৪১
আজও জানি না, কোন রঙ বেশি ভালো লাগে! তোমার নামের শব্দ শুনেছি কিছু। হেঁটে হেঁটে আজ এমন সন্ধ্যা পেয়েছি যেখানে তোমাকে ছোঁয়ার উপলক্ষ্য আছে! বাসি রোদ পড়ে গেছে, জানালার পর্দা উঠানো ছাড়াই ! আমার কোনো মলিনতা কাটে না, শুধু বাতাসে তারার হলুদ আলো উড়ে যায়!
কত যে তোমাকে দেখার থাকে, হারানোর ভয় থেকে আলো জ্বেলে রাখি সারারাত!
তোমাকে মনে হয়, বাড়ি যাওয়ার মতো প্রিয় শীতকাল—নাম ধরে ডাকলে বহুকাল রেশ থেকে যাবে!
৪৪
তোমাকে ছোঁবো ভেবে আঙুলের ডগায় বসে হৃদয় কাঁপতেছে
৪৫
সাঁতার জানি না৷ তোমার ভেতর তড়পাতে গিয়ে বুঝি কিভাবে নদীর নাম জাদুকাটা হলো৷ তবু জটিল কথা আমি বলতে চাই না কিছু৷ আমার জীবন এখনো পালং শাকের মতো সহজ। সবুজ।
তোমাকে বুঝতে পারি নোনতা স্বাদের চেয়ে দ্রুত।
কি এমন ঘটে প্রতিদিন, তোমার জন্য লিখে যেতে পারি। ভাতের মাড় গালতে পারি সহজেই। অনেক শব্দের মাঝেও তোমার ফিরে আসা স্পষ্ট বোঝা যায়। তোমাকে দেখাতে পারি সাধ। টিনের ঘর, শীতের চুলার পাশে খয়েরি উশুম৷
আমি অনেকটা জীবন হতে চেয়েছি মুদি দোকানদার। যেন গোপন দুপুরে উত্তরের বাতাস আসবে, ছোট্ট মেয়েটার হাতে তুলে দেব সল্টেস বিস্কুট আর চার আনার বলাকা চকলেট৷ রাজমিস্ত্রির হাতে দেখেছি কি সুন্দর তালি লেগে যাচ্ছে যোগাযোগ।
তোমাকে ছুঁতে চাই বিয়ে—ভাঙা বিরহের থেকে বেশি
গান না পারলেও চুপচাপ ঘুম এসে যাবে
সমুদ্রে যাব না—তবু আমরা পাশাপাশি হাঁটলে কেউ কেউ ঢেউয়ের গর্জন শুনতে পাবে৷
৪৬
ভোর হলে হেঁটে হেঁটে চলে যাবো পূবপাড়ায়৷ শীত এখনো খুব গাঢ় হয় নি। ধোঁয়া ওঠা পুকুরের পাশ দিয়ে, বড় মসজিদ ধরে আমরা নেমে যাবো ধান কাটা মাঠে৷
সরিষা আর আলুখেতের আইলে বসে মনে হবে, বয়স বেড়ে যাচ্ছে—এইটুকু ইঙ্গিত তোমাকে দিতে পারি।
তারপর, প্রতিটা সফর শেষে তোমার উজ্জ্বলতা চোখে পড়ে। যেভাবে ডেকে ওঠো, মনে হয় একটা শিশিরের ফোটা সরিষার ফুলে ভেঙে যাচ্ছে আর বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে হলুদ ঘ্রাণ!
কোনো রাতই আকাঙ্ক্ষার সমান দীর্ঘ হয় না। তবু আমরা খুঁটে খুঁটে ভুলে যাওয়া গানগুলো আলাদা করি। তোমাকে বলি, কাঁথাফোঁড়ের মতো সহজ, ঘন হও। বয়স বেড়ে যাচ্ছে।
আমাদের একেকটা রাত খুব আলাদা ভঙ্গিতে ভোর হয়েছে। আর প্রতি ওয়াক্তে মখমল হয়েছে তোমার প্রভাব—
শীতের রোদে চেয়ে থাকা ফাটা ঠোঁটের মতোন
৪৭
আমাকে ঘুরে ঘুরে পাহাড় দেখাবে তুমি। ছোট ছোট পাথর, তার পাশে পড়ে আছে মৃদু রেণু। আমাকে হাত ধরে নিয়ে যাবে ছোট এক টিলার কাছে৷ শাদা কুর্চি বাতাস, চারপাশে নাদান কোনো সুর বয়ে যাচ্ছে৷
একটা কুসুম সকালে তোমাকে নিয়ে হাঁটবো, এই সাধ জীবনের কাছে৷ আড়া জুড়ে কত পুরানা বাঁশ পাতা, কুশারের খেতে বাসন্তী রোদ লেগে আছে৷ সব কথা রোদ পোহানোর ছলে চুপ হয়ে গেছে, শুধু ঠোঁটে শিরশির কেঁপে উঠছে কাশ্মিরি রাতের স্মৃতি—
আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে একদিন নিয়ে যাবে র্যানকিন স্ট্রিট। যেখানে তুর্কি বাতাস এসে থেমে যায় নারিন্দা বালিকা স্কুলে। আমাকে সারা সন্ধ্যা দেখাবে ফেনা ওঠা ঢেউ। আমাদের ভিজবে না কিছুই, তবু পথ জুড়ে খুব ঠান্ডা লেগে যাবে৷
একেকটা দিন টিকিট কাটা আনন্দ হবে আমাদের৷ ক্যালেন্ডার উল্টালে শুনতে পাব সফরের গান৷ পর্দা মেলে দেবো৷ তোমাকে নিয়ে যাব ভুলো লাগা জঙ্গলে। কোনো শব্দ ছাড়াই হঠাৎ একটা কাঠবেলি ফুটে উঠবে, আচমকা একসাথে মনে পড়ে যাবে আমাদের মেয়েটার নাম—