নতুন কবিতার সন্ধানে | সাফা প্রামাণিক

চব্বিশে ডিসেম্বর ৷ দশই পৌষ ৷ দুই হাজার তিন ৷ রোজ বুধবার ৷

 

ডিসেম্বর মাসপিতা 

তোমাকে মনে পড়ে বন্ধুর কবিতায়

 

কবিতায় আর কতটুকু লিখবো 

তোমাকে?

 

তোমার কবরের একমাত্র চিহ্ন যে গাছ,

আমাকে তার রঙ বলে দিয়ো

 

মৃত্যুসংবাদ কেমন বিহ্বল হয়ে ভেসেছে জোহরের নামাযে

আহা! 

মৃত্যু কেমন কঠিন ঠাণ্ডা বাতাস! আমি খালি সারাদিন হাঁটলাম শালবনের ভিতর

উদলা গতরে

 

ফরজের সেজদায় কেমন করেছে তোমার বুক

আমাকে বলো নাই! 

 

মা শুকাতে দিলো শাড়ি

বিধবা নারীর কান্নার মত কী দীর্ঘ গোসল করেছে মা! 

 

আহা! 

এই ঢ়োড়া দুনিয়া আমাকে কোলে নিয়ে বিলাপ করেছে , মায়ের আত্মার মত

 

পায়া কুন্দানো চৌকিতুমি শুয়েছিলা 

আগরবাতির ঘ্রাণতুমি শুয়েছিলা 

উঠানে

 

পিতা! 

তুমি কোনো আহাযারি শোনো না, কসম

 

রুহগুলা কোথায় চলে যায় যে! 

 

আমার আর কিছুই মনে নাই পিতা, খালি ভেঙে গেছে তোমাদের বাসরের খাট 

যেখানে শুয়ে মা স্বপ্ন দেখেছে 

তোমার পিতাদের

 

কী দুঃসহ শৈশব আমার নির্জন বেদনায় ঘন হয়ে আছে

 

 

ক্লিমেটিসমৌসুম 

 

কেমন করে হাসবে আমার দুই চোখ! আহা 

ত্বকের কাছে উজ্জ্বল হবে আনারের দানা 

 

উঠানে তোমার ছায়া, আমাকে মনে করাবে 

প্রথম দিনের কথা

 

তোমার চুলের ভিতর আমি পুরানা রোদের ঘ্রাণ চাই 

 

মোনাজাতের বিলাপে জুলজুল 

ওড়নার  ফুল

আর গাঢ় হয়েছে স্বরের ভিতর

 যখমের সুর

 

 কত সুখ আমার আত্মাকে দিলে

ওগো মৌসুম! আহা! 

আমি কোনো অন্ধকার কবিতা লিখতে পারি না 

সবখানে ফুটে থেকেছে ক্লিমেটিস

 

সবখানে মৌ মৌ !

 

তোমাকে পাবার পর হরিণীর চোখ হবে আমার 

আর তিলের ভিতর ফুটবে ক্লিমেটিস ৷ 

 

 

সুরের কুমকুম

 

এখানের বাতাস ফিদা হয়েছিলো

তোমার ঘ্রাণে

আমাকে দিয়েছে দিশা তোমার সফরের সৌরভ

 

কেমন নরম হবে বলো রোদ আমাদের দেখা হবার দিনে?

 সুর থেকে সুরে খালি সন্তরণ; তবু আমি মনে রাখতে পারি না লিরিক 

 

তবু, দুনিয়ারও কারো কারো তুবা

 গাছ থাকে আমি থাকছি যেমন তোমার 

 

আমাকে চাইতে বলো কতকিছু!

কুমকুমদানি আর রঙের তুলি 

আরো কিছু রুশ অনুবাদ, তুমি ভুলে গেলে তবু বলি থাক ওসব এবার

 

শুধু ভেঙেচুরে তোমাকে দিয়ো 

 আমার পাজরের ওপরঅন্ধকার ওমে 

 

তোমার পাঞ্জাবির রঙ যেনো ধুতে গিয়ে লেগে থাকে আমার নখে

কত পারুলের গুনগুন আমার রুহের ভিতর তোমার কথা বলেছে ! 

সারাদিন সারারাত ভরে কি সুর শোনাবো তোমাকে আমি

 

রেশমের বনে ডুবে আমরা দুজন 

হবো দেখো আরশের শাদা ফুল ৷ 

 

 

পারুল ঘ্রাণ হয়ে ফোটো 

 

কী এক অবোলা-আনন্দের ভিতর বুড়া হইতেছি! আহা 

আশা ফুরাইলে মানুষ কি খায় জানো?

তোমার শেকায়েদের ভিতর সমস্ত রাত  আমারপারুল ঘ্রাণ হয়ে ফোটো

 

তোমাকে ছুঁই নাই বহুদিন এই বোধে আঙুল হয়েছে কৃশা 

 

কবিতা না হয়ে জ্বর হয় এই ডিসেম্বর মাসে 

 

আমাদের কোনো স্মৃতিই আর পড়ে থাকলো না ক্যালেণ্ডুলা গাছটার নিচে

যে ছায়ার ভিতর আমার নিকাবের ঘাম শুকায়েছে

 

অথচ

দুপুরের রিকশায় করে কিভাবে মানুষ জান্নাতের দিকে যায় আমরা জানতাম!

 

দেখা না হলে পরে বুকের ভিতর সেই ঘরভাঙা আওয়াজ

তুমি শুনতে একদিন ৷ 

 

 

মনস্তাত্বিক হাওয়া 

 

কত পারুলের নিসর্গ ভেঙে এ বাড়ির পথ

কত সৌরভ জুলজুল করে পথে! 

 

কোথাও বেড়াতে গেলে আমি সুন্দরতা ছাড়া আর কোনো সম্বোধনের কাছে সহজ হতে পারি না বোধহয়

 

এমন মনস্তাত্বিক হাওয়ায় দুলেছে গমের ক্ষেত!

তোমাকে মনে করা ছাড়া কোনো উপায় কি ছিলো মনা

 

উঠানে ছড়ানো ছিলো ঘ্রাণের বাসমতী

তুমি চলে গেছো কতদিন

আহা! আমাকে করে এতিম! 

 

পুরাটা শীতকাল চলে যাবে তোমার জামার রঙ ধুতে ধুতে,

নবগঙ্গা শুকায়ে যাবে , বোধহয় দেখা হবে না ৷ 

 

আমার গালের রঙ দ্যাখো ফুটে আছে তোমার ঠোঁটে, নাকের ডগায় তো কোনো ওম ছিলো না! 

বিয়ের মৌসুম আসার পরও যাদের আত্মা থেকে কোনো বাহারি ফুলের সৌরভ আসে না, তারা বন্ধ্যা ৷ 

শেয়ার