লু স্যুন (১৮৮১ – ১৯৩৬) একইসাথে চীনের একজন লেখক, প্রাবন্ধিক, কবি এবং সাহিত্য সমালোচক ছিলেন। তার জন্ম চীনের চচিয়াং প্রদেশের শাওশিং শহরে। তার প্রথম নাম ছিলো চৌ চাংশৌ। পরবর্তীতে তার নাম হয় চৌ ইউশাই, এবং সবশেষে তার নাম তিনি রাখেন চৌ শুরেন। এই “শুরেন” শব্দের আক্ষরিক অর্থ একজন শিক্ষিত মানুষ হতে চাই। তিনি ছিলেন তার সময়ের সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম এবং তাকে আধুনিক চৈনিক সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম লেখক বলা হয়ে থাকে। আধুনিক ছাপচিত্রের ইতিহাসেও তার নাম উল্লেখযোগ্য। প্রচলিত চৈনিক সাহিত্য পদ্ধতি এবং ইউরোপীয় সাহিত্যের আভা, দু’য়েরই সমাবেশ ঘটে তার লেখায়। ১৯৩১ সালে দ্য ডিপার ম্যাগাজিনের প্রশ্নের প্রতি-উত্তরে দেয়া এই চিঠিটি ১৯৮৫ সালে ফরেন ল্যাংগুয়েজ প্রেস থেকে প্রকাশিত তার “সিলেক্টেড ওয়ার্কস”-এর তৃতীয় খন্ড থেকে সংগৃহীত। এই চিঠিতে তিনি ভালো লেখার ক্ষেত্রে যেসব ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, সেদিকেই আলোকপাত করেছেন। চীনা ভাষা থেকে লেখাটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন বিখ্যাত চৈনিক অনুবাদক ইয়াং সেনি এবং ব্রিটিশ অনুবাদক গ্লাদিস ইয়াং।
– ভালো লেখার গোপন রহস্য কী?
ডিসেম্বর ২৭, ১৯৩১
প্রিয় মহোদয়,
আপনার প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিলো আমেরিকান লেখক কিংবা সাংহাইয়ের চৈনিক প্রফেসরদের কাছে, যাদের মাথা “লেখার নিয়মকানুন” এবং “গল্প লেখার শিল্পকলা” – এ ধরনের শীর্ষকে পরিপূর্ণ। যদিও আমি কিছুসংখ্যক এবং সত্যি বলতে ঠিক কিছুসংখ্যক ছোটগল্পই লিখেছি, কিন্তু আমার এ ব্যাপারে কখনোই তেমন কোনো নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো না। ঠিক তেমনিভাবে, যেভাবে আমি চীনা ভাষায় কথা বলতে পারি, কিন্তু চীনা ভাষার ব্যাকরণের নির্দেশপত্র ধরনের কিছু কখনোই লিখতে পারিনি। কিন্তু আপনারা যেহেতু আমার মতামত গ্রহণের সম্মান দেখিয়েছেন, আমি এখানে আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ প্রদান করছিঃ
১. সবদিকে আগ্রহ থাকা উচিত এবং যতটা সম্ভব দৃষ্টিপাতের চেষ্টা করা উচিত। একটি ক্ষুদ্র অংশ দেখার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা শুরু করা উচিত নয়।
২. লেখার মেজাজ না থাকলে জোর করে লেখা যাবে না।
৩. নিজের চরিত্রগুলোর জন্য নির্দিষ্ট ছাঁচ বাছাই না করে বরং আপনার দেখার পরিসরকে ব্যবহার করে তাদের সৃষ্টি করুন।
৪. গল্প লেখার পর অন্তত দু’বার গল্পটি পড়ুন এবং নির্মমতার সাথে সে সকল শব্দ, বাক্যাংশ এবং অনুচ্ছেদ কেটে দিন যা প্রয়োজনীয় নয়। একটি গল্পের মূলবস্তুকে সংক্ষেপ করে কাঠামো দাঁড় করানো অবশ্যই মূলবস্তুকে সম্প্রসারিত করে কাঠামো তৈরির চেয়ে অধিক উপযোগী।
৫. বিদেশি গল্প পড়ুন, বিশেষত পূর্ব এবং উত্তর ইউরোপের, পাশাপাশি জাপানি কাজগুলোও।
৬. এমন বিশেষণ বা বাক্যাংশ প্রয়োগ করবেন না যা কেউ বুঝবে না।
৭. “লেখার নিয়ম” সংক্রান্ত কোনো কথা বিশ্বাস করবেন না।
৮. “চাইনিজ সাহিত্য সমালোচনা” বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু বিদেশি ভরসাযোগ্য সমালোচকদের লেখা পড়বেন।
এই ব্যাপারে আমার বক্তব্য এইটুকুই। শুভকামনা রইল।
– লু স্যুন