দশটি কবিতা ।। সাদিক সত্যাপন

১।

পহেলা যেদিন টের পাইলাম পুরুষ—

মনে হইলো, কিছু একটা মরে গেল ভিতরে ভিতর।

 

যেনো কোনো আহত নকুল

গতরে বিষ নিয়া খুঁজতেছিল বন— সাদা লজ্জাবতীর মূল,

কোমল এক যৌনদৃশ্যের ফ্রেমে ঢুকে পড়ছিল সাপ

ফণায় ছোবল নিয়া দুলতেছিল, ওইক্ষণে—

শুকনা পাতার বুকের মর্মর শুনে হইছিলাম ফিদা

কোনোকিছু থিকা জুদা হইয়া যেনো অন্য কোনোকিছুর তরে,

 

এই অভিযান—?

 

পুরুষপ্রধান সেই দেশ— সেই গহ্বরে—

হাওয়ার ত্বক চিরকাল ঘেমে যাইতেছে কামে

নারীর আদরে ফুটতেছে দেহজ ফুল,

যেনো আমি গন্ধগোকুল— নিশিরাইত টুপতেছে বনে—

বিপন্ন হইয়া যাইতেছি শিকারের লোভে, হিংসায়

এমন মনে হয়/

 

এমন মনে হইতেছিল যেনো

তুমি ছুঁইয়া দিতেছো জীবন অলস দুপুরে!

 

আবার এই শরীরময়তা ছেড়ে আরও কোথাও যাইতে মনে লয়…

 

আহা—!

যদি একবার আশ্বিন হইয়া আসো

গতরে শিন শিন কোরে বইয়া যাও মর্ম অবধি

যদি একবার সূর্যাস্তগামী হইয়া

পুনরায় উদিত হও নিজের ভুবনে,

 

প্রেমের জীর্ণ কাঠামো ভেঙ্গে একবার দেখবো তোমারে

যে শুধু মৌল নারী।

 

কিছুটা পুরুষ খিয় হইয়া আসুক— ক্রমশ— আমার ভিতরে।

 

 

২।

গাছেরা অসীম আহ্লাদে নাড়তেছে পাতা!

 

এইখানে ক্যাওটিক ভিড়ের ভিতরে
নীরবতা অক্ষুণ্ণ রেখে কোনোদিন পাই না তোমারে;
তবু তুমি আছো
আমরণ নিদ্রা হইয়া ডাকতেছো— হৃদয়ের সৌম্য আধারে,
মনে হয়—

 

পথে পথে নির্বেদ ছায়া
শরীরের অবসন্নতা নিয়া দুলতেছে তবু
নক্ষত্রের মনোক্রোমাটিক আলোয়
কখন কে যে কার ঐকান্তিক আপন হইয়া যায়, দেখি—
আর তোমারে খুঁজি, 
তখন নিজেরে সীমাহীন সারস মনে হয়— নিঃসঙ্গতাপ্রিয়।

 

আমি এক ক্রুব্ধ পাষাণ
ওগো, তুমিই বুঝিয়া নিও— ক্যানো এইভাবে এতো হইতেছি ম্লান

 

এখনও—!

 

 

৩।

গুঁড়া গুঁড়া বৃষ্টি পড়তেছিল তখন— আমি বৃষ্টিমুড়া দিয়া
মনে হইতেছিল, সারাদিন সারারাইত বাতাসে বাতাসে ঘুরি;
অথচ এম্পটি পকেট আর একটা এম্পটি পরাণ লইয়া কেবলি উদাস আছিলাম!
কিসের বিরহে এমন বেচান হইয়া গেলাম— মেঘমালুম আর নদীমালুম ।

 

আমারে এইরূপ এম্পটিময়তার অর্থ না জানাইয়া 
তারা নিরবধিকাল ক্যান যে বইয়া যায়— কই বইয়া যায়—
চিরদিন বাতাসে বাতাসে আর কূলায় কূলায়।
অন্তরে হ্যাঁচকা টান দিয়া দ্যাখায় যতসব দামী পাথর, বিধ্বস্ত প্রেমের উপকূল।

 

বিরহের গহীন বাদাড়ে কিসব সুরে যে মশগুল যেনোবা কারা—
আমারে তারা এই রূপময়তার মাজেজা বুঝায়।

আমার এম্পটি এম্পটি লাগে, কতোকিছু খোইয়া খোইয়া যায় ভিতরে ভিতর!
মোলায়েম চাদর হইয়া কেউ আমারে জড়াইয়া ধরুক, মনে লয় করুক আদর।

 

 

৪।

অনন্ত নির্জন ডাহুক
ডানা ঝাপটাইয়া উড়বার কালে
যেইটুক পাখি খসে পড়ে যায় ডালে, হাওয়ায়—

 

তার সেই চিত্রশোভায় নৈঃশব্দ্য ঘনাইয়া আছে
তুমি আসো, তবু আসো, এই করুণ মন্দিরে
মেঘকালো চুলের গভীরে সেই মৌন পালক
শোভিত কোরে রাখি, লো সই—

 

যদি কোনো পুরাতন বিচ্ছেদে ফের দ্যাখা মেলে
পুনরায় পরাণ টাটায়— 
যেনো পৃথিবীর কারুতন্ময় দৃশ্যের ঢেউয়ে বইয়া যাইতেছে,
সেও এক ঢেউ— 
যদি মনে হয়, গায়ত্রী মধুর সন্ধ্যার কাছাকাছি 
ধুপছায়া অথবা কেউ ঠাণ্ডা পাথর
সেইটুক লব্জের ভিতর থির হইয়া থাকি।

 

কোনো এক অন্ধকার যোনি
বাগানের মিস্টিক আলো এসে পড়তেছে হেথায়;
আমি যে ক্ষুদ্র জোনাকি— 
অপৌরুষ মৃয়তা নিয়া উড়তেছি তোমার আসমায়, 
নিতেছি আর্দ্র সুবাস—

 

সেই হাওয়ায়
একটুক পাখি ছেঁড়া পালকের লগে ভাসতেছে 
চিত্রশোভাময় নৈঃশব্দ্যে— অতীব পুরাতন ব্যথায়!

 

আসো, এই অন্ধকার যৌনতায় আরও ঘন হইয়া বসি
আমাদের দূরত্ব আছে, থাকুক, অন্তত সকলে ভাবুক— সমব্যথী!

 

 

৫।

দৃশ্যত আমারে ফালাইয়া
যার কাছে যাবার তার কাছেই কি গ্যাছো, প্রিয়তম,
তার কাছেই কি তুমি যাও— 
হৃদয়ের ডিজেল গাঢ়তা নিয়া?

 

যারে ভাবতেছো নসীব তোমার
যদি কোনোদিন মনে হয় সে অন্য মানুষ— আনোখা পিপল,
অন্য কারও কাছ থিকা ছিনাইয়া নিছো তারে,
আচানক অপরিচিত লাগে,
তখন কি পারবা করতে এইসব রিলেশন— সম্পর্কের জাল বিস্তার,
দুইটা গোখরার মতন শরীর প্যাঁচাইয়া এক লগে শুইতে— চুদতে—
পরাণে পরাণে সামাইয়া দেখতে নিজেদের পিরিতের বাহার?
জানি পারবা না, পারবা না গো—

 

যদি মেহসুস করো,
তুমি সেই লীলাভূমি—
যার ঘরে ভেঙ্গে গেছে আরও বহু সংসার।

 

সেই পুরাতন মোহে তবু গড়তেছো মিথ,
খুঁজতেছো তারে— যে তোমার!

 

 

৬।

সাপোজ,

পাতাঝরা একটা গাছ দাঁড়াইয়া আছে আধোলীন—

মৃদুল তিমিরে,

চোক্ষের অতল জলে তার স্নান

যেনো সে অথৈ সায়রে মৃত মাছ হইয়া ভাসতেছে।

 

ইমাজিন করো,

ভিনগ্রহবাসীদের মতন পৃথিবীতে কুয়াশা নামতেছে

সর্পিল দেহ থিকা খসে পড়তেছে শীত,

এমন একটা হিরণ্য আন্ধারে—

 

তুমি তোমার লোনলিনেসের ভিতর আমারে ডাকতেছো।

 

সাপোজ,

এইরকম মৌনী লগনে শুধু নৈঃশব্দের হুহু

আসমান উজালা কোরে বইতেছে চাঁন্দ

তুমি ডাকতেছো আমারে, গিয়া দেখি—

 

একটা লোনলিনেস একা পড়ে আছে— তুমি নাই সেইখানে।

 

 

৭।

এই শাম-সন্ধ্যায়—
ফুলের গর্ভে জমতেছে যখন মহুল আস্বাদ
পীতবাসনায়,

 

সমস্ত দিনের ক্লেশ সূর্যাস্তে পুনরায় খুঁজতেছে রাহি 
সে কোন পথ— কোনখানে নিতে সে চায় আপনারে?—

 

এইরকম একটা নেশার ভিতরে লীন হইয়া থাকি।

 

হাওয়ায় হাওয়ায় বিউগল
যেনো তার ডার্ক মেলোডি অতি পুরাতন!

 

আমার কী যে ডর লাগে প্রভু
একটু নেশা এতোখানি শিহরণ তোলে!
মানুষের হিংসার খুউব কাছাকাছি যাই, তখন—
বহুক্রোশ পিতর অবধি শোনা যায় শোর,

 

মনে হয়— 
ফুলের নরোম পাখায়— সে এক কঠিন পাথর!

 

 

৮।

বুকের পাথরগুলা লিরিকাল করতেছি 
রেবা নদীর তীরে—

 

সেরেফ তোমার খাতিরে, ওহে ডেমোক্রেসি,
আমার তো ম্লেচ্ছ পরাণ
তুমি যেনো স্বৈর সংসার— শিশুদের যৌন আসরে।

 

তোমার কি সত্যি লিরিকাল লাগে— খুনের শব্দ
অথবা ধর্ষণমুখর এই আলো
আমারে কওতো—
ক্যান এতোটা তিমির এইসব লুম্পেন দিন, 
আমার জন্ম ইতিহাস
এতোখানি এলোমেলো মলিন তিতির— এতোদূর—?

 

ওহে ডেমোক্রেসি,
কি সুখ পাও তোমার ওই স্বৈর আদরে?

 

একটা মিথিকাল ভোর ঝুলতেছে ঘাসের ডগায়
যেনো একদিন সেইখানে যাবো
তোমারে দ্যাখাবো,
যেইখানে ফুলেদের জারজ সন্তান হয় না কখনো—

 

হায় ডেমোক্রেসি!

 

লিরিকাল করতেছি পাথর 
তুমি তাও বুকের পিঞ্জর ভাঙ্গো।

 

 

৯।

চারিদিক নৃশংস প্লাটুন ঘিরা রাখছে
এই ক্ষণে—
ইরোটিক লাগতেছে খুব।

 

পুলিশী দৃশ্যের ভিতর কামার্ত হইয়া আছো যেনো
কাফনের কাপড়ে মুড়া পিনোন্নত বুক
কিছু যৌন আবেদন নিয়া শুইয়া আছো তুমি
নাভীমূলে বন্দুক চুমু খাইতেছে—

 

আমার ইরোটিক লাগতেছে খুব।

 

এইরূপ লিবিডো আন্ধার ছিঁড়া ছিঁড়া খায় যেনো
সারারাইত গুলির শব্দে ফোটে কিংশুক
অ্যামন হত্যাদৃশ্যের পাশে উদাম হইয়া আছো তুমি
চিরলুব্ধ বন্দুক দেহ চাটতেছে—

 

হেই দেশমাতৃকা, 
আমার ইরোটিক লাগতেছে খুব!

 

 

১০।

এইখানে মানুষ ন্যুব্জতায়—
পাথরের গায়ে চারাগাছ হইয়া জন্মায়,

 

অগভীর হৃদয়ে খরগোশ বন্যতা খোঁজে।

শেয়ার