ডগি স্টাইল ।। সেঁওতি শশী

কুকুরের কোনও কামশাস্ত্র নেই। নেই বিবিধ যৌন আসনের জ্ঞান। তবু লাম্পট্যের চূড়ান্ত দায় তারই কোমরে সমর্পিত। তার শুধু আছে সরল ক্ষুধা, অকপট প্রকাশভঙ্গী আর যৌনলীলার অনাটুকে উপস্থাপন। মানুষ যার নাম দিয়েছে ডগিস্টাইল। মানুষের শুধুই নাম দেওয়া স্বভাব। সে প্রেমের নাম রাখে প্রেম। কিন্তু প্রেম, শব্দ প্রেমকে উতরে যেতে পারে কিনা এই নিয়ে দ্বিধা থেকে যায়। সে ঘৃণার নাম রাখে ঘৃণা। শব্দ ঘৃণা ধারণ করতে পারে কি মানুষের খুনের সমান লাল?

শারীরিক অবয়বের কারণে কুকুরকে অনুকরণ করতে পারে মানুষ। তাই ডগিস্টাইল মারফত কুকুরও অনুকরণীয়। শুধুই কী অনুকরণ; প্রাণী-মানুষের অবচেতনে আর রক্তধারায় কি নেই ঋজু মেরূদণ্ড পূর্ব যৌনমুদ্রার স্মৃতি? কুকুরের অবশ্য মানুষকে অনুকরণের দায় নেই। আছে ক্ষুধা, স্বপ্নে রুটির গন্ধ, উচ্ছ্বিষ্টের অবারিত সম্ভাবনা আর হাড্ডিঘুম।

ভোগের পূর্বে উপভোগ কোথায়, কোন মহাকাশে ছিল? কে তাকে মাটির পৃথিবীতে নামিয়ে আনলো? কারা মশলা আবিষ্কার করলো প্রথম, আর কাঁচা কিংবা আধসেদ্ধ মাংসের ওপর ছড়িয়ে দিল? কে প্রথম আগুন জ্বাললো? কোন ইতিহাসে পাওয়া যাবে সভ্যতার নিভৃতচারী সেই কারিগরের নাম? কে আঁকলো গুহাচিত্র, কার হৃদয়ে আড়মোড়া ভাঙলো কবিতা প্রথম?

বোধির সঞ্জীবনী রসে ফুল ফুটলো, আর সেই ফুলের নাম হলো অস্তিত্বের চেতনা। মহামতি ফ্রয়েড বললেন, মানবজীবন যৌনচেতনা চালিত। নাহলে শৃঙ্গারক্রিয়ার ওপরে লাখো গ্রন্থপ্রণেতা মানুষ, মন্দির গাত্রে রতিসুখের শৈল্পিক প্রদর্শনীর মানুষ, ব্যাভিচারের কলঙ্কে পঙ্কিল মানুষ তুচ্ছ্ব চতুষ্পদীর জীবনচক্রের কলা-কৌশল নিয়েও ভাবিত হয়? মানুষ শ্লীল-অশ্লীল ভেদ করেছে শুধু নিজের কামনা চরিতার্থ করতে। চতুষ্পদীর যৌনভঙ্গিকে সে অশ্লীল খেতাবে পর্নের স্তরে নিয়ে গেছে। যাতে নিজের অবচেতনকে পৈশাচিকতায় মোক্ষ দেওয়া যায়।

কিনারহীন ব্রহ্মাণ্ডেও দূরত্বের ব্যাপারে সন্দিহান থাকা যায়। সুতরাং আমাদের ভিন্ন ছায়াপথে বাস করা কিংবা শরীরে শরীর ঘেষে বাস করা আদতে কোন মৌলিক পার্থক্যই ইঙ্গিত করে না। ‘উভয়ের চারহাত দুইয়ের চেয়ে বেশি এবং সত্যি, বলেছেন মারিও বেনেদেত্তি।’ বড় মাছ, বড় পুঁজি আর বড় প্রেম যথাক্রমে ছোট মাছ, ছোট পুঁজি ও ছোট প্রেমকে খেয়ে ফেলে। শুধু আমাদের মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। আর মুখ ছাড়া অন্যান্য বিষয় আশয় হয়ে ওঠে মূখ্য। বিলবোর্ড মেপে যায় আস্থা, আনুগত্য আর একগামিতা। প্রয়োজনপন্থী বা, খাঁচাপন্থী সময়ে রগরগেপনাই আরাধ্য, যাতে লোকে খাঁচাটাই কেনে। যদি বাঁচাটাই মূখ্য, ‘প্রভু নষ্ট হয়ে যাই’। পুঁজির গাজনে খাঁচার উপযোগিতা বাড়াই!

ম্যাকডোনাল্ডস আসলে বাস্তুসংস্থানের শীর্ষ খাদকের নিরীহ শিকার, যে খাদক লাসভেগাসে পর্ন বেঁচে তুলে আনে পনিরের দাম!আকাশ থেকে ভূমি, ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য সমস্ত বিস্ফোরকের পরিভাষা আদতে ভোগের। আয়লান কুর্দির শ্বাসের দমে জ্বলে লালবাড়ি কিংবা শাদাবাড়ির ঝাড়বাতি। জেরুজালেমের আরো গভীরে নাজারেথ, নাজারেথের ছেলেটির কোন ঘর নেই। তাঁর পিতা বলেছেন, দরিদ্র- সন্ত পুত্র, আমার অসংখ্য ঘরের মালিক হবে তুমি। ফ্রাঙ্কেনস্তাইন বা মেরী শেলির কল্পবিজ্ঞান উত্তীর্ণ হয়েছে বাস্তবোচিত মিথে। তার মূল উপজীব্যের অবিকল প্রতিবিম্ব প্রতিদিনই প্রায় পৃথিবীর নন্দনতত্ত্বকে ধর্ষণ করে মর্ষকাম সাধন করছে। তার পদ্ধতি আর ভঙ্গিও তো আসলে ডগি স্টাইল-এর অনুরুপ।

দ্বারস্থ হই ত্রিকালজ্ঞ ভূশণ্ডির। শুনি কি দাঁড়ালো তাঁর চশমার ওপর দিয়ে? উন্মাদ হাসি শুনতে পাওয়া যায় শুধু। ব্যাঙ্গের, তীব্র ব্যাঙ্গের। আর কতো রঙ্গ দেখাবে হে মনুষ্য শাবক? দুনিয়া উজাড় করতে করতে শেষে কুকুরকেও ছাড়লে না? এলিওট আসে পাপী মনে আবার। ওয়েস্টল্যান্ডে প্রশ্ন ভেসে বেড়ায়। ডগিস্টাইল কি শুধুই যৌনমুদ্রা, নাকি বিবর্তনের মন্থর সাঁকোর ওপর জীবন বিস্তার আর বেঁচে থাকার অন্তিম ভঙ্গির চেয়েও বেশি কিছু?

শেয়ার