দ্বিতীয় দশকে যে সকল কবি তার আপন কাব্যভাষা এবং স্বর তৈরি করতে পেরেছেন, তাদের মধ্যে চঞ্চল মাহমুদ অন্যতম। ২০১৭ সালে এসে প্রকাশ হলো চঞ্চলের প্রথম কবিতার বই ‘কম্পিত বিন্দুর ধারণা’। বই প্রকাশের আগেই চঞ্চলের কবিতা নিয়ে কম আলোচনা হয়নি; বিশেষত ‘অ্যালেক্স’ চরিত্রটিকে যেন এ সময়ের কবিতা থেকে কোনভাবেই আলাদা করা যায় না। শিরিষের ডালপালা পাঠকদের জন্য বই থেকে কয়েকটি কবিতা…
বই: কম্পিত বিন্দুর ধারণা
প্রকাশক: চৈতন্য
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
প্রচ্ছদ: আসাদ জামান
কোদাল
বাইবেলের মতো প্রাচীন কোদাল হয়ে তুমি আমার হৃদয়ে রোপণ করতে এসেছো আমারই মৃত্যুসংবাদ
২.
জন্মের দৈর্ঘ্য পেরিয়ে, ম্যালো জীবনকে বলছে, কই যাস? জীবন তাকাচ্ছে বর্ণালীর অপচয় থেকে। ম্যালো ডুবে যাচ্ছে রঙে। ভেসে উঠছে সুইসাইড নোট।
পৃথিবীতে তখনও ম্যালোর মা বেঁচে আছেন। মায়ের অসুস্থতার ভেতর সে রোপণ করতে চেয়েছিল মায়ের প্রিয় সকল ফলের বাগান।
এবং চেয়েছিল, নিজের মৃত্যু দীর্ঘ হতে হতে সেসব ফলের ভারে নুয়ে পড়বে অসুস্থতার সকল ডাল-পালা।
কিলবিলিয়ে উঠবে জীবন।
৩.
ম্যালো, আমাদের শরীরে জেগে উঠেছে শিমক্ষেত। সারি সারি জাহাজ ভেসে আছে শিমগাছকে নোঙর করে। হুইলচেয়ারে বসে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ইউরোপ হাঁপাতে হাঁপাতে পাটাতনে এসে বসে।
ম্যালো, জাহাজ চলতে শুরু করেছে। ভাসতে ভাসতে আমাদের কোনো বিশ্রামের সময় ইউরোপকে নামিয়ে দিয়ে যাব আরও কোনো পঙ্গুত্বের দিকে।
৪.
ইউরোপের প্রতিটা ফসলের ক্ষেত একেকটা ভাসমান নৌকা। সেসব নৌকার পাল হয়ে আমরা জন্মালাম।
ম্যালো, বাতাসে জীবন ঠেকিয়ে, ফসলের শৈশবকে আমরা বার্ধক্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছি।
৫.
পৃথিবী একটা ভাতের পাতিল। সূর্য একমাত্র ফুয়েল। আমরা প্রতিটি মানুষ চাল-ডাল—সেদ্ধ হচ্ছি, বিপরীত গোলার্ধের ক্ষুধার্ত মানুষের দাঁতে কাটা পড়ব বলে।
উত্তর-গোলার্ধজুড়ে ভাতের পাতিল
দক্ষিণ-গোলার্ধজুড়ে ভাতের পাতিল
পৃথিবীতে একটি সূর্য
দিনে দুইবার জেগে ওঠে
পৃথিবীতে একটি সূর্য
দিনে দুইবার ডুবে যায়
৬.
আমার ইরির ব্লক চৈত্রে হাঁপায়
ইঞ্জিন শব্দ করে কেঁদে ওঠে
তুলতে পারে না একফোঁটা পানি
আমার একটাই দুধের গাভী
দূরের তালগাছকে
পানির উৎস কল্পনায়
জিহ্বা বাড়িয়ে দেয়
ধানক্ষেতের উপর দিয়ে।
আমার গাভী মরীচিকা…
৭.
ম্যালোর কাঁধজুড়ে ইউরোপ
একহাতে কোদাল
আরেক হাতে হারিকেন
ম্যালো হেঁটে যাচ্ছে উত্তর আমেরিকার দিকে
নোটবুক হয়ে পড়ে থাকে ভূমধ্যসাগর
৮.
ম্যালো, আমাদের চেহারা ধারণ করে আছে ড্রেনেজ সিস্টেম। উচ্চতা ভাঙতে ভাঙতে নবান্নে ভেঙে গেছে যেসব পা, আমরা সেসব দুর্বোধ্য আচরণ মুখস্থ করে ফেলেছি গলিত আপেলের রূপবর্ণনার দক্ষতাস্বরূপ। মেঘে মেঘে চুমুকালীন, বাতাসে ঝরলে লালা, আমরা ভিজতে থাকি বৃষ্টিতে।
কী মনোকম্পিত এক গোলচক্কর মাথার ভেতর ভনভন করে দোলে ।
কবি পরিচিতি:
চঞ্চল মাহমুদ
জন্ম: ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৮৮
সুজানগর, পাবনা।