১৯৯৫ সাল থিকা ২০২০— এই ২৫-২৬ বছরে লেখা কবিতাগুলার ভিতর থিকা ২৫টা কবিতা বাছাই করছি এইখানে। এর পরের কবিতাগুলা নেই নাই, কারণ আমি মনে করি, একটু টাইম-ডিসট্যান্স না হইলে কবিতা বাছাই করা মুশকিলই একটু। আর এইগুলাই “শ্রেষ্ঠ কবিতা”— তা না, বরং ৫০টা বা ১০০টা কবিতা বাছাই করতে গেলে দেখা যাবে, এর মধ্যে থিকা দুই-চাইরটা বাদ পইড়া যাইতেছে। সিলেকশনের তেমন কোন ক্রাইটেরিয়া নাই। এখনো নিজের কাছে এখনো পড়তে— এই জিনিসটাই প্রায়োরিটি পাইছে, এর বাইরে বন্ধু-বান্ধবরা নানান সময়ে পছন্দ করছেন— এই ব্যাপারটাও কন্সিডার করছি।
— ইমরুল হাসান
মুহূর্ত এবং স্মৃতিগুলি
রঙ খুব সহজে বদলায়। আর ঘন হয় নিরবতা। আকাশ। মেঘ। ঘুড়ি উড়া। উজানে বাতাস। ঠোঁট। চোখ। আর আর। দেখা না। কারণ বদলায়া যায়। ঘর ও বাহির। একটা জানালা।
তুমি বলতেছিলা, মেঘগুলা। কখনো আমার না। হাসি, হাসিগুলা। এর চেয়ে ভালো ডুবে যাওয়া। মাছ ধরা। কখনো আমার না। তুমি বলতেছিলা, এইসব শব্দ ও কথারা আমাদের সেতু না, আমাদের পরিখা খননের নিজস্ব মন্ত্র আর হু হু কাঁদতেছিল হঠাৎ পোশাকগুলি, না-বোঝা জড়েরা!
বধির একটা মৃত্যু উন্মোচিত হলে চোখ বুঁজে তার ঘ্রাণ নিয়া সকাল আলোকিত হয়। তুমি জানো, এইসব কতোটা কাছের। আর আমি ভাবি; ভাবনা, সে কি অদ্ভুত ট্রান্সপারেন্সি!
/১৯৯৫
♣
কালিকাপ্রসাদে গেলে আমি যা যা দেখতে পাবো
পানিতে ভিজে থাকলো গ্রাফাইট আমার। তারে লিখবো আবার,
পিঠ ঠেকাইয়া অপরিচিতের পিঠে, ঠাসাঠাসি বাসে কইরা চলে যাবো
মুগ্ধতা ফিরাবে না, অহেতুক লাশ হইয়া গেলে ছোট ছোট পাথরে ঢাকা থাকবে কবর
ছোট ছোট পাথর, হৃদয়ের পাথরগুলা জমে থাকে তার পাশে
গান শুনতে চাইলেই আসবে পুরানো দিনগুলার কথা, আবার ছোট ছোট বাচ্চাগুলা ভারী কইরা তুলবে বাতাস
উঠান জুড়ে খেলা পড়ে থাকবে, আমরা বড় হইয়া গিয়া গাছের ছায়ায় নিজেদের লম্বা করতে থাকবো
নিরবতা থাকবে জানালার গ্রিলে, সোফার নরম ফোমে বিনোদন-পত্রিকাগুলা ছড়ায়া যাবে,
বলবে “অনেক তো হইলো, এইবারও কি ডুবে থাকবা গ্রাফাইটের মেমোরিতে?”
হুঁশ ফিরার পরে দেখবো গ্রাম-উন্নয়ন, নতুন ইট কংক্রিটের পথ, আরও দূর গ্রামে পৌঁছায়া যাইতেছে টেলিফোনের কথা,
অনেক কাহিনি নিয়াও চুপচাপ বইসা থাকবে ঘাসগুলা, কখোন যে কথা বইলা উঠে, চমকায়া উঠবো
আর জানি ঠিক ঠিক অইটা-ই ঘটবে, জানা কাহিনিগুলা তারা কখনোই গোপন করতে পারে না।
আমিও অবিশ্বাসী না, লুকায়া সিগ্রেট খাইতে খাইতে বলবো আমার সাহসের ঘটনাগুলা,
জানি অদেরকেও ইন্সপায়ার করবে, আমারই মতো উদগ্রীব হবে, আবার দেখতে চাইবে
‘আর তা সম্ভব না বইলাই এই আগ্রহ’ আমার সন্দেহে তারা শরীর দুলায়া হাসবে।
শান্ত, সমাহিত পথ দিয়া অবাক করার মতো বাস আসে, রিকশা তো তার নিজের জিনিস
মাইনা নেয়া সম্ভব বইলা নিয়মিত কাস্টমারের মতো তাই আসে মুদির দোকানে, কিছুক্ষণ কথা বলে
তারপর চইলা যায়, অবাক করার মতো যাওয়ার সময় বাজায় ঘণ্টা টুং টাং,
তবু তারা ভাটিয়ালী গাইবে না, উদাস হাওয়ার সাথে নিজেদের ভাসায়া দিয়া চইলা যাবে
রেলরাস্তার পাশ ঘেঁষে যেইখানে শুকাইতেছে পাটখড়ি, তার পাশে গিয়া আগুন জ্বালবো, তার গন্ধ নিয়া
বুঁদ হয়া পইড়া থাকবো, সন্ধ্যাবেলা পল্লীবিদ্যুতের ডানা তার জ্বলতে না পারার কথা বইলা, বলবে
“এখনো সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালানোর নিয়ম চালু রাখা চাই, না হয় রাইতে টিভি দেইখো”
আর স্কুলছাত্রীদের টেবিলে গোপনে জমা করবে অসংখ্য প্রেমপত্র
নম্র অভিবাদনগুলির হারায়ে যাওয়া নিশ্চিত বলেই অরা মনোযোগী হবে, ভাববে,
এমনও তো হয়, ইতিহাস আর ভূগোল কতোটা আর জানে এই গোপন প্রেমের কথা!
গাঢ়, পাকতে থাকা ফলের মতন রোদ সকালের, সবুজ আমের মতো পেলব
কাজকাম নাই, ব্যস্ততা নাই, আমি খালি ঘুরতে ঘুরতে দেখবো গ্রাফাইটের ঘোলা পানি
মিশতে থাকলে কোন অক্ষর হয় মলিন, কোন অক্ষর জাইগা উঠতে হইতে চায়,
আর কেউ কেউ ভাসতেও পারে না; লজ্জা পাওয়া কোন অক্ষর সামনে আসে তবু
আর অদের সবাই উইঠা আসবে দেখতে আমারে; আর আমিও তো খুশি হবো, ঘুমে, তোমার স্বপ্নে
এই আলো দেখতে দেখতে হয়া ওঠবো উদ্বেল, অকপট পাপস্বীকারের মতো চলে যাবো, তোমার কাছেই।
/১৯৯৮
♣
পুরান কথা
তখন আমি সারা দেশ ঘুরতেছি। রাজশাহী গেছি, ফিল্ড-ওয়ার্কের কাজে। গ্রামে শিক্ষিত-মহিলা পাওয়া খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। খুজঁতে খুঁজতে শুনলাম একজন আছেন, এই গ্রামেরই বউ। কিছুদিন আগেও প্রাইমারি স্কুলের টিচার ছিলেন। চার বছরের একটা ছেলে ছিল তাঁর, পানিতে ডুবে মারা গেছে। তারপরে চাকরি ছাইড়া দিয়া বাড়িতেই থাকেন সারাদিন। সময় ফুরাইতেছে, দুপুর শেষ হয়া বিকাল। রাতের আগেই কাছের শহরে ফিরতে হবে।
ঠিকানা জাইনা নিয়া তাঁর কাছে গেলাম। শ্বশুর ছিলেন বাড়ির উঠানে বসা। সবকিছু খুইলা বলাতে, ভিতরে খবর পাঠাইলেন। বললেন ওই ঘটনার পর বউটা কারো সাথে কথা বলতে চায় না, তারপরও দেখেন চেষ্টা কইরা।
বানানো প্রশ্নগুলার উত্তর দিতে দিতে একসময় কেমন যেন ভারী হয়া আসলো তাঁর গলা। চোখ ছলছল। হঠাৎ কইরা গলার আওয়াজ নিচা কইরা আমাকে বলতে লাগলেন, “জানেন, আমার ছেলেটা না মারা গেছে! পুকুরে গেছিল গোছল করতে। জানেন আমার ছেলেটা না, আমার ছেলেটা না কই যে গেছে, আমার ছেলেটা, আমার ছেলেটা…” এইরকম বলতেই থাকলেন, এলোমেলো কথাগুলা।
আমি তাকাইলাম তাঁর চোখের গভীরে, মণির দিকে। দেখলাম স্থির একটা দৃষ্টি, আমারেই দেখতেছে। আমার মনে হইলো, আমি যেন তোমারে দেখতে পাইতেছি। তোমার মন-খারাপ-করা অসহায় ভালোবাসা! মনে হইতেছিল আমিই যেন সেই চার বছরের ছেলে, মরার পরে আবার তোমার কাছে আসছি। আর তোমার ছেলে হইয়া তোমারেই আজাইরা অনেকগুলা প্রশ্ন করে যাইতেছি। ভালোবাসার কথা বলতেও পারতেছি না!
এই ঘটনার কথা আমি অনেকবার ভাবছি, এর পরে। অইবারই মনে হয় শেষবারের মতো, আমার অসহায় মন, তোমার ভালোবাসার কথা মনে করছিল, অসীম মমতায়।
/২০০৪
♣
মিলিটারি (রাঙামাটি)
শালা, মিলিটারি’র দাপট কতো, দেখো!
মন, কেন তুমি মিলিটারি হইলা না?
জিপ চালাইতা ফাঁকা রোড দিয়া
স্পিডবোটে যাইতা দূরে
পাহাড়ের চিপা দিয়া ক্যাম্প পরিদর্শনে!
আজ শুধুই দীর্ঘশ্বাস, ট্রাইবাল বেদনা চাপা, মনে।
/২০০৬
♣
মন তুমি করো মনোনিবেশ
যুদ্ধ থিকা পালায়া আসছি,
পালাইয়া কৃষিকাজে করছি মনোনিবেশ
কিছুদিন পার হইলো এই কইরা,
ভাবছি পালানোর সময় আসছে, আবার
যুদ্ধ থিকা পালাবো
কৃষিকাজ থিকা পালাবো
সবকিছু থেকে সরায়া নিবো নিজেরে
আসলে নিজ বলে তো কিছু নাই
যুদ্ধ আর কৃষিকাজ পইড়া আছে।
/২০০৯
♣
গ্রাম ও শহরের গল্প
ঘিঞ্জি বস্তির শহরগুলি, আমি ভালোবাসি
যেইখানে শহরের ভিতর আটকায়া আছে গ্রাম, আমি ভাবি
গ্রাম নিয়া চিন্তা আমার ভর করে ওই বস্তির ভিতর, যা আমি দেখি না
অ্যাজিউম করি যে, ওইটাই একটা প্রটোটাইপ, শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করে
নিজেদেরকে গইড়া তোলার ট্রাই করে; ওইটা একটা অহেতুক রিয়ালিটি
যত দ্রুত পারি, আমি তাদেরকে শহরের থিকা বাইর কইরা দিতে চাই
আর তারাও কেমনে জানি খুব দ্রুতই আবার গ্রাম্যতা নিয়া আসে শহরের ভিতর
আইল্যান্ড ধইরা এমন বেখেয়ালে হাঁটে যেন ক্ষেতের আইল
ময়লা পানির খাল পার হয় ডিঙি নৌকায়, যেন বর্ষার নতুন পানি
আর বৃষ্টিতে পানি জমলে কি যে খুশি, বড় বড় রাস্তাগুলি তো এক একটা নদী!
বস্তির মানুষজন এই শহরটারেই নানান ফন্দি-ফিকিরে একটা গ্রাম বানায়া ফেলে
ছুটির দিনে ওরা ঢুইকা পড়ে সুপার শপ আর শপিং মলে
এইটা-ওইটা দেখার ভান করে দেখে শহরের মানুষগুলি, ফলো করে যে
হাফপ্যান্ট পইরাই শহরের মানুষগুলি এখন বাইরে চইলা আসছে
ওদের আর ঘর-বাহির নাই, রাস্তা-বাড়ি নাই, নারী-পুরুষ নাই, স্ট্রেট-গে নাই…
আর কি যে উত্তেজনা, ওদের চকচক করা চোখে
নুডুলসের বাটিতে, স্যুপের চামচে ওরা একটু একটু কইরা শহর খেয়ে ফেলতেছে
আর শহর ছুটে যাইতেছে, বেড়িবাঁধের ওইপাড়ে
নিষকন্টক জমি খুঁজতে খুঁজতে এক্সপান্ড করে যাইতেছে মাইলের পর মাইল
ওইখানে কি আর গ্রাম আছে?
গ্রাম খুঁজতে খুঁজতে শহর পার হয়া একদিন গেছি
বাড্ডা পার হয়া সাঁতারকুল ইউনিয়নের ভিতরে
গিয়া দেখি সাইনবোর্ড, শহর আসতেছে!
উত্তেজনায় কাঁপতেছে মানুষজন, এইটা আর গ্রাম নাকি!
দুইদিন পর তিনশফুটের রাস্তাটা হইলে, এইটা তো হবে মূল শহর…
হাঁটতে হাঁটতে যতদূরই যাই, দেখি বড় বড় বিলবোর্ড
শহর আসতেছে!
গ্রামের মানুষগুলি কিলবিল করে ঢুকতেছে শহরে
আরো আরো শহর ঢুকে যাইতেছে আরো আরো গ্রামের ভিতর
সাব-আরবান এরিয়াগুলিও চাইতেছে মেট্রো-রেলের অপশন
গ্রাম্যতাই শহরের রিয়েল অবসেশন।
/২০০৯
♣
তোমার কথাগুলি আমি অনুবাদ করে দিতে চাই
তোমার কথাগুলি আমি অনুবাদ করে দিতে চাই।
আমি লিখতে চাই আমার কবিতা তোমার কথাগুলি দিয়া
তোমার কথাগুলির ভিতর আমি বলতে চাই আমারই কথা
প্রতিধ্বনি যেন জাইগা উঠে;
যেন মনে হয়; হায় হায়! এইখানে তো ২টা লোক
১টাই আত্মা!
তোমার আত্মার ভিতরে যেই ফাঁকা
সেইখানে আমি বসে বসে
তোমার নিরবতা দেখতে চাই।
যখন কোন কথা নাই, নিরবতা নাই
শূন্যতার মতো একটা কিছু ভার হয়া আছে
অস্তিত্বে তোমার;
যেইখানে কোন বস্তু নাই, অংশীদার নাই
সেই ধূ ধূ প্রান্তরে অমীমাংসিত ধাঁধা হয়া আমি
হাজির হইতে চাই।
শারীরিক হইতে চাই আরো
সবকিছু গিইলা খাওয়া শ্যাওলার মতো তোমার বাকলে
লেপ্টায়া থাকতে চাই…
এই যে চাওয়া—এইটাই ছড়াইতে থাকে শুধু,
একটা থেকে আরেকটাতে যাই
আটকায়া থাকি আবার, সারাদিনরাত
ভাবি, আর কি কি আমি চাই…
যেহেতু তুমি নিশ্চুপ, আমি ডানা মেলতে থাকি
সুদূরেরও পথে, যদি তোমার দেখা পাই!
আর যখন দেখা হয়েই যায়
আমি তাকায়া দেখি—
তোমার গালের ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া শিরা
লালচে হয়ে উঠতেছে আরো
বেড়ে যাইতেছে রক্তের স্রোত আর
আমি প্রাণপণে ডুবে যাইতেছি কল্পনার ভিতর
তোমার;
আমি ভাবি, এই যে কল্পনা
তারা তো সত্যিও হইতে পারে
তা না হইলে তারা কি কইরা আসে?
আমাদের মাঝখানে দূরত্বগুলি তৈরী করে?
হাসি হাসি সরে যাওয়া-মুহূর্তগুলি,
ঝরে যাওয়ার আগেই তুমি যেইভাবে
প্রমাণ করো যে, এইটা যন্ত্র না, কল্পনাও না
আর হঠাৎ করে বইলা ওঠো, কথা!
আমি সেই কথাগুলি তোমার, অনুবাদ করে দিতে চাই, আমার কবিতায়!
/২০১০
♣
পোশাকের কান্না
যতক্ষণ আমি ছিলাম তোমার গায়ে, তুমি হাসতেছিলা
আর ছুঁইড়া ফেলে দেয়ার পর দেখি, আমি আর আমি নাই
কি যে আর্তনাদ জাইগা ওঠে, সকালবেলায়!
সবকিছুই অহেতুক, অর্থহীন মনে হইতে থাকে
তোমার শরীর থিকা বাইর হয়া, বারান্দার দড়িতে ঝুইলা থাকি
দেখি একটা চড়ুই ডাকতেছে
পাশে উঠতেছে নতুন দালান, অস্থি-মজ্জার মতো পেঁচানো কাঠগুলা তার গায়ে,
তার ফাঁকগুলা থিকা তিনতলায় উঁকি দিতেছে একটা বান্দর…
ছোট্ট একটা মেয়ে-শিশু ঘুমাইতেছে, বিছানায়
আরো আরো কতকিছু বলবার বাকি রয়া গেলো…
এইভাবে শুরু হইতেছে দিন, তোমারও…
কিভাবে আমিও মূর্ত হয়া উঠতে পারি
তোমার চিন্তা আর সম্মতি ব্যতীত?
আমি ভাবতেছি, এই বিচ্ছিন্নতা হয়তো ভালো,
কিন্তু এই দমবন্ধ করা ভাবনায়, আমি আটকে যাইতেছি
কোন একদিন হয়তো
এইরকম একটা সকালবেলাতেই আমার মৃত্যু!
হঠাৎ করেই ঝোল-এর হলুদ দাগ দেইখা মনে হবে তোমার
এরে তো আমার আর কোন দরকার নাই…
প্রতিবারই যখন তুমি খুলার পরে রাইখা দাও
আমি ভাবি, এইবারই মনে হয় শেষ!
আমার দমবন্ধ করা চিন্তার ভিতর আমি আটকায়া থাকি
সারাটা দিন
রইদ আইসা পড়ে, একটু পরে
বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু হবে, লেবাররা উঁকি দিবে
আমার শরীরে আটকায়া যাবে অদের চোখ
ঘিঞ্জি দালানগুলি ঠেস দিয়া দাঁড়ায়া আছে এ ওর গায়ে
একটা ভূমিকম্পের অপেক্ষায়
ঠেইলা-ঠুইলা, কোনরকম তাদেরও দিন পার হইতেছে…
একটা কাকের পা কি শক্ত হয়ে চাইপা বসছে আমার কাঁধে!
এই রোদ্রকরোজ্জ্বল দিনে, বারান্দার দড়িতে ঝুইলা
এতসব কিছু দেখতে দেখতে
আমি ভেবে যাইতেছি তোমার কথা:
প্রতিদিনের কান্নার মতো যা যা কিছু ঘটে, তার নিরবতাগুলি
তোমার শরীরে ঘঁষতে ঘঁষতে আমি মুইছা ফেলতে চাই
যেন কোনদিনই, কোনকিছুই ঘটে নাই!
/২০১০
♣
স্বপ্নের ভিতর
অনেকদিন পর স্বপ্নে তোমারে দেখলাম। স্বপ্নে তুমি আরো সহজ, আরো সাধারণ। ডেইলি লাইফের কথা-বার্তা বলতেছি আমরা। আর তখনো আমরা আলাদা থাকি। তুমি আসছো আমাদের বাড়িতে। স্বপ্নের ভিতর তোমার নাকে নাই কোন নাকফুল।
কি করবো? – এই নিয়া টেনশনে আছো তুমি। আমি একটার পর একটা অপশন বলতেছি। তুমি পলিটিকস করার কথা ভাবতে পারো, কিংবা গ্রামে নারী-শিক্ষা প্রসারে প্রতিটা ইউনিয়নে একটা গার্লস-স্কুল করার সামাজিক আন্দোলন করো! কতকিছু করার মতো আছে আর তুমি ভাবতেছ শুধু। অথচ আমি বুঝি নাই, এইটাই তো ভালো! কি কি করা যায়, এই নিয়া যদি সারাদিন ধইরা কথা বলতে পারতাম আমরা!
বাস্তবে যখন তোমারে দেখছিলাম তখন তুমি ছিলা স্বপ্নের ভিতর কোঁকড়ানো। স্বপ্নে, তুমি যেকোন একটা বাস্তবতার মতো।
/২০১১
♣
আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট মেশিন সামডে
(ট্রিবিউট টু অ্যান্ডি ওয়ারহল। সাম বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ ইজ লেফট দেয়ার!)
আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট মেশিন সামডে।
যেহেতু আমি র ক্যাপিটালিজমের ইকনমিতে আছি, প্রতিদিন মিনিমাম ১২ ঘণ্টা ম্যাটেরিয়াল রিপ্রডাকশনে ইনভলব্ড থাকতে চাই। ৮ ঘণ্টা ঘুমাইতে চাই। ২ ঘণ্টা বউ-বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোর পরে ২ ঘণ্টা আমি লিখতে চাই প্রতিদিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি কাঁচা-বাজার, সুপারমার্কেট ও শপিংমলে যাইতে চাই। সিনেমা দেখতে এবং বই পড়তে চাই একটানা। সরকারি ছুটির দিনে আমি ঘুরতে যাইতে চাই। আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট ইমপ্লয়ি, পারফেক্ট হাজব্যান্ড (ওয়াইফ), পারফেক্ট ফাদার (মাদার) অ্যান্ড অ্যা রাইটার হু ক্যান বি রিকগনাইজড অ্যাজ অ্যা মেশিন।
সবকিছুর পরে, রেদার দ্যান টু বি ইন এনি ব্রাকেট অর এনি জেন্ডার বায়াসড স্পেসিস, সাম ডে আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা ট্রু মেশিন।
I want to be a perfect machine someday
(Tribute to Andy Warhole. Some Bengali language is left there!)
I want to be a perfect machine someday.
Jehetu ami raw capitalism er economy te achi, protidin 12 ghonta material reproduction e involved thakte chai. 8 ghonta ghumaite chai. 2 ghonta bou-bacchader shathe shomoy khatanur pore 2 ghonta ami lekhte chai protidin. Shaptahik chutir din e ami kancha-bazar, supermarket o shopping mall e jaite chai. Cinema dhekte ebong boi porte chai ektana. Shorkari chutir din e ami ghurte jaite chai. I want to be a perfect employee, a perfect husband (wife), a perfect father (mother) and a writer who can be recognized as a machine.
Shobkichur pore, rather than to be in any bracket or any gender biased species, I want to be a true machine.
I want to be a perfect machine someday
(Tribute to Andy Warhole. Some Bengali language is left there!)
I want to be a perfect machine someday.
As I exist in the economy of raw capitalism, every day I want to involve at least 12 hours in the material reproduction. Want to sleep for 8 hours. After spending 2 hours with my spouse and children, I want to write 2 hours daily. I want to go to the fish market, super store and shopping mall in the weekly holidays. In govt. holidays I want to travel around. I want to be a perfect employee, a perfect husband (wife), a perfect father (mother) and a writer who can be recognized as a machine.
Above all, rather than to be in any bracket or any gender biased species, I want to be a true machine.
আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট মেশিন সামডে
(ট্রিবিউট টু অ্যান্ডি ওয়ারহল। সাম বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ ইজ লেফট দেয়ার!)
আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট মেশিন সামডে।
অ্যাজ আই এগজিস্ট ইন দ্য ইকনমি অফ র ক্যাপিটালিজম, এভরিডে আই ওয়ান্ট টু বি ইনভলব্ড অ্যাট লিস্ট ১২ আওয়ারস ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল রিপ্রডাকশন। ওয়ান্ট টু স্লিপ ফর ৮ আওয়ারস। আফটার স্পেন্ডিং ২ আওয়ারস উইথ স্পাউস অ্যান্ড চিলড্রেন, আই ওয়ান্ট টু রাইট টু আওয়ারস ডেইলি। আই ওয়ান্ট টু গো টু ফিস মার্কেট, সুপারস্টোর অ্যান্ড শপিংমল ইন দ্য উইকলি হলিডেইজ। ইন গর্ভমেন্ট হলিডেইজ আই ওয়ান্ট টু মুভ অ্যারাউন্ড। আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট ইমপ্লয়ি, পারফেক্ট হাজব্যান্ড (ওয়াইফ), পারফেক্ট ফাদার (মাদার) অ্যান্ড অ্যা রাইটার হু ক্যান বি রিকগনাইজড অ্যাজ অ্যা মেশিন।
অবোভ অল, রেদার দ্যান টু বি ইন এনি ব্রাকেট অর এনি জেন্ডার বায়াসড স্পেসিস, সাম ডে আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা ট্রু মেশিন।
কোন একদিন আমি একটি নিখুঁত যন্ত্র হতে চাই
(অ্যান্ডি ওয়ারহল-এর প্রতি সম্মাননা। কিছু বাংলা-ভাষা থেকে গেলো, এখানে!)
কোন একদিন আমি একটি নিখুঁত যন্ত্র হতে চাই।
যেহেতু আমি কাঁচা পুঁজিবাদের অর্থনীতিতে আছি, প্রতিদিন কমপক্ষে বারো ঘণ্টা বস্তুগত পুনরোৎপাদনের কাজে জড়িত থাকতে চাই। আট ঘণ্টা ঘুমাতে চাই। দুই ঘণ্টা স্ত্রী-সন্তানদের সাথে সময় কাটানোর পরে দুই ঘণ্টা আমি লিখতে চাই, প্রতিদিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি কাঁচা-বাজার, বিপনীবিতান ও কেনাকাটার-ভবনে যেতে চাই। সিনেমা দেখতে এবং বই পড়তে চাই একটানা। সরকারি ছুটির দিনে আমি ঘুরতে যেতে চাই। আমি একজন নিখুঁত চাকরিজীবী হতে চাই, একজন নিখুঁত স্বামী (স্ত্রী), একজন নিখুঁত বাবা (মা) এবং একজন লেখক হতে চাই যাকে যন্ত্র হিসেবে চেনা যাবে।
সবকিছুর পরে, কোন বন্ধনীতে থাকার চেয়ে অথবা লিঙ্গ নির্ভর কোন প্রাণী হওয়ার থেকে, কোনএকদিন আমি হতে চাই সত্যিকারের একটি মেশিন।
কোন একদিন আমি একটা নিখুঁত যন্ত্র হইতে চাই
(অ্যান্ডি ওয়ারহল’রে ট্রিবিউট জানাই। কিছু বাংলা-ভাষা থাইকা গেলো, এইখানে!)
কোন একদিন আমি একটা নিখুঁত যন্ত্র হইতে চাই।
যেহেতু আমি কাঁচা পুঁজিবাদের ইকোনমিতে আছি, প্রতিদিন মিনিমাম বারো ঘণ্টা বস্তুগত পুনরোৎপাদনের কাজে জড়িত থাকতে চাই। আট ঘণ্টা ঘুমাইতে চাই। দুই ঘণ্টা বউ-বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোর পরে দুই ঘণ্টা আমি লেখতে চাই, প্রতিদিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি কাঁচা-বাজার, সুপারমার্কেট ও শপিংমলে যাইতে চাই। সিনেমা দেখতে এবং বই পড়তে চাই একটানা। সরকারি ছুটির দিনে আমি ঘুরতে যাইতে চাই। আমি একটা নিখুঁত চাকরিজীবী হইতে চাই, একটা নিখুঁত জামাই (বউ), একটা নিখুঁত আব্বা (আম্মা) এবং একটা লেখক যারে যন্ত্র হিসেবে চেনা যাইবো।
সবকিছুর পরে, কোন ব্রাকেটে থাকার চাইতে অথবা জেন্ডার-বায়াসড কোন প্রাণী হওয়ার চাইতে, কোন একদিন আমি হইতে চাই সত্যিকারের একটা মেশিন।
কোন একদিন আমি একখানা নিখুঁত যন্ত্র হইতে চাই
(অ্যান্ডি ওয়ারহল-এর প্রতি সম্মাননা। কিছু বাংলা-ভাষা থাকিয়া গেলো, এইখানে!)
কোন একদিন আমি একখানা নিখুঁত যন্ত্র হইতে চাই।
যেহেতু আমি কাঁচা পুঁজিবাদের অর্থনীতিতে আছি, প্রতিদিন কমপক্ষে বারোটি ঘণ্টা বস্তুগত পুনরোৎপাদনের কাজে জড়িত থাকিতে চাই। আটটি ঘণ্টা ঘুমাইয়া থাকিতে চাই। দুইটি ঘণ্টা স্ত্রী-সন্তানাদিদের সাথে সময় প্রক্ষেপণের পর দুইটি ঘণ্টা আমি লিখিতে চাই, প্রতিদিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি কাঁচা-বাজার, বিপনীবিতান ও কেনাকাটার-ভবনে যাইতে চাই। সিনেমা দেখিতে এবং বই পড়িতে চাই একটানা। সরকারি ছুটির দিনে আমি ঘুরিতে যাইতে চাই। আমি একজন নিখুঁত চাকরিজীবী হইতে চাই, একজন নিখুঁত জামাই (বউ), একজন নিখুঁত বাবা (মা) এবং একজন লেখক, যাহাকে যন্ত্র হিসেবে চিনিয়া লইতে কসুর হইবে না।
সমস্তকিছুর পরে, কোন বন্ধনীতে থাকিয়া যাওয়ার চাইতে অথবা লিঙ্গ-নির্ভর কোন প্রাণীতে পরিগণিত হওয়ার চাইতে, কোন একদিন আমি হইতে চাই সত্যিকারের একখানা মেশিন।
ইকদিন মে ইক পারফেক্ট মেশিন বননা চাহতা হুঁ
(অ্যান্ডি ওয়ারহল কোঁ মেরি সালাম। কুছ বাংলা-লবজ ভি ইয়াহা রেহ্ গায়া!)
ইকদিন মে ইক পারফেক্ট মেশিন বননা চাহতা হুন।
মে তো রেহতা হুঁ র ক্যাপিটালিজম কি জামানা মে, ইসলিয়ে হার দিন মে বারা ঘণ্টে বস্তুগত প্রডাকশন কি কাম মে বেস্ত রেহনা চাহতা হুঁ। আট ঘণ্টে শুয় না চাহতা হুঁ। দো ঘণ্টে বিবি-বাচ্চা কো সাত বিতানে কি বাদ মে দো ঘণ্টে লিখনা চাহতা হুঁ, হার দিন। উইকলি হলিডে কি দিন মে বাজার, সুপারমার্কেট অউর শপিংমল মে যানা চাহতা হুঁ। মুভি দেখনে অউর বুক পড়না চাহতা হুঁ, উইথআউট ব্রেক। গর্ভমেন্ট হলিডে কে দিন মে ঘুমনা চাহতা হুঁ। মে ইক পারফেক্ট এমপ্লয়ি, ইক পারফেক্ট হাজব্যান্ড (ওয়াইফ), ইক পারফেক্ট বাপ (মা) অউর ইক লিখক বননা চাহতা হুঁ, যিনকো লোক পেহচানেঙ্গে ইক মেশিন হোনে কি খাতির।
ইন সবকুচ কি বাদ, ইক বন্ধন মে আটক রেহনা সে যাদা অউর লিঙ্গভেদ মে রেহ গায়া ইক প্রাণী হোনে কি যাদা, মে ইক সাচ্চা মেশিন বননা চাহতা হুঁ, ইকদিন।
I want to be a perfect machine someday
(Tribute to Andy Warhol. Some Bengali language is left there)
I want to be a perfect machine someday.
যেহেতু আমি raw capitalism’র economy’তে আছি, প্রতিদিন minimum ১২ ঘণ্টা material reproduction-এ involved থাকতে চাই। ৮ ঘণ্টা ঘুমাইতে চাই। ২ ঘণ্টা বউ-বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোর পরে ২ ঘণ্টা আমি লিখতে চাই প্রতিদিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি কাঁচা-বাজার, supermarket ও Shopping mall-এ যাইতে চাই। cinema দেখতে এবং বই পড়তে চাই একটানা। সরকারি ছুটির দিনে আমি ঘুরতে যাইতে চাই। I want to be a perfect employee, a perfect husband (wife), perfect father (mother) and a writer who can be recognized as a machine.
সবকিছুর পরে, rather than to be in any bracket or any gender biased species, someday I want to be a perfect machine.
/২০১২
♣
জুতা আবিষ্কার
দেখছি তোমার জুতা, স্বপ্নে পইড়া আছে;
অন্য কারো
হয়তো আমার না,
জমিদারের কাচারি ঘরের বাইরে
অন্য জুতার পাশে
যেহেতু অন্য কারো, হয়তো আমার না।
/২০১৪
♣
যদি আমি ভুলে যাই
যদি আমি ভুলে যাই
ফিরে আর না তাকাই
না-দেখার ভিতর থাকতে থাকতে
যদি আমি ভুলে যাই
ফিরে দেখি আর নাই
আমি; তখন তুমি
থাকতেছ
এই পৃথিবীতে
দিন আসে আর যায়
চক্রে, চক্রান্তে
যদি হারায়ে যাই
না-থাকার ভিতর
একটা কোণায় থেকেই যাই
যাওয়া কি আর হইলো
বলো; এমনি এমনি দিন
আসে আর যায়
যায় দিন অথচ
একই আকাশের নিচে
আরো দূরে
সরে সরে যাই
এই ভাবনায়
যদি ভুলে যাই
একটা সুতার টান
ছিঁড়ে যায় আর
মনেই হইলো না
কেন যে
আসছিলাম
হাসছিলাম
আর ভুলের ভিতর
পারছিলাম রাখতে
তোমারে; ভাবছিলাম
কচ্ছপের স্মৃতি হয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ে
যদি আমি ভুলে যাই
তোমারই ছায়ার ভিতর
মলিন বিকালের আলো
আসে, চলে যায়
তেমনই রোদ
তুমি
তোমার স্মৃতি
ধীরে
মুছে যায়
আমার থাকা
এবং না-থাকায়
/২০১৪
♣
লোনলিনেস
অনেকদিন পরে লোনলিনেসের সাথে আবার দেখা। সে কয়, ভাই আপনি না গেছিলেন গা; আবার কই থিকা আইলেন? আমি কই: না, না ফিরা আসি নাই ত একবারে; দেখতে আইলাম রাস্তা-ঘাট কিরকম, আগের মতন আছে কিনা; এখনো কি গরুর দুধের চা বেচো নাকি, এইসব। সে কয়, দুইটা সিগ্রেট খান ভাই, একটার পরে একটা; তাইলে ভাল্লাগবো। কুয়াশা এখনো পড়ে নাই। মনে হয় বাতাসে খালি একটু ধোঁয়া উঠতেছে। রিকশা-টেম্পু-বাস-ট্রাক-কার সবই যাইতেছে কোথাও না কোথাও। লোনলিনেস চা বানাইতেছে। চা-টা খাইয়া আমি আবার হাঁটতে হাঁটতে বাসায় চইলা আসবো। মনেই হবে না, রাস্তায় লোনলিনেসের সাথেই দেখা করতে গেছিলাম। মাঝে মাঝে এইরকম ত আসাই যায়, আমি ভাবতেছিলাম।
/২০১৪
♣
দাস্তাম্বু
বৃষ্টি শেষ হইল। বিকাল শেষ হইল না। একটা ক্ষণস্থায়ী ভাষার একটা ক্ষণস্থায়ী সাহিত্যের কোণায় পইড়া রইলো দাস্তাম্বু তোমার।
দুনিয়া পুরাটাই হলুদ কালার। কয়েকটা সেকেন্ড খালি।
সন্ধ্যা নামতেছে। কার্ণিশ বাইয়া নাইমা গেলো হলুদ ওই রং।
ছাদে কেউ নাই আর। বারান্দায় ঝুলতেছে বোবা কাপড়গুলি। বাতাসে কাঁপতেছে তারা, প্লাস্টিক-ক্লিপের ভাঙা অভিমান।
তোমার দালানের ছায়া দীর্ঘ হইতে হইতে নিইভা গেলো দুনিয়ার আন্ধারের ভিতর…
কেউ আর গান গাইতেছে না। কেউ আর কেন গান গাইতেছে না?
এমন চুপচাপ, কবেকার এক পৃথিবী যেন রেপ্লিকেট হইতেছে আবার।
লোডশেডিংয়ের নিচে ডুইবা গেছে তোমার ঘর। অথবা তুমি নাই আর ঘরে। থক থক কাদার নিচে শ্বাস বন্ধ, আমি ভাবি; এমন জীবন আমি কি দেখছিলাম আগে? মনে করতে পারার আগেই, জানালার পর্দাটা টাইনা দিয়া গেলো কেউ।
/২০১৪
♣
টেস্ট এনভায়রনমেন্ট
যে নাই
সে-ই আছে
তোমার আমার মাঝে
চেয়ার নাড়াইতেছে
শক্ত হয়া বইসা আছে
যে নাই, সে
আমাদের কাঁপাইতেছে
/২০১৫
♣
আমার কথা
শান্তমুখে
দুইজন ফেরেশতা
বইসা আছেন আমার সামনে
আমি বলতেছি, কি কি পাপ আমি করছি,
বলতে বলতে এতোটাই ভাল্লাগতেছে যে
যা যা আমি করি নাই
তা-ও বলার ইচ্ছা হইতেছে,
বলতেছিও একটু একটু
আফটার অল, উনারা তো ফেরেশতা
আমার কথাগুলা ডিসকাউন্ট কইরা নিতে পারবেন
এইজন্য আমি আরো আরো কইতে থাকি কথা
ফেরেশতারা চুপচাপ
কিভাবে যে রের্কড করতেছেন বুঝতেছি না
আমার বলার ভিতরে নিজেরে আমি ক্রিয়েট করতেছি আবার,
ফেরেশতারা সাক্ষী
যা যা আমি বলতেছি
জাজ করতে পারতেছেন তো উনারা, ঠিকঠাক মতো?
/২০১৬
♣
হাজারো খায়েশি অ্যায়সি…
আমি মইরা যাব
তারপরে বলবো যে,
আমি তো মইরা গেছি।
/২০১৬
♣
রেইন, রেইন
আই লাভ, আই লাভ… শি সেইজ, শি সেইজ। শি ইজ টকিং লাইজ। টকিং লাইজ। ইটস ন্যাচারাল। আই টোল্ড হার। নোবডি গেটস হার্ট। ইউ নো দ্যাট। শি স্মাইলস। শি স্মাইলস। উইথ হার বিউটিফুল আইজ। শি ব্লিংকস। শি ব্লিংকস। লাইক দ্য রেইনড্রপস ফলিং অন দ্য ট্রিস।
/২০১৬
♣
শরত হইলো আরেকটা বসন্ত, একটু লাউড আর কি
তুমি বইসা আছো
তোমার বইসা থাকা দেইখা
রোদ আটকাইছে গাছের পাতায়
তুমি দেখতেছো, আসতেছে হন্তদন্ত তোমার প্রেমিক
সে তোমারে দেইখাই বলবে, সরি!
তখন তুমি খুশি হইয়া যাবা কি যাবা না – ভাবতেছো;
ভাবনার গভীর রইদের ভিতর কতো কতো রিকশা
হিবিজিবি দাঁড়ায়া আছে
এতো এতো রইদ আজকে শহরে, বুঝলা
ভালোই লাগতেছে না, এর লাইগা ভাবলাম
‘তুমি বইসা আছো’…
তোমার প্রেমিক আসতেছে, রইদের ভিতর একটু ছায়া
কুত্তা একটা ঘুমাইতেছে, টি-স্টলে
বাতাসে তার কান কাঁপতেছে
এতো যে হর্ণ গাড়ির, তবু তার ঘুম ভাঙতেছে না…
/২০১৬
♣
মিথ্যাবাদী রাখাল ৫
তুমি বাঘ, আমি মিথ্যাবাদী রাখাল
/২০১৭
♣
তোমার অন্য নাম
কতো অপরিচিত ভাষায় আমি ডাকলাম তোমার নাম।
কতো শব্দের মিউজিকের ভিতর আমি আবার তোমারে হারায়া ফেললাম…
‘…কিন্তু এর কোন মিনিং তো নাই!’
– রাস্তায় অনেকগুলি গাড়ির হর্ণ একসাথে বাইজা উঠার মতন
বইলা উঠলা তুমি তখন।
সন্ধ্যার বড় চাঁদ উঠলো আকাশে।
রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম…
আমাদের জানা আর বোঝার ভিতর আমরা
আমাদেরকে হারায়া ফেললাম।
/২০১৭
♣
লাস্ট ক্যাকটাস
অহেতুক একটা
ইল্যুশনের মতন
পইড়া আছি আমি
রিয়ালিটির দরজার পাশে
তোমার
বলবা তুমি,
মরা ক্যাকটাস
ফেলে যাবো এরে,
নিয়া গিয়া কি লাভ!
কই রাখবো এরে?
কেন নিবো? হোয়াই?
অহেতুক একটা
ক্যাকটাসের মতন
হারায়া গেছি আমি
দেখার দুনিয়া থিকা
তোমার
/২০১৭
♣
একটা কাঁটা
একটা কাঁটা
রাস্তার মাঝখানে
জ্বলজ্বল করতেছিলো
আমি তারে তুইলা নিয়া
কবর দিলাম
রাস্তার সাইডে
কইলো শে আমারে আইসা
একদিন স্বপ্নে,
বিঁধতে তো পারতাম আমি একবার
তোমার পায়ে!
/২০১৮
♣
হসপিটাল
একটা হসপিটালের বারান্দায় বইসা আছো তুমি,
বিকালবেলায়, একটা বেতের চেয়ারে;
আমি দেখতে আসছি তোমারে আর তুমি
আমারে চিনতে পারতেছো না।
তুমি দবির ভাইবা আমার সাথে কথা কইতেছো,
আবার ভাবতেছো, না, এ মনে হয় কবির;
চোখ বন্ধ কইরা তুমি আইনের বইয়ের পাতা উল্টাইতেছো;
সামনের ছোট্ট মাঠে গাছগুলি ফেলে দিতেছে তাদের পুরান পাতা. . .
দুধে ভিজায়া পাউরুটি খাইলাম আমরা,
ছোটবেলার অনেক কথা বললা তুমি, হাসলা;
হঠাৎ, কি কারণে জানি মন-খারাপ হইলো,
একটু চুপ থাকার পরে বললা,
‘তুমি তাইলে যাওগা!’
বইলা, চেয়ার থিকা উইঠা হাঁটতে হাঁটতে
বারান্দার আরেকটা মাথায় চইলা গেলা,
বিকাল’টা তখনো শেষ হয় নাই
আমি ভাবতেছিলাম, দুধের গ্লাস আর প্লেটের পাউরুটিগুলি
আর কতোক্ষণ তাকায়া থাকবো আমার দিকে?
তুমি আর আমারে দেখতেছো না,
দবির আর কবিরের চাইতে অন্য কোন কনফিউশন আইসা
দখল কইরা ফেলছে তোমারে;
আমিও চাইতেছি, কোন কনফিউশন আইসা নিয়া যাক আমারে;
এই বেতের চেয়ার’টা বেতের চেয়ার কিনা?
বা তুমি আসলে আছো কি নাই? বা কখনো ছিলা কিনা?
মেবি এইটা কোন হসপিটালও না?
আর আমি তো যে কেউ একজনই,
ঘুরতে ঘুরতে হারায়া যাইতেছি,
একটা না-থাকা’র ভিতর
সূর্য ডুইবা যাবে একটু পরে
রুমের ভিতর চইলা যাবা তুমি
আমি তোমার হসপিটালের গেইট থিকা বাইর হয়া
আমার হসপিটালের দিকে হাঁইটা যাবো
ভাববো, আমাদেরকে তো বাঁচায়া-ই রাখছে
আমাদের ভুইলা যাওয়া।
/২০১৯
♣
প্রুফ রিডিং
আমি তোমার ছোট্ট একটা বানান-ভুল
তুমি বারবার দেখতেছো, অথচ
চোখে পড়তেছে না,
মনে মনে খচখচ করতেছে –
কি জানি ভুল, কি জানি ভুল…
আমি তোমার কথা-বলার ভিতর
একটা উচ্চারণের ভুল
তুমি ভাবতেছো, ঠিকই তো আছে! অথচ
আমি বইসা আছি তোমার ঠোঁটের আগায়,
আল-জিবের ভিতরে, আত্মার ভিতরে একটা দম
আমি তোমার সমস্ত জীবন, ছোট্ট একটা ভুল
তোমার সাথে সাথে আছি, থাকতেছি…
যেই দিন তুমি থাকবা না, হারায়া যাবো তো
আমিও, তোমার না-থাকার ভিতর
/২০২০
কবি, ফিকশন-রাইটার, ক্রিটিক, ট্রান্সলেটর। জন্ম ১৯৭৫ সালে। ভৈরববাজার, কিশোরগঞ্জে। থাকেন ঢাকা’য়, বাংলাদেশে।
পাবলিশড বুকস:
কবিতা:
কবিতা ও ববিতা (২০২২) গান (ইবুক, ২০২২) ছোট্ট একটা রিয়ালিটি আমার (ইবুক, ২০২১) একটা কথা থিকা একটা উদাহারণের মতন আলগা হয়া গেলাম আমি (২০২১) লাস্ট ক্যাকটাস (২০১৯) মিথ্যাবাদী রাখাল (২০১৮) ‘ধান কাটা হয়ে গেলে পরে. . . ‘ (২০১৭) টেস্ট এনভায়রনমেন্ট (২০১৬) বসন্ত ১৪১৯ (২০১৫) স্বপ্নের ভিতর (২০১৩) তোমার কথাগুলি আমি অনুবাদ করে দিতে চাই’ (২০১১) অশ্বত্থ বটের কাছে এসে (২০১০) রাঙামাটি (২০১২) কালিকাপ্রসাদে গেলে আমি যা যা দেখতে পাবো (২০০৫) ঋতুচিহ্নগুলি (১৯৯৮)
কবিতার তরজমা:
মরণ আসবে আর নিয়া যাবে চোখগুলি তোমার – সিজার পাভিজি (২০২১) লিওনার্দ কোহেনের কবিতা (২০২১) চালর্স বুকোউস্কির কবিতা (২০১৯)
ফিকশন:
পুরি’র গল্প ও ২০৪৬ (২০১৯)
নন-ফিকশন:
পলিটিক্যাল ডাইরি: মার্চ-এপ্রিল, ২০২১ (২০২২) মিডিয়া ও পলিটিক্স নিয়া কয়েকটা আলাপ (২০২২) রিডিং সিনেমা ইন বাংলাদেশ (২০২২) কবিসভা [২০২২] রিডিং বিটুইন দ্য লাইনস [ইবুক, ২০২০] কবি [২০২০]
তরজমা:
রুমি’র কাহিনি [২০১৭] হারুকি মুরাকামির ইন্টারভিউ [২০১৯] মানতিকুত তোয়ারের কয়েকটা কাহিনি [২০২০] আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম – মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের লেকচার [২০২১] মিশেল ফুকোর ইন্টারভিউ [২০২১] ফ্যাসিস্ট কেমনে চিনবেন – উমবের্তো একো [২০২১]