নারীদের আমি পুরুষের চেয়ে উপরের স্তরে চিন্তা করি — কিম কি দুক | ভাষান্তর : রিতু পারভী

কোনোরকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতিরেকে সিনেমা জগতে একজন কিম কি দুক আইকন হয়েছেন। স্কুল ছেড়ে দেয়া, কারখানায় কাজ করা আর সামরিক বাহিনীতে সেবা দেয়া কিম কি দুকের বিশ্বের প্রথম সারির চলচ্চিত্রকার হয়ে ওঠার গল্প একদম অল্প দিনের। তাঁর চলচ্চিত্র তৈরিতে উঠে এসেছে অন্য এক বাস্তবতা, নৃশংসতা হলো বাস্তবতার অন্য এক রূপ যা তিনি নির্মমভাবে তাঁর সিনেমায় ব্যবহার করেছেন।

১৯৯৬ এ তাঁর প্রথম চলচিত্র ‘ক্রকোডাইল’-এ অদ্ভুত এক মনুষ্য চরিত্র নির্মিত হয়, যিনি হ্যান নদীর তীরে পাওয়া আত্মহত্যাকারী মানুষের শবদেহ সংগ্রহ করতেন। কিমের নতুন ধারণা তাঁর সমাজের বেশিরভাগ মানুষ দ্বারা বর্জিত, সমালোচিত হলেও নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠী তাঁর ভক্তে পরিণত হয়েছেন। এই স্বল্প সংখ্যক মানুষকে লক্ষ্য করেই মূলধারার বাইরে গিয়ে তাঁর পরবর্তি সিনেমাগুলো তিনি নির্মাণ করেন। তাঁর কোনো সিনেমা কোরিয়ান বক্স-অফিসে সেভাবে সাফল্য না আনলেও ইউরোপে তাঁর এক বড় ভক্তগোষ্ঠী তৈরি হয়, যেখানে বিভিন্ন চলচিত্র উৎসবে তাঁর সিনেমা প্রদর্শিত হতে থাকে।

‘বার্ডকেইজ ইন’ প্রথমবারের মত সারা বিশ্বে আলোড়ন তৈরি করে, এর পরপরই ২০০০ সালে বিতর্কিত ‘দ্য আইল’। বিশ্বের সিনেমাপ্রেমী মানুষ নতুন এক আবিষ্কারের মুখোমুখি হয়। নারী এবং পুরুষের মধ্যেকার যে বৈশ্বিক যুদ্ধ, তার অন্বেষণের যে ভয়াবহতা কিমের সিনেমায় দেখা যায় সেটা সানড্যান্স এবং ভেনিস চলচ্চিত্র অনুষ্ঠানে অনেককে চরম ধাক্কা দেয়। আবার একইসাথে এর ভিন্ন মাত্রার নান্দনিকতা, পরাবাস্তব চিত্রকল্পের ব্যবহার, সূক্ষ্ম কাব্যিক সৌন্দর্য ভীষণভাবে প্রশংসিত হয়। ‘রিয়েল ফিকশন’ পরিচালক হিসেবে কিম কি দুকের দুর্দান্ত এক কাজ যেখানে একসাথে দশটি মোশন ক্যামেরার সাথে দুইটি ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করে ২০০ মিনিটের এই ছবি একবারই ধারণ করেছেন। যেখানে একজন মানুষ তাঁর কাল্পনিক এবং সত্যিকার শত্রুকে হত্যানেশায় মত্ত হয়ে ওঠাকে সিনেমার মূল উপজীব্য করেছেন।    

‘এড্রেস আননোন’ কিম কি-দুকের রাজনৈতিক সিনেমা যা ১৯৫০ সালের কোরিয়ান যুদ্ধের ক্ষতের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এতে সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার সামরিক বেইজ নির্মাণ পুনর্বিবেচনা নিয়ে যে ইস্যু তার উপরেও আলোকপাত করা হয়। আন্তর্জাতিক স্তরে সবচেয়ে জনপ্রিয় দক্ষিণ কোরিয়ার এই  চলচ্চিত্রকারের সর্বশেষ কাজ দেশের অভ্যন্তরেও তুমুল জনপ্রিয় হয়। চো জে-হ্যান ‘ব্যাড গাই’ এর মূল চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি ইতিমধ্যে কিমের আরও পাঁচটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এবং এর মধ্যে একটি টিভি সিরিজে অভিনয় করে জনপ্রিয় টিভি তারকায় পরিণত হয়েছেন।

২০০২ সালে সেন্সেস অব সিনেমা পত্রিকার ১৯তম সংখ্যায় সাংবাদিক ভলকার হামেলের সাথে চলচ্চিত্রকার কিম কি দুকের এক সাক্ষাৎকার নেন। এই আলাপচারিতার প্রধান বিষয় ছিলো সে সময়ে কিম কি-দুকের শেষ সিনেমা ‘ব্যাড গাই’।

— রিতু পারভী।


নারী-পুরুষের সম্পর্কটাকে আমি একরকম পতিতাবৃত্তিই বলবো, যদি তাতে কোন অর্থের বিনিময় নাও হয়


হামেল : আপনি বলেছিলেন আপনার সব সিনেমার শুরুর কথা হল ঘৃণা। কী ধরনের ক্রোধ আপনাকে ‘ব্যাড গাই’ তৈরিতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

কিম : ‘ঘৃণা’ শব্দটি আমি বৃহৎ পরিসরে ব্যবহার করেছিলাম। আমার মনে হয় না কোন নির্দিষ্ট দৃশ্যপটকে উপলক্ষ্য করে আপনার ঘৃণা শব্দটি ব্যবহার উপযুক্ত হবে। আসলে এটা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা জিনিসকে ঘৃণা করাকে বোঝায় না। এটা এক ধরনের অনুভূতি যা জীবন চলতে আমি প্রায়শ মুখোমুখি হই কিন্তু আমি এর কোনো মানে খুঁজে পাই না। এ কারণেই আমি সিনেমা তৈরি করি যা আমি দেখি কিন্তু বুঝতে পারি না, আমি সিনেমাটা বানাই সেটা বোঝার জন্য। ঘৃণার চেয়ে বরং আমার ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে কথা হতে পারে।

হামেল : আপনি ‘ব্যাড গাই’-এর মাধ্যমে জগতের কোন জিনিসটা খুঁজে বের করতে চেয়েছেন?

কিম : কেন আমরা জন্মগতভাবে সমান অধিকারের অংশ হয়ে, সমান ক্ষমতার অধিকারী হয়েও বড় হতে হতে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ি, এই প্রশ্নটাই আমি করতে চেয়েছি। কেন আমাদের চেহারা, বাইরের উপস্থাপন দিয়ে আমাদের বিচার করা হবে। দেখতে কুৎসিত বা সুশ্রী কিংবা টাকা আছে কি নেই দিয়ে কেন আমাদের বিচার করা হবে? জন্মের পর-পর এইসব আরোপিত পরিচয়, শ্রেণিবিভাগ দিয়ে কেন আমাদের সমাজে বিভক্ত করা হয় যা আমাদের পরস্পরের কাছাকাছি আসতে দেয় না। আমি জানতে চেয়েছি আসলেই কি এই যে বিভক্ত শ্রেণি তারা পরস্পরের কাছে আসতে পারে না, তারা একই স্তরে মিশে যেতে পারে না।

হামেল : আপনি কী আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন?

কিম : অর্থ, শ্রেণি আর বাহ্যিক চাকচিক্যের উর্ধ্বে উঠে মানুষের উচিত পরস্পরকে শ্রদ্ধা করা, এটাই আমার উত্তর কিন্তু আমি চেয়েছি আমার সিনেমার মাধ্যমে দর্শকের মনেও একই প্রশ্নের উদ্রেক হোক। আর আমি নিশ্চিত প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ উত্তর খুঁজে পাবে।  

হামেল : প্রায় সব সিনেমার মত ব্যাড গাইয়ের মূল যে চরিত্র, পিম্প হ্যাং জি একটা নিরব চরিত্র, যে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না বা অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে অপারগ। হিংস্রতাই যার একমাত্র ভাষা। মূল চরিত্রের এই নিরবতার কারণ কী? 

ব্যাড গাই ছবির দৃশ্য

কিম : আমার সিনেমায় কিছু চরিত্রের মুখে ভাষা থাকে না কারণ তারা কোনো কিছু দ্বারা ভীষণভাবে আহত থাকে। তাদের মনুষ্য চরিত্রে বিশ্বাস বলে কিছু থাকে না, কারণ তাদের দেয়া প্রতিজ্ঞা নির্মমভাবে ভঙ্গ হয়েছে। তাদের হয়তো কেউ ‘ভালবাসি’ বলেছে কিন্তু সেটা তারা মন থেকে বলেনি। তাই যেটা হয় সে ভালবাসার প্রতি আস্থা হারায় সাথে মানুষের প্রতি বিশ্বাস এবং একই সাথে কথা বলার আগ্রহ। তারা যে হিংস্র আচরণ করে তা এক ধরনের শারীরিক প্রকাশ। আমি এটাকে নেতিবাচক হিংস্রতা না বলে একটি শারীরিক প্রকাশ বলতে বেশি আগ্রহী হবো। যে দাগ বা ক্ষত আমার সিনেমার চরিত্রগুলো বহন করে তা আসলে এমন কিছু অভিজ্ঞতা যা তরুণরা নিয়তই মুখোমুখি হয়, এমন একটা বয়সে যখন তারা বাইরের আঘাতগুলোয় ঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না। এই বয়সে তারা শারীরিক নির্যাতনকে প্রতিহত করতে পারে না। যেমন- তাদের বাবা মা দ্বারা অথবা মৌখিকভাবে নির্যাতন বা বাবা-মায়ের মধ্যে কলহ তাদের গভীরভাবে মানসিক আঘাত করে। অথবা এমনও হতে পারে তুমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছ হঠাৎ করে কেউ তোমাকে শারীরিক আঘাত করলো। যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে তোমার হাতে কিছু করার থাকে না এবং এই ধরনের ঘটনাগুলো একটা গভীর দাগ ফেলে যায়। আমার নিজের জীবনেই আছে এমন অভিজ্ঞতা। অনেক আগে আমার চেয়ে ছোট কিন্তু বেশি শক্তিশালী একদল ছেলে আমাকে মেরেছিল, আমি নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি। একইভাবে আমি যখন নৌ-বাহিনীতে ছিলাম, উঁচু র‌্যাংকের কিছু অফিসার কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে মেরেছিল। এই ধরনের অভিজ্ঞতা আমাকে বারবার প্রশ্নের মুখোমুখি করে দেয়, কেন এমন হয়? পরিচালক হওয়ার আগ পর্যন্ত এই প্রশ্নগুলো আমাকে ভুগিয়েছিল। আমার অনুভূতি গুলো, আমি তখন কেমন চিন্তা করতাম তা আমি এখন প্রকাশ করতে পারি।           

হামেল : আপনার সিনেমাগুলোকে কী আপনি আত্মজীবনীমূলক বলবেন?

কিম : ‘ব্যাড গাই’ এর ক্ষেত্রে আমি বলবো যে আমি অবশ্যই হ্যাং জি’র মত মানুষ পছন্দ করি না। কিন্তু আমার জীবনে এমন একজন মানুষের সাথে দেখা হয়েছিল যে রেড জোন এলাকায় কাজ করতো। সে আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই একদিন খুব মেরেছিল। এই মানুষটিকে আমি খুব ঘৃণা করতাম। সেই অবস্থায় তাকে আমি বুঝতে পারতাম না, বোঝার অনেক চেষ্টা করেছি। এই সিনেমার মাধ্যমে আমি তার মানসিক অবস্থার অভ্যন্তরে প্রবেশের চেষ্টা করেছি এবং কেন সে এমন সেটা বের করার চেষ্টা করেছি।   


আমরা যে জগতটাকে দেখি তাতে বাড়তি কিছু চিন্তা, কিছু অনুভূতি যোগ করার চেষ্টা করি। 


হামেল : আপনার পরিচালনায় হলিউডে ‘ব্যাড গাই’এর পুনর্নির্মাণ হবে বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে সে সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?

কিম : ব্র্যাড পিটের মত অভিনেতা দিয়ে হলিউডে ‘ব্যাড গাই’ এর পুনর্নির্মাণ করতে পারলে আমি খুশিই হবো। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত, তবে হলিউড থেকে এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেনি।

হামেল : আপনার কি মনে হয় না আপনার ভীষণ ব্যক্তিগত পছন্দ এবং উগ্র নান্দনিকতা হলিউডের সিস্টেমের সাথে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করবে?

কিম : বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় হলিউড সিনেমা কিছু কড়াকড়ি নিয়ম মেনে চলে, আসলে তা ঠিক না বলে আমার মনে হয়। সরাসরি না হলেও তারা যা বলতে চায় তা তারা বলে। বাইরে থেকে কিছু নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে হলেও আসলে তা নয়। তাদের পদ্ধতি মেনে সেটা উল্টে দিতেই আমি সেখানে কাজ করতে চাই। তবে যদি সম্ভব হয় আমি ‘ব্যাড গাই’ ফরাসী ভাষায় তৈরি করতে চাই, একদম ফরাসিদের মত করে। কিন্তু হলিউড পুনর্নির্মাণের কথা আপনি কোথা থেকে শুনলেন, আমার অবাক লাগছে, কারণ এটা সেলস টিমের লোকদের কাছে আমি দুষ্টুমি করে বলেছিলাম।      

হামেল : ‘ব্যাড গাই’ এর মত একই বিষয়ে কাজ করা হয়েছে এমন হলিউড সিনেমা বলতে আমি ‘ফাইট ক্লাব’কেই দেখছি যেখানে শারীরিক ভাষায় কথা বলা হয়। আপনার কী মনে হয়?

কিম : দুঃখজনক, ‘ফাইট ক্লাব’ আমার দেখা হয়নি। এটা সম্পর্কে যতটুকু শুনেছি তাতে মনে হয়েছে এটা আমার সিনেমা ‘রিয়েল ফিকশন’ এর মত কিছুটা, যে সিনেমাটা তৈরি করতে আমি তিন ঘণ্টা বিশ মিনিট সময় নিয়েছিলাম। এই সিনেমায় এমন একজন মানুষকে দেখানো হয়, যে ঘৃণা করে এমন সব মানুষদের সে খুন করতে বের হয়, কিন্তু সবশেষে জানা যায় তার এই খুনের নেশা আসলে একটা স্বপ্ন। এই সিনেমাটা কিছুটা ‘আমেরিকান সাইকো’র মত।   

হামেল : ওয়েবসাইটে আপনি আপনার সিনেমাগুলোকে ‘আধা-বিমূর্ত’ বা সেমি-এবস্ট্রাক্ট বলেছেন। এটা কী একটু ব্যাখ্যা করবেন?

কিম : আধা বিমূর্ত ধারণায় সিনেমা তৈরি বাস্তবতার চেয়ে একটু বেশি কিছুকে উপস্থাপন করা। আমরা যে জগতটাকে দেখি তাতে বাড়তি কিছু চিন্তা, কিছু অনুভূতি যোগ করার চেষ্টা করি।  

হামেল : সিনেমা তৈরির আগে আপনি একজন অংকনশিল্পী ছিলেন। ‘দ্য আইল’ চলচ্চিত্রে আপনি অতি পরাবাস্তব চিত্রকল্পের ব্যবহার বেশি এবং ন্যারেটিভ কম ব্যবহার করেছেন। আবার ‘ব্যাড গাই’ সিনেমায় ইগোন শিলের চিত্রাঙ্কন একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

কিম : দুই বছর ফ্রান্সের মঁপেলিয়ার সমুদ্র সৈকতে ছবি আঁকাআঁকিতে ব্যয় করেছি। কখনো আয়োজন করে প্রদর্শনী করা হয় নাই। নিজের খেয়ালে আঁকতাম আর তা রাস্তায় প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতাম। জার্মানির মিউনিখের রাস্তাতেও আমি ছবির প্রদর্শনী করেছি। সেখানেই ইগোন শিলের কাজ সম্পর্কে জানতে পারি। ‘ব্যাড গাই’ সিনেমায় তাঁর আঁকা চিত্র ব্যবহারের পেছনে কারণ হলো সেই ছবি প্রথমে দেখলে অশ্লীল মনে হবে। ছবিগুলো নগ্ন বা অশ্লীল বিষয়কে কেন্দ্র করে আঁকা হয়েছে। খুব কাছ থেকে দেখলে কিন্তু ছবিগুলোর অশ্লীলতাকে ছাপিয়ে এর সততা স্পষ্ট হবে, আকাঙ্ক্ষায় মোড়ানো মানুষের চিত্রকল্প দেখতে পাওয়া যায়। গুস্তাভ ক্লিমট যদিও আমি বেশি পছন্দ করি, কিন্তু শিলের কাজ বারবার দেখার পর আমি তাঁর ছবি ব্যবহারের সিদ্ধান্তই নেই।    

হামেল : শিল বেশিরভাগ সময় যৌনকর্মীদের এবং ‘বেপুথে নারী’দের চিত্র এঁকেছেন, একইভাবে ‘দ্য আইল’, ‘এড্রেস আননোন’, ‘ব্যাড গাই’ এর নারী চরিত্রগুলো তৈরি হয়েছে। নারীদের, যারা তাদের দেহ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে, তাদের কোন জিনিসটা আপনাকে এমন করে মুগ্ধ করেছে?

কিম : নারীদের আমি পুরুষের চেয়ে উপরের স্তরে চিন্তা করি। নারীদের কাছে এমন কিছু জিনিস দেয়ার আছে যা পুরুষের প্রয়োজন, এমনকি তারা তার জন্য অর্থও ব্যয় করতে দ্বিধা করে না। বেশিরভাগ পুরুষ সম্ভবত আমার সাথে একমত হবেন না। কিন্তু নারী-পুরুষের সম্পর্কটাকে আমি একরকম পতিতাবৃত্তিই বলবো, যদি তাতে কোন অর্থের বিনিময় নাও হয়। নারী-পুরুষের সম্পর্কে সে সমস্যা তৈরি হয় এবং তাতে যে শক্তির উদ্ভব হয় তা দিয়েই পৃথিবী ঘোরে। যদিও এটা একটা বিশ্বজনীন দ্বন্দ্ব কিন্তু এই দ্বন্দ্ব আবার ভিন্ন-ভিন্ন সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে। ইউরোপের ক্ষেত্রে অনেক দিন ধরেই নারী পুরুষের এই দ্বন্দ্ব অনেকটাই স্থিতি লাভ করেছে। তাদের চলচ্চিত্রেও এর প্রতিফলন দেখা যায়, অনেকটাই স্থিতিবস্থা, অনেক কম জায়গায় এর উপস্থিতি দেখা যায়। তুলনায় এশিয়ার চলচ্চিত্রে এর অস্থিরতা এবং ভয়াবহতা অনেক বেশি, কারণ নারী-পুরুষের দ্বন্দ্ব এখানে অনেক বেশি।     

হামেল : আগের ছবিগুলোর তুলনায় ‘ব্যাড গাই’ নিয়ে নারীবাদীদের প্রতিক্রিয়া কী বেশি তীব্র ছিল?

কিম : হ্যাঁ, তা অবশ্যই। নব্বই ভাগ নারী-সমালোচক ‘ব্যাড গাই’ এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। আবার একই সাথে এই ছবির দর্শকের আশি ভাগই নারী। আপনি যদি এই সিনেমাটির বিশেষজ্ঞ এবং সমালোচকদের খেয়াল করেন, দেখবেন বেশিরভাগই একটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সিনেমাটি দেখেছেন। কিন্তু সাধারণ দর্শক আবার এটিকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। তারা সিনেমাটি বুঝতে পেরেছেন। আপনি যদি আমার সিনেমাকে কিম কি দুক নারীদের দুর্ভাগ্য যা সিনেমায় দেখানো হয়েছে, তা তৈরি করেছেন মনে করেন তবে তা হবে খুবই ভয়াবহ। তবে আপনি যদি এটাকে সমাজে প্রোথিত একটি সমস্যা বলে বুঝতে পারেন যা কেবল উপস্থাপন করা হয়েছে তাহলে ‘ব্যাড গাই’কে ঘৃণা করতে পারবেন না।   

হামেল : ‘ব্যাড গাই’ কোরিয়ায় আপনার সবচেয়ে সাফল্য পাওয়া সিনেমা। অর্থনৈতিক সাফল্যকে আপনি কী শৈল্পিক ব্যর্থতা বলে মনে করেন?

কিম : আসলে এই সাফল্য মূল চরিত্রে অভিনয়কারী চো যে-হ্যানের জন্য, সম্প্রতি একটা টিভি সিরিজে অভিনয় করে সে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তাই এর দায় পুরোপুরি আমার নয়।

শেয়ার