১.
কিছু পাতা জুড়ে ঘুম, পাতা জুড়ে জুড়ে
সান্ধ্যআহ্নিক এর পর
আমি বলেছি চোখ তোমার বয়স হচ্ছে…
হয়ত হালকাভাবে
আঠা , লাল নীল কাগজ কুচি জোড়া দিতে দিতে কিছু পাতা
আর বৃক্ষসমীপে
আমি বলেছি ঘুম কিছু পাতা জুড়ে তৈরি হয়
যেটুকু টোল ফেললে হাসি তোমাকে স্নিগ্ধ করে , স্নানে নেয়
পুকুরের জলে কুল্কুচি ছুড়ে ফেলে
এখন সেই ঘাটের প্রান্তে বসে আছি
গোল করে ঘুরে যাওয়া পুকুর
অতি পুরাতন গাঢ় নেমে যাওয়া সিঁড়ি…ধাপ দুই ধাপ
মনে হয় পানিয়ের গায়ে সামান্য প্রানী হয়ে লেগে আছি
এই সন্ধে বেলায় কেউ কাপ তুলবে চুমুক দেবে এবার…
২.
মাথায় ছিপি বয়ে যায় সে তরমুজএর পাশ দিয়ে যাবে
ফালি রাখা লাল ও ঘুম ঠান্ডা ভাউলে সে যাবে
করপাস কলোসাম , দুলে দুলে ঘন্টা বেজে ওঠার মেডুলা অবোলাংগাটা
পায়ের আঙুল খাড়া হয়ে আছে নিপল্ খাড়া হয়ে আছে
এই উঁচু ধরে দেওয়ালগিরি জ্বালাও জাহাঙ্গির
সান্ধ মগরেব এর পর এই পাণ্ডুর মুখ মাবুদ
ছোট্ট নিঃশ্বাস মাবুদ
পাখিদের ওড়া টারমিনেট করে নেওয়া মাবুদ
খোলা জাফরিতে চলে আসছে ভেজা তপতপে বাতাস হুয়াল এক্কিন
মাথায় ছিপি ভেসে যায়, সেখানে শুশ্রূষা রাখো জাহাঙ্গির
অভ্র পোরো গোলাপজল দাও মেহের ছিটিয়ে দাও সেজদা করো
সেজদা এ তাহিয়া
যেখানে সুরমা টানলে চোখের ভেতর দিয়ে মৌরলা চলে যায়…
৩.
এই তো বর্ষা এলো,
মাটির গভিরে , আচমন স্তরে
অঙ্কুরিত হয়ে এল খুব দ্বিবীজপত্রীগুলি…
ভাঙ্গা পাঁচিল ঘেরা এই সেমিট্রি অন্ধকার , নিচু
স্নিগ্ধ্য জৈবমুল ছুঁয়ে আছে সবুজ মেথিপাতা
নলিঘাস
দেবদারু চোখের গাভিগুলি ধবল ও করুণ
গলকম্বলে নদি তুলে নেয়
ঘাস খেতে খেতে মৃতদেহ খেয়ে ফেলে……
৪.
সাঁঝ এলো হাঁটা এলো আরো
কতদূর এই জানতে চাওয়ায় এক সুতলি উট পড়ে থাকে
তার দীর্ঘ গলা শান্ত চোখ আর বানামি বর্ণ গা
চিলে কালান থেকে চিলে কুর্দ, চিলে এ বাচ্চে
এই তো আদর করে নেওয়ার
বুকে পিঠে নরম কাঁখালে
চাপড়ে মেলে দেওয়া শীতের শীতলপাটি
মাজার হে কতদূর পীর , লাইলাক ছুঁয়ে রাস্তামাটি বাজে
মাঙ্কি টুপি ঢাকা মানুষ বাজে কি আরোব্বা লাল হয়ে ডুবে যায় …
সন্ধেবেলা টেনে কতকিছু নেয়…রাস্তাবাতি, কতো খণ্ড মাঠ আর
কি বিরাট গাছ
ঘাম শক্ত হয়ে যাওয়ার পর তবায়ফ জানেএত বড় গাছ তুলে দিয়ে
কিছু মাটি হাঁপিয়ে আছে পীর।
৫.
তাপগুলি আসে , দহন বোলে জমা হয় , অর্থাৎ এই সময়টুকু
যে অর্থে আর্য – সুরেলা ও বিলম্বিত লয় , আমি
গাছে গাছে পাখিগুলি দেখি রোদে আরও উজ্জ্বল
তাদের ডাক
ও পালক গুলি শব্দহীন ক্ষেতের মত
ফল খাবে বলে দুপুরে এসেছে – পাখিরা ঘামে না
তাই উড়তে পারে আর
ক্লান্ত মানুষ ফলসা গাছের নিচে বসে , দু দণ্ড সিগারেট ধরায়
শার্টের বতাম খোলে একটা দুটো ,খোলা বোতামের ভেতর হাওয়া ও ডাহুক ঢোকে
বুকজুড়ে কুব কুব আওয়াজ দিলে মনে পড়ে
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে শ্যামলা ও দ্বিপ্রাহরিক
এলোচুলে চিরুনি বুলিয়েছে কয়েকবার,
বাদামি ও ফাইবার দেওয়া
আমি সেই শান্ত স্টাটিক ইলেক্ট্রিসিটির কথা ভাবি…
৬.
ভোরবেলা সেরিবেলাম থেকে একটি জল পড়ে যায়
যেন তার অনন্ত পাতকুয়ো
ও
শেহনাই নওয়াজ
পড়ে যাওয়া কোনো ধ্যানেশ্রী পুরিয়া
গড়িয়ে যাওয়া কোনো বরিষণ শুরু – এই এয়োতন এই বোধিতন
নিজস্ব গিঁটের কাছে পাতাগুলি সবুজ
মাথার ভেতর বাহির ও বরজঘ্ ঘিরে কোশভর পানি
কত কাঁচোন পুঁটি – বালিচুরা – নান্দিল মাছ
কত চুমৌনা
যেন বাটি ভরে যাবে, ডাল বাটি চুরমা
ঢেঁকুর উঠলে কিছুটা গ্রেভি উঠে আসে জাহাঙ্গির
কিছুটা গ্র্যাভিটি উঠে আসে
৭.
পূব থেকে বুলানি আসে – ওঠে নামে ভাঙে
জলের কাসিমিরগুলি
এ হোয়াইট অন এ হোয়াইট –
কিছুটা গিয়ার বদল করে পাখি ওড়ে , শ্যামাপোকা
বদরুর বউ
“ এট্টু সূর্যানি দিতে পারো – হে দেওতা , হে মাধব আমার ”
বসে থাকার রু ঐ , দেখে নেওয়ার রু
দরবারে মজলিস্
শাহি মুন্দ , শাহি দিওয়ান , শাহি নাজরানা
যেন মুজরা ধরে বেঁকে গেছে সমস্ত রৌশনআরা
ঐ পহেলগাঁও ,মউসিকি ঐ চিকচিকা
জাহাঙ্গির ঘাগরা টান মেরে নিচে নিয়ে দেখি ইলাস্টিক চেপে ছিল
কোমর ঘিরে গোল স্ফূট রেলপথ –
ট্রেন চলে যাচ্ছে …
৮.
নিঃসীম দুপুরগুলি আসে , তাপ আসে, বাড়ে
আর প্রাচীন বটগাছটি
তার ছায়া গোছায় , হাওয়া গোছায় , বয়সোচিত গুন গুন করে
আর বটগাছ হাঁটতে পারে না
এই নির্বিকল্প
অর্থাৎ তারও গন্তব্য আছে
যেভাবে আলোর চলে যাওয়া গাছ পুকুর বাঁশবন পেরিয়ে
খালের জলে তিঁতপুঁটি ফুট কাটছে ,আবার একটুদূরে তিঁতপুঁটি , জল
অর্থাৎ গন্তব্য আছে , ভাবি,
সেই শ্যামাঙ্গী ঘন আয়তচোখের মেয়েটির কথা ,সে তার বুক খুলে দিয়েছিল
চিৎকনা, ঘন নরম তামার বাটির মত , বলেছিল চাপ দে…
হে অন্ত্যরীক্ষ সুক্ষ স্থূল কারণদেহ, চাপ দিলে কোথায় যাবে
হে তুরীয় চাপ দিলে কোথায় যাওয়া হয়!
ভাবি , দুপুর বাড়ে তাপ বাড়ে বিন বিন করে ওঠে পিঠ
আড়চোখে চেয়ে দেখি ঘাম, অটো ধরবে বলে দাড়ি্যে রয়েছে
৯.
যা অনর্গল সেখানে আতপ চালের গন্ধ লেগে থাকে
টুকু মেথিশাক, আর প্রয়োজনীয় কাঁচালঙ্কার
ভূমিকাটুকু ক্রমশ…
তাকে সবুজ ও ত্বকপ্রিয় হতে হবে
নিটোল ঝরঝরে ও প্রসাধনীমুগ্ধ, আয়নার সামনে
আয়ত পাতার ওপর গ্রীষ্মের রোদ পড়ে ছড়ে যাচ্ছে
উঠোনভর খাঁ খাঁ, শুধু পিতলের পাতিলটিতে পলাটি নড়ে
তা্
মরদ ফিরে লাল সুতার বিড়ি ধরিয়ে নেয়
আর,
অতি প্রশস্থ দুপুর জুড়ে সেই থালি বাটি গৃহস্থ জমজম করে
বেজে ওঠে অভাব, তার ভিতরের ক্ষিন্নতাটুকু
বিশ্রামটুকু
তালের কড়ি থেকে ঝুঁকে থাকে কতদিনের শুকনো হাঁড়ি
তেঁতুল জারানো ওই শ্বাসকষ্টটুকু
যেন সে সব শুঁকে নেবে, হিক্কা লাগে জাহাঙ্গির
গলায় ছোট্ট চার্চ লেগে যায়…
১০.
হাওয়া তো আর কে পুরম , সেক্টর বত্রিশ — সে দেয়
আর দিগরের সামান্য ওপরে তোমাকে ঘুড়ির মত লাগে
জাহাঙ্গির
যেন ,
শিশির পড়লে ভারি হয়ে আর একটু জমিতে নামবে
ঝাপটে নেবে কানকো অ শীত
শাদা ফতুয়া
ঐ যেখানে বট উড়েছে , লিলি করছে পাতা মাটির গন্ধ ও
গোল হয়ে গড়িয়ে যাওয়ার ফল ,
—– ছোট্ট টপ্পর
সন্ধ্যে জল ঢালছে
সিথানে সেই এক ছোট্ট টপ্পর শিয়াকুল দিয়ে ঘেরা, পীরের মাজার
একা জ্বলে থাকা টিমি ফেলে দিছে তার বিটা করোটিন
সোনালি চুপচাপ কেউ
মাটির ভেতর চান করতে চলে গেছে…
অস্তনির্জন দত্ত
জন্ম – ২ অক্টোবর, ১৯৮২
মৃত্যু – ১১ মে ২০২৭ (কনফার্ম না)
পেশা – Engineer at EMC , Storage profile, দিল্লি
নেশা – কাল ঘর পরিস্কার করব এই ভেবে আনন্দ পাওয়া
প্রকাশিত বই – একটা দুটো অস্ত
কবিতা লিখি , লিখব এই একটা যায়গা আছে যেখানে, এই নিঃশ্বাসটুকু বেশ ভাল, ঝরঝরে…