কবিতার কাজ এমন নয় যে তা বাজিমাত করতে এসেছে, তার একটা অন্তশ্চারী যাতায়াত আছে, তা কোথাও নীরব তীক্ষ্ণ সংবেদী কোনো প্রান্তবাসী মনের সমর্থন খুঁজে ফিরছে মাত্র, আর এই জন্যে তার মধ্যে দিশেহারা হওয়ার কোনো ব্যগ্রতা নাই। অ্যাপেলেসের আঁকা মাদি ঘোড়ার ছবি দেখে বাস্তব জগতের একটা ঘোড়া সঙ্গমোদ্যত হয়েছিল, রসানুসন্ধানীর তরফে, কবিতা কখনো কখনো সেইরূপ যুক্তিহীন আকর্ষনীয় পথ পরিক্রমা করতে চায়। divine commands থেকে উৎসারিত হয় কবিতার পঙক্তিমালা, এইরূপ তত্ত্বে আমার সায় নাই তত, কেননা কবিতার তথাকথিত অ্যাঞ্জেলিয়মে আমি আস্থা রাখি না। পরিবর্তে, লৌকিক এক স্বরপ্রবাহকে আমি কবিতা ভাবি। ঐ একই কারণে, শব্দপুঞ্জ নয় ঈগলের ক্রুদ্ধ চোখ, তারা আছে ডানা হয়ে। শিকারের নিষ্ঠুরতা নিশ্চয় আছে জগতে, আমি তবু প্রথম পক্ষপাত রাখি তার ধীর উড়ে চলায়। তার রাজসিক একাকীত্বের অদ্ভুত লীলাই আমার অভিপ্রায়।
— বাল্মীকির কুটির কাব্যগ্রন্হের ভূমিকা (অংশ)
লীলাচূর্ণ
১
শব্দই অস্তিত্ব তার, বীজ, গর্ভঘুম, মেঘমালা—
কোনো বন্দি বুলবুল যত ধ্বনি তোমাকে পাঠায়
কোনো নটরাজ এই দ্যাবাপৃথিবীর কেন্দ্র ফুঁড়ে
উঠেছে যখন, ভাবো, সব আদি শব্দ মৃত্যুঞ্জয়ী;
গ্রহান্তরে তারা উড়ে যেতে যেতে পাখিদের ভাষা।
অতি ধূসরতা যদি শব্দরঙ মেনে নিতে পার
যদি পুনর্বার চোখ মেলো এই গুহা-শহরের
মধ্যে ঢুকে, শুধু বিচ্ছুরণ, শুধু নৈঃশব্দ্য-প্রণয়,
তুমি তারই অপেক্ষায় বুড়ো হয়ে গেলে বাস্তবিক
হাঁটার দূরত্বে চাইলে ঝর্ণা, কোনো বিখ্যাত নির্বোধ
যেভাবে সংকল্প করে, যে-রূপে সম্ভোগ করে শব্দ;
সেই সুনির্মম পথ অপরূপ নিশিমানুষের।
ঝরাপাতার আসন বেছে নেয় গূঢ় কোনো ভাঁড়
আনারকলির মতো মরে যায় শব্দেরা তখন—
২
আমাকে নিক্ষেপ করো পৌরাণিক গল্পের অরণ্যে
একটি বিন্দুর মতো, শোনো, আর কিছু চাইব না।
কোথাও রয়েছে প্রশ্ন প্রহরীর স্খলিত নিদ্রায়,
সেইসব দেখি আর থমকে থাকি ঘাসের পাখায়
তারার ধুলোর মতো, তারারশ্মি, তুমিও নশ্বর!
আমি কি পেখম এত বয়ে নিতে পারি মহাকাল
যেখানে করুণ ছায়া ছায়াজাল আহা জালখানি
ক্রমশ জড়ায় অঙ্গে! যতিচিহ্ন ছড়ানো জঙ্গলে
আজ কোথা থেকে এত তুলো উড়ে আসে ওগো হেম
ওগো রক্তমাখা বীর, কোনো যোনিপুষ্প ঢেকে দিতে
আমাকে বলো না আর, শাদা স্তব্ধ পিয়ানোর কাছে
আমার কবিতা তবু মূর্চ্ছা যেতে যেতে জেগে ওঠে,
তখনও দূরের গদ্য থেকে অপরূপ ফুলকি উঠছে
ধসে পড়ছে দেখো ধুলো হচ্ছে ক্রমে লেখার টেবিল।
৩
বিজেত্রীর ঘরে আমি যাই নি সেদিন, লোকে তবু
আমাকেই বেরুতে দেখেছে। ভ্রষ্ট সেই সন্ধেবেলা
গোলাপ ও আফিমের প্রজ্ঞাময় সংলাপের দিকে
হেঁটে গেছি এক স্বপ্নরিক্ত নটরাজনের মতো।
সেই হাড়-কঙ্কনের পথে, প্রভু, ভেবেছি বিস্ময়ে:
রঘু ডাকাতের মতো হয়ে যাই কেন যে আমরা
ওষ্ঠ চুম্বনের লগ্নে! মাটিতে অর্ধেক ডুবে থাকা
রথের চাকার গোঁয়ার্তুমি কীভাবে শরীরে জাগে!
নায়িকা-চূর্ণের রাতে, মৃত বেলফুলের ভিতর
তার গাঢ় কেশগন্ধ আমি পাই। বিজেত্রী বলেছে:
কাছে না এসেও এইভাবে নিকটে থাকার পথ
উন্মুক্ত রয়েছে, এইভাবে, বাক-বিভূতির দেশে
পৌঁছে গিয়ে দেখা যায় ঘুম-হারা কত মীনশব্দ,
কার স্পর্শ লেগে ওঠে ধীরে শিখীবর্ণ যবনিকা…
৪
আমার পুরোনো গল্পে এসে শয্যা পাতে রত্নাকর,
ঘুমিয়ে পড়ার আগে পাতা-ঝরা গাছটিকে বলে,
‘কাজুবাদামের প্রতি লোভ কেন এখনো গেল না,
আহত ঘোড়ায় আসে কেন সেই নগ্ন বায়ু-সেনা?’
জগতের কেন্দ্রে ক্রমে পাখিদেবতারা জড়ো হয়—
কাজুবাদামের গাছ জগতের প্রবেশ দুয়ারে
যারা ফেলে এসে কাঁদে, আর শাদা পাথরের দেশ
পার হবে বলে ঈগলের পায়ে বেঁধে দেয় চিঠি,
আজকে তাদের ধরে এনে মধুপুর গল্পে রাখো।
তোমাদের মাথা থেকে সব বুদ্ধি বেণী ছন্দ স্বপ্ন
একে একে খুলে রাখো রত্নদীপ শিয়রের কাছে।
ঘুমন্ত সমুদ্র থেকে উঠে এসে একটি কচ্ছপ
বলে, দেখো ফের শুরু হলো অলৌকিক পাতা-ঝরা,
আজও কিছু ভ্রান্ত থাকো বেনেবউ এখনো মুখরা—
৫
যাও মেঘ, ভূ-মণ্ডল বনস্পতির নিকটে যাও,
তারে গিয়ে বলো, মরণের পরে থাকে শুধু গান।
শরীর মন্থনে আছে সুখ, তবু এক দুঃখী-জ্ঞানী
তরমুজ মদ আর নভোছক পাশাপাশি রেখে
সুখ খোঁজে তাতে। শোনো মেঘ, তুমি তো অমন নও,
পার হও বাঘিনীর আত্মরতি, লবণ-পাহাড়।
পৃথিবীতে পড়ে থাক চন্দন ঘষার গোল পিঁড়ি,
হেরম্ব বধূটি পড়ে থাক বাঙলা হরফের প্রায়।
মাধবী টিলায় বসে অনেক সাধের শ্যামজ্বর
শেষ হয়ে এলে দেখি বাদামি গম্ভীর চন্দ্রোদয়।
কী অনৈসর্গিক আলো, কী নির্জন দৃশ্য-ভায়োলিন
রচিত হয়েছে, মেঘ! হৃদয়ের মুগ্ধ অপচয়
আবার আরম্ভ হল, বসে রইল সাতটি তক্ষক
পাতার আড়ালে, আর, রাইক্ষেত দুমড়ে গেল ঝড়ে—
৬
এই ক্ষুদ্রবুদ্ধি প্রাণ আর এত বল্মীক-নির্মাণ,
বলো, কাহাতক! সব পাখিচক্র পুষ্পঘুমচক্র
অনশ্বর মনে হয়, একটু পরে, হাওয়ায় শয়ান!
তোমার স্বপ্নেরা উড়ে যায় বজ্রদগ্ধ আতাগাছে,
মাঝরাতে, আতাগন্ধ ছড়ায় যখন, চারিদিকে
যৌনপ্রবন্ধেরা জাগে, শব্দ যাকে ফকির করেছে,
ফিরেছে সে চুপি চুপি অবিরাম পেখম হারিয়ে
অন্ধ শিক্ষিকার ক্লাসে, ধূধূ-করা মাঠের নির্জনে।
তাবু তীর্থ নাভি ঘাস এইখানে একাকার যেন,
শিক্ষিকার তাবু তীর্থ নাভি ঘাস এবার তোমার!
ব্যাখ্যাতীত সব দৃশ্য ভেসে যেতে থাকবে তারপর
ভেবে নিও, এই বালিঘরে, কী কী রাখা যাবে আজ
লাল পরচুলা ছাড়া। তখন অস্তিজিজ্ঞাসা শুধু,
বিপুল লাঞ্ছিত পুষ্প খসে পড়ে শিক্ষিকার কোলে।
৭
এবার রাজজম্বুগাছের ফল আস্বাদন করো
নর-বানরের সুনির্মম ঠাট্টা উপভোগ করো।
শশীগল্প আর নৃত্য করে মজে আছ রাতভর,
ভোর থেকে বুটিদার পাখি ডেকে ডেকে হয়রান
একবার তুমিও তাকে ডাক দিয়ে আনারস ঝোপে
ছিন্ন লাল ঝুঁটি আর বহুবর্ণ সাপের খোলস
কুড়াতে গিয়েছ, কত পণ্ডশ্রম রেখে গেলে পিছে,
বলি, কোন্ অবিনাশী রূপ আজ ধরেছ সম্পুটে!
তোমাকে বিমর্ষ দেখে শুধু নেচে যায় টারান্টেলা
স্ফটিকের পাখনা পড়ে থাকে ঘাসে এই ষোলোশিঙা
হরিণের দেশে, আর তুমি নর-বানরের সামনে
নগ্ন বসে রইলে, যেন এক মৃত্যুমথিত প্রেমিক!
বিদ্যুচ্চমকের মতো সত্যেরা কোথায় পালিয়েছে,
স্বপ্নের, জ্ঞানের, আদিতম বীজ রয়েছে কোথায়—
৮
ক্ষয়ে ক্ষয়ে একদিন মুছে যায় লিপিকুশলতা।
তবু সেই লুপ্ত লিপি থেকে বিস্ফারিত চোখ থেকে
আলো আসে কোন্ রজনির! বিপুল স্তব্ধতা আসে,
তুমি কোন্ নাক্ষত্রিক ধুলো মেখে এসেছো আবার!
পাখি নও তবু এক দরবেশ খুলে নেয় ডানা
অজস্র পালক ঘুম রক্ত স্বপ্ন ধুলো-মাখামাখি
পাথরের ঘরে শুয়ে, কিম্বা অন্ধ চাঁদের শিখরে,
সবচেয়ে দুর্নিরিক্ষ্য, ম্লান, কূট, ধীর কোনো সত্য
অগ্রসরমান যেন, কে-বা এসে শেখাবে তোমায়
রণভঙ্গি, সজলতা, বুদ্ধিবিপর্যয় কেটে গেলে
পশুবুদ্ধি পশুঘুম যেন কিছু অবশিষ্ট থাকে,
তারপর মহাসর্প তোমার নৌকাটি ঘুমঘোরে
ক্রমশ পেঁচিয়ে ফেলে, আর এক আধ্যাত্মিক বিভা
নক্ষত্রদের বিস্মিত করে চলে অন্তরীক্ষ জুড়ে।
৯
রুটিগাছ তলে বসে সারারাত দেবনিন্দা করি—
রাতের বাগানে ঢুকে স্মৃতিগুলো বাদুড়ের মতো
নষ্ট করে ফল, দেখি, ডুবে যাচ্ছে কর্দমাক্ত পথে
গরুর গাড়ির চাকা, সাত মিনিটের আয়ু নিয়ে
এক্ষুনি জন্মালো কেউ, তুমি কেন অস্থির কুসুম?
আজ সুফি-ধূলিকণা যত আছে এখানে ওখানে
বাতাসে গভীরভাবে অন্ধ হতে হতে উপস্থিত।
ভ্রমণশীল উদ্ভিদ, এত কেন ভয় হেমন্তকে?
ভ্রমণশীল পাহাড়, কার হাত থেকে ওই রুটি
গর্ধবের পিঠে জমা হয় তুমি তার কিছু জানো?
গরম রুটির গন্ধ-ভরা এই আয়না-সমাধি
কেন যে পাহারা দেই আমি আছে যদি এত বুলবুলি,
রক্তাক্ত সমাধানের দিকে এত কারা ছুটে যায়,
তস্করতাপূর্ণ চক্ষু মুদে ফের ধূলিকণা হও—
১০
দেখছ শম্বর আর কর্ণ পাশাপাশি ভাসমান
ওদিকে তখন ভিজে যায় মাঠে তোমার বাহন…
প্রেতলোক থেকে কেউ জুম করে দেখে সবকিছু,
কোন্ গান সমাপ্তির মতো ভাসে নয়ন তারায়।
ভায়োলিন, ধূলিঝড়, একসঙ্গে পেয়েছ জীবনে,
আহা, জয়শ্রী জীবন, প্রতিপদে সর্পবন্ধু পেলে!
আমাকে অনাথ করে রাখে কেউ তবু সন্ধেবেলা
অপার্থিব ময়দানে, আর লঘু সন্ন্যাস দৃষ্টিতে
একটি উল্কার মৃত্যু রূপবান মনে হতে থাকে।
একটি কৌতুক জ্বলে উঠে এক আকাশ-রুধির,
অনন্ত ময়ূর আর অনন্ত কানন স্পষ্ট হল…
প্রায় পোড়া পাতা কোনো এক পোড়া পাতার নিকটে
অশ্রুপঙক্তি রাখে আর চুপচাপ নিজেকে নেভায়,
প্রায় পোড়া পাতা সেই এক পোড়া পাতার নিকটে—
১১
গ্রন্থের প্রহার আছে, শেষ স্নান আছে নীলিমায়।
আমি দু-দিকেই যাবো ভেবে গ্রীষ্মরজনীর প্রান্তে
ভয়ে ভয়ে দাঁড়ালাম, সাপলুডু খেলার গভীরে
যে-ভয় আমাকে টানে, আর দেখি মরুদার্শনিক
চেঞ্জ হয়ে গেল হায় রাতারাতি কাকতাড়ুয়ায়।
গ্রন্থের বিপুল হাতছানি যেন কোনো কেকারব
যেন বিশ্ব দ্বারা আতংকিত যেন লুক্কায়িত সুরা;
আকাশে আকাশে দেখা পাই তার দু-চোখে জহর—
দেহের প্রতিটি কণা চন্দ্র এসে গুনে গুনে দেখে
আর আমি স্থানহীনে চলে যাই যেখানে রক্তিম।
মিথ্যে সিংহ মিথ্যে দীপ আমাকে চিন্তার কারাগারে
সহসা নিক্ষেপ করে, বসে থাকি আমি আর সেই
শাদা দ্বাররক্ষী পাখি! অক্ষরের উঁচু নিচু পথ
স্তব্ধ ময়ূরীর আর রাত্রী-ব্যবহৃত ময়ূরের—
১২
কমলা রঙের এক ভাষার অধীন তুমি আছ,
এই দগ্ধবনে যত পথ ফিরেছে তোমার দিকে
তারা অন্য কোনো ভাষা, অন্য মাধুর্যের ধূলি মেখে
অনন্তে শায়িত। কবে সাক্ষ্য দেবে চূড়ান্ত নশ্বর
সেইদিকে পেতে রাখা রক্তচোখ বুজে আসে ক্রমে।
দারু, দ্রাক্ষা, দুধ আর বাগর্থের লোভে কোনোদিন
হাঁটি নি তোমার দিকে। গানহীন পাখিদের ভিড়ে
রয়ে গেছি, তবু কোন্ অবসরে আসক্তি জেগেছে
শব্দে, যেন বোবা পার্শ্বচর ভ্রম থেকে উঠে ফের
বেদনার উপযোগী মৃগয়ার স্বপ্নে গেল ডুবে।
তোমার ভাষার বর্ম প্রতিধ্বনিময় পাষাণের
তোমার ভাষার ধূলি ঋষিবিড়ালের সারা গায়ে,
তবু এই দগ্ধবনে এসে দেখো সমস্ত মুকুল
ঝরে পড়ছে মৃত ঘাসে আর আমাদের ইস্তেহারে।
১৩
স্বপ্নের পাতাল অব্দি তুমি যদি ঘুরে এসে থাকো
মনে করো শুরু হল জেব্রাঋতু, এমন নরক
কোথা পাবে আর, সখা, শব যত ঢাকা আছে পদ্মে।
একটি ভুবন চিল উড়ে উড়ে অন্তর্ধান করে
একটি সেগুন পাতা খসে পড়ে তোমার মাথায়;
লোকে জানে তুমি জড়বুদ্ধি বালকের মতো সুখী,
মর্মে উপলব্ধি নাই, হাসি আর ধ্রুপদী গাম্ভীর্যে
রয়েছ অটুট! শুধু, ললিপপ পেয়ে গেলে খুশি,
ওদিকে পৃথিবী ঘুরে আসে এক চক্কর বিদ্রূপ;
অবচেতনের পাপ ধীরে ধীরে রাঙায় রাত্রিকে।
তবু রাত্রি গল্পে ভরে, পদ্ম থেকে একটি শিশির
শবের অধরে ঝরে আর এই দৃশ্য মেঘলোকে
কিছু মায়া যুক্ত করে কিছু যায় ভুতচতুর্দশীর
মাল্যবান অন্ধকারে, কিছু রয় অপরূপ ভ্রমে—
জেব্রামাস্টার কাব্যগ্রন্থের (উপক্রমণিকা)
A Poem is never finished, only abandoned
—Paul Valery
আজ আমার সকল সৃষ্টিছাড়া পংক্তির গায়ে বিকেলের ম্লান স্বর্ণচ্ছায়া এসে পড়ুক,
কিম্বা তার পাশে জ্বলে উঠুক শুকনো পাতার স্তূপ। ব্যাধ ফিরে এসে দেখবে, ছাই
উড়ছে শুধু।
কতটুকু সত্য কাছাকাছি আসে আনন্দের? তীর্থ-বিতাড়িতদের বলি, ভাঙা বেহালার
মধ্যে আমার সমস্ত পাপ ঠেসে ভরাতে চেয়েছি।
এখন ফিরে আসুক সেইসব পাখিরাও, মৌরিজঙ্গল ছেড়ে, একদিন যারা উড়েছিল
সাগরের পথে।
ভয়াবহ স্তব্ধ কোনো রাতে, জেনেছ, প্রতিটি চুম্বনের পর, এই কুহকী অস্তিত্বের ভার
কিছুটা কমে আসে। ঝুটিওয়ালা মোরগ আর বীণা—এই ছিল আমাদের অন্তিম
সম্পদ।
কেন তবে হারিয়ে যাও জেব্রাদের উন্মাদ-দৌড় শুরু হলে! একটু দাঁড়াও যদি,
দেখতে পাবে, মৃত পাতা মৃত ফুল ছড়ানো পথের কিনারে, ভোরবেলা দীর্ঘ কোনো
গাছের গা বেয়ে কীভাবে একটি নিঃসঙ্গ শিশির মিশে যায় মৃত্তিকায়, ধীরে।
দেখ আরও, আমাদের জলপাইগাছে মাঝে মাঝে কিছু অচেনা পাখি এসে বসে,
যাদের সহস্র বছর আগে বা পরের দার্শনিক বলে ভ্রম হয়।
আমার ভাষা
আমার ভাষা তৈরি হয় সেই নির্জনতায়, জেব্রা যেখানে তার শাবকদের নিয়ে খেলা
করে। বহু খুঁজে, পেয়েছি পেজমার্কার, একটি উজ্জ্বল বিয়োগচিহ্ন আর ডালিম
ফুলের ছায়া। বন্ধ দেয়ালঘড়ির দিকে তাকিয়ে, লিখতে শুরু করি। একদিকে
অসানোগ্রাফির ক্লাশ, অন্যদিকে তোমার সঙ্গে সাঁতার কাটার ইচ্ছে। তাসের ঘরে
এলেই প্রশ্ন করো, আমি কি তুলোরাশির জাতক? ঘর অন্ধকার করে শুধাই, তুমি
কি কাননবালা? প্রশ্নেরা আজ হাসির কারাগার যেন। তোমার শরীর থেকে তখন
ঘাসের গন্ধ আসে। জানালা খুলে দেই অতঃপর শান্ত হাতে। পাখিবাজার থেকে
ফেরে লাঞ্ছিত লোকজন, নক্ষত্রের আলো আসে আমাদের তাসের ঘরে।
নভোসংকেত
কোথায় সেসব, অজস্র গীতিকবিতা, মনুমেন্ট, জ্ঞানীমার্জার, অজস্র ভ্রমরময় পত্র!
মৌরসিপাট্টা হাত থেকে উধাও তাদের! অনিশ্চিত রঙ নিয়ে খেলা করে একচক্ষু
দানব, আজ, অন্য এক নিঃসঙ্গ দস্তয়েভস্কি শুয়ে আছে খড়ে, চাপা কণ্ঠস্বরে, তার
হিম উক্তি—
কিরিলভ! এখনো কি রাত্রি নেমে আসে চিন্তার ওপর!
অন্য এক সিসিফাস ফিরে যায় তার ব্যক্তিগত পাথরের দিকে। আমি হিরামন
পাখিটিকে ছেড়ে দেই, রাতের পর্দা ওঠে, বলি, মৃত্যুই অতিথি, চিরন্তনতায় ছুটে
যায় অহংপাখি।
বজ্রনির্দেশিত পথ খুলে যাচ্ছে পাপড়ির মতো, নাকি এও কোনো তত্ত্ব অভিনয়!
ঈগলের বাসা খুঁজে, জহরের দানা খেয়ে এ গহন আমিত্ব ফুরায়।
গভীর সারেং আসে, পরিচয়পত্র কোথায় তোমার, বলে, জ্বলছে শরবন, তাকে দেখ,
খাগের কলম শুধু আনতে পেরেছি এবার, কত শোকাকুল পৃষ্ঠা উড়ছে রাতের
বাতাসে, তিতির পাখির রূপ ধরে এসেছে শিষ্যেরা, মহাবালুকায় অ্যালার্মঘড়িটি
পুঁতে রেখে অশেষ ঘুমের কথা ভাবছে সমুদ্র-প্রেত।
আর তুমি কিনা দাঁড়িয়ে রয়েছ চির-ধরা দেয়ালের সামনে, কয়লা হাতে, শরবনটিকে
এখন ভালগার মনে হয়। সমস্ত কুসুম, ঘাস, পাখি, পাখিব্রত, শিল্পপ্রহার, সবই কি
ভালগার! মনে করো, বহু রঙপেন্সিল হারিয়েছ তুমি ঘুমের ভিতর, একটি-দুটি করে
পারাবত নেমেছে উঠোনে, ওদের মতো সুখ্যাতির ধুলোমাখা একটু অন্ন আর কেলি
প্রয়োজন, আর কিছু নয়, আমাদের অপরূপ জট খুলে যাবে আয়নাব্যাখ্যায়,
চন্দ্রবিন্দু-ঘেরা কোনো গল্পরাক্ষসের আসরে মুক্ত হবে স্বর, সুর, আর সেই রঙের
দেবতা, যাকে অযথাই ভয় পেয়েছিলে, ছদ্মকাঠুরে এক, এসেছে ছড়াতে আজ ক্ষুদ্র
ক্ষুদ্র নভোসংকেত, নীরবে।
মূল বুদ্ধ
জ্যোতির্ময় ঘুঘুদের সাথে, আমবাগানে, ছুটি শেষ হলো।
বস্তুত এদিকে এসেছিলাম তোমাদের অন্ধকূপ দেখব বলে। এসে দেখি হরবোলাদের
তাঁবুগুলো ফুলে উঠছে ক্রমে, আর, সাত সেকেন্ডের সেই মরুনাটক, যাতে মূল বুদ্ধ
ফিরিয়ে দিচ্ছেন তেত্রিশ বুদ্ধকে। এখন নির্বাণ নির্বাণ করো না। সুজাতা সুজাতা
করো না। কেউ ঘুমোচ্ছে পাণ্ডুলিপির তলে, কেউ রইল উঁচু মেঘেদের আস্তানায়।
মাঝে ভাসছে স্বরবর্ণগুলো। কাঁকড়া-ভাজা খেতে খেতে উপন্যাস পড়ছে কেউ।
নারীদের এলোচুলে ঢাকা থাকে যেসব উপন্যাস।
পড়তে পড়তে আমারও মনে পড়ে সাপঘরের কথা। পাতলা ক্ষুরের মতো চাঁদ,
আজ যা ইচ্ছে বলো। ব্রহ্মাণ্ডের গোপন আয়না হয়ত এরই ভিতর হাত-বদল হয়ে
গেছে। আয়নার মুহূর্ত, মূল বুদ্ধের জন্য, তার মনের মধ্যে সাতটি আকাশ। বলো
বুদ্ধ, বলো বার্তাবাহী মেঘ, এই অর্ধক্ষয়িত রঙপেন্সিলের বাক্স দিয়ে আমি কী
করব।
দাম্পত্য
যখন তুমি মেয়েমানুষ থেকে দূরে আছ, পড়তে পার চিহ্নবিজ্ঞান, চাঁদের নিচে
ডিগবাজি খেতে পার কিছুক্ষণ বা বানাতে পার চাবুক। আসলে তোমার জন্যে
কোথাও অপেক্ষা করে আছে কাঠবেড়ালি, তার বগলে এ বছরের রাশিফলের বই,
আর অন্য হাতে সেক্স-পিস্তল।
যখন তুমি পুরুষমানুষ থেকে দূরে আছ, খাও যত ইচ্ছে পপকর্ণ, নিজের ভয়ংকর
গোপন কথাগুলো নিজেকেই আরেকবার শোনাও ফিসফিস করে। একখানা জ্যান্ত
কবিতার বই সঙ্গে রেখ, তোমার দিকে এগিয়ে আসা বিচ্ছুগুলো পিটিয়ে মারার জন্য
ওটা লাগবে। খবরদার, ভুলেও বেড়াল কোলে নিও না, যা দিনকাল পড়েছে, স্তনে
আঁচড় দেবার ঘটনা গত পরশুও ঘটেছে ভূতের গলিতে। এ সময় ইউক্লিডের
উপপাদ্যগুলো মনে আছে কিনা, সেটা আঙুল দিয়ে লিখে দেখতে পার বালিতে।
অতি শাদা ফুলের রাত্রিসংলাপ
অস্তিত্বের রঙ কী—মাঝে মাঝে ভাবি। যেমন কোনো রাজমহিষীকে দেখি নি
কখনো, তবু তার মুখের রঙকাহিনি মনে পড়ে। ঐ হাবা অরণ্যের পাশে, চুম্বকের
বিছানাই আমার সব। রাত্রিবেলা, প্রান্তরে, দেখা দেয় মহাজাগতিক ডিম। হারেমের
রূপসীরা সেই দিকে দৌড়াতে থাকে। সবাই রঙ পেয়েছে, রসিকতাও। কেবল এই
বহু ছিদ্রময় অস্তিত্ব, প্রতিমুহূর্তে অস্বীকার করে রঙ, আর সর্বত্র কায়েম রাখে তার
অট্টহাসি। সেদিন সাপরাজার সাথে দেখা, বৃত্তান্ত শুনে বললেন, এইসব রেখে,
কিছুকাল মেঘে মেঘে পায়চারি করুন।
***
রক্তবর্ণনার ভিতর দিয়ে যাই। হে অভিরূপ, তুমি কোন্ পাখি? নির্জন ঘাটে শুয়ে
কেউ কেউ ক্ষয় হয়ে যায়। মাছরাঙা একপ্রকার আলোজাদু। কাব্যের, ইশারার
সমস্ত বীজ, জবাকুসুমের মুখ থেকে শুনি। আমার মৃত্যুচিন্তা মুদ্রিত আছে ঐ
কাঠবাদামের গায়ে, কাঠবেড়ালি আজ সকাল থেকে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
যত অদ্ভুত আলো দেখ, সবই মাছরাঙাটির।
***
যে-কোনো সুদূরকে আজ অপরাহ্ণ বলে মনে হয়। যে-কোনো প্রণয়, বল্মীকস্তূপের
প্রায়। অতি শাদা ফুলের রাত্রিসংলাপ ছুটে যায় কার পানে! মনে রেখ ঘাসেদের
বিপুল অভ্যর্থনা, পতঙ্গদের মৃত্যুনাচ। আমার সবুজ অক্ষরগুলো ধুলোয় ঘুমায়।
বাঁকা পথে যেতে যেতে কিছু শশীবাক্য আজ তোমায় শোনাতে হলো। আগামী
কোনও ঝড়ে হাতি, হিতোপদেশ সবই হয়ত একসঙ্গে উড়বে।
জলমধ্যে জ্যোতির্বিম্ব
নগ্নবস্তু থেকে বস্তুনগ্নতায় পৌঁছবার পথে, মনে হতে পারে, কখনো কখনো
কবিতাও তুচ্ছ।
টেবিলে তখন অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি, ছিন্ন করবী-কুসুম ও প্রিজম। ব্যাখ্যার আড়ালে,
কবি তার শান্ত ক্রোধ নিয়ে ফিরে চলে ময়দানে, ফেলে দেয় একটু একটু করে
জমে-চলা রাত্রিমধু।
সারাক্ষণ এক কুমকুমবর্ণ চক্রবাক তাকে ডাকে। পিপাসার নামান্তর সেই পাখি।
প্রহারের পর, সব রেখা, মন, রঙ মুছে গিয়ে শুধু এই। বর্ডার লাইনে পৌঁছে গেছে,
কাঁদছে, শার্টের হাতায় চোখ মুছে নিয়ে ফের রূপকাঙালের হাঁটা শুরু করে।
অথচ কুটির ছিল, জলমধ্যে দেখা দিত জ্যোতির্বিম্ব মাঝে মাঝে, জলপাইগাছতলে
এক নিদ্রাযোগী, মনে পড়ে তার—‘তত্ত্বতর্ক ভুলে দেখ দেখি এইবার, কিম্বা,
হরিণীর জন্যে বেড়ে ওঠা ঘাস যেন আমরা না-ছইুঁ কোনোদিন।’
নিষেধের সব চিরকুট ফেলে কবি হাঁটে আজ যূথভ্রষ্টা কুরঙ্গিনী পিছে, আমাদের
পড়াশুনা মৃদু থেকে মৃদুতর হয়, বাতাসের গায়ে ফুটে ওঠে দু-একটি হর্ষলেখা।
***
এখন আমাদের সূর্যাস্তের কবিকে ঘিরে আছে উনিশজন পাঠিকা। কার্পাসবাগানে
দাঁড়িয়ে তাদের হল্লাটুকু দেখি। বজ্রপাত শুনে পালাচ্ছে পাখিরা। সমস্ত অক্ষর মুছে
যাবে একদিন, সমস্ত পদচিহ্ন। রুটিকারখানার ভূত এসে আমায় দেখিয়ে দেবে
বাড়ি ফেরার পথ। প্রতিটি পাঠের পর, হে পাঠিকা, হতে হয় নিরুদ্দেশ। তোমার
জন্যে অপেক্ষায় আছে আধিভৌতিক প্রান্তর।
ভুতুড়ে মাঠে
আবার এসেছি সেই ভুতুড়ে মাঠে। কিছুক্ষণ বসব।
আমের মুকুল ঝরেছে অনেক। গাধার পিঠে যিনি এখন মাঠ
পেরোলেন, উনি যিশুর সাঙ্গাত নন। তার পিছে খুব নিস্পৃহ ভঙ্গিতে
হেঁটে গেল এক অচেনা বৌদ্ধ শ্রমণ। আমি তার ভিক্ষাপাত্র
হতে পারতাম। বা তাকে অনুসরণ করা কোনো পাখি।
কারো গানহারা এক পাখি হতে পারতাম যদি সন্ধেবেলা!
দশ পাল্লা ঘুম জেগে উঠছে আমার ভিতরে।
সৌন্দর্যবোধ
সৌন্দর্যবোধ মরে গেলে একেকটা ফুল রাক্ষুসে জ্যামিতির বেশি নয়,
তখন অফুরন্ত পথ সাপের চামড়া দিয়ে মোড়া। কাটা মুণ্ডুগুলো
খেলার ঘুঁটি। চেনা ময়দান, একটা উল্টানো বই। কী বই এটা,
জগদ্বিখ্যাত সব গাড়লের? পাকা আতা ফল পড়ে আছে চতুর্দিকে,
তুমি চতুর লাফিয়ে পার হচ্ছ সেসব, আর সমস্ত পরিচিত মৃতেরা
দীর্ঘতম তোমার এই মার্বেল পাথরের বারান্দায় একে একে এসে বসছে
কারুকাজ করা চেয়ারে।
কোথায় আর যাবে তুমি এমন সূর্যহননের দিনে, এলাচ লবঙ্গ দারুচিনি
নিজ নিজ গন্ধ হারিয়ে হয়ে গেছে অন্যকিছু, এখন ছায়ার মাছ
ছায়ার বাঘ ফুটে উঠবে পথে।
অপর
সমস্ত পাতা হারিয়ে ফেলা কাঠগোলাপ গাছ, কেমন আছ তুমি?
ও আমার অকেজো গ্যাসবেলুন, কেমন আছ? এমন ধুলো-ওড়া স্বপ্ন
এমন কোনো নির্ঝর যেখানে একা বসেছিল ভাষামাধবী, ততদূর এলাম।
আমার বাড়ি নাই আর, আছে শুধু শব্দের হৃদয়! এক অনিশ্চিতের জগত
অসীম ভ্রমে হেঁটে দেখা। কোনো দারুস্পর্শ মৃত্যু আমাকে সৃষ্টি করে চলে,
নষ্ট জানালায় আছড়ে পড়া চাঁদ আজ আমার অপর।
বাদামপাতা
একটি লাল বাদামপাতা কতদূর আর উড়ে যেতে পারে!
আমি সেইরূপ। নিকটে ঘুরে যায় ভ্রমরকাহিনি। এইখানে
জ্যোতির্ময় উপহার হয়ে বসে থাকে একটি লক্ষ্মীপেঁচা। লৌহদুর্গে বন্দিনী
আজ আমার মুক্তকুন্তলাকে একবার অন্তত দেখব দূর থেকে
—এমন আকাঙ্ক্ষা চাবুকের তলে চাপা পড়া চাঁদের মতো নাকি?
খর কৌতুকে, মিছে আয়োজনে ক্ষয় করি কাল, তবু
আরেকবার কী ভেবে দাঁড়াই লেবুফুল ঝরে থাকা অন্ধকারে,
অস্ফুট উচ্চারণ করে কেউ, মা নিষাদ! মূর্চ্ছিত নর্তকের পাশে
এও এক ফোয়ারা। নিখিল সেই উড়ে চলা লাল বাদামপাতা
তাকে জানে, পরাক্রান্ত ঝড় তুলে নেবে একদিন সৃজনের ছদ্মবেশে,
আদিম প্রশ্নেরা তাকে জানে।
এই সুফি-রাস্তার ওপর
উড়াই নি ফুর্তির পায়রা। দুলি নি হ্যামকে। আমার জন্যে নয়
ক্ষীরকদম। শুধু হাউই ছুটে যাওয়া দেখি, আর, কাছে কাছে ঘুরছে
একটি মোরগফুল। দাঁড়ের ময়না বলে উঠল সহসা,’অনিশ্চিত!অনিশ্চিত!…
ডায়েরিতে টুকে রাখলাম সেই নির্দেশ, এই তোমার মুকুল-রাঙানো পৃথিবী
পার হও, ঘুম ঘুম যত শব্দার্থ, ছোট ছোট পদক্ষেপে পার হয়ে যাও—
কখনো খুঁজি নি কোনো সংজ্ঞা। সন্ধ্যার ধূপছায়া ঝুঁকে আছে
এই সুফি-রাস্তার ওপর। আমি রক্ষা করে চলি নিচু কোনো সুর।
আরও অনন্ত কোনো পুস্তক আর অন্ধকারে প্রস্থান, যেখানে কবিতা
ও বাঘিনী। নোনা হাওয়া ক্রমে ক্ষইয়ে দিচ্ছে সমস্ত মুখরতা।
কোনো তত্ত্বনির্ণয় করি নি। শুধু কোনো ক্লাউন যখন গুটিয়ে নেয় তার
পেখম, তার ইশারার ছন্দ, চাবুক, ঝুড়িভর্তি ডুমুর বয়ে নিতে থাকি।
তার অর্ধউচ্চারিত পঙক্তিমালা আমারই, আমাতে বিলীন হতে দেই
তার মৃত্যুরঙিন অবয়ব।

মজনু শাহ, জন্ম ২৬ মার্চ ১৯৭০।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্হ — আনকা মেঘের জীবনী (১৯৯৯), লীলাচূর্ণ(২০০৫), মধু ও মশলার বনে (২০০৬), জেব্রামাস্টার (২০১১), ব্রহ্মাণ্ডের গোপন আয়না (২০১৪), আমি এক ড্রপআউট ঘোড়া (২০১৫), বাল্মীকির কুটির (২০১৮)।
বর্তমানে সপরিবারে আছেন ইতালির ব্রেসা’য়। ফ্লোরিনেটেড পলিমার তৈরির কারখানায় কাজ করেন।
ভার্চুয়াল যোগাযোগ maznushah@gmail.com