কক্সবাজার
সমুদ্র ছাড়াও অন্য আরো এক আত্মীয়তায় তোমাকে মনে পড়ে
আমি তোমার গলিঘুপচিতে ছড়িয়ে থাকা পুরানা হোটেলগুলার নিঃসঙ্গতা অনুভব করি
এখনো আমার ব্যাগের শূন্যতাভর্তি শামুক আর বাদাম
তোমার বাতাস পেলে আরো দীর্ঘ করতে ইচ্ছা করে চুল
সাগরের চর ধরে ছাড়া অশ্বের মতো লাগাতার হাঁটতে ইচ্ছা করে
লম্বা জার্নি শেষে কোনো ক্লান্তি ছাড়াই দৌড় মারি কলাতলির দিকে
আমার জুতাগুলা ভরে যেতে দিই বালুতে বালুতে
তারপর হয়তো ঘুমিয়ে পড়ি ঢেউয়ের ভিতর, আমার আর কিছুই মনে থাকে না
তোমার কাছাকাছি এলেই, বাস এত দ্রুত টান দেয় যে মনে হয় সাগরে গিয়ে পড়বে
আমার চোখ আরো কিছু লবণ জমিয়ে নেয়, বুক জমিয়ে নেয় শ্বাস
যখন জোয়ার আসে, ফেনাগুলা হাঁসের মতো চরে পা ফেলে
এবং পাথরগুলা ডুবে যায় স্থৈর্য বজায় রেখে
তুমি যেনো সবসময়ই গোসল করে আছো, সবসময় ভিজছো বৃষ্টিতে
প্রথম সন্তানের ভ্রুণ যখন আমার বোনের মাতৃগর্ভে ফুলে উঠবে
তোমার সামুদ্রিক তাপমাত্রা যেনো তাতে ওম দেয়
আমি সমুদ্রসম্পর্কিত যেকোনো কবিতাই শুঁকি, তোমার ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে
তুমি ঝাউবনের পিছনে লুকিয়ে ছিলে
আমার পূর্বপুরুষেরাই হরিণ শিকারে গিয়ে তোমাকে পেয়েছে
আমিও তাদের মতো, মগরাজার সুন্দরী কন্যার চেয়ে তোমাকে বেশি ভালোবাসি
ইতিহাস
যখন অর্থহীনতা ছড়িয়ে পড়ে,
বৃষ্টির ভিতর একটা সামুদ্রিক দ্বীপের ঘ্রাণ আমাকে টানে
প্রতিদিন একেকটা সিনেমা দেখে শেষ করি
যেনো তোমাকে দেখার কথা ভুলে থাকা যায়
আমার হঠাৎই বেড়ে গেছে বয়স
আব্বুর সাথে মিছিলে দেখা হবার সুযোগে
স্বৈরাচারের গোপন নজর থেকে
আমি তোমার সমস্ত ছবি লুকিয়ে রেখেছি
তোমার গলার নরম রগগুলা ফুলে উঠছে কান্নায়
যেভাবে বন্দরের কাছাকাছি জাহাজ ছড়িয়ে থাকে
তোমার পূর্বপুরুষও কি এই নগরে বাণিজ্য করতে এসেছে একদিন?
এখানকার আকাশ ছেয়ে গিয়েছিলো আরব্য বণিকদের রুমালে
আমার অনুভবের ভিতর তাদের ফর্সা ত্বক,
পর্তুগিজ জলদস্যুদের নিজস্ব ভাষা
আর ব্রিটিশদের প্রথম নোঙরধ্বনি
আমরা আরো এক জলদস্যুর কবলে পড়েছি
এগিয়ে যাচ্ছি আরো দীর্ঘ উপনিবেশ বেয়ে
তোমাকে পাবার পথে আজ দুইশ বছরেরও অধিক দূরত্ব
আমি জাহাজ নির্মাণের উপকূল পেরিয়ে,
সীতাকুণ্ডের পুরানা মন্দিরগুলাকে চিহ্ন রেখে,
ঘোড়ার উপর ঘুমিয়ে পড়া শত শত সৈন্যদের স্মৃতির পাশ ঘেষে
হেটে চলেছি তোমার দিকে
তোমাদের গ্রাম যেনো অন্য এক শাসকের দেশ
এসো শীতকাল
এসো প্রিয় ঋতু নুয়ে থাকা ভীতু
পাতাদের দেহে
শিশিরের নদী ঢেলে দিয়ে কাঁদি
মরা সন্দেহে
এসো প্রিয় নারী করে গাল ভারি
কোলে নিয়ে ব্যথা
এই সাদা ত্বকে লেপো থকথকে
অবসন্নতা
এসো কুয়াশার হাই তোলা মাড়
জানালার কাচে
গোধূলির হুলে চাঁদটা’ই ফুলে
লাল হয়ে আছে
এসো শীতকাল খোয়া খেয়ে টাল
হওয়া আজ বাকি
শাল ধুতে দিয়ে ফাটা ঠোঁট নিয়ে
একা বসে থাকি
সাফা প্রামাণিক
কি আর সাগরে থাকা তোমার দিকেই বাঁকা
হয়ে আছে মন
দেখেছি শামুক খুলে তোমার চোখ আর চুলে
ভরা তার ধন।
নিজেকে ঢেউয়ের শব করে মৃত-অনুভব
মুখে তুলে ফেনা
কি লাল অস্ত-পার তবুও ফটোগ্রাফার
ছবি তুলছেনা।
আর্দ্র হয়ে ঘোরে তোমার না থাকা জুড়ে
বালির লিরিক
হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে সাগরে যে ফুল ফোটে :
সাফা প্রামাণিক।
সাফাকে
তোমার ভিতর কোনো একটা চিঠির গাছ আছে
ও সাফা, ও সাফা, জড়াও অক্টোপাসে
কথা বলতে যাবোই এবার ক্লাসমেটের মেসে
এই শীতে কি সে উদ্ভিদের পাতা ঝরে গেসে?
এখন আমি পরীক্ষাতে, চিঠি লিখবো নাকো
ও সাফা, ও সাফা, চড়বা নাকি সাঁকো?
নাহুর পড়া ছেড়ে দিয়ে তোমার সাথে যাবো
খিদা লাগলে জন্ডিসে ওই হলুদ আলো খাবো
হলুদ আলো ল্যাম্পপোস্টের, হলুদ আলো চাঁদের
সেই কবিতা লাগলে ভালো লিখবো নাকি ফের?
চিঠির ভিতর কেমন একটা পাখির বাসা আছে
এই চিঠিটা রাখতে দিবো তৃতদাদার কাছে
ও সাফা, ও সাফা, পত্র ফোটার কলি
আম্মু বলেন চিঠি পড়ে, বৌমা নাকি, অলি?