উপন্যাস পড়ার পর সিনেমা দেখলে সিনেমা সম্পর্কে একটা অস্বস্তি থাকে। উপন্যাস যে কল্পনার জগৎ তৈরি করে, সিনেমা অনেকাংশেই সেইসব কল্পনার জগৎকে রীতিমত ধ্বংস করে দেয়। ফলে বইপ্রেমিরা পড়া উপন্যাস বা গল্প থেকে সিনেমা খুব একটা পছন্দ করে না। এইটা প্রায় শতভাগ সত্য।
বাংলা সিনেমায় এমন উদাহরণ খুঁজতে গেলে সবার আগে মনে পড়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র ‘লালসালু’ উপন্যাস অবলম্বনে তানভীর মোকাম্মেলের বানানো সিনেমা। উপন্যাসের মজিদ আর সিনেমার মজিদ যেন ভিন্ন দুই পৃথিবীর বাসিন্দা। একই রকম অভিজ্ঞতা চেতন ভগতের ‘থ্রি মিসটেক অব লাইফ’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘কাই পো চে’ নিয়াও। বিশ্ব সিনেমায় এমন উদাহরণ শত শত। তাই উপন্যাস ও সিনেমার মধ্যে বই-ই প্রায়োরিটি বেশি পায়।
তবে সম্প্রতি আমার হয়েছে উল্টো অভিজ্ঞতা। ইতালিয়ান ঔপন্যাসিক আলেসান্দ্রো বারিক্কো’র উপন্যাস ‘সিল্ক’ নিয়া। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার প্রেক্ষাপটে ফরাসি এক রেশম (সিল্ক বানানোর জন্যে যে রেশম প্রয়োজন) ব্যবসায়ির জীবন, বাণিজ্য, প্রেম ও যুদ্ধ নিয়ে লেখা উপন্যাস। বাংলা অনুবাদ পড়তে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছি। মনে হইছে কি যেন পাইতেছি না, কি যেন নাই। এভাবেই বইটা শেষ করলাম। এ ধরনের ঘটনার পর আমার যা হয়, কারো কোনও ভালো রেফারেন্স ছাড়া অনুবাদ পড়তে ইচ্ছা হয় না (আসলে সাহস হয় না)। কারণ তাতে মূল বইয়ের স্বাদ ও ধরণ কিছুই পাওয়া যায় না। তারপরই বিদেশি বইয়ের অনুবাদ পড়তে রাজি হই।
সিনেমার ক্ষেত্রে আবার উল্টা। কেউ যদি একটা সিনেমার কথা বলে, আমি ওই ধরনের বা ওই এলাকার বা ভাষার তিনটা সিনেমা দেখার চেষ্টা করি। যেমন কেবল একটা মালায়ালাম সিনেমার গান দেখে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কেই আগ্রহী হয়ে উঠছিলাম। এমনই বারিক্কো’র উপন্যাস পড়ার পর যে অতৃপ্তি, সেই অতৃপ্তি ঘুচাইতে সিনেমা খুঁজতেছিলাম। এমন সময় দেখি যে বারিক্কো নিজেই সিনেমা বানায়। তবে তার আগে বারিক্কোর উপন্যাস নিয়া সিনেমাও হইছে। এবং এই তালিকায় সবার আগে স্থান পাবে ‘সিল্ক’। তো নেট ঘেটে প্রায় দুই ঘণ্টার ছবি নামানো গেলো। ‘দ্য রেড ভায়োলিন’ ছবির ফরাসি নির্মাতা ফ্রান্সোইস গিরার্ড এই ছবিরও পরিচালক।
উপন্যাস পড়ার পর যেসব কমতি মনে হইতেছিলো, ছবিতে এইগুলো অনেক ক্ষেত্রেই উতরে গেছে। সিনেমার গল্প বয়ানে মন্তাজ ছিলো চমৎকার। প্রথম মহাযুদ্ধের সময়কার যে জীবনচিত্র, তাতে ক্যানভাস বড় করেনি। ফলে ছোট ফ্রেমে ছোট ক্যানভাসে গল্প বলা হলেও সিনেমায় ঘাটতি মনে হয়নি। তবে অনুবাদে এই ঘাটতিটা চোখে পড়েছে। তিন শব্দের একটা চিঠি মানুষকে কতটা আকুল করতে পারে, এই উপন্যাসের অনুবাদে যতটা না বোঝা যায়, তারচেয়ে বেশি বোঝা যায় সিনেমাটা দেখলে। সম্ভব হইলে আমি মূল উপন্যাসটা পড়বো। যেহেতু উপন্যাসটা ভালোই।