‘কিছুটা শরীর সহো’ পাণ্ডুলিপি থেকে কবিতা ও চিত্র ।। মারুফ আদনান

লেখালিখি একটি হাতের তালুতে জল ধরে রাখার মতোনও কাজ। বেশিক্ষণ নাও সামলানো যেতে পারে। আবার বেশিক্ষণ ধরে রাখার দরকারও নাই। হাতে জল না নিলেও সম্যাসা কী? ছবি আঁকার সাথে সাথে লেখা অথবা লেখার সাথে আঁকা এভাবে মজা পেয়ে গেলাম। নিজের মধ্যে নিজে বাঁচতে লেখালেখি আর ছবি আঁকা। লেখালিখি আর ছবি আঁকা দুইটারে এক করলে কেমন হয়, এরকম ভেবেই জমানো লেখা আর আঁকা ছবিতে বই করার চিন্তাটা আসে।ছবি আর লেখার প্রসঙ্গ এক। শরীর হলো মানুষের দৃশ্যগত অস্তিত্ব, পৃথিবীতে সব কিছুর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের একমাত্র উপায়। বই করার ভাবনাটা হঠাৎ করে না। মনে মনে প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম আর কি। ছোট ছোট ক্ষণিকের ভাবনাগুলোকে সরলতম ভাষায় কম কথায় বলতে চাইছি। কিছু কিছু ফেইসবুকেও ছিলো। যেহেতু মানুষ সামগ্রিকভাবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর দিয়ে যায় সেহেতু এই অবস্থানে, রাষ্ট্রে, বিশ্বাসে, সংশয়ে বস্তুগত ও অবস্তুগত অনেক সময়ানুপাতিক ব্যাপার ‘হার্ডলি সারভাইবার’র বিদ্রুপার্থক পার্স্পেক্টিভ থেকে দেখতে চেয়েছি এখানে। অস্তিত্ব কিসে আছে বুঝতেছি না। – মারুফ আদনান


বই: কিছুটা শরীর সহো
প্রকাশক: চৈতন্য
প্রথম প্রকাশ: বইমেলা ২০১৭
প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত


নিজেদের শরীরের যে সমস্ত অঞ্চলে আমরা কম পৌঁছাতে পারি সেখানেই নাকি ব্যর্থতা সব জমা থাকে।
মনুষ্য শরীরের বয়স হিসেব রাখে নিজেদের দু’টা হাঁটুই।
সমান ওজনের দুই জন মানুষ একই ভাবে ত্রিভূজ আঁকতে পারে না কারণ একজন আপেল খায়, অন্য জন খায় না।
বলা হচ্ছে, মানুষের ত্বক কখনো হয়তো কিছুটা আঁইশাবৃত হবে, সাপের মতো। খোলসও পাল্টে নিতে পারবে
মাঝে মাঝে।
তরমুজ খাওয়ার পরই প্রথম মানুষের লিঙ্গ চেতনা জাগে।

1.jpg

 

মানুষের সঠিক কোনো ওজন নাই আসলে।
মানুষ দু’টা কারণে পঁচনশীল; প্রথমত না চাইলেও তাকে অনেক কিছু দেখতে হয় আর দ্বিতীয়ত তার শরীরে ঘ্রাণ আটকানোর ভালো কোনো সিস্টেম নাই।
শরীরের স্পর্শকাতর অঞ্চলে মানুষ বয়ে বেড়াচ্ছে গণ্ডার কিংবা কুমিরের অভিশাপ।
দেখতেছি যে, সকলে আত্মার আঘাতের চাইতে শারীরিক আঘাতকেই বেশি ভয় পাইতেছে।
কোলাহল কী? – ট্যাঙ্কের শব্দে কূপের কাতরানো জল।

 

2.jpg

 

মানুষের একটি মুখ আছে জানার পর আয়নার আবিষ্কার হলো।
যার ঘুম আপনি সহ্য করতে পারেন না, ঘুম থাকতে থাকতে তার হাতের তালুতে লিখে দেন ‘তোর ডান হাতে সাতটা আঙুল’।
সম্ভবত মানুষের একটা হাতের ওজন একটু বেশি হয়।
নিশ্চয়ই মানুষের শরীরে কোথাও না কোথাও একটা পাথর আছে।
শরীরের সমস্ত রস অস্থি পেশীর কার্যকারণ না জানলেও শরীরটা আমারই।

 

3 jpg

 

প্রাণিগণ কীভাবে খাঁচায় ঢুকে?
মধ্যদুপুরে পকেটে চিড়িয়াখানার ইমেজ নিয়ে আমরা বনের ভিতরে ঘুরে বেড়াতাম। বনটারে মনে হতো বুড়ো মানুষের পিঠ। চিড়িয়াখানার ছবিগুলা বনের গভীরে ছড়িয়ে দিতাম সন্ধ্যাবেলা। পরদিন ভোরে জানোয়ারেরা বনের বাইরে জমা হতো আর আমরা তাদের কুড়িয়ে নিতাম। পশুবাহী গাড়ী ঝনঝন করে চলে আসতো। গাড়ী পশু ভর্তি হলে আমরাও ঢুকে পড়তাম গাড়ীতে। খাঁচার ভেতর থেকে পৃথিবীটাকে দেখতাম আর পশুর চোখে চোখ রেখে চলে আসতাম ছবির সেই চিড়িয়াখানায়। পশুরা যে যার খাঁচায় ঢুকে পড়লে আমরা দাঁড়িয়ে থাকতাম। দাঁড়িয়ে দেখতাম বিশাল বিশাল প্রাণিরা খাঁচার কোণায় হেলান দিয়ে বসে থাকে। তাকিয়ে থাকে। ওরাও কি মানুষদের খাঁচার ভিতরে মনে করে? আমরা দেখতাম খাঁচায় প্রাণিদের ছায়া আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়।
নো মোর টুডে…

 

4

 

প্রথম ডালিম খাওয়ার পর মানুষ বুঝেছে তারও বেদনা বোধ আছে।
নিজের শরীর স্পর্শ আর অন্যের শরীর র্স্পশের মধ্যে একটা পার্থক্য হলো প্রথমটা মৃত আর দ্বিতীয়টা জীবিত মনে হয়।
একটা শরীর পুরনো হলে অন্য একটা চেঞ্জ করা যেতো, তা না পারার কারণ হতে পারে প্রায়ই আমরা বিরক্তি নিয়ে দাঁত ব্রাশ করি।
জ্যামিতি অনেকটাই শরীর সম্পর্কীয় তো, না?
ধারণ হও কিছুটা মেজেসহ।

 

5

 

শেয়ার
সর্বশেষ সংখ্যা