কিম কি দুকের (Kim Ki-duk) সঙ্গে আমার পরিচয় পনেরোর ফেব্রুয়ারিতে। ঢাকায়। `Spring, Summer, Fall, Winter… and Spring’ দিয়ে শুরু। এরপর একটা ঘোর থেকে টানা দেখা শুরু করি— The Bow, 3-Iron, The Isle, Samaritan Girl, Pieta,Time, Arirang, Bad Guy, Birdcage Inn। কোরিয়ান কয়েকটা মুভি দেখা হয়েছিল আগে। ‘ডেইজি’, ‘ডিভাইন মুভ’, `এ টেল অফ ট্যু সিস্টার, ‘বেডডেভিলড’ টাইপের। তবে তাদের অনেকটা জুড়ে ছিল হরর ও মারদাঙ্গা হলিউডি ছাপ। কিন্তু কিম দুক স্বকীয় এই কারণে যে, তিনি টাইমের রিপিটেশন বা পুনারাবৃত্তির খেলা, প্রকৃতি পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের নেচারের তারতম্য, সাথে নৈসর্গিক বর্ণনা অদ্ভুতভাবে ন্যারেট করতে পারেন। (তার সবচেয়ে বড় উদাহারণ হয়ে থাকবে, ‘Spring, Summer, Fall, Winter… and Spring’ এবং ‘Time’)। আর তার জন্য ক্যারেক্টারের মুখে ডায়ালগ তুলে দিতে হচ্ছে না। গল্পটা চলতেছে যেন গল্পের টানে। আর গল্প আপনাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অতলে। এবং এটাও কি বলা যায় যে, কিম দুকের দর্শন জুড়ে আছে জেন স্পিরিচ্যুয়াল বা বুড্ডিস্ট স্পিরিচ্যুয়াল আর্টের কথা? নাকি ওটা ম্যাজিক রিয়ালিজম, নাকি পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতি বা কোরিয়ান জীবনচিত্রকে তিনি ওইভাবে দেখতে ভালবাসেন? যেমন— নৈতিকতা, টিট ফর ট্যাট বা এ্যাজ য়্যু সো সো য়্যু রিপ এবং একটা জাগতিক নৈতিক-অনৈতিক কিংবা পাপ-পূণ্য থেকে সম্যক মুক্তি?
আন্দ্রেই তারকোভস্কির দৃশ্য দেখে যেমন চোখে ধাঁধা লেগে যায়, তদ্রুপ কিম দ্যুকের ক্ষেত্রেও। তারকোভস্কি চলচ্চিত্রের কবি। কিম দুক প্রকৃতি ও মানসিক বোদ্ধা। রোগ নিরাময়কারীও। যেমনটা সাহিত্যে আমরা বলে থাকি, জন কিটস সৌন্দর্যের কবি আর উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ প্রকৃতির। ঠিক ওভাবে হয়তো তুলনাটা দেওয়া সমীচীন হবে না। তবুও…
চোখ পলক ফেলবার আগেই দুক মনের ভেতর দৃশ্য গেঁথে দিতে পারেন। ইরানিয়ান ফিল্মের যে ন্যারেটিভ সেন্স বা ফরাসি ফিল্মের নির্মাণশৈলী যে শৈল্পিক উপস্থাপন ও মোশন তৈরী করে; দ্যুক ঠিক যেন ঐখান থেকেই তাঁর ফিল্ম শুরু করেন। তাঁর ফিল্ম জুড়েই রয়েছে ঘৃণা, যৌনতা, প্রায়শ্চিত্ত, বৃষ্টি, বরফ, প্রতিশোধ, রাগ, চমক বা ট্যুইস্ট, হিংসা-প্রতিহিংসা, খুন, রিভেঞ্জ এবং উপর্যপরি ব্যক্তির ‘নিরাকার’ হওয়ার অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার। এছাড়া জেন্ডার সচেতনতা। পুরুষতান্ত্রিকতা দ্বারা নারীর হয়রানি হওয়া। যৌনতা যে শারীরিক ব্যাপারের চেয়ে মানসিক একটা বিষয় দুক তা খুব স্ট্রংলি ব্যবহার করেন। অর্থাৎ রাগ, হিংসা, ঘৃণার মতোও ‘যৌনতা’ একটা মানসিক বিষয়। মূলত সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ঘরানার হলেও তাঁর ফিল্ম থ্রিলার নয়; তবে মনোজগতের খুঁটিনাটি নিয়ে তিনি নাড়তে ভালবাসেন। কিম দুকের যে সিনেমাবোধ তার সামান্য উদহারণ দেয়া যাক।। বছর খানেক আগে দুকের সিনেমা যাপন বা বোধের হালকা একটা সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়েছিল। তার থেকে কিছু অনুবাদ তুলে দিলাম। মূলত সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ হয়েছিল তাঁর ‘ব্যাড গাই’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগে।
ভল্কার হামেল : মিস্টার কিম, একসময় আপনি বলেছিলেন, আপনার প্রত্যেকটি ফিল্মের স্টার্টিং পয়েন্টটা তীব্র ঘৃণার। আপনার নতুন ছবি ‘বেড গাই’তে কি প্রকারের উন্মত্ততা দেখাচ্ছেন?
কিম কি-দুক : আমি ‘তীব্র ঘৃণা’ শব্দটি ব্যবহার করেছি বৃহৎ প্রসঙ্গে, এবং আমি সত্যিই মনে করি না আপনার এই প্রসঙ্গের বাইরে যাওয়া উচিৎ। ঘৃণার ব্যাপারে আমি কোনো একটি নির্দিষ্ট কথা বলছি না, কোনো বস্তু বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরিচালনা করছি না। বস্তুতপক্ষে এটা এমন এক প্রকারের অনুভূতি যা আমি আমার জীবনে দেখি এবং এমন কিছুকে দেখি যা আমি বুঝি না; যার কারণবশতঃ আমি ফিল্ম বানাই। আমি কিছু দেখি এবং আর অনেক কিছুই দেখি না এবং ঐসব না দেখা জিনিসকে বোধগম্যের জন্য আমি ফিল্ম বানাই।