in Palestine,
where it is a crime to wave
the flag of Palestine in Palestine,
watermelon halves are raised
against Israeli troops
for the red, black, white, green
of Palestine. Forever,
—Ode to the watermelon, Aracelis Girmay
১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিন ইসরায়েলি আর্মির দখলে আছে। ২০০২ সালে ইসরায়েল সরকার দখল করা অংশকে ইসরায়েল থেকে আলাদা করার জন্য একটা দেয়াল বানানো শুরু করে। আন্তর্জাতিক আইনে যা কিনা অবৈধ। অনেক চেক পয়েন্ট ও নজরদারি টাওয়ার দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রিত। এটির উচ্চতা বার্লিন দেয়ালের তিনগুণ। যা মূলত ১৮০ কিলোমিটারজুড়ে অবস্থিত৷ দূরত্বের দিক থেকে এটি লন্ডন থেকে জুরিখের সমান৷ ফিলিস্তিন এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ওপেন-এয়ার কারাগার। যা কিনা গ্রাফিতি আর্টিস্টদের অবকাশ যাপনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
—Banksy, Wall and piece
২০১৭ সালে Dismaland এর পর বাঙ্কসি তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটির ঘোষণা দেন৷ যেটি ছিল The Walled off Hotel. পশ্চিম তীরের বেথেলহেমে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনকে আলাদা করা দেয়ালটি থেকে ১২ ফুট দূরে পৃথিবীর সবচেয়ে সংঘাতময় এলাকায় এই হোটেলটি তৈরি করা হয়। পৃথিবীর বিলাসবহুল হোটেলগুলো যখন জানালা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখার প্রতিশ্রুতি দেয়, বাঙ্কসির হোটেল সেখানে আপনাকে দেবে ‘the worst view in the World’ এর প্রতিশ্রুতি। এই হোটেলে বুকশপ এবং মিউজিয়াম দুটোই আছে। যা মূলত দেয়ালটির ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের ইতিহাস শোনাবে। এটি একই সঙ্গে গ্যালারি ও প্রতিবাদ। আর যেখানে পেইন্টিংসহ নানা জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়, বাঙ্কসি স্যাটায়ার করে সেটার নাম দিয়েছেন Wall*Mart. বেলফোর ডিক্লেয়ারেশন (যেখানে প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জাতীয় আবাসভূমি তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়) এর শতবর্ষে এটি তৈরি করার পেছনে একটা বার্তা ছিল বাঙ্কসির। তিনি লিখেছিলেন, ‘ব্রিটিশরা এখানকার বিষয়গুলো ঠিকঠাক সামলাতেই পারেনি। আপনি যখন কোনো বিয়ের আয়োজন করবেন তখন আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, বউ ইতোমধ্যে বিবাহিত নয়।’ বাঙ্কসির সঙ্গে এই কাজটিতে কো-ফাউন্ডার ওয়াসিম সালসা। তিনি বাঙ্কসি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বাঙ্কসি সাধারণ কোনো মানুষ নন। তার অনেক ভক্তের প্রয়োজন নেই। সে কিছু মানুষকে রাগান্বিত করে। যদিও এসব সে পাত্তা দেয় না।’
ইমেজের বা ইশারার গুরুত্ব বোঝার জন্যই মূলত উপরের গৌরচন্দ্রিকাটুকু বলা। বাঙ্কসি এখানে যা করেছেন তা হলো ইমেজের আশ্রয় নিয়ে কঠিন কিছু সত্যভাষণ দিয়ে যাওয়া। তবে আমাদের আলাপটা বাঙ্কসি নিয়ে নয়। আমাদের আলোচনা মূলত ভিন্ন। যখন আপনি নিজের ভাষায় কথা বলতে পারবেন না তখনই মূলত আপনাকে আশ্রয় নিতে হয় ইমেজের। কিন্তু পরিস্থিতি যখন বর্ণনার অযোগ্য এবং দুর্বিষহ হয়ে উঠে তখন ইমেজেরও অন্য ইমেজে আশ্রয় নিতে হয়। একটা সময় ছিল যখন ফিলিস্তিনিদের এমনটাই করতে হয়েছিল। ইমেজকে প্রকাশের জন্য আশ্রয় নিতে হয়েছিল অন্য এক ইমেজের।
জাতীয় পতাকা—একটা দেশ বা জাতির প্রতীক। মানে আপনি যখন বাংলাদেশ বলেন তখন সবার আগে আপনার মনে যে ইমেজটা ভাসে সেটা হলো লাল-সবুজ একটা পতাকা। এটা তখন আর শুধু কাপড়ের গায়ে লাল-সবুজ পতাকা হয়ে থাকে না৷ এটি তখন একটি দেশের প্রতিনিধি হয়ে ওঠে। আর যখন একটি দেশের কাছ থেকে তার পতাকাটা কেঁড়ে নেওয়া যায় তখনই সেই দেশ ভূমি থাকা সত্ত্বেও ঢুকে পড়ে অস্তিত্বহীনতার এক অন্ধকার টানেলে।
ফিলিস্তিনকে এ কৌশলে অস্তিত্বহীন করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৬৭ সালে গাজা ও পশ্চিম তীরে নিষিদ্ধ করা হয় জাতীয় পতাকা প্রদর্শনী। আর যারা এটি প্রদর্শন করার চেষ্টা করবে তাদের আটক করার কথাও বলা হয়। কিন্তু অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে থাকা মানুষ বেছে নেয় প্রতিবাদের অন্য এক ভাষা। যেখান থেকে সৃষ্টি হয় এক টুকরো তরমুজের গল্পও।
তরমুজের গল্প অবশ্য আমাদের প্রথম শুনিয়েছিলেন শহীদুল জহির। ‘আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস’ নামে সেই গল্পটি তরমুজময়। অনেক দিন পর্যন্ত তরমুজের সেই ইমেজ মনে গেঁথে ছিল। সে আলাপ অবশ্য এখানে অপ্রাসঙ্গিক। তবে সেই গল্প দিয়ে তৈরি ইমেজ পরবর্তীতে ভাঙে অন্য এক গল্প, নাহ গল্প না সত্য ঘটনা দিয়ে৷ সেইটা নিয়েই এই আলাপ। ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আগ পর্যন্ত এবং তারপরও ফিলিস্তিনে প্রতিবাদের হাতিয়ার হয়ে ওঠে তরমুজ।
তবে তরমুজও যে হয়রানির ইতি ঘটাতে পেরেছিল তা নয়৷ এক সময় তরমুজ বহনও হয়ে যায় অপরাধ। এমনকি ১৯৮০ সালে চিত্রশিল্পী স্লিমান মানসুর নাবিল আনানি ও ইসাম বদরের চিত্রপ্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রদর্শনীটি শুরুর পর মাত্র তিন ঘণ্টা চলতে পেরেছিল। এই ঘটনায় ইসরায়েলি সৈন্য বলেছিলেন, ‘শুধু ইসরায়েলি পতাকা আঁকাই নয়, এমনকি পতাকায় রঙ থাকাও নিষিদ্ধ।’ প্রতিক্রিয়ায় ইদাম বলেছিলেন, ‘আমি যদি সাদা, কালো, লাল এবং সবুজ রঙের ফুল আঁকি?’ তখন সেই সৈন্য বলেছিলেন, ‘বাজেয়াপ্ত করা হবে। এমনকি তরমুজ আঁকলেও বাজেয়াপ্ত করা হবে।’ তরমুজে এমনই ভয় ছিল ইসরায়েলি সৈন্যদের। শিল্পের ভাষায় প্রতিবাদ নিয়ে মানসুর বলেন, ‘এমনকি কিছু মানুষ আমাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। ফিলিস্তিনের সংস্কৃতি ও অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। তাই শিল্পকে লড়াই করতে হয়৷ এটা গৃহহীন মানুষকে আশ্রয় দেয়। ‘
অবশ্য তীব্র বাধাও তরমুজের শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতীক হয়ে ওঠা ঠেকাতে পারেনি। এক পর্যায়ে শিল্পী-কবি-সাহিত্যিকরা তরমুজকে আশ্রয় করে শিল্প-সাহিত্য রচনা শুরু করেন। ২০০৭ সালে শিল্পী খালেদ হারোনির হাত ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠে তরমুজের চিত্র। বিশ্বব্যাপী এটি প্রদর্শিত হয়৷ এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দুনিয়াতেও বৈশ্বিকভাবে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে অন্যতম প্রতীক হয় সেই তরমুজ। এক সময় যাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল কৌশলী হাতিয়ার হিসেবে, সেটি এরপর পরিণত হয় প্রতিবাদের শক্তিশালী এক ভাষায়। যে ভাষায় এখন ফিলিস্তিনিদের হয়ে অন্যরাও কথা বলে। এমনকি তরমুজের প্রতিবাদের নৈবর্ত্তিক হাতিয়ার হয়ে যাবারও পূর্ণ সম্ভাবনা আছে। যেখানে অন্যায় ও নিপীড়ন দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানেই ছুড়ে মারা যেতে পারে একটি তরমুজ।
হাসনাত শোয়েব
কবি ও কথাসাহিত্যিক