কবি হাসনাত শোয়েবের সঙ্গে আট কবির আলাপচারিতা ।। অন্তিম পর্ব

আমার প্রথম বইয়ের প্রকাশের প্রস্তাব আমি পাইছিলাম কোরবানির গরুর হাঁটে গরু কিনতে গিয়ে। সেখানেই মেঘনাদ এর প্রকাশক নিজাম ভাই ডেকে পাণ্ডুলিপি রেডি করার কথা বলছিলেন। যেটাতে খুব অভিভূত হইছিলাম।


হুজাইফা

রিলকের letter to young poet পড়েছেন?

শোয়েব

হ্যাঁ, পড়া আছে।

হুজাইফা

আমার কাছে মনে হয়েছে সবগুলো চিঠিতেই রিলকে কয়েকটি মেসেজ দিতে চেয়েছেন, কবিতার জন্য নিমগ্নতা, ধ্যান, ডেডিকেশন, এই বিষয়গুলো বিশেষভাবে এসেছে আপনার কাছে এসবের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? বা আপনি কি রিলকের সাথে একমত?

শোয়েব

আমার আসলে ডিটেল মনে নাই। সংক্ষেপে বলো একটু। অনেক আগে পড়ছি। তবে এটুকু মনে আছে অন্যের মতের জন্য অপেক্ষা না করে নিজের ওপর আস্থা রাখার কথা বলছিলেন। আর কিছু?

হুজাইফা

এইটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল তার। আরও একটা বিষয় তিনি বারবার বলেছেন, কবিতার জন্য সবচে বেশী প্রয়োজন সেল্ফ ডেডিকেশন, নিজের জন্য একান্ত নির্জন একটি জগৎ নির্মাণ করা। যে জগতের বাসিন্দা কেবল কবি এবং তার কবিতা!

তিনি বলেন, আগে নিজেকে প্রশ্ন করো, কবিতা লেখা ছাড়া তুমি বাঁচতে পারবে কিনা। যদি মনে হয় বাঁচতে পারবে, তাহলে তোমার কবিতা লেখার প্রয়োজন নাই!

তিনি বিষয়টা ঐ পর্যায়ের সিরিয়াসলি নিয়েছেন!

শোয়েব

আমি পড়ে খুব অভিভূত হইছিলাম। উনি যা বলছেন একমত। সেল্ফ ডেডিকেশন এবং নিজের জগত নির্মাণের কোন বিকল্প নেই। আমি সেইরকম ভাবি। তবে বাঁচতে পারলে লেখার দরকার নাই এটা একটু মেলোড্রামাটিক। কিছুটা বাড়াবাড়িও বটে।

হুজাইফা

নিজস্ব জগৎ নির্মাণের ডেফিনেশন বা রূপরেখা কি আপনার কাছে? আপনি কিভাবে চিন্তা করেন এই বিষয়টা?

শোয়েব

আসলে এইটা এক্সপ্লেইন করার মতো না মনে হয়, বা আমি পারবনা। তবে নিজের অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি, পাঠ এবং কল্পনার বিস্তার দিয়ে এইটা তৈরি করতে হয় সম্ভবত। এইটা একটা দীর্ঘ প্রসেসও বটে।

হুজাইফা

আচ্ছা, নিজস্ব জগৎ বলতে অনেকে বুঝে থাকেন, সাইন মার্ক। অর্থাৎ কোন একটা ভাষাভঙ্গিকে নিজের করে নেয়া। পরবর্তিতে যে কেউ সেটা পড়লেই বুঝতে পারবে এটা অমুকের টেক্সট! ডিফাইনেশনের এটা একটা প্রক্রিয়া হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এটা খণ্ডিত ধারণা-মাত্র।

আপনার কি মত?

শোয়েব

আমারো মনে হয় তবে অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গী, পাঠ এবং লাইফস্টাইলের সমন্বয় না ঘটালে সাইন মার্ক তৈরি সম্ভব না। আর হ্যাঁ খণ্ডিত অবশ্যই।

হুজাইফা

কবিতায় আপনার কাছে সবচে গুরুত্বপূর্ণ কোন জিনিসটা? ভাষা না থিম?

শোয়েব

দুটোই। একটা ছাড়া আরেকটা দাঁড়ায় না।

হুজাইফা

আপনার সঙ্গীতরূচির প্রভাব আছে আপনার কবিতায়, এইটা কখনো মনে হয়েছে আপনার?

শোয়েব

হ্যা। মনে হওয়ার কিছু নাই। এটা আছেই নিশ্চিতভাবে

হুজাইফা

আপনার এই রূচি একমুখী ! এর কোন ভেরিয়েশন নাই?

শোয়েব

আসলেই কি তাই? আমার দুটো বই কি একরকম? ভেরিয়েশন ছাড়া? তোমার এরকম মনে হয়?

হুজাইফা

আমি বই হিসাব করে অবশ্য বলিনি। টোটালি বলেছিলাম!

শোয়েব

টোটালি একটা টোনে হয়তো কথা বলে। আমি নিশ্চিত না। আমি হয়তো এর বাইরে পারি না।

হুজাইফা

মেলোডি আছে আপনার কবিতায়, সেটা একটা কবিতার টোটালিটিতে ধরা পড়ে, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এর ভাষাভঙ্গিটা ওই অর্থে মেলোডিয়াস না। আমি এও জানি এটাকে মেলোডিয়াস করার জন্য আপনার আলাদা প্রচেষ্টা থাকে না!

শোয়েব

হতে পারে। আমি আসলে এসব কথায় খুব কনফিউজড হয়ে যাই। আমি লেখার পর এডিট করি না, খুব বেশি পড়িও না। তাই আমার কবিতাতে ফাঁক থাকে। এগুলো মেনেই আমি লিখি। আমি নিজে আমার লেখার পাঠক না। তাই হয়তো অত বলতেও পারিনা।

হুজাইফা

হা হা হা। এইটা আসলে আপনার কাজও না। আমি কিন্তু এটাকে আপনার অপূর্ণতা বা ফাঁক বুঝাতে চাইনি। এটা আপনার স্টাইল! আপনার স্টাইল ব্যাবহারে আপনি স্বাধীন। এক্ষেত্রে পাঠকের কথা বিবেচনায় রাখা উচিৎ না, আমার মনে হয়!

শোয়েব

আমি মনে রাখিও না। আমার মনে হয় আর কি এমন। দোষে-গুণে যেমন মানুষ, আমারো দোষে-গুণে কবিতা। হা হা হা

হুজাইফা

ওইটা তো আপনার কবিতার দোষ না! ওইযে বললাম না,স্টাইল। একটা কবিতার ল্যাঙ্গুয়েজ ওই পর্যায়ের মেলোডিয়াস না হওয়া সত্ত্বেও কবিতাটি মেলোডিয়াস মনে হইতেছে পাঠকের কাছে। আমি আমার অবজার্ভেশনের কথা বললাম। এটা কবিতার দোষ হিসেবে দেখি না আমি।

শোয়েব

তোমার অবজার্বেশন আমার ভালো লাগছে। তবে আমি নিজে আমার কবিতাকে অত নিখুঁত ভাবি না।

হুজাইফা

সেটা ভাবা উচিৎও না! আবার আপনি নিখুঁত ভাবলেই যে সেটা নিখুঁত হয়ে যাবে, এমনও না! হা হা হা

শোয়েব

একদম তাই। পৃথিবীর কিছুই নিখুঁত না। কথাটা ক্লিশে শুনালেও সত্যি।


সব সংগীত যেমন সৌলফুল না, তেমন সব কবিতাও ইন্টেলেকচুয়াল না।


হুজাইফা

একটা সময় ছিল বাংলা কবিতায় উপমার ব্যবহার হতো খুব, খুব বেশিদিন আগে না। জীবনানন্দের মত লোক বলেছিলেন, উপমাই কবিতা! আপনার কাছে কি মনে হয় এখনকার বাংলা কবিতায় উপমার ব্যবহার আগের মতো আছে? আপনি নিজে এর কতটুকু ব্যবহার করেন?

শোয়েব

উপমাই কবিতা এটা মানি না। আগের মতো নাই মনে হয়। তবে কবিতার কারণে করতে হলে সমস্যা দেখি না। আমিও করি প্রয়োজনে।

হুজাইফা

আমার মনে হয় উপমার আগের অবস্থানটি এখন দখল করেছে ইমেজ বা চিত্রকল্প!

শোয়েব

এটা আমিও মনে করি।

হুজাইফা

আমরা প্রচুর ইমেজ ব্যবহার করছি। উপমার চেয়ে ইমেজের বিষয়টা আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়।

শোয়েব

আমারো। আমি নিজেও প্রচুর ইমেজ ব্যবহার করি।

হুজাইফা

আপনার একাডেমিক্যাল ফিলোসফি কি আপনার কবিতার ক্ষেত্রে কোন সাহায্য করে?

শোয়েব

অবশ্যই। অনেক হেল্প করে। ফিলোসফি পরোক্ষভাবে আমার কবিতাতে চলে আসে।

হুজাইফা

আমি ফিলোসফি জানি না বিধায় সেটা ধরতেও পারি না!

শোয়েব

সেইটা ধরার দরকারও নাই। কবিতা কবিতাই, সেটা দর্শন না। দর্শন অন্য জিনিস।

হুজাইফা

মিউজিক ও কবিতা, কোনটাকে বেশি পাওয়ারফুল মনে হয়? আই মিন, মানুষকে টাচ করতে পারে কোনটা বেশি?

শোয়েব

দুটার কাজ আলাদা। আমি এভাবে ভাগ করতে রাজী না। কবিতার কাজ একরম, মিউজিকের অন্যরকম।

হুজাইফা

ভাগ করতে চাইলে কিন্তু করা যায়! আমারে কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি ভাগ করতাম, এবং বলতাম মিউজিক ইজ মোর পাওয়ারফুল দ্যান পোয়েট্রি!!

হা হা হা

শোয়েব

এটা তোমার মত আর কি। আমি ওইভাবে ভাবতে চাই না। আমার কাছে একেক সময় একেকটা পাওয়ারফুল।

হুজাইফা:

হা হা হা। এটা আমার মত। কারণ কবিতায় ইন্টিলেকচুয়ালিটির বিষয়-আশয় আছে। সুরে সেটা নাই। পুরোটাই সৌলফুল! ইউরোপিয়ান ক্লাসিক মিউজিক শোনেন? বিবালদি, মোজার্ট, বিটোভেন!

শোয়েব

সব সংগীত যেমন সৌলফুল না, তেমন সব কবিতাও ইন্টেলেকচুয়াল না।

হা শুনি , তবে খুব কম।

বিটোভেন আমি এক সময় অনেক শুনছি।

হুজাইফা

সবচে বেশি শোনেন কোন ঘরানার সঙ্গীত?

শোয়েব

পাশ্চাত্যের হার্ড রক মিউজিক, বাংলা ব্যান্ড মিউজিক এবং পুরানা নব্বই দশকের হিন্দি গান।

হুজাইফা

উপমহাদেশীয় রাগ, গজল?

শোয়েব

ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল মিউজিক আমাকে খুব আক্রান্ত করে। আমি বেশিকক্ষণ শুনলে মাথা নষ্ট লাগে। তাই কিছু দিন পরপর শুনি। গজলে জগজিৎ প্রায় শোনা হয়।

হুজাইফা

বাদ্যযন্ত্র কোনটা বেশি প্রিয় আপনার কাছে, গিটার ছাড়া?

শোয়েব

আমি সরোদের অসম্ভব ভক্ত। কখনো সুযোগ হলে আমি সরোদ শিখব এবং আমি শিখবই।

হুজাইফা

সরোদ দেখতে অনেক বড় দেখা যায়, এইটার ওজন কেমন?

শোয়েব

ধারণা নাই। কখনো ওজন মেপে দেখিনি।

হুজাইফা

শিল্পী স্টেজে গান শুরুর আগে বাদকদের কানে কানে কী বলে? এটা জানার আগ্রহ আমার অনেকদিনের?

শোয়েব

কোন গান করবে সেটা বলে, স্কেল বলে। অনেক সময় আত্মবিশ্বাসও রাখতে বলে।

হুজাইফা

তার মানে সমস্ত গানকে কয়েকটা স্কেলে ভাগ করে নেয়া হয়েছে?

শোয়েব

নাহ। সে কোন স্কেল থেকে গাইবে। কোন কর্ড ধরবে। এসব সম্ভবত। আমার আসলে মনে নাই অত।

হুজাইফা

আপনার ক্ল্যাপস সিরিজের কবিতাগুলো আমাদের সময়ের অসাধরণ এবং অভিনব একটি কাজ! এর জন্য আমি আপনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই!

শোয়েব

ধন্যবাদ আনন্দের সাথে গৃহীত হলো।


ছাত্র ইউনিয়নে গিয়ে আমি রাজীব দাকে (রাজীব দত্ত) পাই। ওনার প্রভাব শুরুতে লেখাতেও ছিলো। উনি আমার সবচেয়ে বেশি উপকার করছেন সেটা হলো, ওনি আমাকে কি পড়া উচিত সেই রাস্তাটি তৈরি করে দিছেন। ওনার মাধ্যমে আমি কন্টেম্পোরারি লিটারেচার নিয়া পুরা ধারণাটা পাইছি। আমি আজ যেটুকু লিখছি, ওনার কন্ট্রিবিউশন হিউজ।


জয়

লিটল ম্যাগগুলো তো স্কুল অব থটের জায়গাটা নিতে পারতো। এখন ওয়েবম্যাগগুলা কি পারে? পারলে কিভাবে?

শোয়েব

না পারেনা। এগুলা খুবই ইরেগুলার। আর কনক্রিট কিছুও না। থট ডেভেলপ করতে হলে পিউর একাডেমি লাগবেই।

জয়

তোমার কবিতা এবং কবিতার যে ভাষা, তার স্কুল অব থট কি ছিলো?

শোয়েব

না না। কবিতা অন্য জিনিস। আমি ফিলোসফি পড়ে আসছি তার একটা অবচেতন প্রভাব আছে এর বেশি কিছু না।

জয়

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের ওই বলয়টা তোমার লেখালেখিতে কোন ভূমিকা রাখছে?

শোয়েব

চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় নির্ঝর দার সাথে আমার কখনো কথা হয় নাই। ওনার সাথে আমার প্রথম সিরিয়াসলি দেখা ও কথা দুই হাজার বারোর মেলায়। তখন উনি ঢাকাতে চাকরি করেন। ছাত্র ইউনিয়নে গিয়ে আমি রাজীব দাকে (রাজীব দত্ত) পাই। ওনার প্রভাব শুরুতে লেখাতেও ছিলো। উনি আমার সবচেয়ে বেশি উপকার করছেন সেটা হলো, ওনি আমাকে কি পড়া উচিত সেই রাস্তাটি তৈরি করে দিছেন। ওনার মাধ্যমে আমি কন্টেম্পোরারি লিটারেচার নিয়া পুরা ধারণাটা পাইছি। আমি আজ যেটুকু লিখছি, ওনার কন্ট্রিবিউশন হিউজ।

জয়

তারপর চর্চাটা শুরু করলা কিভাবে, কখন মনে হইল কবিতাই তোমার সৃষ্টির ঠিকানা?

শোয়েব

ঠিকানা-ফিকানা ভাবিনি। পড়তে পড়তে মনে হলো এসব আমিও লিখতে পারি। ব্যস শুরু করে দিলাম। সে ধারাবাহিকতায় এখনো লিখতেছি।

জয়

তুমি তো সমুদ্রপাড়ে বড় হইছ। পতেঙ্গা কি কোন ভূমিকা রাখছে তোমার সৃজনশীল জীবনে?

শোয়েব

এগুলা আসলে রাখেই। পরিবেশ সবাইকে প্রভাবিত করে। আমার বাড়ি পাহাড়ের ধারে, বড় হইছি সমুদ্রপাড়ে। এসব প্রভাব এড়ানোর কোন সুযোগ নাই

জয়

কী কী প্রভাব রাখছে, একটু যদি বিস্তারিত বলতা?

শোয়েব

মানে আমার মানসিক চিন্তা প্রক্রিয়ায় প্রভাব রাখছে। আমার কল্পনাকে বিস্তৃত করছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব সম্ভবত অবচেতনে রাখছে। যার ছাপ বোঝা যায় কিন্তু বলা যায় না।

জয়

আচ্ছা। তোমার ভাষা আলাদা, বলার ভঙ্গি কিছুটা জুয়েল মোস্তাফিজের সঙ্গে মিলে যায়। ভাতের ভূগোল তোমাকে কতটা প্রভাবিত করেছে শুরুর দিকে?

শোয়েব

বইটা আমার পছন্দের । কিন্তু আমার মনে হয় না ওই বইয়ের কোন প্রভাব আমার লেখায় আছে কিংবা জুয়েল ভাইয়ের কোন প্রভাবও।


ফেসবুকের কল্যাণে অনেকেই কবি হিসেবে বেরিয়ে আসছেন যারা আসলে এক ধরনের অনুকরণ করে লিখছেন । আর পঠন-পাঠনেও বিস্তর সমস্যা আছে। আপনি যত বড় কুতুব হন না কেন, মিনিমাম পড়াশোনা না থাকলে একটা সময় পর এক্সপ্লোর করতে পারবেন না।


জয়

বেশ। আমাদের সময়ের বাংলা কবিতার সম্ভাবনাময় বাঁকগুলো কি কি তোমার দৃষ্টিতে?

শোয়েব

নানা এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে ভাষায়, বিষয়ে । অনেকেই ভালো লিখছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে অনেকেই নিজস্ব ভাষা ও ভঙ্গি নিয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সামনে আরো এক্সপ্লোর করবে।

জয়

আর এ সময়ের বাজে দিকগুলো?

শোয়েব

ভালো যেমন অনেকেই লিখছেন। ফেসবুকের কল্যাণে অনেকেই কবি হিসেবে বেরিয়ে আসছেন যারা আসলে এক ধরনের অনুকরণ করে লিখছেন । আর পঠন-পাঠনেও বিস্তর সমস্যা আছে। আপনি যত বড় কুতুব হন না কেন, মিনিমাম পড়াশোনা না থাকলে একটা সময় পর এক্সপ্লোর করতে পারবেন না।

জয়

এটা বেশ বলেছ। মাস্তানি করে সম্ভবত কবি হওয়া যায় না। কবির মাস্তানি শুধু শব্দের সাথে। আচ্ছা, হাজার হাজার বই বের হয় বইমেলায়। প্রকাশকদের টাকা দিয়ে বই করাটাকে তুমি কিভাবে দেখো? এই হাজার হাজার বই প্রকাশটাও।

শোয়েব

বই লাখ লাখ বের হলে আমি খুশি হবো । আমি নিজে টাকা দিয়ে বই করতে চাই না। আমি করিও নি। কেউ চাইলে করতে পারে। বিষয়টা দু পক্ষের সমঝোতারর ওপর নির্ভর করছে।

জয়

এতে কী ক্ষতি না?

শোয়েব

ক্ষতি আছে। তবে এগুলা সামগ্রিক সিস্টেমের প্রবলেম। একটা বিষয় দিয়ে এক্সপ্লেইন করা যাবে না। সামগ্রিক সিস্টেমে আর না যাই।

জয়

তুমি রকস্টার হিসাবে ব্যর্থ হইলা ক্যান?

শোয়েব

ব্যর্থ হইছি কে বলল? আমার মিউজিক হয় নাই নানা কারণে। তাও আমি নানাভাবে নয় বছর ব্যান্ডে যুক্ত ছিলাম। মিউজিকে রকস্টার না হইতে পারলেও অন্যভাবে হওয়ার সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায় নাই। সেটা কবিতা দিয়েও হতে পারে

জয়

বাহ্, তুমি তাহলে রকস্টার কবিই হতে চাও। সানগ্লাসবাবা হওয়াটা কি সেই চাওয়ারই পরিপূরক?

শোয়েব

ওইটা একটা ফান পার্ট। মজা করার জন্য। এগুলার সাথে সেসবকে না মেলানো উচিত। ফেসবুকে সময় কাটানো কেবল।

জয়

কিন্তু এসব কিন্তু তোমার পাঠকদের আকৃষ্ট করছে

শোয়েব

সেটা অন্য বিষয়। আমার পাঠক শেষ পর্যন্ত কবিতাই পডবে। সেখানে কিছু থাকলে তারা দাঁড়াবে। নয়তো হেঁটে চলে যাবে।

রোবায়েত

শোয়েব, তোমার প্রথম বই প্রকাশের পেছনে কোনো ঘটনা আছে? মানে। প্রকাশক সংক্রান্ত?

শোয়েব

আমার প্রথম বইয়ের প্রকাশের প্রস্তাব আমি পাইছিলাম কোরবানির গরুর হাঁটে গরু কিনতে গিয়ে। সেখানেই মেঘনাদ এর প্রকাশক নিজাম ভাই ডেকে পাণ্ডুলিপি রেডি করার কথা বলছিলেন। যেটাতে খুব অভিভূত হইছিলাম।

রোবায়েত

হা হা!

ভাবতেছি, আমার নেক্সট বইয়ের প্রকাশক খুঁজতে যাবো গরুর হাটে!

শোয়েব

হা হা হা হা

জয়

ধন্যবাদ, শোয়েব। তোমার পাঠক কবিতার জন্য থাকুক। অন্যকিছুর জন্য না।

শোয়েব

আমিও সেইটা আশা করি

রাসেল

রোবায়েত, গরুর হাটে প্রকাশক খুঁজতে যাইয়েন না। পুরো গরুর দাম দিয়ে আসবেন।

শোয়েব

হা হা হা হা

শেয়ার