ঘুমাবো
বাতাসও আঠালো যেই ঘ্রাণে
তাকে উপেক্ষা করে আমি এক ল্যাম্পপোস্ট
হলুদ চোখে বহুদিন হলো জেগে আছি।
মাটিতে প্রকাণ্ড কোনো বটের কামড়ের মতো
আমার ভিতর বিঁধে আছে ভয়__
তোমাকে হারাবার ভয়, পাবার।
তোমার নরম বিছানা থেকে এখন ঘুমের সুবাস; কিন্তু
প্রশ্নাপ্লুত আমার চোখের দিকে
ধেয়ে আসছে পিরামিডসমান নিরবতা!
কখনো,
প্রতিশ্রুতির মতোই যদি ভেঙে পড়ে
এই দৃ শ্য প ট :
ঘুমাবো।
তোমার চোখের রাতে একটু ঘুমাবো।
এই শীতরাতে
ভাদ্রের অনেক পরে, এই শীতরাতে
সঙ্গিনীর ডাক শুনে উন্মাদ হলো যেই পুরুষকুকুর
যথার্থ প্রেমিক সে, যেহেতু সঙ্গম ছাড়া
অন্য কোনো প্রেম থাকে না কুকুরজীবনে।
এরকম সহজ নিয়ম মানুষের নেই ব’লে
এই শীতরাতে,
যখন কালপুরুষ তার তীর ধনুক নিয়ে উড়ে গেছে
অনেক পশ্চিমে, কুয়াশার আবরণ সরিয়ে, আমাকে
উপলব্ধি করতে হলো এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বের বিজয়:
যাকে কখনো পাওয়া যায় না, তাকে আজ হারানোর ভয়।
এপ্রিলের কবিতা
তোমার বুকের বৈভব নতজানু হবে তার
আলিঙ্গনের কাছে। তোমাদের মিলিত হৃৎস্পন্দনে
রচিত হবে সুন্দরতম সঙ্গীত।
যদি সে সুরের সুরায় ডুবে যেতে যেতে
চকিতে আমার মুখ ভেসে ওঠে চোখে: তালভঙ্গ হবে,
ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে সমূহ তরঙ্গ, আর
ঠোঁট ভারী হয়ে আসবে চুমু খাওয়ার কালে।
ভুলে যাওয়া প্রয়োজন তাই। পেন্সিলের গাঢ় স্মৃতির সবটুকু
সহসাই মুছে ফেলতে পারে না ইরেজার।
সময়কে সময় দাও, ভুলে যাওয়ার জন্য
কাগজেরও কিছুটা সময় দরকার।
তারপর প্রেমিকের বসন্ত-আলিঙ্গনে
প্রস্ফুটিত হও, কৃষ্ণচূড়ার মতো মেলে দাও লাল ফুল
দাও তাকে নির্বিঘ্ন চুমু; যদিও সে
বঞ্চিতই থেকে যাবে, গোপনে, গহীনে_
তোমাকে না-পাওয়ার দুঃখ যার বুকে জোটেনি,
তোমাকে পাওয়ার সুগভীর আনন্দ তার জন্যে নয়।
এক লাফে একদিন
রোজ রোজ এতগুলো সিড়ি না মাড়িয়ে
এক লাফে একদিন নীচে নেমে যাওয়া যায়।
কিন্তু তার আগে কিছু হিসাব-নিকাশ প্রয়োজন।
কুৎসিত কীটের মতো আমার এ জীবনে লুকিয়ে
আছে কিনা কোনো প্রজাপতির উন্মেষ।
কিংবা কারো প্রেম-ভালোবাসার ছুতোয়
থেকে যাওয়া যায় কিনা আরো কিছুদিন।
কিছুই না পাই যদি, যেমন পাইনি খুঁজে এতকাল
এক লাফে একদিন নীচে নেমে যাওয়া যায়
মাথা উঁচু করে।
বিশেষত রাত যখন বারোটা পঞ্চাশ
তোমাকে প্রায়শই মনে পড়ে। বিশেষত রাত যখন
বারোটা পঞ্চাশ। যে বিষাদ সূর্যাস্তে__
চুপচাপ সুস্থির বিদায়ে, তারই
ভায়োলিন বাজতে থাকে বুকে।
শান্তির পতাকার পেছনেই যেমন রচিত হতে থাকে
যুদ্ধবিমানের উড়াল, আমি দেখেছি__
দৃশ্যত সহজ কোনো প্রেমের গহীনে
কী তীব্র অগ্নুৎপাত এতদিন গুটি বেঁধে ছিলো!
দহনের মুদ্রা তুলে যা এখন নাচছে নিরত__
দেখো, সে আগুনকে নবি ইব্রাহিমের মতো আমি
উষ্ণতার উৎস বানাবো একদিন।
বিষ্মৃতির ওম নিয়ে সারারাত ঘুমাবো নিঃশব্দে।
ঘড়ির কাঁটা
কখন পেরিয়ে যাবে বারোটা পঞ্চাশ।