কবিতাগুচ্ছ ।। নীলাব্জ চক্রবর্তী

আমি খুব প্রেডিক্টেবল কথা বলতে বলতে

 

আমি খুব প্রেডিক্টেবল

কথা

বলতে বলতে একটা সিঁড়ি আবছা

ঘাসের অপারে

কাঁচ গড়িয়ে দেওয়া বাস আর রাস্তা

একটা যৌথ প্রক্রিয়ার ভেতর

সাদা রঙের যুবতীয় দিবস দিন

খুব প্রেডিক্টেবল

বড়ো বড়ো

সাদা রঙের গদ্যের ভেতর

ক্রিয়া বসাতে বসাতে

সিনট্যাক্সের সরলতা বসাতে বসাতে

কার ঈর্ষাক্ষেতের ভেতর ভুল ক’রে

লক্ষ করি

কার গায়ের চামড়ায় মেছো সুর আঁকা

 

 

লেখক কর্তৃক প্রকাশিত

 

ধ্বনি থেকে যতোদূরে আমার ভাষা

ফুটে উঠবে

অসামাজিকতার খসখসে ভাবটুকু নিয়ে

বাতিল ক্রিয়াপদ নিয়ে

রোল করবে

অথবা শব্দটি নিয়ে এক তীব্রতার দিকে

অথচ

কংক্রিট বলতে আমি তো বুঝি

লেখক কর্তৃক প্রকাশিত একেকটা বিকেল

যেভাবে কাঁচ বদলে বদলে

অন্য পোশাকের ভেতর চলে যায়…

 

 

দূর

 

সেতুর ওপর থেকে

একটা দিন বড়ো হচ্ছে

ছাড়া ছাড়া এখন

তুমি খুব ওই রাস্তাটা ফেলে গ্যাছো

কাঁচাপাকা

কে যেন শহর

বৃত্ত বদলে যাচ্ছে

আর কেউ অক্ষর ভেবে

লিখে রাখছে নিজেকেই দূর

 

 

বিস্মৃতি

 

হলুদ দরজা ঠেলে

একটা দিন

সরে আসছে বিস্মৃতিগুলোর ঘর

এবড়োখেবড়ো

সম্পর্ক একটা কবে খুব মেরুন হোলো

সুতোর পালিশ জুড়ে জুড়ে

কার আগে পরে রিলেট করলো

একটা ভুল সময়

ফুলে ওঠা বাদামী ক্যালেণ্ডার দেখছ

স্লো মোশান

আর

চিঠির উল্টোপিঠে যতো বরফ

যতো ম্যাপের গায়ে ম্যাপ লাগছে

ছবিতে ধরা পড়লো না…

 

 

কাগজের মতো

 

নতুন বইটার কথা ভাবছি

অধিকারবোধের কথা

এভাবে হাত থেকে পড়ে যাচ্ছে

অনেকটা আয়নার গন্ধ

দু-চার ডজন নীলাব্জ চক্রবর্তীর মধ্যে

আরেকটা তোমার জীবন ছিল কাগজের মতো

তাকে এবার

এই তো আপনি বলছি কালো জামায়

এবার আমায় শান দিন ধার করুন

প্যাডল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখুন

ওখানে আলো পড়তে

লিনিয়ারিটির ধারণা-টারণাগুলো

ক্যামোন বেঁকে বেঁকে যাচ্ছে

অথচ হর্ন শুনলেই

আমরা সবাই একটা বাড়ি আঁকা ক্যালেণ্ডারের ভেতর

আর তারপর

একটা কার্ডের খুব জন্মদিন হোলো…

 

 

সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে একটি সেমিনার

 

স্মৃতি এক দুরারোগ্য স্বাদ

আমি ওই তারিখ

খুলে রাখছি জলতেষ্টার নাম

প্লাস্টিক জড়াতে জড়াতে

হাইওয়ে

ভেঙে যাওয়া বিকেল

ক্তিন প্রত্যয় বরাবর এই যাতায়াত করতে করতে

এখন এই ফ্লোর খুলে দেওয়া হবে

কে বলছে

‘রাস্তাই একমাত্র রাস্তা’

আর দামী জুতোর ভেতর বসে

আমি খুব জলতেষ্টার কথা ভাবছি…

 

 

ফোটোজেনিক

 

একটা দ্বিভাষী জানলা

ফুটফুট করছে

ফ্রেম হয়ে পিছলে

 

বরফ কারখানার গায়ে জড়িয়ে যাওয়া

ফোটোজেনিক শব্দ

 

কথায় কথায়

মুদ্রা ঘষতে ঘষতেই

ছোট হয়ে আসছে

জন্মদিনের নীল বল

 

 

ওয়াগন টিপলার

 

স্নান করতে করতে

আমি খুব ওয়াগন টিপলার দিন দেখি

আর

ক্রমে দেওয়ালে এসে লাগে

ঢেলে যাওয়া রোলকলের গুঁড়ো অক্ষর

তার লোড আর মোমেন্ট

যেখানে দাঁড়িয়ে কাজ করছে

তবু আলাদা করা যাচ্ছেনা

সুতো হারানো সকাল

 

সে এক লিনেন হয় প্রকৃতি ফ্রকৃতি নিয়ে

ভাবি

চশমায় মুছে কীভাবে যাচ্ছে ব্যক্তিগত ব্রডস্ট্রীট

 

এভাবে রাষ্ট্র আর প্রতিষ্ঠানের কথা

এভাবে চটকল শ্রমিকের কথা

আমি খুব স্নান করতে করতে

 

 

জন্মদিন

 

মনে হয়

যেকোনো জন্মদিনই আসলে তোমার

এখন থেকে এই টাইমলাইন খুলে দেওয়া হোলো

লেখা হোক

 

এখানে জন্মদিনের কেক ভাড়া পাওয়া যায়

 

বটের লাল ছায়া দিয়ে

গুণ করা কফিটেবিলে

পায়েসের ছোট ছোট বাটি

 

ঝুরি নেমে আসে

পা ছড়ানো মেয়েরা

ঠোঁটে শুধু গলে যাওয়া বর্ণমালার ঋতু

 

ততক্ষণ পর্যন্ত ওই সংখ্যাটা তোমার কেউ না…

 

 

 

স্তব্ধতা

 

ঘাম দিয়ে

একটা সকাল                   ছেড়ে যাচ্ছে আমায়

দাগ কাটা দাগ কাটা

এসব স্তব্ধতা

আসলে অতোটা ফোটোজেনিক নয় এখন আর

অথচ হাতের ধাক্কায়

বারবার

যে একটা দুটো শব্দ

পড়ে যায়

রঙ উঠে যাওয়া দিনের বাইরে

আরও একটা দিন

 



কবি পরিচিতিঃ

জন্ম – অগাস্ট ১৯৭৭

 

প্রকাশিত কবিতার বই –

পীত কোলাজে নীলাব্জ (জানুয়ারি ২০১১, ৯য়া দশক), গুলমোহর… রিপিট হচ্ছে (ই-বুক) (নভেম্বর ২০১৩, বাক প্রকাশনী), প্রচ্ছদশিল্পীর ভূমিকায় (জানুয়ারি ২০১৪, কৌরব প্রকাশনী), লেখক কর্তৃক প্রকাশিত (জানুয়ারি ২০১৭)…

 

ভালোলাগা – গানের পুরনো আর কবিতার নতুন।

স্বপ্ন – মনের মতো একটা শর্ট ফিল্ম তৈরি করা।

শেয়ার