কবি জহির হাসানের জন্ম ২১ নভেম্বর ১৯৬৯, যশোর জেলার পাইকদিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে। শৈশব ও কৈশোর কাটছে যশোর ও ঝিনাইদহের গ্রামে। লেখালেখির শুরু ৭ম শ্রেণি। প্রথম কবিতা প্রকাশ ১৯৮৪ সালে যশোর থাকি প্রকাশিত দৈনিক স্ফ’লিঙ্গ পত্রিকায়। আগ্রহ ধর্ম, ভাষা, দর্শন ও চিত্রকলায়। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে।
সাক্ষাৎকার পুস্তিকা (কবি উৎপলকুমার বসুর সাক্ষাৎকার) : কথাবার্তা (সপ্তর্ষি প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৬)
নিজের ভাষা ও জগতে ভাস্বর কবি জহির হাসানের নির্বাচিত ২৫টি কবিতা শিরিষের ডালপালার পাঠকের জন্যে …
আমার সোমবার রাতের ঘুম
আমি যতবারই স্বপ্নের ভিতর মরছি
কোনোবারই আমারে
কবর দেওয়া হয় নাই!
আমার লাশগুলি একটা অন্ধকার ঘরে
পরপর সাজানো থাকে তো!
গতকাল যখন দেখলাম একটা বাঘ
আমার ঘেটি ধরি টানতে টানতে
একটা পাহাড়ের নিচে আনছে
আমারে খাবে!
আমার ভয় আর ছটফটানি
প্রাণের মৃত্যুর কাছে কাকুতি
আমি দেখলাম স্বপ্নের ভিতর!
প্রতি সোমবার সকালবেলা
আমার ঘুমেরতে দেরিতে উঠার কারণ
স্বপ্নের ভিতর আমার লাশগুলি
গোলাপবনের মধ্যে সাজায়ে রাখি
যাতে গন্ধ না বার হয়!
আমি মেয়েদেরতে দূরে দূরে থাকি
কেউ ভালবাসি কয়ে যদি স্পর্শ করি বসে ফের!
ফলে আমি যদি ফের হলুদ কুটুম পাখি হই যাই!
আমি যদি ফের মানুষ
হওয়ার কথা পুরাই ভুলি যাই!
আমারে যদি ফের বহুকাল জংলায়
গাছে গাছে
কাটাইতে হয়!
অসহ্য আকাশের ভাওতা বিস্তার
আমারে ফের ফাঁস করতেই হয় যদি!
আমি মেয়েদেরতে দূরে দূরে থাকি!
বৃষ্টি ফোঁটারা অভিনয় বুঝে না
রিহার্সল করাইতে গেছি
বৃষ্টি শেষে-
তারে ঝোলা দুই বৃষ্টির ফোঁটা
তাদেরে কইলাম
একবার জড়ায়ে ধরবা
তারপর ছাড়ি দিবা
আবার নিজ পজিশনে সরি দাঁড়াবা
যেন লোকে ভাবে
আরেকবার জড়ায়ে ধরে না ক্যান!
হায়, তারা মুখামুখি
আসা মাত্রই জড়ায়ে এমনই ধরলো
কেউ কাউরে ছাড়েই না!
আমি কই
ওগো একীভূত বৃষ্টির ফোঁটাদ্বয়
এইটা তো নাটকের
রিহার্সেল!
তোমাদের মধ্যে ফের দূরত্ব রচনা কর!
পাহাড়ে আসি গান গাওয়া
যখন পাহাড়ে গেছি
দেখি আমি গান গাচ্ছি
কান পাতি শুনি
মোর গাওয়া গানে
অন্য কেউ যেন ভাগ বসায়েছে!
দেখি যে পাহাড়ও কিছুটা গাইছে
আমার ভিতরে আসি
গানের ভিতরে
ফলে এইভাবে
পাহাড়েতে আসি
একা একা গান গাওয়া
সত্যি অসম্ভব!
এই
ছোটকালে যেইবার আমি পাগল হই
সবাই মিলি আমার নাম পাল্টাই ফেলায়।
আমার আগের নামে যারা ডাকত
তারাও আমাকে ‘এই’ কয়ে
ডাকত।
আমি যেন দড়ি ছেঁড়া বালতির মতো
কুয়ার অনেক গভীরে
চলি যাই সেইখানে গিয়া আব্বারে ধমকাই!
দেখি যে আমি ঘরের ভেতরে একটা ল্যাংগট পরি বসি আছি
আর এই কাঁপতেছে, আর আমি পাগল
হওয়ার পর আগের নামটারে ফেরত পাইতে মন চাইল।
আমি স্বপ্নে দেখি যে এই গ্রাম আমার না,
অন্য একটা গ্রাম আমারে স্বপ্নের মধ্যে আসে,
ডাকে। আমি যাই সেই গ্রামে মনে হইল ভোর বেলা
আমি একটা হাটের মধ্যে
মার খাই। সবাই বলে হালা, পাগলা চোর।
আমি কান্দি
আর বলি, আমার আগের নামটা খোঁজতি আইছি
এইখানে।
আমারে আর মাইরো না।
আমি আরেকটা গ্রাম চাই যেইখানে
আমি না থাকিলেও
আমার নামে কেউ যেন থাকে
তার চুল আঁচড়ানো, গোসল করা, লুঙ্গিপরা
দুপুর বেলা নাত্রি বেলা
এক মনে দেখবানে…
আব্বা আপনে আসি কয়ে দেন
সন্ধ্যা নামে
রাত নামে
বিকাল ঝাড়ে ডানা
আমার ভিতর নড়ে চড়ে
দুধ-সাদা বাপের কাফন খানা!
উঠেন আব্বা শিখায়ে দেন
কোন নিয়তে
কোন দোয়াতে
পাবোনে ত্বরা নতুন ভোর!
আব্বা আপনে আসি কয়ে দেন..
আপনে ছাড়া রঙরা সব
বুঝিনি আগে
হয় তামাশা
রংধনুদের কবর!
একটা নরম বিলাই পাবো
এ জগতের শেষে
সেই লালসে নাচি
সে আশেতে
শজারু কোলে করি
নিত্য বসি আছি!
আব্বা আপনে আসি কয়ে দেন..
বুঝলাম কিনা
টেরাই করি
একটু দেখেন
আমরা পোলাপান
বেহুশ কিছু ভ্রম
নিভু নিভু
কাঁদো কাঁদো
অন্তর্ধান
নইলে আমরাও
করবানে ক্রম!
আব্বা আপনে আসি কয়ে দেন..
সন্ধ্যা নামে
লহমা নিড়ায়ে
অখন্ড একিন
করতেছে ভিড়
জাগতেছে ঐ
যে তিমিরে
ছিলাম আগেই
সেই সে-তিমির!
আব্বা আপনে আসি কয়ে দেন..
বনগাঁ
তখন আমার
একটা সুন্দর লালরঙা ঝুনঝুনি ছিল
আমি বাজাইতাম না!
বাজাইলেই ফুরায়ে যায়
অন্যসব জিনিশের মতো
কোনো একদিন বাজাইব এ নিয়তেই
আমি রাখি দিতাম উঁচা সে লিচু
গাছের মাচান পর। লোভে লোভে
সবাই ওখানে উঠি সেই আমার ঝুনঝুনি বাজাইত।
ওরা কে, আমি নহি!
আসলে তারা তাদের ঝুনঝুনিটাই বাজাইত।
কত বলি কেহই কারো ঝুনঝুনি শত চেষ্টাতেও
বাজাইতে পারে না!
তারা বুঝে না!
পরিভাষাহীন আব্বা একদিন রাগবাগ করি
ভারতে যাওয়ার পথে
বনগাঁয়
ওটারে পুকুরে ফেলিয়া দেয়!
আব্বার কিছু কিছু দিন আমার কাছেই থাকত
সেইবার আমি আব্বা হইতাম আমার গোপনে।
আমি বলি, কাউরে না কয়েই বলি, আমি নিজেই
ঘেউ ঘেউ না করা নীরব সে-এক ঠান্ডা পানির স্তরে
রাখতে চায়েছি তারে কোনো একখান
লুকানো মাইয়ের ঘুমের ভিতর!
ঝুনঝুনিটা আমার সবচে সুন্দর
বাজবে বলেই দূরে চলি গিয়া থাকে,
এতদূরে গিয়া
আজো মাত্র বনগাঁয় থাকে
প্রেমের কবিতা বিষয়ে
আমি তোমার শরীরে ঢুকি পড়ি।
তারপর প্রায় তিন তিন দিন মাস সেইখানে থাকি।
এটুকু জানাই শুধু
তোমার শরীরের মধ্যে
একটা দেয়াল ঘড়ি পাই
সেইটা থাকি আমি মোর বার হওয়ার সময় বিষয়ে
অবগত হইতে থাকি।
তোমার শরীরের মাইল মাইল গভীরে ঢুকি
যা যা পাই
তা তা কবিতায় লিখি না তো আমি!
কারণ তা জানানোর কথার ভিতর নষ্ট হয় কিছু যদি।
তাই আমি তোমারেও কিছু
বলি নাই আমি কি কি নিয়া বার হই আসি
তোমার শরীর থাকি। বলা ভালো,
“তোরা সিনান করিবি নীর না ছুঁইবি”
এই কথারে পুছি নাই কভু।
আমি এইসব কাউরেই বলি না ।
বললে, তুমি শোনা মাত্রই মরি যাবা।
অথচ সে সব গোপন খবর
না লিখিলে প্রেমের কবিতা,
কবিতা হয় না!
ফুপুর মেয়ে
ফুপুর মেয়ে কলতলাতে গোসল কর কাপড় কাচো
ঘরের মধ্যে সকাল সন্ধ্যা কিসের পড়া পড়
ফুপুর মেয়ে বকুল হাতে শুকতে শুকতে
কইতরের খোপে ফালদি ফালদি বাচ্চা আদর কর
তোমার ছাগল আমার বাছুর এক মাঠে ঘাস খায়
তোমার মেঘের পিছু আমার বাতাস ছোটে খামোখায়
আমার কপাল চিটাধানে ভরা
তোমার বেণী কালী ধানের ছড়া
তালতলাতে ঘুড়ির গায়ে তোমার ছবি এঁকে
দিন-দুপুরে দূরে দূরে উড়াই রেখে ঢেকে \
তোমার প্রতি বর্ষাজাত আমার আচরণ
জানে সবাই একটু বেশি পাশের কদম বন
এমনতরো চিত্তবিকার কাহার নিকট কহি
শেষ কথা একটা বিহিত করো দয়াময়ী ।
আমি কেন মুছতেছি
আমি কেন
এ শহরে সব দোকান বাড়ির
আমি কেন সব সাইন বোর্ড মুছতেছি!
এইডা কি নীলক্ষেত মোড়
নাকি নবাবপুর চিনতে পারতেছি না!
কার নির্দেশে
আমি মুছতেছে
এই যে ভূতের গলির মধ্যে
বাড়িগুলা
এই বাড়িগুলা সব দরজা বন্ধ কেন!
এরা সবে কোথা গেছে
আমি সব বাড়ির সামনে
আমি একটা কবরের গায়ে
লেখা কবর যেয়ারতের দোয়াসহ
মরহুম কার কার নাম পরিচয়
বসি বসি ঘষি ঘষি উঠাইতেছি!
কেউ যেন আমারে দেখতেছে
তবু আমি মুছতেছি কার অনুগত হই!
তখন চাঁদ বার বার
উল্টাইতেছিল, তবু সে চান্দই
হইতেছিল, আর আমি মুছতেছি
সব হোল্ডিং নম্বর
সব বাড়িগুলার!
ভূতের গলির থাকি
ক্রিসেন্ট রোডের সব বাড়িগুলার!
আমার সরল তালগাছটি
জঙ্গল পার হইলে যারে দেখা যাইত
আকাশের দিকি যে নিজে নিজেরে খ্যাদানো
সে বছর সেই সুখি তালগাছ বাজ পড়ি আহত হইলে
তার বিবরণ না-লিখি আমি রাখি দিই;
কীভাবে সে পচি পচি পাছে তারে কাটি
ধাক্কায়ে ধাক্কায়ে মাঠ থাকি বার করি দেয়া হইল
তখন ভাবি যে হাড়ও পঁচে
তাও আমি লিখি নাই;
আমার ফুপা ফুপার ছাওয়ালরা শরিক হইল;
আমি ক্যাল দেখি
পাখিগুলা চলি যাতিছিল
যারা মূর্ত হওয়া লাগি
এই মরাটার পর আসি বসিত;
আজ যখন পত্রিকায়
শুনি পৃথিবীতে আজও শিলাবৃষ্টি হয়
বাজ পড়ে
ছোটবেলার মতো
তখন ভাবি যে
সেই তালগাছটার কালা কালা ত্বক তুচ্ছ ছিল না মোটেও
আর তার ছায়ারে ধারণ করবার লাগি
যদি একটা নদী থাকত ওর পাশে!
আমিই ট্রেনের ড্রাইভার ছিলাম
আমি ট্রেনের ড্রাইভার ছিলাম কিনা
বউরে জিগাই
মারে
পারুলরে জিগাই
তারা তো দেখি না-ই বলে
আমি বুঝাই আমি ছিলাম
আমার থাকি অরা আমার বিষয়ে বেশি জানে তো!
ওদেরে সম্মান জানাই
তবু আমি একটা ইটা রঙ ট্রেনের ড্রাইভার ছিলাম
সবাইরে রাজি করাইতে চাইছিলাম আব্বারে
পাঠাই আম্মার কাছে পারুল তুই নিজেই তো
আমার পাশে বসি ছিলি
আমি হরন বাজাইলাম মনে নাই মনে নাই!
কুয়াশা সরতেছিল না তবু
তোরা রাজি হ রাজি হ!
তোদের দেখার বাইরে কি
আমি কিছুই হইতে পারি না!
আমি ও জহির
(একটি ছোট কবিতা)
আমি ও জহির
জহির যখন কিছু জাহির করে তখন আমি জহির হই।
তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিই যে আমি জাহির করা হইতে বিরত থাকব
ফলে আমি কিছু একটা খুঁজি
যাকে জাহির করা চলে
কিন্তু এ জগতে কিছুই পাই না
তাকে আমি জাহির করবার পারি!
ফলে কিছুর সন্ধান আমি
বিরত থাকি আপাতত!
আমি আমার গ্রামের একটা মাঠ ছিল
সেইখানে আমাদের একটা ধানখেত ছিল
সেইখানে আব্বা পটল লাগাইত
তবু সেই খেতরে আমরা ধানখেতই বলতাম!
সেই ধানখেতে একটা শুকনা কুয়া ছিল
আমি সেইখানে নামতাম
নিজের নাম পাল্টাই ফেলতাম!
আমি কী কোনো জখমে
আমি চিৎকার করি নিজেরে ইউছুপ কয়ে ডাকতাম!
কিন্তু কেউ আমার ভিতর থামি
ঐ ডাকের উত্তর দিত না !
পরে সিদ্ধান্ত নিই আমি আসলে ইউছুফ না
আমি ইউসুফ সাজি
কিংবা ইউসুফ আমার ভিতর আসে
কিন্তু সে সাহস পায় না
নিজেরে ইউসুফ কয়ে দাবি করতে !
আমি তারে ইউসুফ কয়ে শাশ্বত স্বীকৃতি দিই না !
ফলে ইউসুফ আমার ভিতর নাই
এইটা আমি বুঝি
আমার যেন এগারো ভাই ছিল
প্রতিদিন তারা আমারে কুয়ার ভিতর ফেলায় যায়!
পরে বুঝি যে এইটা আমার ভিতরে ইউসুফের
একটা প্রতীতি কেবলি প্রতিধ্বনি রূপে আসে
যার পিছনে মূল কোনো ইউসুফ নাই!
তখন আমি বুঝি আমি শেফালি নামের একটা মেয়েরে ভালবাসি
মেয়েটি যখন আসত
তাকে বলতাম তুমি যে শেফালি
কিন্তু শেফালি যে তুমি
তার কোনো প্রমাণ
দিতে পারবা?
আমি তো কারো হইতে বর্ণিত ন
সে বলত আমি যে শেফালি ফুল না
তা প্রমাণ যদি করতে পারি তাহলে আমি শেফালি!
তারে যেহেতু ভালোবাসি
তাই তারে বলি যে আমি শেফালি ফুল চিনি না
শেফালি বলতে শুধু তোমাকেই চিনি- এ আমার গোমরাহি
একই শব্দের বিপরীতে দুইটা কিছু থাকলে
আমার দুইটা জিনিস আছে তা প্রমাণ করা টাফ হই যায় !
কিন্তু আমি আগেই দেখছি
জাহিরের সমস্যাহেতু
কিছুরে প্রমাণ কর সম্ভব হয় নাই!
ফলে আমি বাতেনির দিকে চলি আসি
চড়াই পাখির ঠোঁটে যতটুকু পানি ধরে সমুদ্রের
আমি সেই দিয়ে নিজেরে সোপর্দ করি
বলি এই কুয়ার ভিতর কে?
আমি জোরে বলি
এই কুয়ার ভিতর কে?
এই কুয়ার ভিতর কে?
উত্তর আসে
এই কুয়ার ভিতর কে?
এই কুয়ার ভিতর কে?
এই কুয়ার ভিতর কে?
জহির উত্তর না আসায়
আমি খুশি হই
কারণ যেহেতু কিছুর প্রমাণহীনতা
জাহিরের মধ্যে আটকাই গেছিল!
তখন বাক্য মনে হয়
প্রতিটি বাক্যের যে ক্রিয়ার কর্তা
সে আমি সে হচ্ছে
জহির!
কিন্তু কুয়ার ভিতর কেউ না থাকায়
আমি আর জহির এক
না দুই তা বলা মুশকিল হয় হই উঠে কেন?
তখন আমি বলি,
এই কুয়ার ভিতর কে?
উত্তর আসে
এই কুয়ার ভিতর কে?
এই উত্তর আসলে প্রশ্নই।
আমি কুয়ার ভিতরতে আর বার হই না
কারণ
আমি কিছু-না
যা কিছু-না
সে জাহির হইতে পারে না!
ফলে আমি
আবার কই
এই কুয়ার ভিতর কে?
এই কুয়ার ভিতর কে?
বলতেই থাকে
এই কুয়ার ভিতর কে?
আমি একান্ত বৃষ্টি হইতে পারলে
আমি একান্ত বৃষ্টি হইতে পারলে
তোমারে বাইয়ে বাইয়ে নামতে পারি,
তোমার কপালে নামার পর ভ্রু পাশ দিই
নাকের ত্বক বাই বাই পাহাড়ের খাড়িরতে আরো নিচের দিকে
চোখের পাশে আসি ঢুকবোনি ভাবি।
সেইখানেও সাগর আছে নোনা জল
আমার ভ্রামণিক মন কয়,
পুনরুত্থান সেইখানে নাই।
আমি নামি তাই আরো নিচে
ঠোঁটের কোণায় আসি, ভাবি, ঢুকি পড়ি তোমার মুখের ভিতর
নামি ওপরে তোমার শোভা ভিতরেও শোভা
সেইখানে কত শাখা-প্রশাখা, তিন-নয় মাস ঘুরিফিরি
আবার ভাবি, না,
আরো আরো পতনের আনন্দ মিস আমি করি ক্যান
লাফ লাফ দিই পড়লে
তোমার শরীরের সমুদ্র আর তার খাদগুলা
খিদাগুলা আমারে কাচা মাটির গন্ধ পাখির ডাকগুলি
অন্ধকারে পতনে মনোযোগী হইতে উসকায়ে দেয়,
আমি আরো বহুপথ যেন অনন্তকাল ভ্রমণে নামছি
আমি নামি আমি নামি,
নিচে যেইখানে দুইটি পাহাড়
নিচে অনেক শাপলার বিল কদম-ঘেরা বনবীথী,
আমি নামি তাতানো রোদের পথে, আমার গতিপথ লুকাচুরি
চূড়ায় যাইতে দেয় না চিরকাল।
বৃষ্টি ফোঁটার এই নিয়তি
নিজের অশান্ত দশা
যেন সেঁকা রুটি
পিড়ন ও পোড়ন মেঘে,
অপ্রকাশ রাখি তবু আমি বৃষ্টি ফোঁটা।
তোমার দাহন বিনাশী আমি এক বৃষ্টি ফোঁটা।
দুই কালা চান্দের পর্বতচূড়ার নাম আমি শুনিয়াছি,
কামরাঙার কত কত চর
পাড়ি দিই আমি, নামি নিচে কয়েক হাজার বছর,
নামি নামি নামতেই থাকি শত কোটি শিহরণে রঙধনু কতক
শত শত পাতালে
তোমার ব্রহ্মান্ড থামে
কেনে ঝরি পড়লাম,
আমি তো এমন ছিলাম না
আমি এমন ছিলাম না,
আমি এক তুচ্ছ লোভী বৃষ্টি ফোঁটা
হইতে চাইছিলাম নি!
বাঁশবনের কাছাকাছি
হাঁসগুলি ডুব দিতেছে জলের তলে
তারা যতটুকু সাদা পালকের ছিল
ততটুকু কি থাকতে পারতেছে!
বাঁশঝাড়ে নাই বইছে বাতাস
নড়েচড়ে শুধু ঘুমে।
দাঁড়ায়ে রয়েছে দূরে
একটা ছাতিম উল্টা লামের মতন স্থির।
কোনো গান গাইতে
সাহস পাইতেছি কই!
আমি তো দাঁড়াই
দূরে এক কাতারেই
ওদের আঞ্চলিক ভাষা যদি কিছু বুঝি!
আম্মার হাঁসগুলি
আম্মার হাঁসগুলির চোখ ছিল, তবু
আমার বোনই দেখি রাখত।
পুকুরে নামত ওদের প্রায় সবাই বিকালের মতো।
ওদের পেট ভরি গেলে ওরা উঠি আসত উঠানে
যেহ্যানে কুঁড়াভাত দিত
কদমতলায়, ওদেরে শামুক ভাঙি দিত
ইটের পর রাখি। ওরা মাঝেমধ্যে ঠোঁটে বাড়ি খাইত।
ওদের পেট ভরি গেলে দুলি দুলি হাঁটি হাঁটি
পুকুরের মধ্যে পুরানো দিনদের বুনো গায় মাখি উঠি আসত।
ওদের ১/২টা রাস্তা ছিল মনে মনে
সামনে কোনোদিন গরু বান্ধা পড়লে
ওরা গরুর পেটের নিচ দিয়া
ওলানের নিচ দিয়া চলি যাইত।
ওদের হলুদ পায়ের পরশ নিতে
গতকালের বিস্তৃত রাস্তা
যেন ঠিক ঠিক মনে উলি উঠত।
দাদাই আমার ঐ বোনটার নাম রাখছিল
আত্মা। আম্মা ডাকত রুহু।
আত্মাই আম্মার হাঁসগুলিরে চিলের ছোঁ,
শেয়ালের হাত-পা থাকি বাঁচাইত।
আত্মারে আমরা
ভাবতাম তার শরীর আছে।
সে আমাদের বোন।
আম্মাদের হাঁসগুলা
কিছুদিন দেখিশুনি রাখে।
আমি ওরে একদিন ছুঁই
দেখছিলাম।
কইছিলাম, তুই তো
আমারই পোড়া পালকের বোন!
বউ কয়, দেখি, দে খি
আমি বালিশ পাশে নিয়া বই পড়তেছি।
বউ রান্নাঘর থাকি আমার দিকে
আসতেছে দেখি।
আমি তড়িঘড়ি
বইটারে বালিশের নিচে লুকাই ফেলি।
বউ কয়, দেখি, দেখি,
ভাবে আমি বুঝি ফের কোনো চটি বই পড়া শুরু করছি।
এইভাবে সে জোরাজুরি করে বা।
আমি বা তারে না দেখাই।
কি সেই বই?
সেই আরও আরও খারাপ ভাবিতে থাকে মোরে।
সে চলি যায় আর ভাবে কত কত আমি বা খারাপ!
আমি পড়ি সেই বইয়ের পরের পাতায়:
হযরত কাব (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুকে চিনিতে
পারিয়াছে,
দুনিয়ার বিপদাপদ ও বালামুসিবতে ধৈর্য্যধারণ
করা তাহার জন্য অতি সহজ।
এই ভাবে আমি মৃত্যু বিষয়ে
আরসব কিছু- গোপন করার অধিকার চর্চা
চিরদিন করিতে থাকি!
স্বপ্ন না থাকিলে
আমি তার খোয়াব মাঝারে বৃষ্টি হই ঢুকি
ভাঙি ওর ঘুমের সীমানা কয়বার
ছাইমাখা উদিলা সে স্বপ্নের বর্ডার
আমি আমাতেই দেহ হই ফিরি নিজ ধামে
আমি দেহ লই তাতে বেপরোয়া
ঘৌড়দৌড় যদি থামে
আর কানতে রহি যেন সহচরী
যেইভাবে একজন আরেকজনরে
জড়ায়ে প্যাঁচায়ে বুকে ধরি
সবাই স্বামী-স্ত্রী ভাববেনে কুঞ্জবনে ঘোড়া
মোর বউ তার স্বামী
আমাদের দোঁহে ভুল বুঝতেই থাকে থোড়া!
আমরা কাঁদতেই থাকি একই কামরায় তয়
যেন বুনোফুল কুড়াইতে আইসা পরিচয়
আমি তারে ধারণ না করি
যেন জন্ম দিই অপচয়
পরে মাখামাখি একশ বছর জলে তিন শ বছর স্থলে
আমরা সমুদ্র সম্ভ্রম নিয়াই কিছু নাই বলি
আমরা মোদের এক অপরের অশ্র“জল খায়ে ফেলি!
কখন কখন যে আমরা জানতেই পারি নাই কিসের এ জের
যেন আমরা দুজনে একটা বাড়ি গড়িছি দূরের
সেই বাড়ি আমাদের অপেক্ষায় আছে ধৈয্য না ধরিই
আমরা জানিছি এক সাথে কোনোদিন থাকা হবে নানে!
সেই ঘরে, সেই বিছানায়,
আমরা জানিছি উন্মাদ নির্দেশে
এইভাবে আমরা ঢুকি পড়বানে পরস্পর স্বপ্নের ভিতরখানে
আমাদের জংশন মোদেরে ছাড়ি চলি যায়!
আমরা তাকাই আমাদের চুলের দিকেতে
মোরা চুল আঁচড়াই যেই আয়নায়
সেই আয়নায় ঘর বাঁধি নাই
আমি তার বুকের পাশেই স্তনের ঘনিষ্ট প্রতিবেশি নহি!
নিরন্তর শিশুটারে না সরায়ে তাহার পাশে শুয়ে রহি
নাইটগাড পাহারা দিতেছে মোদের স্বপ্নরে
আর আর আয়নাযুগ পার হয় হয় কত বাকি
তার আগ থাকি আমরা আমাদেরে ফিল করতি থাকি!
আমরা সময় নিয়া না চিন্তিয়া
যুগ যুগ এইসব করিতে থাকি যা
লোকেদের সামনে করণ যায় না!
যা কেউ বিশ্বাস করবে নানে
প্রকৃত বন্ধুত্ব ক্ষণস্থায়ী
আমরা একই ঘুম দুজনে ঘুমাই স্বপ্নপায়ী
আমাদের নিঃসঙ্গতা ছোটে যেন ব্যক্তিগত পানে
আমাদের সতীত্ব দোঁহের
নিজের ঘরেই থাকি
যেন রেশম পোকারা গড়িছি আখের!
আমরা কাউরেই দেখি নাই ফিজিক্যালি কিংবা মনে
স্বপ্ন না থাকিলে আমাদের
দেখাই হইতো না এ জীবনে!
আমার আলামত নাই
গোরের মাটির মধ্যে আমারে খুঁইজতে যাইও না-
খুঁইজো, বিলফিরা দুপারে ঝিমানো খড়ের গাদার কাছে হাঁসের মইধ্যে
খুঁইজো, দোয়েল-বসা ডালভাঙা অর্জুন গাছের
কুয়াশার আগেভাগে ভাঙার আগে
খুঁইজো, গরু বান্ধা কিবলামুখী তালগাছটার কালা কালা চামড়ার তলে
পিপড়াগের চলা ফেরার ভিতর
খুঁইজো, ধানের শীষের মধ্যে আটকা পড়া ঠান্ডা বৃষ্টি ফোঁটার নিচের দিকে
খুঁইজো, কলার পাতার তল দি তল দি তায়াম্মুমের মাটির যোগ্য মাটির মইধ্যে
খুঁইজো, আইল ঘাসের মধ্যে আটকা পড়া কারো পায়ের শব্দে
ভীত ব্যাঙের বাচ্চার হাঁপানি জিন্দেগিতে
খুঁইজো, দ্বিপ্রহরে পাতাবাহারের গোড়ায় জিরানো মুরগির বাচ্চাদের চুপচাপে
খুঁইজো, শেষ রাতে কানাকুয়ার ডাকগুলিরে তালাক দেওয়ার সময়ে
খুঁইজো, ঘুঘুর গভীর বনের আড়ালে
খুঁইজো, রসুনের খ্যাতে বোনার একটু আগে
খুঁইজো, সাদা কপড়ের দাদির যোহরের নামাজের সালাম ফিরানোর মধ্যে
খুঁইজো, বোখারী শরীফের ইউসুফের গল্পের ইশারাগুলিতে
খুঁইজো, পাহাড়ে হারানো শেষ পাতিহাঁসের পালকের
পরবর্তী উড়ার সম্ভবনার মইধ্যে
আমারে মোটেও খুঁইজো না
কারণ আমি তো কোনোমতেই কোনোদিনই কেহই ছিলাম না!
স্বপ্ন আসে শুধু প্রকৃত ইউসুফের ভিতরে ঘুমায়!
১.
যতবার আমি স্বপ্নে তাড়া খাই
আমি টলকাই পাক খাই
চাকাই আগাই
ঢুকি ফের বাস্তবেই
জুলেখার গোলাপ বোনেতে ঢুকি পড়ি
ভাবি আমি
ইউসুফ ন ফের আগের মতোন
দেখি আমি
কণ্টকচয়ন করতেছে একদল লোক
তারা ওতে গোলাপ ফুটাইব নাকি রাইতে !
দেখি আমি যে বাতাস পুষ্প দোলায় পুলকে
কেমনে সে রজনিগন্ধার ঝাড় উপড়ায় !
তাদেরে হাতে তে তুলি দেখি
রজনির গোড়ার দিকেতে
দেখি ঐগুলা মূল নাকি ভান!
ভাবি আমি
ইউসুফ ন
তাই আমি ইউসুফের বাইরে থাকি
ঐ তো এ বাগানে
আসতেছে তারা যে এগারো ভাই
নিজেদেরে তাকায়
ইউসুফরে ফেলায় কুয়ার তলায়
দেখে যে ইউসুফ ভাসি উঠে ক্যাল !
তারা তাকায় নিজেরার দিকে
তারা সবাই ইউসুফ হই যায় যায় ক্যাল!
তারা ভয়ে আর বাড়ি ফিরে নাই
কারণ যে দুনিয়ায় সদা একজনই ইউসুফ থাকে সদা
তারা নিজেদেরে আর পায় না তো ফিরি
নিজ চেহারায়
তারা যেন হারায় তাদেরে দরিয়ায়
তারা এগারোজন ইউসুফ সেচে
সমুদ্র তারা সেচতেই আছে ক্যাল!
তারা পায় না
নিজ চেহারায়
তারা বার হয় আকাশ-শিকারে
তারা পায় না আকাশ
যত তীর মারে আকাশের গায়!
তারা গায় গান
যেন গান টের না পায়
যেন গান গায় গান :
হবে না আর আমাদের ভোর
ঐপাশে ঘুমায় প্রহর
চুপ চুপ ঘুম ভাঙায়ও না
স্বপ্ন জুদা হই যাবে
স্বপ্ন আসে প্রকৃত ইউসুফের ভিতর ঘুমায়!
স্বপ্ন আসে শুধু প্রকৃত ইউসুফের ভিতরে ঘুমায়!
ঘুম আসে প্রায়
ঘুম আসে যায়
স্বপ্ন ঘুম দেয় কড়া
শবের ধড়ের মধ্যে
চরম যেন না খায় ধরা।
তারা দেখি ফেলে আমায়!
বলে চুপ, চুপ
গান থামা
গান থামা!
২.
যে বাজারে ইউসুফ বিক্রি হয়
সে বাজারে আমি কি ছিলাম!
ইউসুফরে কিনার
ছিলনি দিনার!
যেইবার আমি স্বপ্নে তাড়া খাই
সে তাড়া কভু হজম করি নাই
গোলাপ বনেতে তাই
উষ্টা খাই পড়ি
মুর্ছা যাই!
স্বপ্নরে তাড়াই !
এ তনু টলকায়
গোলাপ বনের
তারা এগারো ভাই
দৌড়ায়
আমার
ইউসুফ
কোন ঠায়!
বৃষ্টি কামড়াই বসি আছি কেন
চলো পাতাগুলারে কুড়াই আগুন লাগানোর আগে চুমা খাই
চলো গাছ হেইডারে পিঠো করি আরো উচা করি ধরি
আরও যেন পাতা ঝরাইতে না পারে
চলো মেঘের হিছে হিছে ঘুরি
যেন আমাদেরে তাদের লেজ কয়
চলো বৃষ্টির ভিতর ট্রাফিক পুলিশের গলা জড়ায়ে ধরি
চলো রেডক্রসের গাড়ির কাছে গিয়া সিগারেট খাই
চলো গ্রহগুলার পরস্পর টানরে যৌনতা দিয়া ব্যাখা করে যারা
তাদেরে স্তনের নিচে চাপা দিয়া রাখি
চলো আমরা বৃক্ষগুলারে পাখি থাকি পৃথক করি
চলো গোঙানিরে দেহের ভিতর ফেরত পাঠাই
চলো আমাদের পালকগুলার দাম কেন এত কমি গেল জিগাই
চলো প্রতিটা মেয়েরে এক নামে ডাকি
চলো রাতগুলা আরো সাদা করি
এহোনো
বৃষ্টি কামড়াই তবু বসি আছি কেন?
যেভাবে বৃষ্টির বন্ধু মেঘের নিকট নিরুপায় আশ্রয় প্রার্থনা করল
আমার বন্ধু আমায় কেন তবু বৃষ্টি বলে ডাকে
আমার ঘরের জানলা দিয়া তাকাই বহুত দূর
তাহার চোখে আমি একটা পচা কুমড়া ফুল
তাহার চোখে এই মহল্লার একটা ভিজা কুকুর
রাস্তার উপর মুরগি খোজে কে গো
দিনের বেলা আপনা ঘরে পোষা মুরগা থুইয়া
মেঘের মধ্যে খোয়ায় যেসব উড়াজাহাজ
আমি তাদের শোকে কান্দি বৃষ্টি দিনে ভুল সুরায় নামাজ পড়ি
সালাম ফিরাই দেখি দেয়াল বেয়ে গড়ায় পড়ে পানি
বামে দেখি জার্সি গরুর ওলান বেয়ে পড়ছে জল
আমার বন্ধুর সোন্দর মুখখান কোন ক্লাসে পড়ে বল
গলির মোড়ে ভিজছে একখান পুরানা হুইল চেয়ার
আমি তার উপর বসি গিয়া, ভিজি, বাজার সেলুনে
কারা যেন হিন্দিগান শোনায় ফিরি ফ্রি–
আমার ঘাড় ব্যথা বাড়ে
ভাতশালিকটা আমার দিকে চায়– কী যে খায়–
কী যেন কী ভাবে ধূলা– নষ্টে যাওয়া পুরানা ফ্রিজগুলা–
ভাবতে থাকি না ভাবিবার মতো–
বৃষ্টি আসে বন্ধু আসে আমায় ঘিরা ঘিরা
আমি যে দিকে যাই বৃষ্টি আমার পিছে পিছে–
বৃষ্টিরে ধরার উপায় কোনো নাই–
খেলনা নৌকার পানি সেচে কারা–
তোদের আমি চিনি, ভাই?
বলতে পার’স বৃষ্টির শিকড় কোথায়?
ভিজতে ভিজতে যাই-
বলি, ও দুলাল রিপোর্টার
আমারে ধরে একখান একখান ফিচার লেখ না–
এক যে ছিল জীবিত এক লোক সেই লোকটা
যেদিকে যায় বৃষ্টি তারে প্যাচদি প্যাচদি ধরে–
দেখতে দেখতে পার হয়ে যাই
ভিডিও দোকান–
দেখি ঐখানে টিভিতে দেখি কী একখান–
ভাসুরের ছেলের সহিত প্রেম দেখাচ্ছে নাটকে–
ভাসুর আবার অন্যদিকে প্রেম করতেছে বৃষ্টি নামের
আরেক মেয়ের লগে, চোখে চোখে–
এদিকে আমার আসে ঘুম–
স্বপ্নে দেখি আমি পেটে বাচ্চা এসে গেছে–
তার নাম রাখি আমি মেঘ–
যেই ঘুম ভাঙে, দেখি–
তেরছা ঢঙ্গে বাচ্চাখানা আকাশে উড়তেছে!
আমি তজবি পড়ি মনে মনে–
বৃষ্টি বাড়ে বাইরে বাহিরে–
আমি জিকির যেইনা বন্ধ করি
বৃষ্টি থামে ধীরে–
জানি না আমার বিদেশ কোথায় রয়–
দেখি রোগীর সাথে আর নাই ভয়
রোগও কবরে যাচ্ছে নামি
মরে যাওয়া শিল্পীটা টিভিতে
গাইছে গান থামি থামি
গোরস্থানে ইশকুল মাঠে
বৃষ্টি হচ্ছে নাচি নাচি নাই তার দায়
আমার বিদেশ কোথায় কোথায় বয়ে যায়–
ভাবছি ঘোরে বিদেশ আসিছি বুঝি আবার!
আরে এতো দেখি ঠাটারি বাজার–
আমার ঘোর কাটে না এবার বরষায়–
কী হইলো দেখি কী–
সকল যে ছিল শূন্য বোতল যারা
ফিরে ফিরে আসে
আপনা মদের কাছে–
মৌলভী সুরমা চোখে যেইরূপ ফিরে আসে
তার কিতাবের পাশে!
আমার চাকর কোথা গেল!
বৃষ্টি আমারে ধর
তোমা বিনে এই ধড় পড় পড়
বৃষ্টি দিয়ে যার নাম লিখতেছি
সে থাকে মেঘে ও মেঘে
সে কি জ্বালা!
আমারে দেখালো খেলা
আমার চাকরটা দেখি মেঘে উঠে গেছে
আমার চাকর ছিল নাকি?
মেঘের থ্যেইকে সে আমার দিকে চায়
মিটকি মিটকি হাসে
আরে ও কবে কবে এত হাল্কা হইলো
ফলে এততাড়া মেঘের নিকট গেল–
চাকরের লগে প্রেম!
বুঝছি মেঘ, তুমি মোরে করলা চরম অপমান!
মেঘ বলে, না, না, তুমিই আমার জান–
আমি অভিজাত–
তুমি ভুলে গেছ– তুমিই উহারে পাঠায়েছ–
মোরে আগায়ে নেয়ার লাগি!
আরে, তাইতো তাহারে বলি, সরি,
প্লিজ, মোর ঘোর কিছুতেই ঘুচিতেছে না,
এইবার এই বরষায়!
যুক্তিগুলা হইলো ছাতা- যারা ভাবছিল তারা কোথা!
আজ ছাতা মাথায় না দিয়া ঘুরছি বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে
কদমের ডালে বসি হিংসা করতেছি কারে কারে–
কারা যেন বাসা বদলের পিকআপে মালপত্র
নিয়া ভিজতে ভিজতে যায়–
মেঘের বাড়িতে জন্মনিয়ন্ত্রণ নাই–
মরা কাক হাতে নিয়া কাকেদের লগে ঝগড়া বাধায়– কহে,
অন্যদেরে কে যেন বুঝায়– কামটা ঝড়ের, বৃষ্টির নহে!
ঠাডা পড়ে কেবা জ্ঞান হারাইলো এ পাড়ায়!
খোঁজ নিই– কেউ কোথাও কি নাই–
শীলা পড়ে হেড মিসট্রেসের গাড়ির কাচ ভেঙ্গে গেছে
ক্লাস ফোরে পড়া
কোন পুংটা শুনতেছে এই মধ্যদিন অন্ধকারে
মায়েভরা রূপকথা
তার সাথে আমা দেখা করবার মন চায়–
যাক, অভয়দাসলেনের পাশ দিয়া
আরমানিটোলা দিয়া কোন দিকে আমি ফিরতেছি–
কত শ বছর ধরে আমি কারে তাড়া করি ফিরতেছি
কোথায় আমার অবসর!
আজ এই বৃষ্টির ভেতর
তুমি এসে কয়ে যাও তুমি!
ভুলে গেছি শেষ কবে–
আব্বা মোরে হের লেখা
কবিতা করি পড়ান–
আমার মতোন কেবা যায় ছুটে, কে তুই না পাওয়া
–বাদল হাওয়া।
কে পায় আন্ধার, মরা কেতকির গন্ধ
ধানক্ষেত ভরি–
–শ্রাবণমেঘের খেয়াতরী।
কে ভয়ে কুচকে গেছে আমার মতোন শুধু
–তড়িতচকিত জনপদ বধূ।
কার চিত্তে সুখ নাই মারে হুকি-ঝুকি
–মত্ত দাদুরী, ডাহুকী।
কারা দেখে আমার মতোন মেঘের ভেতর হারানো কাহার বেণী
– উড়ে যাওয়া বলাকার শ্রেণী!
আমি নীরব
একটা অশথ
গাছের তলায় থামি।
দেখি কে যেন আমার মাথার উপর কী আদরে
একটা একটা ভেজা ভেজা
কদমরেণুরে ফেলছে।
আমি ভাবি ঠিক আছে আমি বোধ হয় কদমের তলে বসে
কারও বাঁশি শুনতেছি– ভাবি ঠিক আছে শুনি যতক্ষণ মন চায়।
এ ভরা বাদরে ঐ শূন্য মন্দিরের পাশে
কে যেন ও ঘাটে পিছলে পড়ি আমারে তাকায়।
একটা-দুটো ব্যাঙ
ওটা কোলাই হবে।
হাঁটছে পাতার নিচে
কিন্তু ডাকছে কি সে?
আমায় সবাই ন্যাংটা দেখে
পাগলা ঠাওরায়–
আমার বসন আমার বন্ধু মেঘ নিয়াছে ধার
আমার বন্ধু আমায় করবে পার?
আমার বন্ধু আমায় দেখি বৃষ্টি বলে ডাকে
আমি বলি, মেঘ, তুমি আমারে তোমার কোলের মধ্যে টানি লও!
তোমার আদরে নিরাপদে থাকি আমি!
মেঘ আমায় তুমি ধর মোরে উঠায়ে নাও–
ন্যাংটা পর্নো আমি
সহিতেছে না আর আমারে এ জগৎ!
ছোট ফেরা
ফিরি আসবোনে যেই
এই গ্রামদেশে আমি অস্বীকার করবোনে
আমি আর বোন মিলি
চারপাশের আলাভোলা গাছগুলারে
এই স্মৃতি মোছা হাঁসের পুকুর
আম্মার হারানো ছোটকালের নূপুর
লাম্বা ফিরিস্তি থুয়ে কবো
নামো রাত
খুব দ্রুত রাত নামবেনে
সেই পুরানো রাতেরা এক সাথে
তাদের বাদবাকি গল্পগুলি শোনানোর বাকি
ঐসব শুনবো কি শুনবো না
ভাবতেছি আমরা
চোখের মনির মধ্যে আটকা পড়া জোছনা আর
পাপড়িতে ঝোলা বৃষ্টির মধ্যে কি কি
পার্থক্য অস্বীকার করবো!
আফসানা
আফসানা রাজশাহী গেলে চলি বহুদূর ধরা যাক হাজার বছর পারে
তুমি যাও হাউস করি, তার মানে তুমি আসবা ফিরি, এ আশ্বাস জাগে
তলে তলে পারুল ফুলের মতো মনে, তবু, কেন ঘাপলা লাগতেছে
যেন ঝড় পাক খায়, নাই নাই ব’লে কয়ে নাচে মুদ্রা না জানলেও,
উল্লসিত জোছনা যেন হঠাৎ আছাড় খাইয়েছে ভাঙি থুতনি নিঃশ্বাস
নেয় জোরে জোরে তাতে কাঁপে নীহারিকা, আমি ছাড়া কে বুঝে এমন
বিধুর শানাই তাহা, দেবদারু যেইভাবে চাইয়ে দেখে, দূরে দূরে
না উড়লে মেঘের কি কদর কমে, মম কাছে সেইরূপ, জানো নাকো তুমি
তোমার ব-দ্বীপগুলি হরেক রকম সান্ধ্যের আন্ধারে ছিল তা তা টপকায়ে
আফসানা, পলে পলে জ্যামিতিক ঘোর তব সনে, আমার লহমা না আগায়
ভিয়ানবেলার ঘাসঘ্রাণে হইনি শরিক এত কাছে পাইয়ে, কেন্দ্রের কী আছে একটা বিন্দু ছাড়া, কেমনে জানবা তুমি এইসব ধরা-অধরার সন্ধিক্ষণ বড় কম টেকে এই মনে ফলে তুমি আছো পৃথিবীর চিনাজানা কোনো জেলায় হয়ত
হয়ত না-আছো-তুমির মতন
সুরেরা গানের থাকি ছুটি নিয়া যেইভাবে তৃপ্ত হয় ব্যপ্ত হয় আকাশে আকাশে
ছড়ায়ে ছিটায়ে আরও আরও ব্রহ্মান্ডের নীরব জায়গা মতো!
আমার চুমা
আমার পাগলামির কালে
বেচারা দিকহারা প্রজাপতিগুলারে
আমার দিকে ঠেলি পাঠাইওনা!
শেষে যদি
ওদের রওশন পাখায় চুমা বসায়ে ফেলি
শেষে যদি
আমার চুমার ভারে গোত্তা খাই
তারা চরম মাতাল হই কাতারে কাতারে
ল্যান্ডিং করে সবাই একে একে
আমার খোঁজে নিচে
হিজলগাছের নিচে আসি তারা
হাজার খুঁজিও পাবে না তারা
আমারে!
ততক্ষণে আমি তো
ঐসব চুমাতেই
খরচ হই গেছি !