয়ে দেখি
ঝরে-পড়া শিশ্নের মাথায় হিমাঙ্ক রমণীর দাঁতের কারুকাজ
চিকচিক চিকচিক করে।
এখনও কি বুঝতে হবে
নারী ও নুড়ি পাথরের যোজন যোজন ব্যবধান
বাবা কি বলবে আমায়-
জেগে ওঠো বল্লম রায়
তুমি তোমার সৎ মায়ের স্তন্যপান করবে
তুমি রাজমেস্তরী হবে!
নিদ্রা ভেঙ্গে যায়
জাগ্রত, বয়স্ক বালিকার খোঁজে
ঐ যোনিমূলে লেগে আছে ঠোঁটের মানচিত্র আমার।
প্রচ্ছায়া_______________________________
ডালের আকরে কলিজার পাতা ধরেছিলো
প্রকান্ডকালে ছায়ার গুড়ি কেটে যায়
পাখির পরাণ এই মৃত্যু- কমলা, কমলা
চন্দ্রশালা খালি রয় পরমাঙ্ক পাপে
আর আমি নাই
রোদভরা ছায়ার সন্ত্রাস হে তুমি, মায়া হয়ো মায়া হয়ো…
ক্যান্সার আক্রান্ত কবিতা_____________________
১.
তোমার জন্য মালা গাঁথছি বলে রাগ করছ কেন
প্রিয় দক্ষিণ, আমার পূর্বপুরুষ তো জুতা সেলাই করতো
আমি শুধু পুষ্প সেলাই করছি
২.
এখনো ব্রীজ কালভার্ট কিছুই বসাই নি
চোখ পিছলে পড়ে যেতে পারো
কেউ আমার ফাটা মুখের দিকে ভুলেও তাকিয়ো না
৩.
আজ নগর-বার্মিংহামে রোদ উঠেছে
আমি বলছি না- আজ প্রিয়জনের রক্তে রোদ লাগবে
ধীরে তা দুধ হয়ে যাবে…
বরং কোথাও না কোথাও যেতে ইচ্ছে হচ্ছে
যাচ্ছি
যাচ্ছি
যাচ্ছি
একা একা যাচ্ছি আমার যানাজায়
৪.
আমায় ক্ষমা করো দক্ষিণ
আমার ক্যান্সার-আক্রান্ত অকবিতাগুলো ভাসিয়ে দিচ্ছি কালিগঙ্গায়
কবি দেলোয়ার হোসেন সম্পাদিত কবিতাপত্রে…
দেবীদক্ষিণ
তুমি কি একবারও পাঠ করবে না
চূড়ান্ত মৃত্যুর আগে দিয়ে যাবে না কবিতার কিমোথেরাপি
৫.
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না
গড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে
কয়েক হাজার ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়েছি
চূড়ান্ত চূড়ায়…
দেবী দক্ষিণ, তুমি কি করুণা করে একটু ধাক্কা দেবে
চোখের ধাক্কা
৬.
আজ শ্রাবণের শেষ দিন
বন্ধুবর মঞ্জু মানোহিনের বাগানে কদম ফুটেছে…
আমার চারদিকে ছোট ছোট টিলাভূমি
একটাও পাহাড় নেই
…আর তুমি তো জানোই দক্ষিণ
পর্বত থেকে লাফিয়ে আত্নহননের আনন্দই আলাদা
৭.
ঘুমোতে চাচ্ছিলাম। কোথাও চোখ জোড়া খুঁজে পাচ্ছি না। সম্ভবতঃ তোমার পায়ের পাশেই ফেলে এসেছি
দরজা খোলা রেখেছি। তুমি কি একবার অনুগ্রহ করে আসবে! চোখ জোড়া ফেরত দিয়ে সন্তর্পনে ঢেলে যাবে মরফিন অন্ধকার আমার শতবর্ষের ঘুম…
৮.
পাখিটা কানের পাশ দিয়ে ফুরুৎ করে যাওয়া আসা করে
দোয়েল পাখিটা ধরতে পারি নি
মৃত্যু, তোমায় ধরে ফেলেছি
৯.
সিংহ শিকার না করেও প্রতিটা মানুষ এক একটা শিকারী
মানুষ এক অনবদ্য মৃত্যুশিকারী…
১০.
ঘুমিয়ে পড়বো বলে তোমার বুকে কবর খুঁড়েছি, সিন্দুকী কবর
দেবীদক্ষিণ, এতো রাগ করছো কেন
তুমি কি জানতে না- আমার পূর্বপুরুষ কোনো জমিদার ছিলো না
গোরখোদক ছিলো গোরখোদক
মৌলিক ময়ূর_____________________
০১.
…
ধমনীর অধিক
ফুলে ওঠে নদী
ঈশ্বরের প্রতিপক্ষ হয়ে তোমারে চুম্বন করি আড়াই মিনিট…
ঈশ্বর নিঃসঙ্গ এখন, বন্ধুবর
দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো একা…
০২
স্থপতি পিঁপড়ার ডালে
পেখম মেলেছি বন্ধু
পাথরে, নাসারন্ধ্রে দূলে মৌলিক বাতাস
এ রাগ ভাসমান অনিন্দ্য আলোয়।
জানিয়ো
ঘাসের দালানে ঘুমোবে না মাঠ
নির্দয় কলংক নিয়ে কোনো দিনও মানুষ বেহেস্তে যাবে না।
এ আমার ঘোর
সজ্ঞানে নৃত্যরত-আলো, আবর্জনা…
মহাকালে কান্না করে মৌলিক ময়ূর।
কংক্রিটের ডানা___________
আজন্ম জলজ তারা
জাল-ভর্তি ঈশ্বর আসেন
মৎস্যের সমান।
জলের আকৃতি সর্বশক্তিমান।
পুকুরে
পুকুরে
পূর্ণিমার চন্দ্র ডুবে যায়…
মনঃস্তাপে নৃত্যরত কংক্রিটের ডানা, প্রকৃতি।
হাড্ডি-ভাঙ্গা শব্দের দামে
কবি ও কাবিল তারা দুই ভাই
বৃক্ষ রুয়ে যায় সূর্যালোকে।
এই ধুলা
রক্তাক্ত পর্বন মূর্তমান
লোহার নালিয়া ক্ষেত, এ শহর
উপচে পড়ে মৃত্যুর সমান।
পিতা, পয়গম্বর সমীপে____________
করুণ আত্মারা বৈকুন্ঠধামে; ক্লেদাক্ত পথে
তাজমহল রচনা করি দেহের গৌরবে।
আগুনের ফিতা পরে
আমার কন্যারা বিদ্যাপীঠে যায়
গুল্ম শিকড়ে তারাও কুড়াতে যাবে
হরিণের পাতা।
বিনিদ্র সাগরে আজও উদ্যত
ঝড়ের জননী
হে পিতা
এ সংসার কভুও কি নিদ্রাতুর ছিলো!
ঈশ্বরী___________
আমায় ভালোবেসে গেলে
তুমি আরও ঘন হবে।
দীর্ঘ দীর্ঘ রাতে রুয়ে যাবে ফরাসের বিচি
ওহে মৃত্যু-সুখ
জন্মভর তুমি কাঙালিনী হয়ো।
আমার ভালোবেসে গেলে
তুমি আরও নিরাকার হবে…
গোলাকার পাখি___________
গা
রে
গা
গহন গোপনের গলা…
এসো বেরিয়ে
জলের গম্বুজ ভেঙ্গে
অনন্ত মৃত্যুর গান
শরীরে শরীর দেখা
সরল বিদ্যুত…
ছায়ার ছাইদানী ঘিরে
সবুজাভ তামাকের বাগান আলোকিত, চন্দ্রপ্লাবিত…
ভ্রহ্মান্ড ঘুরে ঘুরে
ময়ূর একাকী পোড়ে
অগ্নিগিরির অদূরে
গা রে গা মা
গোলাকার পাখি হায়
গ্রহের গোলক
ডোমঘরে একা… __________________
এই গলাকাটা রাতের শেষ রাতে
এক জোড়া অচিন পাথরের চোখ নড়ে ওঠে, চোখের পাথারে
এই ঘরে ধূয়া নেই, মঁ মঁ কুয়াশার ঘ্রান
অনন্ত পর্দার নিচে জারুল ও আফ্রিম
পৃথিবীর আদি ভাই-বোন পাশাপাশি ফুটে আছে
রাতের শুরুতে ছিলো নীলবর্ণ নাভীর কান্না
এখন নৈঃশব্দ্য শুধু…
চব্বিশটি কফিন খালি পড়ে আছে
সূর্য উদয় হলে লাশগুলো চলে আসবে তিন হাজার ত্রিশ সালের বিশ্বফুটবল শেষ করে…
সূর্য উদয় হলে কুয়াশাকন্যার দাফনা হয়ে যাবে অগ্নিজরায়ূর গোপন জটিলে…
(পৌরাণিক পাতিহাড় ছুঁড়ে দিচ্ছি হে সূর্য, তুমি উদয় হয়ো না শতবর্ষ এই ডোমঘরে এই কুমারী কফিনের পাশে। মানব-প্রেমিকার পাহাদার আমি, স্বর্গ প্রত্যাখ্যান করে ধরায় এসেছি তেহাত্তর হুরী হত্যা করে। এখন ম্রিয়মান বাল্বের ভেতর শুয়ে আছি। আমায় ঘুমোতে দাও প্রভু, আমায় একবার প্রভু হতে দাও প্রভু…)
…তবু তার সঙ্গে ঝগড়া বিনিময় হতে হতে, জীবন ও মৃত্যু বিনিময় হতে হতে
মৃত সুন্দরীর ঘুম ভাঙ্গে
ডোমের দুই চোখে নেচে ওঠে
অনুদ্ধারিত রিপুর মুদ্রা
মানুষের
জানোয়ারের
নিসর্জন______________
আমার সংকুচিত হৃদপিণ্ডের ভেতর
দূরের আত্নীয় তারা উঁকি দিয়ে যায় রক্তের দাবী নিয়ে
জানি
আর ফিরবো না
শুঁকতে যাবো না রুশননগরের দো-আঁশলা মাটি
নদীর দুই বাঁক হাঁটিয়াছি
তিন বাঁকে ডুবে যায় সারি সারি নীলীক্ষেত, জলের পাঁজর
…দন্ডিত করো
ঐরাতে শিশিরের জলে পা রেখে শাদা পায়রাগুলি পুড়িয়ে ফেলেছি পুত্র
সাপ ও সূর্যমুখী____________________
আঘাত করেছো অন্তররতম…
বেড়ালের মাথার ভেতরে ঘোলা হয়ে আসে চাঁদ
ছায়ার শার্দুল জেগে আছে সারারাত। প্রস্তর যুগ হতে
ধীরতম আসে পাথরের পাতা
দক্ষিণাবনে নিদ্রাহীন উড়িয়েছি ছিদ্রের ঘুড়ি, মৃত্যুর মতো লাল…
সমুদ্রতীরে কেউ যাবে না আর
বন্দরে পড়ে আছে কুয়াশার কফিন
কেউ যাবে না সমুদ্রতীরে
কাঁটাবনে শোনা যায় প্রাণহীন ঘুঘুর বিলাপ
দূরতম
লায়লা নগরে শুকনা বাতাস ছেঁড়া ছেঁড়া…
মাথার উপরে সবুজ মাংস দিকচক্রবালব্যাপী
নদীতীরে
এ কোন বিচ্ছেদে বৃক্ষ বেঁকে যায়
অপ্সরা বসে আছে একা
আমি এক প্রাচীন প্রৌঢ়ার উনুনের মাঝে নিষ্করুণ আগুন, অর্ধেক ধূয়া। পঙ্গু ঘোড়াটির চোখের ভেতরে শুয়ে শুয়ে দেখি উড়ন্ত মাঠের স্মৃতি…
বজ্রাহত
ফড়িংয়ের ঝাঁক স্থিরতম জলসাঘরে
শাদা শাদা সারসের মুখ স্মৃতি-রায়মঙ্গলে, তামাকের বনে…
ক্রোধান্ধ
হয়ো নিষ্পাপ নিদ্রিত জন্তুর মতো
মৃতখন্ডে সংসার-সয়াল
গজারের বন ছিলো তোমার আমার
…তারা ফিরে গেছে, জগতের সব ইতর প্রাণীগুলি চিহ্ন রেখে পুরাতন গুহায়। রৌদ্রোজ্জ্বল রাত নিভে যাক তবে। আজ কেবলই ক্ষুদ্র হতে চাই। ছুরিকার মাথা হতে সর্বশেষ লৌহের কণা ঝেড়ে ফেলো তবে। আলোর অতীত, ফুঁ দিলে উড়ে যাই মৃতের উৎসবে..
যাত্রারম্ভে
খন্ডিত চিলের ছায়া, সামান্য নদী ভেসে ওঠে
আঘাত করেছো অন্তরতম
বেড়ালের মাথার উপরে ঘোলা হয়ে আসে চাঁদ…
গুলিবিদ্ধ গান_________________
০১.
বোনের মধ্যে
স্ত্রীর মধ্যে
রক্তলাল টমেটোর বাগান ধরে হাঁটছি আমি
মায়ের মধ্যে
রোদের মধ্যে
এতো রোদ এখন সহ্য হয় ইরিত্রিয়া
হাঁটছি তো হাঁটছি
ঘামের বদলে অজগর সাপের রক্ত ঝরাচ্ছি…
০২
মৃত ভাই তার শাদা হাতখান ডুবিয়ে দিয়েছে বহুদিন আগে
হাঙরের চোখের জলে
সমুদ্রের জল চিরদিনই ভেজা ভেজা…
কার্বনের ফিতা বেয়ে চাঁদ উঠেছে দেখো
পঞ্চবটিবনে
চারপাশে তীক্ষ্ণ সব তিথিরের গান…
মাছের জিহ্বা বেয়ে
আমাদের কাফনশাদা বিছানায় শীতকাল আসে…
০৩
গুলিবিদ্ধ গান
বেজেই চলছে…
ডোরাকাটা ডালিম ফাটিয়ে-ফুটিয়ে
গান বাজুক গহন-গান্ধারে…
জন্মকালাকার
আমিও চাষাবাদ করি। কাটাবাদামের পেটের ভেতরে
জ্বালিয়ে
পুড়িয়ে
জীবন্ত রাখি রক্তের ঝিনুক
ক্ষুধার্ত মশাটি এখনও যে বন্দী রয়েছে বাদশা-সুলেমানের
মশারির নিচে
সারারাত
সৌরসারসের সাথে হাড় খসিয়ে দিলো দুগ্ধবতী মাছ
কৃষ্ণঘণ্টার পাশ হতে
যিশুখ্রিষ্টের মুখ কিছুতেই তো সরানো গেলো না
এইসব
এলোমেলা কোকিলের ঘ্রাণ
ভোরের ভষ্মের সাথে
জন্মান্ধ প্রেমের ভষ্মকণিকা গায়ে মেখে
এ-জীবন
গলিয়ে
পঁচিয়ে
গর্ভশূন্য মাঠের কিনারে ক্যান্সার-কুসুম ফোটাতে যাই
গান গাই…
আমি জানতাম
কোনো এক জলবর্ষে
পাথরের আপেলগুলো সত্যিই পেকে যাবে
জীবন্ত মৌমাছির চাকে ঘুমিয়ে পড়লেই
শিশুরা বেলুন উড়াবে দেবীদের রাঙ্গা ফুসফুস ঘিরে
যোনিফাটা জলের চিৎকার ঘন হয়ে এলে
ঘুম আসবে, অজগর চোখে
এসেছে ও…
ভাঙ্গা মুখের সমাধীর পাশে
প্রত্ননকশার নিচ হতে, মৃত মাকড়শা জেগে ওঠে ধীরে…
জানলাম— জলের ত্রিশফুট নিচে আলেকজান্দ্রিয়া তলিয়ে গেছে বহুদিন হলো। লাইট হাউসের রেপ্লিকার নিচে তুমি তিন বছর অপেক্ষা করেছো। উপত্যকার পশ্চিম তীরে আমি তো মৃত ছিলাম। আমার চক্ষু ছিলো না তাই রাতজাগা হলো না মিসরীয় দেবীর সম্মানে…
জানলাম— মূর্তির গা হতে বাড়তি মাটি সবাই সরাতে পারে না। অন্ধকারে, অনন্ত মৌমাছি-পাঠের বদলে কেউ কেউ ঘুমিয়ে থাকে স্বরবৃত্তের শূকরের সাথে। করোটির আধপচা আগুন হতে জন্মায়নি গোলাপ। ভাঙ্গা বাতাসের টুকরা-টাকরা গিলে, ফুসফুস কেটে কয়েকটা পাপড়ি বানিয়েছি। জোড়া লাগানো গেলো না কিছুতেই…
শেষরাতে
নর্তকীরা গলিত ঘুঙুর খুলে ফেলেছে দেখো
জানোয়ারের প্রতিপায়ে ধুলা ও বৃষ্টি পুড়ে যাচ্ছে দেখো
এমন রক্তখচিত পরিবারে
পিতা এসেছেন অনন্ত ভোরে
প্রাণীমুণ্ডু হাতে নিয়ে মা এসে দাঁড়িয়েছেন পাশে
কেউ চিনতে পারছে না আমায়
তুমিও কি জানতে না- আমি মানুষ ছিলাম না কোনোদিন
জন্ম থেকেই জলহস্তীপোকা…
০৪.
জন্ম-বিচ্ছেদ বুকে
প্রত্নতত্ত্বের পাতিহাড় ভাঙ্গাভাঙ্গি
এইসব তিরোধান, এতো ভালো লাগছে কেন
কর্তিত পায়ের ছায়া, কুয়াশার মাঝে
রায়মঙ্গল হতে বহুদূর, ধানুকী ধানুকী হয়ে
মৃতের বাজারে…
এতো ভালো লাগছে কেন ডুমুর কঙ্কাল
মেঘভরা আকাশের নিচে
জলে, অনলে উড়েছিলো
জননীর ভষ্মরেণু …
নিরশ্র“ চোখের মনিতে বসে থেকে থেকে
চিরপ্রত্যাখ্যাত
উগলে ফেলেছি আয়ু, মরিচা ধরা সব…
আশ্রয় চেয়ে আতংকিত বাতাস
বিঁধে গিয়েছিলো ফুসফুসে। কে হবে আগুনের অংশীদার
এ-ভব মনোহরপুরে
বাঁকানো লতা তাকিয়ে রয়েছে আগামী অগ্নিগিরি মুখে…
জ্যোতি নেই, চোখের ছোবল কোথাও তো নেই
পৃথিবীর গোপন ফাটলে তবু
এতো এতো অশ্র“পাত শূন্যস্থানে
বাহিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রেম…
এমন গ্রীবা কাটা হরিণের মুখ
এতো ভালো লাগছে কেন
পেরেক-খচিত কফিনের লাশ কোথাও পাচ্ছি না খুঁজে
ঐ দেখো দূরে, বিরহী শ্মশান
শিবা
ব্রিজ ভেঙ্গে যমুনায় পড়ে গেছে চাঁদ…
নমুনা_____________________
০১.
শৈশবে ছায়া কেটে কয়েকটি হরিণ বানিয়েছি
পাগুলো জোড়া দিতে ভুলে গেছি
বড় হয়ে দেহগুলো আর দাঁড়ালো না
ভরা পূর্ণিমায় পাঁচ কাঠা জমি কিনেছি মেদেনীপুরে
আমিও বাড়ি বানাবো তাই
প্রতিভূমে পায়ের প্রবাহ দেখি
দূর মাঠ হতে উড়ে আসে রক্তপ্লাবিত ঢেউটিন
০২.
ঘাড় হতে মাথা নামাচ্ছো কেন? সোজা হয়ে দাঁড়াও
ডিম হতে দ্রুত বেরিয়ে পড়ছে পোনা মাছ
সময় দ্রুত যাচ্ছে, পালাচ্ছো কেন? বৃশ্চিকরেখা ধরে বর্ণহীন বানর…
ঘোড়া আর ঘুড়িদের ক্ষুরে জন্ম নিচ্ছে টয়োটা করোলা, লাবণ্য এক্সপ্রেস
আমাদের ইন্দিরা গান্ধী রোড সিনা টান টান করে শুয়ে আছে
এইবার উদগ্র টায়ারের নিচে পিষে ফেলো বাচ্চা বাচ্চা পাথর
০৩.
ঘাড় বাঁকিয়েছো। কোমর স্পর্শ করতে পারি না
নিতম্বে লুকিয়ে পড়েছে শৈশবের শহর সোনাবান
আমাদের গেটের ভেতরে একজোড়া কুকুর ঢুকে পড়েছে। জিভ হতে গড়িয়ে পড়ছে কার্তিকের লালা। ওদের তাড়িয়ে দিয়ো না। দুই দেহ এক হয়ে আছে। তুমি কেন ছায়ার শিরচ্ছেদ করতে যাবে…
এমন প্রকাশ্য দিবালোকে কেন যে ঘুড়ি উড়িয়েছো! নাটাই ছেড়ে দিয়েছো প্রস্তর যুগে। দাঁড়াও ইসামতি। সহ্যের সীমা আছে। আমি কি ছুঁতে পারি অক্ষিগোলক
নিশ্চয়ই তুমি জানো, বাহু হতে আমার হাতের দূরত্ব নয় লক্ষ কিলোমিটার
০৪.
বহুদিন পর দেখলাম- একটা পাথরের মাছরাঙায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েই আছো। ভুবনপত্রে তোমার নাম লিখতে চাইলাম। কলম হতে কয়েকটি কৃষ্ণঘোড়া বেরিয়ে পড়লো, দ্রুত
আমি শুনতে পাচ্ছি
জলের তলদেশ হতে পিতলের ঘণ্টাধ্বনি
তুমি কি শুনতে পাচ্ছো
দাঁড়িয়েই থাকলাম
ধর্মশালার কালো দরজার পাশে
স্বর্গের একমাত্র কুকুর…
০৫.
সিঁদুর-পরা পোড়ামাটি মেখে আমাদের ঘরে বাতাস এসেছে, শতছিন্ন। বহুদিন পরে, এলোমেলো আলোর গর্তে আজ উৎসব। বাজাও তিব্বতী ঢোল, প্রজ্ঞাপারমিতসূত্রে প্রতিঅঙ্গে মেখে নাও জাপানী গোলাপ। বাজাও ঝাঝ করতাল, শঙ্খের চূঁড়া। আমাদের নিমতলি শ্মশানের ঘাটে রান্না চড়িয়েছি আকরিক হীরকখণ্ড— হরিণ ও মাংসের ঘোড়া
ঠিক লাশ-কাটা ঘরের উপরেই আমাদের ঘর। কপিলা-আসবাবে রূপোর ধুলোর সাথে মিশে আছে নয়শত চোখ, আমারই। দেখে নিচ্ছি নিভৃতে- সেই কৃষ্ণাঙ্গী বেশ্যার ঘরে হামাগুড়ি দিয়ে-ওঠা কয়েকটি শূকর শাবক, তাহাদের লৌণ্ডানৃত্য। জানা ছিলো, আমার নির্দিষ্ট কোনো আকাশ নেই, হাত নেই, পা নেই; কাণ্ডহীন ক্যাকটাস যেনো।…তবু ঐখানে জেলা-নোয়াখালীর চাঁদ একা ভিজে যায় শিশিরে-পোড়া আমাদের নব্বই দশক…
উৎসব। জীবিত মাথামুণ্ডুসহ দিব্যোন্মাদ মৃতের উৎসব আজ। বামপন্থী কুষ্ঠরোগীরা আসো, মৌলবাদী পঞ্চপাধারী কুকুরেরা আসো। আমাদের জাফরান দেয়া তাড়িয়াগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে ফেটে যাবে যেনো, রাজভৃঙ্গ তৈলের ভেতর একখণ্ড আগুন গলে যাবে —আয়াহুস্কায়া, আয়াহুস্কায়া। জল হতে কেবলই জিহ্বা পান করেছিলো পূর্বপুরুষ। আমি সারাটা হৃৎপিণ্ডসহ জলপান করি, আয়াহুস্কায়া— প্রিয় রতিশিক্ষিকা আমার
রক্তবর্ণ আলখাল্লার ভেতর লুকিয়েই তো ছিলাম। ঘরের গর্তে উদয়গিরি পর্বত, লিঙ্গরাজ মন্দিরের চূড়া সংকোচিত ছিলো। আর জানোই তো, উৎসব এলে আমাদের আব-ওঠা আয়না হতে ঝরে পড়ে শাঙ্খবিজ্ঞান, সংলগ্ন ছায়া। অতঃপর রক্ত ফেটে গেলে শূন্যস্থানে তুলে রাখি রাঙা ফসফরাস, রাইনের ধুলা
০৬.
দেড় হাজার ফুট উঁচুতে আমাদের হেলিকাপ্টার স্থির দাঁড়িয়েছে। দরোজা খুলে দিয়েছি। এখন বাতাসে প্রতিটি আলপিন এলোমেলো হবে
কে তুমি গ্রীবার আড়াল থেকে নাম ধরে ডাক দিলে
উড়ন্ত নামের পেছনে ঝাপ দেই
ঝাঁপ দেই
ঝাঁপ দেই
আমার প্যারস্যুটের রশি ছিঁড়ে গেছে মুনা
তুমি কি কুলচেষ্টার হতে নিরাপদে বাড়ি ফিরেছো
০৭.
টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কাল সারারাত উজিরিস্তানে ছিলাম। দক্ষিণ পরগনায় আমার সঙ্গী হয়েছিলো অজস্র ডানাঅলা চাঁদ
বস্ত্রহীন আলো ও কম্পন সঙ্গে করে এনেছি। বাসের জন্য দাঁড়িয়েছি। বাসের বদলে ঝাঁকে ঝাঁক মানুষ আসে। জগতের সব মানুষ কি তবে মিরপুরে থাকে
রাজপথে ঘুরেফিরে বয়স্ক বনের ছায়া… ঘোড়া ও সিংহধ্বনি চুরমার করে টয়োটা করোলা চলে যায় গুলশানের দিকে। বাস চলে আসে। বাস আমায় চড়ে বসে। আমিও বাসের দোতলায় চড়ি
বিদ্যুত চলে গেলে অন্ধকার হয় দেলোয়ার ট্রেডার্স। অন্ধ রাজকন্যার ঘরে তুমি কি কয়েকটি কৃষ্ণবাতি জ্বালিয়ে এসেছো? দেলোয়ার তুমি কেমন আছো
এই বাস থেকে আমি আর কোনোদিন নামবো না। বাইরে যানজট, কনডমের খোসা। বাইরে কবি ও কুকুরসহ পরজীবী বুদ্ধিজীবীদের হাট ভাসমান…
এই বাস থেকে আমি আর কোনোদিন নামবো না
আমি তো দক্ষিণের মানুষ। এই অন্ধকার ছাড়া আমার জীবনে আর কোনো পূর্ণতা নেই। গতি ও বস্তুর ঘনত্বে প্রায় এক কোটি বছর ধরে বসে আছি আমি আর কয়েকটা মাছি…
দক্ষিণামৃত_____________________
১.
আজ মধুপূর্ণিমা
আজ বার্মিংহামের মলীন আকাশে শ্যামবর্ণ চাঁদ দেখা যাচ্ছে
চাঁদটাকে অনেক দুখী দুখী লাগছে…
প্রিয় দক্ষিণ
আমি চাঁদের কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছি…
২.
চাঁদের কপালে সিঁদুর পরিয়েছি জেনে ঈর্ষান্বিত দেবীর জুঁইফুলে-ভেজা পাপড়ির মতো দু’ঠোঁট কেঁপে উঠলে নিধুয়া বাতাসে অস্ফুট উচ্চারণ কম্পিত হয়— সমুদ্র মন্থন করে আমার জন্য শাঁখা নিয়ে আসো, সঙ্গে সিঁদুর…
ঘুমের মধ্যে, নির্ঘুমের মধ্যে সমুদ্রের জল ছানবিন করে শঙ্খ যোগাড় করছি, শাঁখা তৈরী করতে করতে মৃত
পূর্বপুরুষসহ আমিও পৃথিবীর প্রাচীন শাঁখারী হয়ে উঠেছি
প্রিয় দক্ষিণ
পৃথিবীর কোন সোনার দোকান থেকে সিঁদুর নিয়ে আসবো বলো
হাড়ের খাচা হতে হৃৎপিন্ড খোলার সমুহ কৌশল তুমিই তো শিখিয়ে দিয়েছো
তোমার কপালে ঢেলে দেবো রক্তের সিঁদুর…
৩.
চার সেপ্টেম্বরের আগে তুমি মানুষই ছিলে, ঈশ্বর বংশীয় ছিলে না…
কখন আসবে তুমি
অতলান্ত বুকে, ফেইসবুকে একটা গোলাপ লিখবো বলে
মধ্য এশিয়ার পাগলা গারদ হতে বেরিয়ে এসেছি…
৪.
গাড়িতে বসে ঘি-য়ে ভাজা হিন্দীগান ভালো লাগছিলো না। উইন্ডো খুলে দিলাম। দেখলাম- গাছের পাতায় পাতায় সবুজ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বাজছে; দেখলাম- বিয়ারের শূণ্য পট গড়িয়ে গড়িয়ে তোমার শহরের দিকেই যাচ্ছে
প্রিয় দক্ষিণ, পটের ভেতরে ছিলো জর্জিয়ার পাহাড়ী অন্ধকার
আর তুমি তো জানোই
ঐ অন্ধকারে দিবারাত্র আমি শুয়ে থাকি, শুয়ে থাকি…
পরাবিদ্যার পাটীগণিত_________________
০১.
আহার
নিদ্রা
ঘনগীত
গোলাপ
কবিতা
ধূমপান ছেড়ে দিয়েছি
আমার হৃদয় ক্ষুধার্ত নয়
…আর তুমি তো জানোই
জন্মসূত্রে ঈশ্বরের কোনো ক্ষিধে নেই
০২.
আপেলের ভেতর সবুজ ঘোড়া ঘুমিয়ে পড়েছে
আমরা আর আপেল খাবো না
আমাদের মৃত মা
উনুনে রান্না করছেন আগুনের নকশা
আমাদের মৃত মা
হাড়িতে বাগার দিচ্ছেন তাম্র গোলাপের চারা
আমরা তার অলীক হাতে
আমাদের হৃৎপিণ্ড রান্না করতে দিয়েছি
…আর আমরা আপেল খাবো না
০৪.
(এ জার্নি বাই মঞ্জু মানোহিন)
আমরা তার গাড়িতে করে
এভন নদীর তীরে
ষ্টার্টফোর্ডে গেলাম
রাস্তার দুইধারে ফুলদানীতে রাখা
বাবা মা স্ত্রী কন্যার প্রবর দেখলাম…
রোমান আমলের রোদ চারিদিকে
গাছে গাছে পাতার স্ফূলিঙ্গ…
আকষ্কিক আমাদের মাথায়
একটা দুইটা জারুল ফোটে
মাংসের মাথায় পাখি ওড়ে…
মঁ মঁ শূকর ছানার গন্ধ মিশিয়ে বিয়ার খেলাম
পুকুরের জলে স্নানপর্বের ছবি তুললাম, ছায়া তুললাম
বিন্দু সিন্দু হাত পা জিহ্বা কালিজা
সংগোপনে এক কাতারে দাঁড়ালাম মাঠের মধ্যে
ভারমুক্তির আগে অনেক অনেক কথা বললাম
কন্ঠ থেকে উঠে আসলো স্বর্ণালী সব চিতলের কাঁটা…
০৫.
দুই হালি কমলা
দুই কে জি সাম্যবাদ
চারটা পরোটা
তিন কেজি সুগার-ফ্রি সাহিত্য
আট কাপ গরুর মগজ খরিদের পর আমি আর ফৌজিয়া খালা পান্না রঙের হাতি খরিদ করতে বের হই। জ্যোৎস্না রাতে আমি আর ফৌজিয়া খালা হুড-খোলা জীপে করে উত্তর বঙ্গ বেড়াতে যাই
আমরা ঝগড়া করি-
-কাল সারা রাত কেন যে তুমি ছুরি দিয়ে মাছি কেটেছিলে
-আগে বলো, কেন তুমি গুলি করে গোলাপগুলো হত্যা করেছো
আমারা সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ি
মৃত্যুনাভীতে ডুবে যেতে যেতে
আমাদের সূতিবস্ত্রে পুরুষ এবং নারী প্রজাপতি ওড়ে
ওড়ে…
৬.
ঘুমের ভেতরে ঘুম ভেঙ্গে দেখি- মাথার উপরে পূর্ণিমার চাঁদ আর চাঁদের শরীরে নেকড়ের রক্ত ও স্যাত স্যাতে কালচে লোম লেগে আছে
পালাতে থাকি
পালাতে থাকি
পালাতে থাকি
শেষ রাতে লুকিয়ে পড়ি মৃত সন্তানের জুতোর ভেতর
৭.
নয়টি ডানার রথে করে মৎস্য শিকারে গেছো, মেঘের আড়ালে…
আমার শহরে কোনো পূর্ণিমা নেই
হাত থেকে পড়ে চাঁদ ভেঙ্গে গেছে… (ঘোলা চাঁদের নিচে একটামাত্র বনেলা মোরগ, তার পায়ে বেড়ালের রক্তটীকা…)
সারারাত কুয়াশা ছিলো
সারারাত মোমের গর্তে দণ্ডিত হলো আগুনের ফুটা
শূন্যতার রশিতে গলা ঝুলিয়ে গান করলো মৃত স্বজনেরা
ফিরোজা রঙের গান
জল ও অগ্নি গলিয়ে উৎসবী গান…
ধীরে নড়ে ওঠে শিং-ভাঙ্গা হরিণ, প্লাষ্টিকের বাঘ আর মৃত মানুষের শরীরের ভাষা …
হায় রাত!
অনন্ত হাসপাতালের বারান্দা পাড়ি দিয়ে ভোরের মোহনা আসে
মা-হারা ট্রেনগুলো আমায় ছিদ্র করে চলে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে…
পরাবিদ্যার পাটীগণিত হাতে শিশুরা মহাবিদ্যালয়ের দিকে যায়
গাছের কঙ্কাল ঘেরা পাখিদের মাতৃমঙ্গলে কোলাহল ওঠে; কালিগঙ্গার জলে অস্থি-বিসর্জন দিয়ে কেউ কেউ আর কোনোদিন বাড়ি ফেরে না…
আমার কবিতা______________________
কয়েকটা ভাঙ্গা দাঁত, আধ-ভাঙ্গা কপালের ওপর অবিন্যস্ত কেশর…নাকের জায়গায় ঠোঁট আর ঠোঁটের জায়গায় চোখ এবং চোখের আয়তক্ষেত্রে ফুটে-থাকা গাঁজাফুল…
এই তো অনেকটা এরকমই আমার কবিতা… অর্ধেক মানুষ অর্ধেক ঘোড়া
ঘোড়া ছোটে… ঘোড়া ছোটে…
অ্যাবুসিনিয়ার আকাশে লটকে-থাকা রুগ্ন চাঁদের নীচে ঘোড়া ছোটে
এই ঘোড়ার ঘর নাই, গন্তব্য নাই
পায়ে পায়ে পাতাবাহার, ঝরা পাতার সংসার ওড়ে…
উড়ন্ত কবিতাগুলো শুধুমাত্র ইতর নয়, অনবদ্য ইতরের মতো হরিণহত্যাকারী, মাংসশিকারী। কবিতাগুলো একদা মহর্ষি হওয়ার কথা ছিল, হয়ে গেছে চামার। হওয়ার কথা ছিল শ্রীকৃষ্ণদেব, হয়েছে মর্ষকামী।
…এরকমই তো
প্রস্ফূটিত
নিগ্রো কারাগারে রক্তমাখা আফ্রিকান গোলাপ
অনেকটা এরকমই- মৃত্যুর দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জিহ্বাকাটা আসামীর মতো… আর তো দেখি- হাসপাতালের বারান্দায় এইডস আক্রান্ত রোগীটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে ডাহাহীন মাছির দিকে… চোখের মণিতে তৈরী করছে মাছির সাঁতার, দৃশ্যের ডানা …আর আরব্য রজনীর রমনীরা নির্ণিমেষ তাকিয়ে থাকে এইসব ক্যান্সারআক্রান্ত কবিতার দিকে। ইতোমধ্যে রূপসীদের নাভী ছিঁড়ে গেছে, তাহাদের পায়ে লেগে আছে অবিন্যস্ত গোলাপের মগজ, লেগে আছে আগুনের খোসা, শিশির ও এসিডের বুদবুদ…
আমার কবিতায় একটা কৃষ্ণ কিশোর পাওয়া যেতে পারে… পুজোর থালায় পাঁচটি রক্তজবা রেখছিলো কোনো এক মধ্যরাতে। প্রভাতবেলা নিদ্রা ভেঙ্গে দেখি- পুজোর থালায় ফুল নেই, পাঁচটি সাপের বাচ্ছা বসে আছে। বাচ্ছাগুলো লুকিয়ে রাখি মাথার ভেতরে। বড় করি… বড় করি… মাথা ছিদ্র করে বেরিয়ে আসবে একদিন প্রর্থনার অজগর…
আর প্রাচীন অগ্নিপূজারী মা আমার দুই চোখে পোষে রাখে আগুনের দাগ। মা বসে থাকে সরাইখানার বারান্দায়, তাতানো রোদের মধ্যে শূকর ছানা কোলে নিয়ে। …আর ঐ কৃষ্ণশূকররীর উলান চুষে চুষে আমরা পান করেছি দুধের মাংস। বড় হয়ে আহার করি- উটের কলিজা, গাছের হৃৎপিণ্ড আর গাভী-নিতম্বের রেজেলা…
আমার কবিতায় কখনোই আমি কবিতা লিখি নি; লিখে রেখেছি- ধুলি ধূসরিত চাঁদ, ময়লা ও কালো কুচকুচে একটা সড়ক। সড়কের দুই পাশে বেগুন বাগানে ফুটে থাকে নিষিদ্ধ আফ্রিম। এমন নিধুয়া প্রান্তরে মাঝে মধ্যে দেবী-দক্ষিণ আসেন। এমন পদ্ম পাতার স্পর্শে ফর্সা হতে থাকে আমাদের কৃষ্ণ পাথর ও কৃষ্ণ আগুন। বলেছি তো- কবিতায় আমি কবিতা লিখি নি; লিখে রেখেছি মৃত মানুষ, মৃত পিপড়ে ও মৃত সিংহের হৃৎপিণ্ড…
লাশ_______________
চারটি চাকায় করে নিয়ে যাচ্ছি কুমড়োর বাগান
অস্তিত্বের লাশ ঠেলে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছি দূরে
ঠেলাগাড়িতে করে বাংলাদেশ নিয়ে যাচ্ছি
ফেটে-পড়া সবুজ ক্ষেতে
লাল লাল ফড়িংয়ের নদী দেখা যায়…
পুরুষ ঢেলে দিচ্ছে নিরন্তর ঘাম ও বীর্য
তেলসিটকে রোদের লালায়
গোপনে পোক্ত হয় দুধের বিচি
গুণীন_______________
এ-ধরণী কামনা বিলাসিনী
নিরবধি ভিজে যাবে বৃষ্টি ও বীরের বীর্যে
দূরে
রেজিনা শহরে মোমবাতি জ্বলে
কবে যে উনুন বেয়ে বহুদূর হেঁটে গিয়েছিলো পুরাতন আগুন
ঘন বজ্রপাতে
আকাশে আকাশে দেখি রাঙা তরবারী, তাহাদের ঝলক
আজ মনে নেই
ঐ রাতে শাদা পাখিটিকে দুইখন্ড করেছিলো
কোন সে গুণীন, ঈশারায়
দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু
জন্ম: ৩০ নভেম্বর, ১৯৭০
মৃত্যু: ১৭ নভেম্বর, ২০১৮ (বার্মিংহাম, যু্ক্তরাজ্য)
জন্মস্থান: সিলেট
প্রকাশিত কবিতার বই:
ইস্পাতের গোলাপ
ঈসাপাখি বেদনা ফোটে মরিয়মবনে
নীল কাব্যের বয়াত
মৌলিক ময়ূর
সাপ ও সূর্যমুখী
অভিজিত কুণ্ডু’র লায়ন লিলিগুচ্ছ
বিপুলা বীজগণির
বিদ্যুতের বাগান
দক্ষিণামৃত
প্রকাশিত উপন্যাস:
জ্যোৎস্নার বেড়াল