নতুন কবিতার সন্ধানে | অনুভব আহমেদ

খাদ্যকণা

কার যেনো কোলাহল থেকে জেগে উঠেছি আমি
ডিটেকশনহীন রাডারের ক্লান্ত শিরা উপশিরা বেয়ে

নিজস্ব জানালায় চোখ রেখে—
আঁকা বাঁকা নাচে অক্ষর, দেখি
কবিতার জটাজাল, বন্ধুর, দুর্মর

কেটে কেটে খায় অমৃত সুধা
স্বাদু খাদ্য হয়ে এ জন্ম আমার
নিরন্তর তোমাকে লেখা

কবিতা এক অলীক খাদক
খাচ্ছে শস্যকণা ….

অক্ষর

অক্ষরের গায়ে লেগে আছে গত জন্মের দাগ
অক্ষরের গায়ে লেগে আছে ধুলোকণা, জল
অক্ষরের গায়ে হেলান দিয়ে পড়েছে সূর্য
লেখা হচ্ছে মানুষের ক্ষয় ….

অক্ষর বলেছে কাছে এসো, অক্ষর বলেছে চলে যাও
অক্ষর বলেছে থেমে আছে কেনো?
অক্ষর বলেছে তুমি মহা উজবুক

অক্ষর জানে ভূমিষ্ঠ শব্দে লেগে আছে সঙ্গমস্মৃতি কার
অক্ষর জানে বাক্যে বাক্যে কবি কত চুরমার।

রিরংসার হৃদে

খেয়েছো চুমু, জিভে ঠোঁটে দাহকালে
পেঁপের ভেতর যখন নীরবে প্রেম পাঁকে
দুই দান ঘুটিহারা দাবার ময়দান
এলোচুলে নিশিভ্রমে গেলে যার পেয়েছো উঠান
ছড়িয়েছো নাভিঘ্রাণ কস্তুরী বনে বনে
মেঘের পৈতা পরা কোনও এক হাওয়াকালে
ঝড় জ্বরে অরুচিতে নিভেছে নুন পাত
বেনোজলে ভেসেছে ডোম, সময়ের রেখাপাত
এখানে দিনের বাঁকে কেরোসিনের গন্ধ
কামনায় বিহ্বল ডাহুকের পরাগে
অস্ত যাওয়া জীবনের শরীরি রাগে
আবার আসবে জানি, সেদিন দূরে নয়
জলের পদ্ম বিভ্রমে ফাঁদ হয়
ডুবে যায় কোন সে নারী রিরংসার জলে, তীব্র করে তার হৃদেরে।

শরীর ভেজা দিনে

থামতে থামতে ভেসে গেছি, ঢেউ বলেছে এসো
বৃক্ষ শাঁখায় ব্যথার বেশে মানু‌ষের মুখও
পাতায় দুলছে হাওয়া,
ঝরছে বুক ঢলোঢলো—
হৃদয় মর্মর মাটি, পায়ের তালু তৃণ

অই তো সর্বনাশের নদী—
খোলা মাঠে উদোম গায়ে ছুটছে জীবন ঝুঁকি
নগ্নতাকে আঁকড়ে ধরে বাজছে বীণা ধ্রুপদ
লহর থেকেই আসছে ভেসে বধ করা অসুর
বসে আছো  ভোরের ভেতর  ধোঁয়ায় ওড়া মাছি, 
কতযুগ পরের তুমি, কত যুগের আমি?
আমরা কেবল পুনরাবৃত্তি, নানা শরীরে ফিরি একই

ধ্বংসপ্রবণ এ অরণ্যে ঘুমিয়ে বনভূমি, চাঁদের ঘরে হুড়কো দিয়ে বসে আছো তুমি,
কাঁদছে ভূমি এ বনাঞ্চলের করাত করুণ সুরেই
ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিপন্ন অঞ্চলে
গেছে চলে যাবার দূর,
তোমার ঘর কাছেই বাজছে বনভূমির গায়ে
সারাটা শরীর—
রোগের ভেতর বিসমিল্লার সানাই।

প্রতিস্বর

একটা অন্ধকার কবিতায় আমি আমাকে জন্ম দিয়ে চলেছি প্রতিনিয়ত
সকালের শুরু থেকে সমস্ত আমার মধ্যে ধারণ করেছি
আমি এঁকেছি তোমাকে খোঁদাই করে  সমুদ্রে, গাছে, আগুনে

এইতো  তুমি—
একটা পথ কেউ একজন ঝুড়ি নিয়ে পার হচ্ছে প্রতিদিন
হয়তো তুমি—
একটা সিগারেটে আগুন ধরানোর মধ্যবর্তী স্থির সময়

তুমি সেই নির্জন মঠ যেখানে ধ্বংস হতে আসে  প্রতিটি আমি

যেখানে রাতের পটভূমিতে

মিথ্যে মিশিয়ে ফেলি চাঁদের উপমায়।

তাকিয়ে থাকি  ভালোথাকার অজুহাতের দিকে

যে চারাগাছ বুনে রাখি বাগানে
জানালার ফ্রেমে শুধু তাদের বিবর্ণ হবার গান।

এই বারান্দা মরুভূমির সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায়
খুঁজে আনতে পঁচে যাওয়া শেকড় আর নির্বাসিত ভাবনা

সময়ের ভ্রমণ থেকে
ঝরে যাওয়া অবয়ব
তেমন যেমন মৃত শরীর  ফেলে রেখে যায় কেউ
সেই মাছের মতো …

শেয়ার