ঢাকা, ২০২৪: ভাষার বুননে
গ্লোসারিতে উদ্ধৃত ছিলো তবু
আরও কয়েক পশলা
গান—সরোজের, শামুকের, ভাঙা
অর্কেস্ট্রার তরে।
তাঁদের অভিমুখে রেখে যাওয়া এই সৌম্য
নভেম্বরের রোদ—অবশিষ্ট বিষাদের পাণ্ডুলিপি—
পরন্তু, প্রদীপ্ত প্রফেসি, সরণির
তুমুল জনস্রোত—অন্তর্লীন ভাবছায়া। বধির
চৌরাসিয়া,
নিছক অ্যাম্বুলেন্সের লালিমায়
বিস্মৃত আমাদের দিন-রাত
গুমরে পড়ে থাকে
অযুত নিযুত সংখ্যাতত্ত্বের ভারে!
কোরাসে কোরাসে ঘনীভূত হয়ে ওঠে অস্ফুট জার্গন।
মেমোরির ওয়েভলেন্থের প্রতি পরতে
অলকানন্দা মেঘের
ন্যায় জমাটবদ্ধ ঊষরতা—অতঃপর,
আরও
প্রগাঢ় পরিশীলিত বোধের সম্ভার –
সবকিছু ডিচ করে, শহরতলীর প্রাচীনতম
কুঠুরিকে পিছে ফেলে একদিন ঠিকই
চলে যাবো – যেথা
পাইন বন ঘিরে আছে মেটামরফোসিসের ঘ্রাণে।
কুহুতান
শুদ্ধস্বরে কেঁদে ওঠো—তেঁতুলবন,
কেঁদে ওঠো ছেলেবেলার আম আঁটির ভেঁপুর মতো
বীতস্বরে।
কাজ-কারবার নাই। দেখবো অর্গ্যানিক কান্নার ফুলঝুরি।
পোস্টমর্ডান এইজে জানি কিভাবে কান্নাও হতে
পারে দারুণ “ইউটিউব কন্টেন্ট”। দেখাতে পারে
মুহুর্মুহু চকচকে
ডলারের ভেল্কি চমৎকার। হউক মাতম। এইসব
বোধসুদ্ধ আসে
কুকুরের জিভের মতো সহজ গ্রীষ্মপ্রভাত।
আসে ডুমুর ফলের আভায় কোমল। ডুবোজলে
তলিয়ে গিয়ে চেখে নিই
জীবনের ফ্লেভার। অর্থহীনতায় মাতি ডি-বাক্সের বাইরে।
করি স্বদেশী কান্নার তর্জমা –
সহজ ভূমিকায়—ভেঙে পড়ুক পুতুলের বিয়ের সম্বন্ধ—
হউক মঞ্জুরিত রহস্যাবৃত কুহুতান ~
নিছক প্রার্থনার ছলে…
স্বীকারোক্তি
যুগোত্তীর্ণ নই—সখা, কাঁধেও নাই নিপাতনে সিদ্ধ
পদবির কোনো ভার—
কুলজি বরাবর বেড়ে উঠেছে চিরায়ত গন্ধর্ব পরাগ;
—জানি না চাষাবাদ আমি, না পারি আঙুলের নিপুণ
কারিকুরি, হায়!
পোয়াতি সকাল শুধু বিছায়ে দিতাছে সবটুকু
কুসুমের সংহার—আমাদেরই পাতে
এহেন সাইকেডেলিক শীতের রাতে।
হেলে-পরা দালানের মতো বাঁকা চাঁদের সাথে,
হয়ে গেছে বুঝি চাতকের সন্ধি; দুনিয়ার সব বাতিল
মালই প্রায়
পিঠ চাপড়ানো আর ইজমের
ফাঁদে বন্দি—এই ইঁদুর খেলার মাঠে, খানিক থ্রিলের সাথে—
চেখে নিই তোমাদের পথ ও পরিখার স্বেদ;
বেঁকে আসে জিহ্বা তোমাদের আপোসে ও মৌনতার ক্লেদে /
নট আউট কালের গর্ভতলে—দ্যাখো—ম্লানটান হয়ে
রয়েছে কতো মেইকি বাপ ও বাটপারের কেচ্ছা!
ক্যামোফ্লেজের ধাঁচে
হ্যাট খুলে বসে থাকি, নিরাভরণ—
অ্যামবুশ; অ্যামবুশ!—যুদ্ধ ও দাঁতাতের
সঙ্গমে নিভে গ্যাছে দুনিয়ার শেষ ঝাড়বাতি—
ঝুম ঝুম আঁধার…
বোসো, বোসো—ঈশ্বর—জিরিয়ে নাও
তুমি—এপাড়ার সিদর অটবীর ছায়ে, এক লহমা;
দুধের সরের মতোই এ্যানিগমা ভেসে আছে
কোথাও আকাশের গায়ে—যেই বোকাচোদা লু হাওয়া
প্রায়শই মৃদু
কাঁপন ধরিয়ে যেতো তোমার অস্তিত্বের দেয়ালে
—তাকে কি পেয়েছিলে খুঁজে সেদিন?
আমি তো পালিয়ে এসেছি ভেঙে বাউল পাখিদের শোক
সভা—রিটায়ার্ড হার্ট হওয়া স্মৃতিদের মেট্রোপলিসে
এসেছি, এ্যাকা এ্যাকা—অপরিজ্ঞাত;
পকেটে আছে বারোয়ারি দ্বিধার ভ্রাতারা—আপোসের
সিয়ামেজ টুইন—আরো আছে অনন মেঘদল, নেবে?
পাঁজরের স্লেটে তাই লিখে রাখি
সে-গুঞ্জরিত বিহঙ্গের কথা—তোমাদের পাড়ায়,
শুনেছি
ভেগে গিয়েছে চলে আমাদের পোড়খাওয়া
আনাড়ি কুকুর— তারে খেতে দিও মাড়অলা ভাত,
দু’বেলা—দিও খেতে
ঊর্বশীদের আত্মসমাচার;
করিও যতন ৷
দুরুদুরু ডাউটের প্রশ্রয়ে হয়তো আমিও একদিন
তার পদাঙ্ক মেপে মেপে চলে আসবো
তোমার কানা গলির চৌমাথায়—
র্যাঁবোর সঙ্গে আমরা তিন
৩.
তিনটি যুবক সরে গেলো মধু ও দুধের বনে
চতুর্থটির ছায়ায় ঢাকা পড়েছে নটীদের আত্মহত্যার রটনা
অথচ আমি কবেই হজম করে ফেলেছি অপ্রেমের ফিলোজফি…
তিনটি ছায়া সরে গেলো হরমোনদাসী বয়ঃসন্ধির নদীতে
চতুর্থটি বহুদূরে কাঁপছে, কাঁপছে শুঁড়িখানার পাশে কালভার্টের কোণে
অথচ আমি বসে বসে লিখছি ওদের জন্য পোড়ামুখো এলিজি
তিনটি কালভার্ট হঠাৎ সরে গেলো স্বর্গের দেউড়িতে
চতুর্থটি কাঁদছে, শে হরবোলায় উবে যাবে হারিকিরি, হারিকিরি ধ্বনি
অথচ আমি মালা গাঁথছি মরণের জন্য, তোমায় করছি খারিজ…
তিনটি কান্না সরে গেলো বাউরি সঙেদের সাজঘরে
চতুর্থটি অস্ফুট বলছে সহজ, সহজ…বাঙময় চাহনির চোরাস্রোত…
অথচ আমি অবলীলায় খেয়ে ফেলছি আস্ত একটা জীবন!
৭.
পিঁপড়েদের কলোনি ভেঙে পড়ে
ভেঙে পড়ে সমস্ত এলগরিদম…বিজ্ঞাপন মুহুর্মুহু…
আরেকটু এগুলেই দেখা পাবো শৈশব উত্তীর্ণ
হানিট্র্যাপড পতঙ্গদের
দেখা পাবো হয়তো
অ-থেকে তেড়ে আসা অজগরের;
পেয়ে যাবো ছেঁড়া চিঠিগুলোর অংশবিশেষ
পেয়ে যাবো মধুকূপী ঘাসের ঠিকানা…
আমি সে জ্যোতিষী যে পড়তে পারে না
নিজেরই হস্তরেখা –
ওদের কিভাবে জোড়া লাগাবো আমি, বলো?
ভেঙে পড়ে অজস্র ফিসফাস, কানাকানি…
ভেঙে পড়ে নক্ষত্রদের সন্ধি—অগোচরে…
বহুবচন
একাকী রূপকথার লোরি
তন্দ্রাচ্ছন্ন করে রাখে তোমাকে অনন্তকাল
শেষতক সমস্ত আহাজারি ফুরোয়
সমস্ত কলহাস্য থমকে দাঁড়ায় একবচনে, বিব্রত
উপরে ঠ্যাঙ তুলে হাসেন ঈশ্বর এক হতচ্ছাড়া
পিগমী উচাটনগুলি ঘুরঘুর করে
মাঝরাতে লাল-নীল রঙজ্বলা সাকুরার বাইরে…
আমি সবকিছুই লিখে ফেলি নিখাদ একবচনে
হাইবিপি – টেনশন – উষ্মা – হিউমার
হিল ট্র্যাকিঙের স্মৃতি
তপ্ত পদব্রজ…
আভিনাধিক ক্রমে টুকে রাখি জ্যান্ত অপমানগুলি
যেন তারা
বেখাপ্পা না হয়ে পড়ে পাঁচতারকা রেস্তোরার আলেয়ায়
অথচ মুহূর্তেই বহুবচনে পরিণত হয় ওরা
সিঁদ কেটে রিডিরেক্টড হয়ে যায় তোমাদের নিউজফিডে
আমার একবচন ক্লান্তি
তোমাদের ট্রিগারড করে নিঠুর বহুবচনে…চমকায়…
মৈত্রী ও সঙ্ঘের মধ্যে পোরা আছে
কতোশত সোনাদানা
তুমি তো তার হুদিশ জানো না…
প্রতিষ্ঠানের চাদরে স্রেফ মুড়ে রাখো নিজের কঙ্কাল!
মৃত আত্মীয়স্বজনের নিঃশ্বাসে ভারী হয়ে আছে ঘর
বাইরে এসো, রাস্তায়, চারমিনারে হবে কথা…
তাদের শ্রুতিলিখন হবে বহুবচনে…
কেননা বেদনা সর্বজনীন
আ ম রা
চিত্রকলার ইতিহাসে ভুলে যাবো পরস্পরের জন্মদিন!
হামিংবার্ড
তারাপীঠে আমি যাই নাই কোনোদিন
বাঁধিনি লাল ফিতে মাজার আঙিনায়
চুরি করিনি হামিংবার্ডের ছানা সংগোপনে…
তবু হায়, অজ্ঞেয়বাদী অনুরাগ,
মৃত বন্ধুর স্মৃতির মতো পোড়াবে কতকাল আমাকে?
তারাপীঠ আমি গিয়েছি কখনও বা যাইনি বহুকাল
আমার যমজের শবের পাশে
যেখানে ছড়ানো বার্ড ফুডের গুঁড়ো…
শে শুয়ে আছে খণ্ডবিখণ্ড, আছে ওসিরিসের
মতো পাতালপুরীতে, নীরব
শে একা নয়, সঙ্গে রয়েছে মুমূর্ষু সিডেটিভ
সঙ্গে রয়েছে হারানো সবুজ ফ্রকের টুকরো…
মাজারের আঙিনায় রাখিনি কোন চিহ্ন আজও
তথাপি
জীর্ণ অজপাড়াগাঁয়ের মাজারে যাওয়া দরকার আমার
পদধূলি নেয়া দরকার তারাপীঠের সে বটের…
যেই আমাকে হত্যা করেছে ওরা
অর্থাৎ প্রেমিকাগণ, মিত্র ও মর্ষকামী স্বজনেরা
তার সদগতির জন্য একটু যজ্ঞাদি না করলেই নয়
বেঁধে না আসলেই নয় সস্তা লাল সুতো
হে… হে, আধুলি, সিকি, পয়সার মতো খুচরো
কবিতার দশক!
তানহিম আহমেদ
জন্ম : ৩ এপ্রিল ২০০৩; ঢাকার অদূরে বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়ন করছেন। বাংলা কবিতায় আগ্রহী।