নতুন কবিতার সন্ধানে | রাবিয়া সাহিন ফুল্লরা

শীতের বরই

  

কখন কোন্ কবিতা যে লেগে যায় মনে

আর তখনই হয়ত শীত আর সমস্ত জরা ছেড়ে

চেনা সেই পথে আরেকবার হেঁটে আসি।

শীতের বরই কুড়াই ধুমপাড়ার রাস্তায়।

দুপুরের মরারোদ গায়ে দিয়ে

কোথায় যেতে পারে ভাই

অহেতুক খুঁজে বের করি।

ভিডিও গেইমের বাক্সে

কয়েনের মত খরচ হতে থাকি।

কাঠগড়ের পাগলগুলারে দেখি,

ভাবি, এরা পাগল নাকি পথহারা?

হাঁটতে হাঁটতে কখনো পতেঙ্গা বীচে

বালুর উপরে নাকছবি আঁকি।

পাশাপাশি কত নাম যে লেখি..

কখন কার সাথে খেলেছিলাম কবে

তাদের ঘরে একবার উঁকি দিয়ে আসি।

শুকনা পাতা মচমচায়ে হাঁটি…

হাফছার ভাতঘুম কবে শেষ হবে?

আশিনের খেরের উপর গড়াগড়ি দিয়ে

সন্দ্বীপের কিচ্ছা শুনাব তারে!

ততক্ষণ শীতের বরই খাই।

টকটক শীতের বরই…

 

 

যাত্রা

 

মানুষের করা নিয়ম হিসেবে যা কিছু ফিক্সড

এমন আঁটোশাঁটো যেন পোশাক ফেটে বের হতে চায় আত্মা!

এইসব ফিক্সড যা কিছু, যদিও সবাই একমত না কখনো;

একেকের চোখে একেকরকম দেখাদেরকে

চুরমাচুর না করে বরং টপকে টপকে যাই আমি।

যেখানে প্রকৃতই ফিক্সড কিছু আছে

যার জন্য অস্থির হয়ে থাকি নামাজে…

 

 খুয়ানোর ইচ্ছা আমার ছিল না কোনদিন

খোয়ানোর ইচ্ছাও তেমনি;

তবুও কতবার যে নিয়তির লগ ধরে ধরে…

প্রথম স্কুল খুয়ানো আমার আব্বুর সাইকেলে চড়ে!

 

অভিযোগ  জানাবো কাকে?

নাকফুল নিজেই যখন ব্যথা হয় নাকে!

 

মক্তব খুয়ানোর মতন শীত

আমারও তো লেগেছে কোন কোনদিন;

তবু আমপারা নিয়ে

কোণাইন্না রাস্তায়

আগে আগে খোয়ায় হয়ে গেছি লীন;

মক্তবের পিছনে এখনো কি আমলকি কুড়ায় নওশীন?

 

 

নীল নীল ফুল

 

নন্দীরগোলার ঐপাড়ে

ছাড়াবাড়ির মতন ঝিমঝিম বারান্দার বাতাসে

কে যেন চুল মেলে বসে আছে!

খঞ্জনা এসে রোজ খেয়ে যায় তাদের খোয়ায়ভেজা উঠানের পোকা।

তবু এতসব কেন যে মনে পড়ে!

কাঁচারাস্তার মতন ফ্যানফিন্যা গোস্সায়—

কত কত দিন

টি টি টিই করে ডাকতে থাকা মাগরিবে

মনে হতো, ডিমপাড়া হাঁস নয়, বাড়ি ফিরবে ভাই!

বাড়ি ছেড়ে ভাইটা যেপথ দিয়ে গেছে

সেপথের খের হয়েই যেন ঘুরতাম সাইকেলে।

 

বিপাশাদের চাইতেও বেশি বাঁশি শুনতাম ঘরে বসে

শুধু তারা পূর্বে রয়ে গেছে আর আমি পশ্চিমমুখি…

 

শীতের রাতে কীত্তনের বাঁশি শুনলে এখনো

সিদ্বেশ্বরী গোলা হয়ে খাঁ খাঁ করি; যেন

চিতাখোলার নিরবতা নিয়ে ধূঁয়া হয়ে আছে

খেসারীর ক্ষেতে নীল নীল ফুল….

 

 

কলাপাতার মতন লম্বা সকালে

 

একটা গান ছাড়া তুমি আর কী পারো দিতে?

একটা গান—

যেখানে ইতস্তত চুমুরা

সুরভিত মনে একজিমা ছড়ায় আমাদের গালে..

 

দিনগুলা এমন খুদকুড়ার মতন যে—

আমাদের মোতায়েজ করেই চলা লাগে রুটিনভর।

 

তুয়ানে বাবুই পাখির বাসার মতন

দুলতে থাকা মনে

সিলসিলা ছাড়াই

একটার পর একটা পাতা তখনও

উড়ে যাইতে থাকে তোমার টানে।

 

যদিও একটা বন্ধ সিমেই

যেন বারবার কল দিতেছি আমরা—

 

যেন একটা নারকেল গাছ

চোখের পানি বুকে নিয়ে দাঁড়ায়ে আছে—

 

চুলায় পাতিল চড়ায়ে দিনের পর দিন

যারা রানতেছে ক্ষুধা, তাদের—

চড়ুইয়ের ঝাঁকের ভিতর যে কথা হারায়ে গেছে

সে কথা আর বলা হবে না।

তাও লাগে যে, যা কিছু উহ্য ছিল এতদিন

গাছের পাতার মতন উলতে থাকবে একে একে।

 

কোন বিমর্ষ সকালে অফিসগামি মুখগুলা

দেখতে থাকব কলাপাতার ফাঁকে।

আঞ্চলিকতার মতন ফুরফুরে হাওয়ায়

আগের রাতের নকশা আরো বেশি মনে পড়বে।

 

কোথাও কোন প্রজাপতি

কিংবা মৌমাছি না থাকলেও

ঘন জঙ্গলের সবুজমায়ায়

কেবল একগুচ্ছ ফুল

সাদা রঙের শুচিতা মেখে

দুলতে থাকবে হাওয়ায়।

 

কোথাও বাসি তেলে ভাজা হবে পরোটা,

নুডলসের বাটিতে ঝিমাবে মাছি।

হঠাৎ মৃত্যুর খবরে ভাত পড়ে যাবে

বেসিনে—কাটা কাটা সবজির মতন

টুকরা কথারা সিদ্ধ হবে ভাঁপে!

শোকের বাতাসে

এমন—মৌ মৌ ঘ্রাণে

সরিষার তেলে উপচানো ফেনার মতন

তোমার সকালের ঘুম আরো উম পেলে

মাছের কাঁটার মতন বজায় রাখব দরকারি দূরত্ব।

 

আর কলাপাতার মতন এমন লম্বা সকাল

জানলা ধরে বসে থাকতে থাকতেই হয়ত শেষ করে ফেলব আমি। বিষ্টি পড়তে পড়তে হয়ত

রুটির হিসাবের ভিতরেই বদলে যাবে পরিচয়।

 

যেখানেই যাই মাছিদের উৎপাত আমাকে স্মরণ করাবে গলিত স্মৃতিগন্ধার কথা।

 

কোন ফুলের পতন কিংবা রঙ

এতটাই বিষণ্ন করবে আমাকে

হয়ত লিখতে পারব মনে ধরার মতন একটা কবিতা।

নিজের খুশিটুকু কবিতায় ফুটাতে চাইব! অথচ লিপিস্টিকমাখা ঠোঁটের মতন

অপরিচিত লাগার ভয়ে

এইসব খুশিও শাড়ির কুচিতে লুকায়ে হাঁটব— কল্পনায়

ঘুম ঘুম চোখে যেন কবিতারা ঘুমায়ে থাকবে আমার কোলে।

কলাপাতায় বিষ্টি পড়ার মতন মায়া নিয়ে—সারাদিন এমন এম্বুল্যান্সের শব্দ শুনব

যেন আসমান চোখে কানতেছে কোন ভাইহারা বোন…

 

 

করাতকল

তুমি কাছে থাকলে মনে হয়,

মেহগনিবনে পাতা ঝরতেছে!

যেন পাতারা আরো কাছে চায় বলে

এক দুই তিন করে ঝরতেছে সুফি গানের তালে।

 

কখনো বা

মসজিদের বারান্দায়

নিরালে যেন কোরান পড়তেছি;

ভাবালুতায়

সমস্ত শীতলতা ভর করলে পায়ের পাতায়—

আঙুলে আঙুলে শিশিরে নুয়েপড়া ঘাসের মতন জড়তা নিয়ে

কোথায় যে খুঁজি এমন পথ—

কথা ছিল হাঁটবো,

চোখ বুঁজে সেখানেই—

অথচ যেন খোর্মার দেশে একা ঘুরতেছি মরুচারী;

যেন মাটির পুতুল হয়ে মেলায় বসে আছি;

এত মানুষ চারপাশে—

তবু লাগে যে, বরফের পাহাড়—

 

আশ্বিনের হাওয়া যেন আমাদের ভিতর

গাইতেছে কীত্তন, কেউ কারোটা শুনি না;

সারারাত করাতকলে কাটতে থাকি মাথা।

শেয়ার