সমুদ্রের কাছে
গ্লাস হাতে
চাপকলের কাছে গিয়া পুকুরের গল্প বলি
এক গ্লাস পানি চাইতে সে
নদীর কাছে গেলে বলে সমুদ্রে কথা।
জানি
ঝর্নাকে যে দেখায় পথ
নদীর জন্মদাতা অথবা দাত্রী— সে পাহাড়
সে’ও এ ব্যাপারে একমত
নদীর শেষ আশ্রয় সমুদ্র
গ্লাস হাতে, কল হাতে, পুকুর আর নদীরে নিয়া সবাই
আমরা সমুদ্রের কাছেই যাই;
জানি, সেই সমুদ্রেরও শেষ আছে কোথাও না কোথাও
কোনো শেষ আশ্রয় নাই।
যেনো তোমার জীবনে ঘটি নাই কভু
হঠাৎ মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া কথার মতোন আমি
কথাটা তোমারই
অথচ আদৌ-ও তুমি তা বলতে চাও নাই
আর আমি তোমার পরিচয় নিয়ে এর কানে ওর কানে
ঘুরে বেড়াচ্ছি মুখে মুখে।
কথা যতো রটে পাল্টায় ততো
আমিও পালটে যাচ্ছি—
বিভিন্ন অর্থ হচ্ছি—
ভাঙছি—
ঢুকে পড়ছি মানুষের চর্চার ভিতরে।
তাতে তুমি কিছুটা বিব্রত
বিরক্ত অনেকটাই
কপালের পেশিতে বাড়তি চাপ পড়ছে
ফলতঃ ভ্রু দুইটার দূরত্ব কমে যাচ্ছে
একটা মৃতপ্রায় নদীর পাড়ের মতোন।
তুমি ভাবতেছো
মানুষ জীবনে কতো সিলি সিলি ভুল করে
মাশুল দেয়ার মতোন বোঝাতে হয়
আরে ধুরর এটা তো একটা বোকামি ছিলো
বোকা মানুষ যে কীসব বলে ফেলে বেখেয়ালে।
মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া কথার মতোন আমি
তোমার বেখেয়ালে থেকে যাচ্ছি, তোমারই হয়ে
অথচ তুমি কেবলই খেয়াল ফিরে পেতে চাও যারপরনাই
ভাবতে চাও এরকম কিছু বলো নাই
যেনো আমি একটা ভুল
সজ্ঞানে তোমার জীবনে ঘটি নাই কভু।
ভাষা
বাঘ বিষয়ে বানরের হরিণকে হুঁশিয়ারি দেয়া
একটা পাখির সঙ্গে আরেকটা পাখির মনের
ভাব আদান এবং প্রদান, প্রেম, ভালোবাসা
বিরহ, বিচ্ছেদ, গান। কুকুরীর সঙ্গে কুকুরের
উঠা-বসা, শোয়া। মৌমাছির কাছাকাছি
মহুয়ার ফোটা। পিপড়াদের সারিবদ্ধ ছোটা।
হাঙর বিষয়ে যূথবদ্ধ মাছসহ কাসিমের দলের
পারস্পরিক সতর্কতা, সমঝোতা, চালাকি
আর সন্দেহ; যে যার মতো ঘটে গেলো
সর্পের সাথে প্যাঁচ খেয়ে লুব্ধ হলো সর্পিণীর দেহ
তবুও উহারা, কভু বাংলাকে চুদিলো না কেহ।
প্লেটোনিক সংলাপ থেকে ক্রমাগত জন্মাইছিলাম আমি
আমি এখন যেকোনোভাবেই কেবল বরখেলাপ হয়ে যাই
ভালোবাসার সাক্যুলেন্টে হালকা তালে পানি দেয়ার
আরামদায়ক দিনগুলি আমার শেষ হইলো
আপাতত সারাবছরই মনে হয় মাসের শেষ পাঁচদিন
এমন দমফুটা দমফুটা লাগে
২৮ তারিখ ৫০০ টাকা হারায়ে ফেলার মতোন যাতনায় আমি যাপন করি
আমার মন, পলায়নপরায়ণা সে
প্লেটোনিক সংলাপ থেকে ক্রমাগত জন্মাইছিলাম আমি
যেখানে আমার পুর্বপুরুষেরা ছিলেন সেইলর্স অব ফেইলিওর
তারা বাণিজ্য করতে গেছিল তোমার দেশে
সেগুন কাঠের বাণিজ্যতরী তীরে ভিড়বার আগেই ডুবে গেছে যাদের
তাদের পরম্পরা ধরে আমি এখনও হাবুডুবু খেয়ে যাচ্ছি
ধরো যেতে চাই খুলনা, ধরো শেরপুর অথবা পারতপক্ষে চাঁদপুর হলেও
কুমিল্লা তো আমি যাবোই না
সেখানে তোমার মুখ ও বাতেনি অবয়ব নিয়ে আমার আম্মা মাতৃত্বের বিতৃষ্ণা জপে
আম্মার লিবিডো সেখানের বাতাসে হাসে আর
অসহায় নির্জাস রটায়ে মরাকান্নার মজমা করে ধুধু গঁজাইরায়
রাতগুলির ক্রাইসিস থেকে জন্মানো সকালের উঠানে
রোদের পাশাপাশি আমরাও কিন্তু ব্যাপক গলে পড়েছি
অনিয়মিত রাতের কিছু পরে শুনেছি পরীদের অবাস্তব উড়াউড়ির নাগমা
আমার গ্রামটা ছিলো ফিকশনাল
তাই এই গ্রাম ছেড়ে পরীরা কোনোদিন
তোমার বাস্তবিক শহরের আকাশে ডানা বাড়াইলো না
আম্মা চুলায় গুচ্ছ গুচ্ছ খড়-বিচালি গুঁজে দিতে থাকলে
আগুনের দেহে যৌবন এসেছিলো ভরা
একই দৃশ্যে দূর থেকে অজস্র পুড়ে গেছি আমি
আম্মাকে বলতে পারি না আমার সমগ্র সম্ভাবনা নিয়ে
তুমি দিন তারিখ বিনা এক ভোরের চারটার কুয়াশায় অদৃশ্য হয়েছো
আম্মা তুমি আগুন নিয়া খেইলো না আর
আমাদের ভুখ আমরা কবর দিয়া আসবো
আব্বার বিফল পরকীয়ার স্মারক ওই নারীটির গর্ভে
কেনো যে পৃথিবীর সমস্ত ফুলের ঘ্রাণ হাসনাহেনার হয় না
বেকসুর গোলাপসহ বাকিসব ফুল দেখলেই কেবল তাই বিবমিষা জাগে
ফ্লাইওভার বেয়ে চোখের পানির মতো গাড়িগুলি আমার দিকে
গড়াতে গড়াতে আসে
এই পানি আমারে ভাসাবে না জানি
ডোবাবে, এই ডুবে যাওয়া আমাকে ডোবায়ে নিয়ে যাবে অভূতপূর্ব
চলৎশক্তিহীনতার শাসনামলে
যেখানে আমি এখন বেঁচে আছি
যেখানে চিরসত্য খোলাসা হবে আমার সামনে
ভিতরে গোপনে আমি কতোটা ক্লিশে, হিপোক্রেট আর ভুয়া আর নালায়েক
আমার জবানে যে গ্যালন ধরে নষ্ট পাম অয়েল ঢালা হয়েছে
ফলে সমস্ত সত্য এখানে কতো অস্থিতিশীল ইত্যাদি
এইসব ভাবি আমি
বিভিন্ন আমির এই ইউটোপিয়া
তুমি এখনো কই থাকো?
বাসায়? চিড়িয়াখানায়?
গ্রিলরুদ্ধ বারান্দার ওধারে কয়েকটা ফুলেল টবের পাশে দাঁড়ানো
তুমি কীভাবে যেনো দিলখুশা এক বিব্রত ময়ূর
ইশ! যদি কোনোদিন
আমাদের সম্পর্কের মতোন এই গ্রিলগুলি ধসে পড়তো
আমি যদি টবগুলিতে যদি নিজেরে রুয়ে দিতে পারতাম!
আরেকটা সূর্যোদয়ে নিশ্চয়ই কৈশোরিক বিরহের অজিফা নিয়ে আসতেই
তোমার চোখ থেকে অবমুক্ত হতো ক্রিসমাস, খসে পড়তো ইভ
সামনেই জানুয়ারি মাস
এর অর্থে তো আমিই সেই ঝাউগাছ
যার শরীরে তোমার আনন্দ মরিচা বাতি হয়ে ঝিকিমিকি করে
যার প্রতিদিনই মাসের শেষদিক সে আর কী চাইতে পারে
নির্ঘাৎ মৃত্যুর পরও এইসব ঘটনার রিপিটেশন ছাড়া?
একজন হয়ে থাকি
একটা চোখ তোমারে দেখলে তার সঙ্গে অন্যটাও দেখে—
একটা হাত ছুঁয়ে ফেললে অন্যটাও ছুঁতে চায়।
একটা ঠোঁট একা তোমার ঠোঁটের কাছে যায় না,
যেনো তার কিসের ভয়;
ফলত, দেখি চারটা ঠোঁটের সমন্বয়।
একটা পা দিয়ে তোমার কাছে যেহেতু হেঁটে যাওয়া যায় না—
সেহেতু অন্যটাও তার অনুবর্তী হয়।
দেখো;
আমিও তো একটাই মানুষ, পাখি—
তবে কেন যতবারই তোমার কাছাকাছি যাই,
দুজন না হয়ে কেবল একজন হয়েই থাকি?