ইলিয়াস কমলের সিনেব্লগ ১৬:৯ ।। গল্পটা ফেব্রুয়ারি মাসেরই

শিরিষের ডালপালার পথচলার শুরুর পর্যায় থেকেই পরিকল্পনা ছিলো, একটা সিনেব্লগ হবে। যেখানে একজন ছবিখোর নিয়মিত লিখবেন। আমার বেশ কজন বন্ধু আছে, যারা সিনেমায় বাঁচে। সিনেমায় বাঁচা বলতে – সিনেমায় খায়, ঘুমায়, স্বপ্ন দেখে। সারাক্ষণ সিনেমা সিনেমাই করে। তাদের মধ্যে ইলিয়াস কমলের পাগলামি এবং লেখার হাত দুটোই উপাদেয়। কমলকে তাই বছর দুয়েক হলো তাগাদা দিচ্ছিলাম, সিনেমা নিয়ে নিয়মিত লিখো। অবশেষে বন্ধু কমলের সময় হলো; এবং যাত্রা শুরু করলো ইলিয়াস কমলের সিনেব্লগ ‘১৬:৯’। পড়তে থাকুন, হে শিরিষ পাঠক!

-রুহুল মাহফুজ জয়
সমন্বয়ক-সম্পাদক, শিরিষের ডালপালা


ফেব্রুয়ারি আসলেই বইমেলা’ই হইয়া যায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বই এবং বই বিষয়ক নানা গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। এ সময় অনেকেই প্রেমিকার চেয়েও বই ও বইমেলাকেই সময় দেয় বেশি। এইসব সম সাময়িক গল্প যেন চেনা জানা এক একটা গলি। এমন গলি ঘুপচিতে মানুষ কি অনায়াসে যাপন করতেছে জীবন। এই গল্প বলা মন্দ না।

বই প্রসঙ্গেই বলি, কয়েকদিন আগে মেলায় আসা নতুন বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখছিলাম। এক কবি বন্ধু বলে বসলো, আপনার (আমার), ফয়সাল আদনান আর বিধান সাহা’র বইয়ের একটা জিনিস কমন পড়ছে। আশ্চর্য হয়ে তার দিকে তাকাইলাম। বিধানের বইটা তখনো উল্টে পাল্টে দেখা হয় নি। তাকে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো, তিনজনই মা’কে বই উৎসর্গ করছেন।

এবার বইয়ের প্রসঙ্গ থাক। বরং ছবির কথা বলি। যেই ছবিটার কথা আমি বলতে চাই সেই ছবিটা একটা সম্পর্কের। ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের, মায়ের সাথে সন্তানের। বস্তুত মা’ই এখানে আমার কাছে মূখ্য বলে মনে হইছে। নয়ত এই গল্পই হয়ত এতটা গুরুত্ব পাইতো না। ছবির নাম যদি বলি ‘শিরু’ তাইলে আপনার চিনতে ভুল হবে। খুঁজে পাবেন না। বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে। তাই সেই দিকে না যাই। নাম পরে বলি। একটু রহস্য থাকুক।

1

ছবি শুরু হয় ৮০’র দশকের ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের এক গ্রাম থেকে। আহা শৈশব, আশির দশকে যে বা জন্ম গ্রহণ করছে এই ছবির শুরুর অংশটা তারে নষ্টালজিক করবেই। হয়ত খুব বেশি কিছু নিজের সাথে মিলবে না, কিন্তু নষ্টালজিক জানালা খুঁলে দিবেই। পাঁচ বছর বয়সি শ্যারো ব্যায়রলি’র চরিত্রে অভিনয় করা শিশু অভিনয় শিল্পী। বহুদিন পর আবারো কারো অভিনয় দেখে মন খারাপ হইছে। মনে হইছে হয়ত সেই অজানা গন্তব্যের পথে ছুঁটে চলা দরজা বন্ধ ট্রেনের ভেতর আমিই আটকে আছি। এমন মনে হইতে পারে যে কারোরই। এই পর্যন্ত ছবির সিনেমাটোগ্রাফিও দুর্দান্ত। তারপরও যে একেবারে ফেলনা সে কথা বলা আমার জন্য ধৃষ্ঠতা হবে। কারণ হলিউডি প্রোডাকশনে একটা আন্তর্জাতিক মান সব সময়ই বজায় থাকে বলা চলে। বাকি সময়টাও মানে ছোট থেকে বড় হয়ে যাওয়ার পরের অংশটা পুরোটাই ক্লাইমেক্স বলা যায়। যা কিনা আপনার অতীত আর বর্তমানের একটা ট্রানজিকশন হিসেবে দেখি। ‘স্ল্যামডগ মিলিয়নিয়ার’ খ্যাত দেব প্যাটেল এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছে। তার সাথে আছে অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান ও ভারতীয় অভিনয় শিল্পী নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী এবং তানিষ্ঠা চ্যাটার্জি। প্রত্যেকের অভিনয় যদি আপনি আগে দেখে থাকেন এই ছবিটাও দেখতে বসবেন অনায়াসে।

এইগুলো সংবাদমূলক তথ্য। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে যদি ছবির অনুভূতি ছেরে কথা বলি, তাহলে বলবো এইটা একটা গুগল ম্যাপস এর বিজ্ঞাপন। হ্যা, দুই ঘন্টার এই ছবি সত্যিই একটা বিজ্ঞাপন। কারণ পঁচিশ বছর আগে হারিয়া যাওয়া ‘শিরু’ বা শ্যারো ব্যায়রলি ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার মা ও বোনকে খুঁজে পেয়েছেন গুগল ম্যাপস এর মাধ্যমেই বলা চলে। এই গল্প নিয়া গুগল এর একটা ছোট ডকু’ও আছে ইউটিউবে (লিংক হবে এখানে)।

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী শ্যারো ব্যায়রলির লেখা আত্মজীবনী ‘লং ওয়ে হোম’ অবলম্বনেই নিজের প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘লায়ন’ বানাইছে কবি ও চিত্রনাট্যকার লুক ডেভিসের ভাই (সম্ভবত) গার্থ ডেভিস।

জানুয়ারি মাসে যখন অস্কারের মনোনয়ন ঘোষণা করে তখন সবার আগে আমি দেখতে শুরু করছিলাম বিদেশী ভাষার ছবিগুলো। তারপর অন্যগুলো দেখার আগেই ফেব্রুয়ারি চলে এলো। এই মাসে অনেক শিডিউল ভেঙ্গে যায় বলেই ছবি দেখা কম হইতেছিলো। এই নিরবতা ভাঙ্গলো ‘লায়ন’ দিয়ে। ফলত আপনিও দেখে ফেলতে পারেন এই ছবিটা।


movie link: https://www.youtube.com/watch?v=UXEvZ8B04bE

শেয়ার