এগারটি কবিতা | সরকার মুহম্মদ জারিফ

দেবী তোমাকে ছোঁয়া যায় না


চালধোয়া পানির মত
গ্রামীণ গন্ধের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে –
এক অপূর্ণ সন্ধ্যায় মুখোমুখি হয়েছিলে আমার।
রাতের মত, শীতের রাতের মত
সে তুমি এক বিপর্যস্ত নেশা।
 

ইতিহাস থেমে গেছে তোমায় উদার পটভূমি ভেবে ,
এক সন্ধ্যায় জরাজীর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটিকে সাজিয়েছ আকাশগ্রন্থিতে ,
নির্বিকার হয়ে সোডিয়াম বাতিকে করেছ সন্ধ্যাপ্রদীপ
আমার পূর্ণ পূর্ণ অপূর্ণতা পরিপূর্ণ হচ্ছে
তুমি বেজে উঠছ পিয়ানোর রীডে
পৃথিবীর ব্যাকগ্রাউন্ডে রবিশংকরের সেতারে
চৌরাসিয়া, লুদভিকো একে একে পেরিয়ে
স্যট্রিয়ানি অথবা গিলমারের গিটারে
দেবী, তুমি অনিয়ন্ত্রিত অনবদ্য এক ইন্সট্রুমেন্টাল ।
 

সান্ধ্যকালীন সূর্যকে গোলাপী আভা করে
নখের উপরে আশ্রয় দিয়েছ,
এই বেখেয়াল সূর্য তোমার
উল্লসিত খোলা চুলকে চিন্তা করে –
মাটিতে ইনকাম ট্যাক্সের দাবি হয়ে
মিশে গেছে।
 

আংটির নাম করে যে অহংকার তোমার আঙুলে জড়িয়ে থাকবে আজীবন
আমিও যৌথ হব তার সাথে
তোমার চারিপাশ মুখরিত অজস্র খরগোশের নিনিটিক হাসিতে
ভাল্লুক হয়ে আমি এসেছি
এসেছি কিছু অভিজ্ঞ অন্ধকার নিয়ে
নিখুঁতভাবে সমর্পণ করেছি নিজেকে
দুঃখী দুঃখী চিরসুখী ফরম্যাটে।
আমার দেবী, আমার কল্পনা, আমার হাইপারস্পেস ।
 

আমার দিকে তাকাও –
আমি খসে যাওয়া ইলেকট্রনের আকুতি
গৃহস্থালী দুর্দশায় আক্রান্ত গবাদি পশুর অবাধ্যতা
পরাবৈদ্যুতিক বিভ্রমে খুঁজে বেড়াচ্ছি বিশ্রাম
পর্ন ম্যাগাজিনের জোড়া লেগে যাওয়া দুটি পৃষ্টার মধ্যবর্তী
আটকে পড়া প্রাচীন বীর্যের-
জাগতিক নিষ্ফলতার অত্যুক্তি ছাপিয়ে
কেঁপে উঠছি
আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি ।
 

আমার সমস্ত আকাশ ফটোকপি করে রেখেছ ;
আমি যেন আটকে গেছি
আমি আটকে গেছি নিশ্চিত
অনিশ্চয়তায় ।
ফিটফাট মার্জিত সন্ধ্যার শরীরে
মুহূর্তের খেয়ালে ছড়ালে উন্মাদ ঘূর্ণিঝড়;
ঝড় শেষে আমি তবু ক্ষতিই চাই
ক্ষতিপূরণ চাই না দেবী।
 

খিচুরি খিলখিল সকালে-
আমার প্রতিকাপ চায়ে তোমার চুমুক মিশে থাকে;
সফেদ সুফিদের চুল দাড়ি থেকে নিয়ে আসো অলৌলিক স্যূরিলিয়াজম ,
অচল নোটকে সচল করে পাঠিয়ে দাও স্ট্রাটোস্ফিয়ারে,
নীলক্ষেত , ফুলার রোড , চানখাঁরপুলের শীতরাতগুলো
তুমি ভরিয়ে দাও কিছু হাস্নাহেনার গন্ধে।
 

হলুদ রঙের ট্রাক দেখলেই নেশা লাগে চোখে
জংধরা অসভ্যতায় ঝাঁপ দিতে মন চায় ,
আমার মনে পড়ে যায় –
রাস্তাঘাট জিনিসটা আমি কোনকালেই ভালভাবে বুঝতে পারিনি
আমি মঙ্গাপীড়িত ,শীতার্ত কিংবা বন্যার্ত কেউ না
সহযোগিতার হাত চাই না, সহযোগিতার ঠোঁট চাই।
 

ফিরে তাকাও দেবী!
নির্বোধ আমিও এখন উন্মাদ চরমপন্থী,
আর কতবার দেখব অসহ্য নৈঃশব্দ্যের দিগ্বিদিক জলাঞ্জলী ?
অন্ধ উষ্ণতায় ছারখার হবে স্বর্ণগর্ভ ফসলের ক্ষেত ,
বেপরোয়া প্রেমিকের মত আগুন চাই ।
 

তাবৎ অসুস্থতা দিয়ে –
আমাকে সুস্থ কর
আমাকে সুস্থ কর!
অথবা
নিরুত্তাপ কণ্ঠে মৃত্যুর আদেশ দাও
এক্ষুণি এনে দাও বীভৎস দুঃসময়
আমাকে ধ্বংস কর
আমার শেষ হোক তবে
আমাকে ছুঁড়ে ফেল আস্তাকুঁড়ে
 

দেবী তোমাকে ছোঁয়া যায় না
দেবী তোমাকে ছোঁয়া যায় না
দেবী তোমাকে ছোঁয়া যায় না
তবুও নিজের ভেতর লালন করি স্পর্শের শাশ্বত সৎসাহস ।

 


স্তন       


 নারীর স্তনকে আমার খুব একটা লজ্জাস্থান মনে হয়নি কখনো-
স্তন শব্দটা আমাকে শুধু মাতৃদুগ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়
ব্যাপারটা এমন নয়।
প্রেমিকার সাথে মায়ের স্তন বকূলখোর দেশপ্রেমিক হয়ে গেছি
ব্যাপারটা তাও নয়।
যদি বা এটা কোন শব্দকল্প হত, আয়াতুল কুরসির মত যার বুনিয়াদ,
স্তন, সে তাও নয়।
 

মনে পড়ে, মফস্বলে বিকাল-বিছানায় শুয়ে থাকা ছোট খালার শ্যামলা শরীরে শাদা শেমিজ!
কই আমার তো সেদিন তার উদ্ধতনম্র বোটা দেখে ডগিস্টাইলে লাগাতে ইচ্ছে হয়নি।
আপনারা মনে করুন,
স্মৃতি হাতড়ান, দেখেন, আপনাদের ও এমন অনেক স্মৃতি আছে।
আপনারা কেউ কি ঝাপিয়ে পড়েছিলেন?
আমি জানি আপনারা সেইসব বিকালে ঝাপিয়ে পড়েননি
তবে আজ,
কে বা কারা আপনাদের নারীমাত্র ডগিস্টাইল শিখিয়েছে?
কারা আপনার যৌনতাকে গুলিস্তানের হালিম বানাচ্ছে?
কাদের প্ররোচনায় আপনার সময়ে অসময়ে শুধু টিপতে ইচ্ছা করে?
বাসে ট্রেনে নারীদের বাদ দিয়ে বরং তাদেরকে ধরুন, প্রশ্নবিদ্ধ করুন
 

আমি পূর্বপুরুষদের ঘেঁটে দ্রাবিড়দের কথা বলব না, অস্ট্রিকদের কথা বলব না,
আমি জানি, ঢেকে না রাখলে এই পবিত্র ভূমিতে ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে পারে কর্কটরোগ
ঢেকে না রাখলে নষ্ট শহরের বালিধুলা, ঢেকে না রাখলে আরো অনেক ক্ষতি,
ধর্মের ক্ষতি, নারী সে তো নিজেই ক্ষতি
 

কিন্তু ঢেকে রাখার নামে সকাল সন্ধ্যা বেঁধে রাখা কেন?
আদিগন্ত নম্রকোমলের বিরুদ্ধে কেন এসব হুক, তাবিজ, শেকল?
কেন ব্রা দিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা বেঁধে রাখতে হবে
আমার মার, বোনের, খালার আর প্রেমিকার স্তন?
 

এই ঢেকে রাখা যেন লজ্জাস্থান মনে করে না নয়,
স্তনকে যদি ঢেকেই রাখতে হয় তবে ঢেকে রাখা হোক
এই মরতে থাকা, ধুকতে থাকা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ভাস্কর্য হিশেবে।
 

 


আমার অবিবাহিত স্ত্রী


ছোটবেলায় বগুড়া শহরের সাতমাথা মোড়ে হঠাৎ হোঁচটে পড়ে গিয়েছিলাম মায়ের হাত ধরে । আমার হাঁটুতে সৃষ্টি হয়েছিল ক্ষতচিহ্নের; যত্ন-অবহেলার অবাক মিশ্রণে দিনকয়েক পর সেখানে মৃদু সোনালি পুঁজ জমেছিল। তোমরা সপরিবারে ঠিক সেই মৃদু সোনালি রঙের একটা প্রাইভেট কারে এখন এয়ারপোর্টে যাচ্ছ।
 
আমিও পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি, আরমেনিয়ানদের কবরে নয়নতারা ফুল আমার মগজে ফোটাচ্ছে বিস্ফোরণ। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি বিষাক্ত ওভারব্রিজের দল বয়ে চলে গেছে ভাঙা টিউবওয়েলের দীর্ঘশ্বাস পেরিয়ে। হা হা করে একটা প্লাস্টিকের বকুলগাছের মুজোর গন্ধে ভেসে গেছে পেশোয়ার কখনও কাশ্মীর; গ্যাসের চুলা জ্বলছে, মহল্লায় শিস দিচ্ছে গরুর মাংস, আহা! এতটাই হাহাকার আমাদের এই তল্লাটে ।
 
তুমি বরং
স্তন পেরিয়ে বুকের ভেতর চিহ্নিত কর ইরানি মুদ্রা, মিসরীয় কার্নিভাল, কানাডিয়ান অশ্লীলতা! তোমার পাশ্চাত্য-প্রাচ্যের মতো দুহাতে লুছনি ধরে মাড় গালো কাশফুলের;
 
আক্ষেপে আর কতটুকু অভিমান? কতই বা ভাড়া চাইবে স্বেচ্ছানির্বাসন? জানতে চেয়ো না নিঃসঙ্গতার ইস্কুলে তোমার বন্ধু হব কিনা, তার চেয়ে দুটো আলোধোয়া চাপাতিতে মাখন লাগিয়ে বসিয়ে দাও মুহূর্তের ছন্দপতনে। কৃতজ্ঞতা যখন রূপান্তরিত কার্টেসি তখন আমি বরং গোসলে যাই, দুপুর গড়াল ।
 
আজানের শুরুতে যারা খুব জোরে দৌড়াচ্ছে তাদের হাতে সন্তর্পণে তুলে দিও ছাদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে লাগানো লেবুগাছের আর্দ্রতা, আর ওই দেখো ওই তো অন্ধকার, আমি ওদিকটাতেই যাচ্ছি।
 
এয়ারপোর্টে গিয়ে পিয়ানো বা সরোদ শুনে মন খারাপ হবে, তাই মুছে নিও কান্নাবাক্যের খেয়ালশব্দ। ভেবে নিও, জিহ্বার ভেতরে একপাল শহুরে জলহস্তী বিদায়ের বেদনার্ত নদী পার হতে গিয়ে কিশোর কুমার ভেবে একটা যুবক কুমিরের প্রেমে পড়ে গেছে।
 
প্লেনে উঠবার আগমুহূর্তে … সুতীক্ষ পেঁপেগাছটাকে একটা শীতবস্ত্র দিও, যেন তার ছায়া গর্ভবতী হয়ে ধারণ করে তোমাকে।

 

 


নাইলোটিকাপ্রবাহ


আমি চাই না তুমি আমার প্রেমিকা হও
আমি মূর্ছনার মতো অন্য এক তরুণীকে ভালোবাসি,
আমি চাই না লোকে আমাদের
সম্পর্ককে আদর করে পরকীয়া ডাকুক,
 

আমি চাই না দীঘির জলে পা ডুবিয়ে বসলে
অজস্র নাইলোটিকা মাছ
তোমার পায়ে ঠোকর দিক অভুক্ত কাকের মতো;
যারা প্রতিনিয়ত পৃথিবীর বয়স বাড়াচ্ছেন, তারা শুনুন
আমি যা চাই না তা হল-
নামকরণ!
 

আমি চাই,
দুহাতে একটি সার্বিক শূন্য নিয়ে তুমি আমার অন্তত
একটি শূন্যস্থান
খুঁজে বের কর,
 

আমি চাই,
অনেক দিনের পুরনো দেখায়
তোমার শাড়ি থেকে নক্ষত্রের মতো খসে যাওয়া সেফটিপিনটা
তোমার হাতে তুলে দিতে।

 

 


জমিদার দর্পণ রিপ্রাইস


আমার নাম জারিফ, আমি বড় হয়ে দুশ্চরিত্র এবং অত্যাচারী জমিদার হতে চাই।
 
চোখে পদ্যের প্রহরা বুনে সমস্ত বাইজির কানের দুলে, পিঠের আততায়ী তিলে, কোমরের বিছায়, হাওয়া বদলাতে আসা পর্যটক হব। কিছু বিনয়ী বুদ্ধিজীবী বানর, হরিণ আর বিড়াল রেখে দিব গোপন সাম্রাজ্যের প্রজননকেন্দ্রে। শুধু, শিকারে যাবার বন্দুকে লেগে থাকবে তোমার চুলের গন্ধ, মরে যাবে হাঁস ও ঘুঘু, দু চারটা মায়াহরিণ কখনো।
 
প্রজাদের ঘরের দেয়ালে ঠেকানো তরুণীর সংসারী সন্ত্রাসের মাধুরীসমূহ কাঁধে বাস করা ফেরেশোতাদের গলা টিপে হত্যা করেছে। গভীর রাতে জঙ্গলের সাধু শ্রী ড্রাবিড় গিলমাঢ় বর্মণের গেটারের অভিশ্বাপে আমার মা বাবার স্বেচ্ছামৃত্যু ঘটলে- বিলেত ভ্রমণে আমি আর কোনদিন ম্যাকডোনাল্ডসের বিরহ বারগার খাইনি।
 
এনাল সেক্সে আগ্রহীরা পেরেক ব্যবসায় আগ্রহী না হয়ে যেদিন থেকে বিদেশী লুব্রিকেন্ট বর্জন শুরু করল, সেদিন থেকে বাগানের মালি যোগ দিয়েছে ডাকাতদলে। রাখালের প্রিয়, সেই বিশেষ বাছুরটির স্মরণে সন্ধ্যার সাথে পাপের প্রত্যাশা নেমে আসে আমার রাজ্যে। নদীর মিলনে সদ্যবিধবাদের হিংস্র স্বামীর পাল ভেসে ওঠে জলে। নিশ্চয়, হন্তারকেরা রাজ্যের পক্ষ থেকে তোওফাস্বরূপ অত্যাশ্চর্য বাদামের সার্টিফিকেট পাবে।
 
আমি সেই জমিদার হব, যার রাজ্যে প্রেমিকার লুকিয়ে রাখা শীতের জামার সুবাসে কাতর হলে- অগোচরে মিলবে মোহর, কাঙ্খিত নজরানা, সাধের সুরা ও অন্যান্য ।

 

 


-মাংসের নির্বাসিত আলুরা


আমি জানি কুরবানের ঈদে
কী পরিমাণ লোহু আর গোবর ছড়ালে
সন্ধ্যাবেলার মাংসের তরকারীতে নির্বাসিত হয় আলু ।
 
মাংসের নির্বাসিত আলুরা আমার কাছে আফসোস করে।
 
মাংস খাবে আর তার চেয়েও বেশি মাংশ জমাবে ভেবে
যারা ঢাকায় এসেছিল মমিশিঙ
রামেরকান্দা, উড়িরচর, শেয়ালবাড়ি থেকে-
এতকাল যারা ঝুলেছে হেঁটেছে মিশেছে তারকাপতনে
সন্ধ্যায় গণেশদের গলিতে তারা গোস্তফকির
খোদাতায়ালার মেছো বাচ্চা,
খালিচোখে মাংশের ছোট ছোট পোকা।
 
আঁশটে গন্ধের পলিথিন সন্ধ্যায়
কীভাবে শিখে নেয়
‘মুক্তহস্ত’র মত বাসি তেখেঁচড়া একটা নতুন শব্দ।
অথচ
শহরে এসে তারা শিখতে পারত
ম্লান, গোধূলী বা বিষন্নতার মত কোমল সব ধ্বনিলঙ্কার,
মাংসের নির্বাসিত আলুরা চিঠি লিখে আমাকে এসবই বলে চলে …

 

 


সিনথেটিক গর্ভের তরুণীদের বিষয়ে


ফেসবুকে তরুণীদের ছবি দেখি
তাদের গ্রামের বাড়ির পুকুরপাড়ে ফতুয়াস্কার্টে
তারা বসে থাকে
ফুফাতো খালাত বা মামাত ভাইটির উত্থিত লেন্সের সামনে,
ধুলা শ্যাওলার আধভাঙা সিড়িতে।
মাগরিবের আজানের সময়
মাইক ঠিক করবার শব্দ শুনে-
যখন সে ছোট্ট মানচিত্রের উন্নয়নশীল ওড়নাটিকে
চুলে আটকাবার চেষ্টা করে, তখন
পুকুরের মাছগুলো সৌন্দর্যের সাক্ষী হয়।
 
শহুরে দুটি বোন
একটি ঘরে পাশাপাশি শুয়ে থাকে,
বছরের পর শতাব্দী ধরে।
ভাবি, তাদের গায়ের গন্ধ এক হয় কীভাবে?
(আচ্ছা, তাদের গায়ের গন্ধ শুকে দেখাটা উচিত হচ্ছে কি? )
এটা ভাবাটা কি খুব অন্যায় হবে
কেন তারা সন্ধ্যারাতে বন্ধ্যা কাঁঠাল গাছটিকে
ভয় পেল আর
পরাবাস্তব সেমিকোলনের মত যুবকটির খুব কাছে গেল ?
 
বৃত্তাকার ত্রিভুজটির দোষে
সংস্কারের পাহাড়া ভেঙে দস্যু ঢুকে যাচ্ছে,
সিলেবাসের তরুণীরা তবে থামুক এখুনি
আঠারো উনিশ বিশে।
শহরের মেয়েকে গ্রামে আরো বেশি সুন্দর লাগে বলে
পুকুরটা দুপুরটা বিলম্বে ছেয়ে যাচ্ছে
আলোর ন্যাকড়া শুকাচ্ছে কতদিন ধরে
যুদ্ধে, শিল্পে, বিছানা, পুকুরপাড়ে।
 
দুচোখ জমা দিই যুদ্ধাস্ত্রের
মতো-
সান্ধ্যকালীন তরুণীর কার্ভে ,
তরুণী তখন পালছে প্রথা
বিষণ্ন সিনথেটিক গর্ভে!

 

 


ফাচুকি হরমোন


সামনে আসো মাইরা ভর্তা বানায় দিব,
কামড়ায় গুলিস্তানে পাঠায় দিব
জনম জনমের বিল বাকি পড়ে থাকবে ফুচকার দোকানে
চোখের খুব কাছে চলে আসবে নীলফমারী
এমন চুবান চুবাবো, সমুদ্রস্নানের পায়েশ খাবে বয়োঃসন্ধিস্মৃতি
তবে আমাদের দেখা হোক।
বন্যপ্রাণী হিসাবে তোমার প্রদর্শনী চলবে
লেবুর বিচি চিবায়ে খাবা, তোমার পেটে ঘাস হবে
তোমাকে অতীষ্ট করে তুলবে অক্টপাসের আটশুঁড়,
সজারুর সুচিত্রা কাঁটা,  আনারসের সব চোখ।
সামনে আসো, মাইরা ভর্তা বানায় দিব।

 

 


এই খুনোখুনি আবহাওয়ায়


ঘাতকের আগে আমার কাছে যেন মৃত্যুটুকু পৌছায়
এই দোয়া করি।
আমাকে মেরো না,
কারণ আমি নামেমাত্র বেঁচে আছি।
কাউকে মেরো না
কারণ সবাই নামেমাত্র বেঁচে আছে।
অথবা আরো কাউকে মেরো না
কেননা পৃথিবীতে কোন জীবিত মানুষ অবশিষ্ট নাই।

 

 


পত্রসংক্রান্তি


এই ফেসবুক-স্কাইপি যুগেও ক্লাসরুমে বসে লেখা চিঠিগুলো তুমি আমার হাতে দাও। ফিনফিনে শেমিজের মত নরম চিঠিগুলোর দিকে তাকালেই পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য আর প্রাচ্য দর্শন সমন্ধে সম্যক জ্ঞান পাই। জানতে পারি, তেলাপোকারা কেনো আজ অবধি টিকে আছে।

তোমার চিঠিটা না পড়ে পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। কখনোই সহজে পড়ি না। কারণ পড়লেই তো ‘প্রথমবার’ পড়া হয়ে গেল। কান্তজিউ মন্দিরের গোপন ঘণ্টাটা আমার সারা শরীরে বাজে। চিঠিটা বালিশের তলে রাখলে মাথার ভেতর তাঁতপল্লীর শব্দ আছড়ে পড়ে, চিঠিটা টেবিলের ড্রয়ারে থাকলেও বিষম সমস্যা, সারারাত বাসার নিচে বিড়ালের কান্না শুনি।

বিপুল সফল মানুষদের মত আমার কোন আইডি কার্ড নাই, তবু
তোমার চিঠি হাতে পেলেই আকাশের সব দরজা খুলে যায়।

প্রেমের মত রাষ্ট্রীয় অসুখে আক্রান্ত হয়ে যেদিন তুমি আমাকে কোন চিঠি দাও সেদিন আমি কোন মন্দিরের পূজারী-পুরোহিত নই বরং নিজেকে পাইপ মুখে দেয়া সৌম্য সুদর্শন স্মাগলার মনে হয়।

 

 


তামাক কিনতে গিয়ে


আন্তঃনগরের জানালায় –
রাজধানী থেকে এক ভিন্ন শহরের পথে
লোহার গন্ধ আর ইস্পাতের শব্দে একাকার
আমাদের এভাবেই দেখা হল তবে?
 
এইখানে কাওরানবাজারে
আমি কিনতে এসেছি মর্মর
পাতার সবচে পুরানো কৌশল
তখন দ্রুত চলে যাচ্ছো ট্রেনে
শুধু জানালার একটা মুখ হয়ে –
দূরান্তের কোনো না কোনো মফস্বল।
 
সিনাত্রা ভুল বলেনি, উই ওয়্যার লাভারস এট ফার্স্ট সাইট।
 
পকেট থেকে বের হয়ে আসা হাতে
একটা আছে আছে ভাব খেলা করে,
এদিকে আমাদের দুজনের যাবার বেলা এল বলে
না থাকার দিকে তোমার থাকতে থাকা বিরাজ করে।
 
কাওরানবাজারে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো কেবলই ছুটে যায়
এনার্কিস্ট ঘুমায় রোদ্দুরে আর
সহস্র দুধভাত মানুষের স্রোত
কাগজে মোড়ানো অক্সিজেন
হাতে নিয়ে কী দোয়া পড়তে হয় তা জানে না।

শেয়ার